নিউইয়র্ক ০৬:৪২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

বিদেশে ১৪ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিপুল সম্পদ

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০২:১৪:৪৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪
  • / ২৬ বার পঠিত
  • সাবেক তিন মন্ত্রীর নামে অবৈধ সম্পদের মামলা।
  • মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় সম্পদ।
  • আইনি সহায়তা চেয়ে ১২ দেশে ৭১ অনুরোধ।
  • ২৭টি অনুরোধের জবাব পেয়েছে দুদক।
  • আন্তর্জাতিক সংস্থা এগমন্ট গ্রুপেরও সাহায্য মিলবে।

মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের দেশে বাংলাদেশি ১৪ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিপুল সম্পদ থাকার তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুর্নীতির বিরুদ্ধে নজরদারি করা সংস্থাটির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে দুর্নীতি-অনিয়মের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক তিন মন্ত্রী ও তাঁদের স্ত্রী-সন্তানের বিরুদ্ধে পৃথক ছয়টি মামলা করেছে দুদক। মামলার আসামিরা হলেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম এবং তাঁদের স্ত্রীসহ পরিবারের কয়েকজন সদস্য।

দুদকের সূত্র জানিয়েছে, তাদের অনুসন্ধানে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, চীনের বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল হংকং, তুরস্ক, সাইপ্রাস, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় থাকা বাংলাদেশিদের সম্পদের সন্ধান মিলেছে। সম্পদের মালিকদের এ তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশি বৃহৎ শিল্পগ্রুপের মালিক, তাদের পরিবারের সদস্য ও সহযোগীদের নাম।

দুদকের অনুসন্ধানে যেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের তথ্য পাওয়া গেছে, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সামিট গ্রুপের মালিক আজিজ খান ও তাঁর পরিবার, সাইফুল আলমের মালিকানাধীন এস আলম গ্রুপের ৩৭ কোম্পানি, সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, নাসা গ্রুপের মালিক নজরুল ইসলাম মজুমদার ও তাঁর পরিবারের সদস্য, সিকদার গ্রুপের রন হক সিকদার ও রিক হক সিকদার, ওরিয়ন গ্রুপের ওবায়দুল করিম, নাবিল গ্রুপের জামান বক্স মন্ডল, স্ত্রী আনোয়ারা বেগম, তাঁদের দুই ব্যবসায়িক সহযোগী আমিনুল ইসলাম ও ইসরাত জাহান, পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদ, ব্যবসায়ী চৌধুরী নাফিজ সরাফাত, কাস্টমসের মতিউর রহমান, ইয়াসিন গ্রুপসংশ্লিষ্ট ইউসুফ আলী, আরাব খান, ভারতে থাকা ব্যাংকার পি কে হালদার ও ই-অরেঞ্জের মালিক বরখাস্ত হওয়া পুলিশ পরিদর্শক সোহেল রানার নাম।

দুদক জানিয়েছে, সিঙ্গাপুরে সামিট গ্রুপের মালিক আজিজ খান ও তাঁর পরিবারসংশ্লিষ্টদের ১৫ হাজার কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। যুক্তরাজ্য, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড, হংকং ও ইউএইর দুবাইয়ে এস আলম গ্রুপের (সাইফুল আলম) ৫০ হাজার কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। নাসা গ্রুপের মালিক নজরুল ইসলাম মজুমদার ও তাঁর পরিবারের নামে সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর ও যুক্তরাজ্যে ১৫-২০ হাজার কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে।

দুদকের অনুসন্ধান সূত্রটি জানায়, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামানের বিদেশে ৫২৯টি ফ্ল্যাট ও বাড়ি থাকার কথা জানা গেছে। এর মধ্যে যুক্তরাজ্যেই তাঁর ৩১২টি ফ্ল্যাট ও বাড়ির তথ্য পাওয়া গেছে।

