মানবিক সহায়তাবঞ্চিত হবে ২ লাখ বাংলাদেশি
- প্রকাশের সময় : ১১:৩৩:৫২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ মার্চ ২০২৪
- / ৮৩ বার পঠিত
মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতন থেকে বাঁচতে ২০১৭ সালের আগস্টে রোহিঙ্গারা পালিয়ে বাংলাদেশে আসার পর থেকেই সরকারের নেতৃত্বে কাজ করে আসছে জাতিসংঘ। সেই থেকে রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তার জন্য জাতিসংঘ যৌথ সাড়াদান পরিকল্পনা বা জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান (জেআরপি) তৈরি করে আসছে। তবে যত দিন যাচ্ছে, তহবিল সংগ্রহ তত কমে আসছে। এ বছর মানবিক সহায়তার চাহিদা রয়েছে রোহিঙ্গা ও কক্সবাজারের স্থানীয়দের মিলিয়ে সাড়ে ১৫ লাখ মানুষের। তবে তহবিল সংকটের কারণে সাড়ে ১৩ লাখ মানুষের জন্য মানবিক সহায়তা নির্ধারণ করা হচ্ছে। বুধবার জেনেভায় ‘জেআরপি-২০২৪’ ঘোষণা করা হবে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এতে অংশগ্রহণ করছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল।
জেআরপির খসড়া থেকে জানা গেছে, চলতি বছর স্থানীয় বাসিন্দা ও রোহিঙ্গাদের জন্য চাহিদা ধরা হচ্ছে ৮৫ কোটি ২৪ লাখ ডলার। এবার ৩ লাখ ৪৬ হাজার বাংলাদেশিকে মানবিক সহায়তার পরিকল্পনায় রাখা হয়েছে। মানবিক সহায়তার চাহিদা থাকা সত্ত্বেও সংকটে থাকা দুই লাখ বাংলাদেশি জেআরপি থেকে বাদ পড়ছেন। এর কারণ হিসেবে পর্যাপ্ত তহবিল সংগ্রহ করতে না পারার কথা বলা হচ্ছে। এবারের অগ্রাধিকার হচ্ছে রোহিঙ্গাদের পুষ্টি নিশ্চিত করা, সম্মানজনক আশ্রয়, স্বাস্থ্যসেবা, বিশুদ্ধ পানি, পয়ঃনিষ্কাশন ও স্যানিটেশন সেবা। এবার সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ রাখা হচ্ছে খাদ্য নিরাপত্তায়।
এবারের জেআরপি ও গত বছরের ঘাটতি নিয়ে এর আগে জানতে চাইলে ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস বলেছিলেন, বাংলাদেশ সরকার ও জাতিসংঘের যৌথ প্রচেষ্টায় জেআরপি কক্সবাজার ও ভাসানচরে থাকা রোহিঙ্গা এবং ক্যাম্পের আশপাশে থাকা স্থানীয়দের মানবিক সহায়তার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে প্রস্তুত করা হয়। জেআরপি দ্রুত প্রকাশ করতে চান, কারণ বৈশ্বিকভাবেই অনেক স্থানে মানবিক সংকট চলছে, ফলে তহবিলের ঘাটতি রয়েছে। দ্রুত করার মাধ্যমে যত বেশি সম্ভব তত তহবিল সংগ্রহ করাই লক্ষ্য।
বাংলাদেশে রোহিঙ্গা আশ্রয় নেওয়ার পর ২০২৩ সালে আন্তর্জাতিক সহায়তা সবচেয়ে কম এসেছিল, যা ছিল জেআরপির চাহিদার মাত্র ৫০ শতাংশ বা ৪৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার। আর পরিকল্পনার বাইরে ৬ কোটি ৮৬ লাখ ডলার অর্থ সহায়তা পেয়েছে রোহিঙ্গারা। ২০২২ সালে সহায়তা এসেছিল চাহিদার প্রায় ৬৯ শতাংশ। এর আগে ২০১৭ সালে চাহিদার ৭৩ শতাংশ, ২০১৮ সালে ৭২ শতাংশ, ২০১৯ সালে ৭৫ শতাংশ, ২০২০ সালে ৫৯ শতাংশ এবং ২০২১ সালে চাহিদার ৭৩ শতাংশ অর্থ সহযোগিতা পেয়েছিল রোহিঙ্গারা।
নাম না প্রকাশের শর্তে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, যেভাবে বিশ্ব রোহিঙ্গা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে, এর প্রভাব এ অঞ্চল ও পুরো বিশ্বে পড়বে। সহায়তার আওতা থেকে মানুষ কমিয়ে হয়তো সাময়িক সমাধান পাওয়া যাবে। তবে তহবিল সংকট মোকাবিলায় দায়িত্বশীল রাষ্ট্রগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। এবারের জেআরপিতে মিয়ানমারের বর্তমান অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি জোরালোভাবে আলোচনায় উঠে আসতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। তহবিল কমে আসায় রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের মধ্যে সংহতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে সরকার। এতে সেখানকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে
জাতিসংঘ চাইছে, প্রকল্পগুলো সাশ্রয়ীভাবে পরিচালনা করতে; সেই সঙ্গে রোহিঙ্গারা যাতে জীবিকার ব্যবস্থা নিজেরাই করতে পারে, সে ধরনের দক্ষতা বাড়াতে। জাতিসংঘ বলছে, খাদ্য সহায়তা কমে গেলে রোহিঙ্গারা আরও মরিয়া হয়ে উঠবে, যা ক্যাম্পগুলোতে আরও সহিংসতা ও অস্থিরতা বাড়াবে। মানব পাচারের শিকার হওয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে রোহিঙ্গারা, বিশেষ করে শিশু ও মেয়েরা। সূত্র : সমকাল।