হককথা ডেস্ক: বাংলাদেশের শীর্ষ আলেমে দ্বীন, প্রবীণ ইসলামী চিন্তাবিদ, হেফাজতে ইসলামের আমীর শতবর্ষী আল্লামা আহমদ শফী আর নেই। বাংলাদেশ সময় শুক্রবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৬টা ২০ মিনিটে ঢাকার আজগর আলী হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্নাল্লিাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজেউন)। তাঁর বয়স হয়েছিলো ১০৩ বছর। উন্নত চিকিৎসার জন্য এদিনই তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে ঢাকায় আনা হয়। এর আগে হাটহাজারি মাদরাসায় ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাতে তিনি প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালকের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। পরে শারীরিক সমস্যার কারণে বিশেষ করে রক্তচাপ ও পালস রেট কমে যাওয়ায় আহমদ শফীকে বৃহস্পতিবার রাতে দ্রæত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (সিএমসিএইচ) নিয়ে যাওয়া হয় এবং আইসিইউ ইউনিটে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে বিকেল তিনটার দিকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে ঢাকায় আনা হয়। তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ বার্ধক্যজনিত দুর্বলতার পাশাপাশি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও শ্বাসকষ্ট সহ বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে বাংলাদেশের কওমি অঙ্গনে এবং প্রবাসেও শোকের ছায়া নেমে আসে। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে ও তিন মেয়েসহ অসংখ্য আত্মীয়স্বজন রেখে গেছেন। তার দুই ছেলের মধ্যে আনাস মাদানি হেফাজতে ইসলামের প্রচার সম্পাদক। অন্যজন মাওলানা মোহাম্মদ ইউসুফ পাখিয়ারটিলা কওমি মাদরাসার পরিচালক।
হেফাজতে ইসলামের আমীর বিশিষ্ট আলেম আল্লামা শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়াও বিএনপি সহ দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সহ বিভিন্ন মহল থেকে তাঁর ইন্তেকালে গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকা করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের কওমি মাদরাসাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পুরোনো এবং বড় মাদরাসা হিসেবে পরিচিত হাটহাজারী দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম মাদরাসা। এই মাদরাসার মহাপরিচালক হিসেবে কওমি মাদরাসাগুলোর নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন আল্লামা শাহ আহমদ শফী। তিনি হেফজাতে ইসলামের আমীর ছাড়াও কওমি মাদরাসা শিা বোর্ড বেফাক ও কওমি মাদরাসার সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা আল হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ছিলেন।
এদিকে, দুদিনের টানা আন্দোলনের পর চট্টগ্রামের দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসার পরিবেশ শান্ত হয়েছে। সরকার বৃহস্পতিবার মাদরাসা বন্ধের প্রজ্ঞাপন জারি করলেও এখনো সেখানে ছাত্ররা অবস্থান করছে। শনিবার থেকে ক্লাস এবং রোববার থেকে দাওরায়ে হাদীস পরীক্ষা গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে। ছয় দফা দাবিতে গত টানা দুদিন ধরে চলা ছাত্র আন্দোলন বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণার মাধ্যমে শেষ হয়েছে। আন্দোলনের মুখে শেষ পর্যন্ত হাটহাজারি মাদরাসায় সহকারী শিক্ষাসচিব আনাস মাদানিকে স্থায়ী বহিস্কার এবং আল্লামা আহমদ শফী স্বেচ্ছায় মহাপরিচালকের পদ ছেড়েছেন। এছাড়া দীর্ঘদিন থেকে ছাত্রদের উপর অত্যাচার-নির্যাতনের সাথে জড়িত কয়েকজন শিক্ষককেও বহিষ্কার করা হয়েছে। আল্লামা শফীকে সদরে মুহতামিম বা উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।
জানা গেছে, আন্দোলন শেষ হলেও শুক্রবার জুমার আগ পর্যন্ত মাদরাসার শাহী গেটে প্রবেশে কড়াকড়ি ছিল। ছাত্র ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে অনুমতি দেয়া হয়নি। তবে জুমার নামাজের সময় শাহী গেটের পকেট গেট খুলে সবার জন্য প্রবেশ উন্মুক্ত করা হয়।
অপরদিকে, হাটহাজারী মাদরাসা বন্ধের ব্যাপারে সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি হলেও শনিবার থেকে নিয়মিত কাস শুরু ও রোববার থেকে পরীা অনুষ্ঠিত হবে বলে শুক্রবার বাদ জুমা মাদরাসার সিনিয়র মুহাদ্দিস আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী জানিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শোক:
হেফাজতে ইসলামের আমীর বিশিষ্ট আলেম আল্লামা শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাসস জানায়, আল্লামা শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে এক শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি বলেন, আল্লামা শফী দেশে-বিদেশে ইসলামের প্রচার ও প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তার মৃত্যুতে দেশ একজন বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদকে হারালো। রাষ্ট্রপতি মরহুম আল্লামা শফীর রুহের মাগফেরাত কামনা করেন ও তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
অপরদিকে, আল্লামা শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক শোক বার্তায় তিনি বলেন, তিনি দেশে ইসলামী শিক্ষার প্রচার ও প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গেছেন। পাশাপাশি কওমি মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকায়নেও ভূমিকা রেখেছেন। প্রধানমন্ত্রী মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
আল্লামা শফীর মৃত্যুতে বিএনপি’র শোক
ঢাকা ডেস্ক: হেফাজতের আমীর ও হাটহাজারী মাদরাসার মুহতামিম আল্লামা আহমদ শফীর ইন্তেকালে গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তিনি এ শোক প্রকাশ করেন। শোকবাণীতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা আলমগীর মরহুম শাহ আহমদ শফীকে ইসলামী চিন্তা জগতের একজন বরেণ্য আলেম হিসেবে আখ্যায়িত করে তার মৃত্যুকে দেশবাসীর জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ও দেশের প্রখ্যাত আলেম আল্লামা শাহ আহমদ শফী’র পৃথিবী থেকে চিরবিদায়ে ইহকাল ও পরকালের সঠিক দিক নির্দেশনা পেতে বঞ্চিত হলো দেশবাসী। তিনি মানুষকে সুপথে চলার জন্য কোরান-হাদিস যেভাবে নির্দেশ দিয়েছে সেভাবে বক্তব্য রেখেছেন। ন¤্রতা, বিনয় ও সৌজন্যবোধ ছিল তার স্বভাবজাত। ইসলামী চিন্তাবিদ হিসেবে তিনি ছিলেন সর্বজন শ্রদ্ধেয়। দেশের স্বনামধন্য ইসলামী চিন্তাবিদ শাহ আহমদ শফী’র মৃত্যুতে দেশ একজন নিবেদিতপ্রাণ ও খ্যাতিমান আলেমকে হারালো, যেটি সহজে পূরণ হবার নয়।’
শোকবার্তায় শাহ আহমদ শফী’র রুহের মাগফিরাত কামনা করে মরহুমের শোকসন্তপ্ত পরিবারবর্গ, গুনগ্রাহী, ভক্ত ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি গভীর সহমর্মিতা জানান বিএনপি মহাসচিব।
আল্লামা শফীর মৃত্যুতে জামায়াত আমীরের শোক
চট্টগ্রামের হাটহাজারী দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম মাদরাসার মহাপরিচালক, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ-এর আমীর ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ-এর সভাপতি আল্লামা শাহ আহমদ শফীর ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান। শুক্রবার এক শোকবাণীতে তিনি বলেন, খ্যাতিমান আলেমে দ্বীন আল্লামা শাহ আহমদ শফীর ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করছি।
তিনি বলেন, ‘আল্লামা শাহ আহমদ শফী ছিলেন আলেম-উলামা ও তৌহিদী জনতার প্রিয় রাহবার। তার ইন্তেকালে দেশের ইসলামপ্রিয় জনতার মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তিনি সারা জীবন ইসলামের খেদমত করে গিয়েছেন। তিনি দেশে ইসলামী শিক্ষার বিস্তার ও প্রসারে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া আদায়ের ব্যাপারে মুখ্য ভূমিকা পালন করে গিয়েছেন। তিনি বহু আলেমের উস্তাদ। ইলমে দ্বীনের খেদমতের জন্য যুগ যুগ ধরে এ দেশের মানুষ তাকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে। তার ইন্তেকালে জাতি একজন খ্যাতিমান আলেমে দ্বীনকে হারাল। তার শূন্যতা সহজে পূরণ হবার নয়।
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁকে জান্নাতে উচ্চ মাকাম দান করুন। আমি তার শোকাহত পরিবার-পরিজন ও প্রিয়জনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।’
এছাড়াও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের পক্ষ থেকেও শাইখুল ইসলাম হজরত মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানীর (রহ.) অন্যতম খলিফা, বাংলাদেশ কওমী মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড (বেফাক)-এর চেয়ারম্যান, দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশেরর আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফী রাহিমাহুল্লাহর ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম ও সেক্রেটারী জেনারেল সালাহউদ্দিন আইউবী।