কানাডায় চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের বিপুল পরিমাণ সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। দুদক বলছে, সেখানে পাঁচ তারকা হোটেলে তাঁর বিনিয়োগ রয়েছে। এ ছাড়া ক্যানব্যান চেম্বার হাউস ও রেস ফাইন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্টসহ তাঁর নিজের তিনটি কোম্পানি রয়েছে।

দুদকের এক পরিচালক নিজের নাম না বলার শর্তে জানান, এ তালিকার বাইরেও কয়েকজন মন্ত্রী-এমপির বিদেশে সম্পদ থাকার তথ্যপ্রমাণ রয়েছে। তদন্তের স্বার্থে এখনই এসব নাম সামনে আনা যাচ্ছে না। কর্মকর্তা আরও জানান, এ বিষয়ে সহায়তা চেয়ে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) পাঠিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ ছাড়া অর্থ পাচার রোধে সহায়তা করা আন্তর্জাতিক সংস্থা এগমন্ট গ্রুপের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে।

দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন জানিয়েছেন, ১ অক্টোবর পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারসহ আইনগত সহায়তা চেয়ে বিশ্বের ১২টি দেশে ৭১টি এমএলএআর অনুরোধ পাঠিয়েছে দুদক। এর মধ্যে ২৭টির জবাব পেয়েছেন তাঁরা।

সাবেক তিন মন্ত্রীর নামে মামলা
দুদকের নতুন শীর্ষ কর্মকর্তারা দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম কর্মদিবসেই নেওয়া সিদ্ধান্ত মোতাবেক পৃথকভাবে তিন মন্ত্রী ও তাঁদের স্বজনদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের মামলাগুলো করা হয়। সাবেক তিন মন্ত্রী ছাড়া বাকি আসামিরা হলেন শাবানা মালেক, রাহাত মালেক, আরিফা জেসমিন ও দেওয়ান আলেয়া।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদকের উপপরিচালক আখতারুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে মামলার অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপরই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মামলাগুলো করেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে জাহিদ মালেক ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধভাবে ৬১ কোটি ৪২ লাখ ৫৬ হাজার ৬২৬ টাকার সম্পদ অর্জন করে তা নিজ দখলে রেখেছেন। এই আয়ের গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া তাঁর নামে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলে সেই প্রতিষ্ঠান ও নিজ নামে ৩৪টি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে পরস্পর যোগসাজশে ১৪৩ কোটি ১০ লাখ ৯৩ হাজার ৬৯৭ টাকা জমা ও ১১৫ কোটি ৮৫ লাখ ৬ হাজার ৪৬৫ টাকা তুলে হস্তান্তর, রূপান্তর ও স্থানান্তরের মাধ্যমে সন্দেহজনক অসংখ্য লেনদেন করা হয়েছে। মন্ত্রী থাকাকালে তিনি অবৈধভাবে অর্জিত প্রায় ১১ কোটি ৪৯ লাখ ৮৪ হাজার ১৬১ টাকা বৈধ করার লক্ষ্যে ছেলে রাহাত মালেকের উপার্জন দেখিয়ে নিজের দখলে রেখেছেন। এ ছাড়া ছেলের নামে খোলা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও নিজ নামের ব্যাংক হিসাবে ৬৬৮ কোটি ৭১ লাখ ১৮ হাজার ৬৬৩ টাকা জমা করেন। সেখান থেকে প্রায় পুরো টাকা হস্তান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে মানি লন্ডারিং আইনে অপরাধ করেছেন।

জুনাইদ আহমেদ পলকের বিরুদ্ধে মামলার অভিযোগ, তিনি দায়িত্ব পালনকালে ৮ কোটি ৭৩ লাখ ৪৭ হাজার ৪২ টাকা মূলের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অর্জন করেছেন। এ ছাড়া নিজ নামে ২৫টি ব্যাংক হিসাবে ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত জমা করেন ৩২ কোটি ৪ লাখ ৯৫ হাজার ৩১৪ টাকা। এর মধ্যে প্রায় ৩০ কোটি টাকা তুলে অস্বাভাবিক লেনদেনের মাধ্যমে মানি লন্ডারিং করেছেন। তাঁর স্ত্রী আরিফা জেসমিন স্বামীর ক্ষমতার অপব্যবহার করে ৯ কোটি ৫৮ লাখ ৯৩ হাজার ৪৩৩ টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন। এ ছাড়া তাঁর নিজ নামে ৩১টি ব্যাংক হিসাব খুলে সন্দেহজনক ২২ কোটি ৩৪ লাখ ৭১ হাজার ৯৮৯ টাকা জমা করেন এবং সে অর্থ হস্তান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে মানি লন্ডারিং করেছেন।

