আজ ভয়াল ১২ নভেম্বর। ৫২ বছর আগের এই দিনে ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসে ভোলা, নোয়াখালীসহ উপকূলের প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ মানুষ প্রাণ হারান। ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের ব্যাপারে তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকদের অমার্জনীয় উদাসীনতা বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করেছিল। তবে স্বাধীনতার এত বছর পরও পৃথিবীর ইতিহাসে ভয়ংকর ও প্রাণঘাতী এই ঘূর্ণিঝড়ের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি মেলেনি। স্মৃতি সংরক্ষণেরও নেই কোনো উদ্যোগ। কয়েক বছর ধরে দিনটিকে উপকূল দিবস হিসেবে পালন করছে বিভিন্ন সংগঠন। দিবসটির রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবি উঠলেও মেলেনি কোনো আশ্বাস।
ভোলার দৌলতখান উপজেলার মেদুয়া গ্রামের আবদুল মালেক (৭৪) ওই ঘূর্ণিঝড়ে ৯১ জন স্বজন হারিয়েছেন। তিনি বলেন, সরকার আসে, সরকার যায়। এত বড় একটি দুর্যোগের দিনটি স্মরণে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নেই। ওই সময়ের বিভিন্ন ছবি, ভিডিও এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা সংরক্ষণ করা জরুরি।
জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও) এ ঘূর্ণিঝড়কে পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ংকর প্রাণঘাতী ঘূর্ণিঝড় হিসেবে উল্লেখ করেছে।
ভোলার স্বজন হারানো আব্দুল মতিন বলেন, তৎকালীন পাকিস্তান সরকার পূর্বাভাস জানা সত্ত্বেও ঝড়ের আগে তা জানায়নি। ওই ঘূর্ণিঝড়ের পর মানুষের পাশে দাঁড়াতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভোলায় গিয়েছিলেন। স্বাধীনতার পর তিনি উপকূল রক্ষায় ভোলার চারদিকে ২৭০ কিলোমিটার বাঁধ তৈরি করেন। এটি শেখের বেড়ি নামে পরিচিত। কিন্তু ওই বাঁধ দুর্বল হয়ে পড়েছে।
নোয়াখালীর সুবর্ণচরের ফজলুল হক বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে আমাদের সব গেছে। সরকারিভাবে ১২ নভেম্বরকে ‘উপকূল দিবস’ ঘোষণা করা হলে অন্তত সবাই একযোগে উপকূলের মানুষের কথা স্মরণ করতে পারত। এটি করলে ঘূর্ণিঝড়ের পাশাপাশি উপকূলের সামগ্রিক বিষয় আলোচনায় উঠে আসবে।
ভয়াল সেই ঝড়ের বিভিন্ন স্মৃতি সংরক্ষণ করার উদ্যোগ নিয়েছেন নোয়াখালীর সুবর্ণচরের তরুণ শাখাওয়াত উল্লা। তিনি গত কয়েক বছরে শতাধিক প্রত্যক্ষদর্শীর ভিডিও ডকুমেন্টারি তৈরি করেছেন। এ ছাড়া সে সময়ের ছবি, ভিডিও, সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন, আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টসহ নানা তথ্য সংরক্ষণ করছেন তিনি।
সাখাওয়াত বলেন, উপকূলের মানুষ দিনটি ভুলতে পারে না। এত বড় একটি ঘূর্ণিঝড় নিয়ে কোনো গবেষণা নেই। এর স্মৃতিচিহ্নগুলো সংরক্ষণ করা হচ্ছে না। ফলে তিনি নিজ উদ্যোগে এসব সংরক্ষণ করার উদ্যোগ নিয়েছেন, যাতে স্মৃতিচিহ্নগুলো হারিয়ে না যায়। তাঁর চাওয়া পরবর্তী প্রজন্ম যেন এ ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে জানতে পারেন। এটি দেশের দুর্যোগ নিয়ে গবেষণায়ও সহায়ক হবে।
উপকূল দিবস বাস্তবায়ন কমিটি ও কোস্টাল জার্নালিজম নেটওয়ার্কের পক্ষে রফিকুল ইসলাম মন্টু ও চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের পক্ষে জাকির হোসেন খান ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে দিনটিকে উপকূল দিবস ঘোষণার দাবি জানিয়ে আবেদন করেন। একই সঙ্গে উপকূল অঞ্চলের মানুষ ও সম্পদের সুরক্ষায় ‘উপকূল উন্নয়ন বোর্ড’ গঠনের দাবিও তোলা হয় তাঁদের লিখিত আবেদনে।
এ বিষয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান বলেন, উপকূল দিবসের দাবি যৌক্তিক। উপকূল দিবস এবং উপকূল উন্নয়ন বোর্ড গঠনের বিষয়টি মন্ত্রিসভায় উত্থাপন করবেন তিনি।
দিনটি স্মরণে আজ শনিবার দেশের উপকূলীয় এলাকায় আলোচনা সভা, কোরআনখানি ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেছে বিভিন্ন সংগঠন।