৫৪ ও ১৬৭ ধারা সংশোধনীর রায় বহাল
- প্রকাশের সময় : ১০:৫৮:০৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ মে ২০১৬
- / ৬৩৬ বার পঠিত
ঢাকা: ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ (বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার) ও ১৬৭ ধারা (রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ) সংশোধনে হাইকোর্টের দেয়া ১৫ দফা নির্দেশনার রায় বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। মঙ্গলবার সকালে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ এই রায় দেন। বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন- বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার।
তবে আদালত এ বিষয়ে কিছু গাইড লাইনসহ পূর্ণাঙ্গ রায় দিবেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন। এর আগে গত ১৭ মে হাইকোর্টের দেয়া এই রায় চ্যালেঞ্জ করে রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের শুনানি শেষে রায়ের জন্য আজকের দিন ধার্য করেছিলেন আপিল বিভাগ।
ওইদিন আপিল বিভাগ বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার ও রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে ১৩ বছর আগে হাইকোর্টের দেয়া ১৫ দফা নির্দেশনার রায় উপেক্ষিত হওয়ায় ক্ষোভ ও হতাশা ব্যক্ত করেন। শুনানির একপর্যায়ে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের উদ্দেশে বলেন, বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার ও জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষেত্রে হাইকোর্ট রায়ে সুনির্দিষ্ট কিছু নির্দেশনা দিয়েছিলেন। ১৩ বছর পার হয়ে গেলেও একটি নির্দেশনাও সরকার প্রতিপালন করেনি।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা। রিটকারীর পক্ষে ব্যারিস্টার এম আমির উল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। তাকে সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট ইদ্রিসুর রহমান ও ব্যারিস্টার সারাহ হোসেন।
উল্লেখ্য, ১৯৯৮ সালের ২৩ জুলাই ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী এলাকা থেকে বেসরকারি ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির ছাত্র শামীম রেজা রুবেলকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করেন তৎকালীন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সহকারী কমিশনার (এসি) আকরাম হোসেন। ওই বছরের ২৪ জুলাই মিন্টো রোডের গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে মারা যান রুবেল।
এ ঘটনায় রুবেলের বাবা রমনা থানায় এসি আকরামসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এ মামলায় ২০০২ সালে বিচারিক আদালত এসি আকরামসহ ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন।
এরপর তৎকালীন সরকার রুবেল হত্যা তদন্তের জন্য বিচারপতি হাবিবুর রহমান খানের সমন্বয়ে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত শেষে কমিটি ৫৪ ও ১৬৭ ধারা সংশোধনের পক্ষে কয়েকটি সুপারিশ করে।
এ সুপারিশ বাস্তবায়িত না হওয়ার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) হাইকোর্টে রিট করেন। ওই রিট মামলার চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০০৩ সালের ৭ এপ্রিল এ ব্যাপারে ১৫ দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেন হাইকোর্ট।
হাইকোর্টের রায়ে ছয় মাসের মধ্যে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার ও ১৬৭ ধারায় রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের প্রচলিত বিধান সংশোধনের নির্দেশ দেয়া হয়। পাশাপাশি ওই ধারাগুলো সংশোধনের আগে সরকারকে কয়েক দফা নির্দেশনা মেনে চলার জন্য বলা হয়।
হাইকোর্টের দেয়া নির্দেশনাগুলোর মধ্যে রয়েছে- পুলিশ কাউকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করতে পারবে না। কাউকে গ্রেফতার করার সময় পুলিশ তার পরিচয়পত্র দেখাতে বাধ্য থাকবে। গ্রেফতারের তিন ঘণ্টার মধ্যে কারণ জানাতে হবে। বাসা বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠাছাড়া অন্য স্থান থেকে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির নিকটাত্মীয়কে এক ঘণ্টার মধ্যে টেলিফোন বা বিশেষ বার্তাবাহক মারফত বিষয়টি জানাতে হবে। গ্রেফতার ব্যক্তিকে তার পছন্দসই আইনজীবী ও নিকটাত্মীয়ের সঙ্গে পরামর্শ করতে দিতে হবে।
এছাড়া গ্রেফতার ব্যক্তিকে আবার জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন হলে ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশক্রমে কারাগারের ভেতরে কাচ দিয়ে নির্মিত বিশেষ কক্ষে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। কক্ষের বাইরে তার আইনজীবী ও নিকটাত্মীয় থাকতে পারবেন। জিজ্ঞাসাবাদের আগে ও পরে ওই ব্যক্তির ডাক্তারি পরীক্ষা করাতে হবে। পুলিশি হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ উঠলে ম্যাজিস্ট্রেট সঙ্গে সঙ্গে মেডিকেল বোর্ড গঠন করবেন। বোর্ড যদি বলে ওই ব্যক্তির ওপর নির্যাতন করা হয়েছে তাহলে পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ম্যাজিস্ট্রেট ব্যবস্থা নেবেন এবং তাকে দণ্ডবিধির ৩৩০ ধারায় অভিযুক্ত করতে হবে।
হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে প্রথমে আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করে রাষ্ট্রপক্ষ।
আপিল আবেদনে বলা হয়, এ দুটি ধারা সংশ্লিষ্ট যে আইনে রয়েছে, তা যথেষ্ট ও সঠিক। এজন্য আইন প্রণয়ন বা সংশোধনের কোনো প্রয়োজন নেই। ২০০৪ সালে আপিল বিভাগ সরকারের লিভ টু আপিল মঞ্জুর করেন। তবে সে সময় সরকার পক্ষে আবেদন জানালেও হাইকোর্টের ওইসব নির্দেশনা স্থগিত করেননি আপিল বিভাগ।
এরপর সরকার আপিল দায়ের করলে তা ২০০৭, ২০০৮ ও ২০১০ সালে শুনানির জন্য কার্যতালিকায় এলেও শুনানি হয়নি। সর্বশেষ ২০ জানুয়ারি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় এলে আদালত সরকার পক্ষকে হাইকোর্টের নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়নের অগ্রগতি জানাতে বলেন। কিন্তু সরকার তা জানায়নি। এ অবস্থায় গত ২২ মার্চ আপিল শুনানি শুরু হয়।