মির্জা আজমের বিরুদ্ধে করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, তিনি সংসদ সদস্য থাকাকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে নামে-বেনামে প্রতিষ্ঠানের নামে ৩৯ কোটি ৭৬ লাখ ৬৭ হাজার ২০০ এবং মেয়ে মির্জা আফিয়া আজম অপির নামে ৩ কোটি ৯৯ লাখ ৮৩ হাজার ৫৭ টাকা মূল্যের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পত্তি অর্জন করেছেন। তিনি পরিবারের সদস্যসহ অন্যদের নামে ২০ কোটি ৭৩ লাখ ৮২ হাজার টাকার সম্পদ হেবা, দান বা বিনিময়ের মাধ্যমে হস্তান্তর ও রূপান্তর করেছেন। এ ছাড়া তাঁর ও স্ত্রী দেওয়ান আলেয়াসহ স্বার্থসংশ্লিষ্টদের নামে খোলা প্রতিষ্ঠানের মোট ৬০টি ব্যাংক হিসাবে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ৭২৫ কোটি ৭০ লাখ ৪২ হাজার ২৩২ টাকা জমা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭২৪ কোটি ৮৯ লাখ ৯৩ হাজার ৭১৫ টাকা উত্তোলন করে অস্বাভাবিক লেনদেনের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ হস্তান্তর, রূপান্তর ও স্থানান্তরের মাধ্যমে মানি লন্ডারিং আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। সূত্র : আজকের পত্রিকা।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

বিদেশে ১৪ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিপুল সম্পদ

প্রকাশের সময় : ০২:১৪:৪৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪
  • সাবেক তিন মন্ত্রীর নামে অবৈধ সম্পদের মামলা।
  • মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় সম্পদ।
  • আইনি সহায়তা চেয়ে ১২ দেশে ৭১ অনুরোধ।
  • ২৭টি অনুরোধের জবাব পেয়েছে দুদক।
  • আন্তর্জাতিক সংস্থা এগমন্ট গ্রুপেরও সাহায্য মিলবে।

মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের দেশে বাংলাদেশি ১৪ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিপুল সম্পদ থাকার তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুর্নীতির বিরুদ্ধে নজরদারি করা সংস্থাটির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে দুর্নীতি-অনিয়মের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক তিন মন্ত্রী ও তাঁদের স্ত্রী-সন্তানের বিরুদ্ধে পৃথক ছয়টি মামলা করেছে দুদক। মামলার আসামিরা হলেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম এবং তাঁদের স্ত্রীসহ পরিবারের কয়েকজন সদস্য।

দুদকের সূত্র জানিয়েছে, তাদের অনুসন্ধানে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, চীনের বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল হংকং, তুরস্ক, সাইপ্রাস, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় থাকা বাংলাদেশিদের সম্পদের সন্ধান মিলেছে। সম্পদের মালিকদের এ তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশি বৃহৎ শিল্পগ্রুপের মালিক, তাদের পরিবারের সদস্য ও সহযোগীদের নাম।

দুদকের অনুসন্ধানে যেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের তথ্য পাওয়া গেছে, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সামিট গ্রুপের মালিক আজিজ খান ও তাঁর পরিবার, সাইফুল আলমের মালিকানাধীন এস আলম গ্রুপের ৩৭ কোম্পানি, সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, নাসা গ্রুপের মালিক নজরুল ইসলাম মজুমদার ও তাঁর পরিবারের সদস্য, সিকদার গ্রুপের রন হক সিকদার ও রিক হক সিকদার, ওরিয়ন গ্রুপের ওবায়দুল করিম, নাবিল গ্রুপের জামান বক্স মন্ডল, স্ত্রী আনোয়ারা বেগম, তাঁদের দুই ব্যবসায়িক সহযোগী আমিনুল ইসলাম ও ইসরাত জাহান, পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদ, ব্যবসায়ী চৌধুরী নাফিজ সরাফাত, কাস্টমসের মতিউর রহমান, ইয়াসিন গ্রুপসংশ্লিষ্ট ইউসুফ আলী, আরাব খান, ভারতে থাকা ব্যাংকার পি কে হালদার ও ই-অরেঞ্জের মালিক বরখাস্ত হওয়া পুলিশ পরিদর্শক সোহেল রানার নাম।

দুদক জানিয়েছে, সিঙ্গাপুরে সামিট গ্রুপের মালিক আজিজ খান ও তাঁর পরিবারসংশ্লিষ্টদের ১৫ হাজার কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। যুক্তরাজ্য, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড, হংকং ও ইউএইর দুবাইয়ে এস আলম গ্রুপের (সাইফুল আলম) ৫০ হাজার কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। নাসা গ্রুপের মালিক নজরুল ইসলাম মজুমদার ও তাঁর পরিবারের নামে সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর ও যুক্তরাজ্যে ১৫-২০ হাজার কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে।

দুদকের অনুসন্ধান সূত্রটি জানায়, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামানের বিদেশে ৫২৯টি ফ্ল্যাট ও বাড়ি থাকার কথা জানা গেছে। এর মধ্যে যুক্তরাজ্যেই তাঁর ৩১২টি ফ্ল্যাট ও বাড়ির তথ্য পাওয়া গেছে।

কানাডায় চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের বিপুল পরিমাণ সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। দুদক বলছে, সেখানে পাঁচ তারকা হোটেলে তাঁর বিনিয়োগ রয়েছে। এ ছাড়া ক্যানব্যান চেম্বার হাউস ও রেস ফাইন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্টসহ তাঁর নিজের তিনটি কোম্পানি রয়েছে।

দুদকের এক পরিচালক নিজের নাম না বলার শর্তে জানান, এ তালিকার বাইরেও কয়েকজন মন্ত্রী-এমপির বিদেশে সম্পদ থাকার তথ্যপ্রমাণ রয়েছে। তদন্তের স্বার্থে এখনই এসব নাম সামনে আনা যাচ্ছে না। কর্মকর্তা আরও জানান, এ বিষয়ে সহায়তা চেয়ে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) পাঠিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ ছাড়া অর্থ পাচার রোধে সহায়তা করা আন্তর্জাতিক সংস্থা এগমন্ট গ্রুপের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে।

দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন জানিয়েছেন, ১ অক্টোবর পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারসহ আইনগত সহায়তা চেয়ে বিশ্বের ১২টি দেশে ৭১টি এমএলএআর অনুরোধ পাঠিয়েছে দুদক। এর মধ্যে ২৭টির জবাব পেয়েছেন তাঁরা।

সাবেক তিন মন্ত্রীর নামে মামলা
দুদকের নতুন শীর্ষ কর্মকর্তারা দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম কর্মদিবসেই নেওয়া সিদ্ধান্ত মোতাবেক পৃথকভাবে তিন মন্ত্রী ও তাঁদের স্বজনদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের মামলাগুলো করা হয়। সাবেক তিন মন্ত্রী ছাড়া বাকি আসামিরা হলেন শাবানা মালেক, রাহাত মালেক, আরিফা জেসমিন ও দেওয়ান আলেয়া।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদকের উপপরিচালক আখতারুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে মামলার অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপরই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মামলাগুলো করেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে জাহিদ মালেক ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধভাবে ৬১ কোটি ৪২ লাখ ৫৬ হাজার ৬২৬ টাকার সম্পদ অর্জন করে তা নিজ দখলে রেখেছেন। এই আয়ের গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া তাঁর নামে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলে সেই প্রতিষ্ঠান ও নিজ নামে ৩৪টি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে পরস্পর যোগসাজশে ১৪৩ কোটি ১০ লাখ ৯৩ হাজার ৬৯৭ টাকা জমা ও ১১৫ কোটি ৮৫ লাখ ৬ হাজার ৪৬৫ টাকা তুলে হস্তান্তর, রূপান্তর ও স্থানান্তরের মাধ্যমে সন্দেহজনক অসংখ্য লেনদেন করা হয়েছে। মন্ত্রী থাকাকালে তিনি অবৈধভাবে অর্জিত প্রায় ১১ কোটি ৪৯ লাখ ৮৪ হাজার ১৬১ টাকা বৈধ করার লক্ষ্যে ছেলে রাহাত মালেকের উপার্জন দেখিয়ে নিজের দখলে রেখেছেন। এ ছাড়া ছেলের নামে খোলা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও নিজ নামের ব্যাংক হিসাবে ৬৬৮ কোটি ৭১ লাখ ১৮ হাজার ৬৬৩ টাকা জমা করেন। সেখান থেকে প্রায় পুরো টাকা হস্তান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে মানি লন্ডারিং আইনে অপরাধ করেছেন।

জুনাইদ আহমেদ পলকের বিরুদ্ধে মামলার অভিযোগ, তিনি দায়িত্ব পালনকালে ৮ কোটি ৭৩ লাখ ৪৭ হাজার ৪২ টাকা মূলের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অর্জন করেছেন। এ ছাড়া নিজ নামে ২৫টি ব্যাংক হিসাবে ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত জমা করেন ৩২ কোটি ৪ লাখ ৯৫ হাজার ৩১৪ টাকা। এর মধ্যে প্রায় ৩০ কোটি টাকা তুলে অস্বাভাবিক লেনদেনের মাধ্যমে মানি লন্ডারিং করেছেন। তাঁর স্ত্রী আরিফা জেসমিন স্বামীর ক্ষমতার অপব্যবহার করে ৯ কোটি ৫৮ লাখ ৯৩ হাজার ৪৩৩ টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন। এ ছাড়া তাঁর নিজ নামে ৩১টি ব্যাংক হিসাব খুলে সন্দেহজনক ২২ কোটি ৩৪ লাখ ৭১ হাজার ৯৮৯ টাকা জমা করেন এবং সে অর্থ হস্তান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে মানি লন্ডারিং করেছেন।

মির্জা আজমের বিরুদ্ধে করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, তিনি সংসদ সদস্য থাকাকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে নামে-বেনামে প্রতিষ্ঠানের নামে ৩৯ কোটি ৭৬ লাখ ৬৭ হাজার ২০০ এবং মেয়ে মির্জা আফিয়া আজম অপির নামে ৩ কোটি ৯৯ লাখ ৮৩ হাজার ৫৭ টাকা মূল্যের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পত্তি অর্জন করেছেন। তিনি পরিবারের সদস্যসহ অন্যদের নামে ২০ কোটি ৭৩ লাখ ৮২ হাজার টাকার সম্পদ হেবা, দান বা বিনিময়ের মাধ্যমে হস্তান্তর ও রূপান্তর করেছেন। এ ছাড়া তাঁর ও স্ত্রী দেওয়ান আলেয়াসহ স্বার্থসংশ্লিষ্টদের নামে খোলা প্রতিষ্ঠানের মোট ৬০টি ব্যাংক হিসাবে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ৭২৫ কোটি ৭০ লাখ ৪২ হাজার ২৩২ টাকা জমা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭২৪ কোটি ৮৯ লাখ ৯৩ হাজার ৭১৫ টাকা উত্তোলন করে অস্বাভাবিক লেনদেনের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ হস্তান্তর, রূপান্তর ও স্থানান্তরের মাধ্যমে মানি লন্ডারিং আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। সূত্র : আজকের পত্রিকা।