নিউইয়র্ক ০৫:১৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫, ২৯ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

হাতপাখার বাতাস নৌকায় লাগেনি

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১১:২৪:২১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ জুন ২০২৩
  • / ১০৬ বার পঠিত

বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে গতকাল ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটারের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। নগরীর এআরএস মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে তোলা। ছবি : মঞ্জুরুল করিম

বাংলাদেশ ডেস্ক :  বরিশালে জয়ের মালা পরলেন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত। রিটার্নিং অফিসার ঘোষিত ১২৬টি কেন্দ্রের সব কটির বেসরকারি ফলাফলে তিনি পেয়েছেন ৮৭ হাজার ৮০৮ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মো. ফয়জুল করীম পেয়েছেন ৩৩ হাজার ৮২৮ ভোট। মেয়র পদে ভোট হাতপাখার বাতাস নৌকায় লাগেনিদিয়েছেন ৫১.৩০ শতাংশ ভোটার।

শান্তিপূর্ণ পরিবেশে হঠাৎ অপ্রীতিকর ঘটনা, পাল্টাপাল্টি অভিযোগ এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিটি নির্বাচন বর্জনের মধ্য দিয়ে গতকাল সম্পন্ন হয়েছে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন। ইভিএমে আঙুলের ছাপ না মেলা এবং কিছু কেন্দ্রে এই মেশিনের ত্রুটির কারণে ভোটের গতিও ছিল ধীর। সকালে ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটারের উপস্থিতি অনেকটা কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা বাড়তে থাকে। তবে বিকেল পৌনে ৩টার পর থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টি ভোটকেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি কমিয়ে আনে।

ভোট শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল সাংবাদিকদের বলেন, বিচ্ছিন্ন দু-চারটি ঘটনা ছাড়া সার্বিক অর্থে সুন্দর ও সুচারুভাবে নির্বাচন হয়েছে। কমিশন সন্তুষ্ট। ভোট চলাকালে অনেক কেন্দ্রের সামনে নৌকা প্রতীকের সমর্থকের ভিড় দেখা গেলেও ভোটাররা প্রভাব খাটানোর কোনো অভিযোগ করেননি। বাইরের তুলনায় কেন্দ্রের ভেতরের পরিবেশ ছিল অপেক্ষাকৃত শান্ত।

ভোটগ্রহণের পুরো সময় শহরজুড়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ও প্রশাসনের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে দুপুরে হাতপাখার প্রার্থীর ওপর নৌকা প্রতীকের সমর্থকদের হামলার ঘটনার পর উভয় পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে ভোটকেন্দ্রে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ করে। সকালে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি অনেকটা কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা বাড়তে থাকে। তবে বিকেল পৌনে ৩টার পর থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টি কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি কমিয়ে আনে।

ভোট দিয়ে যা বলেছিলেন প্রার্থীরা : গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় সরকারি বরিশাল কলেজ কেন্দ্রে ভোট দেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত। ভোট দেওয়া শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হচ্ছে। আমি আমার সমর্থকদের বলেছি কোনো ধরনের অনিয়মে না জড়াতে। কেউ অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।’

নির্বাচনে জয়ের আশাবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আমি জয়ী হলে নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে দেব।’সকাল ৮টায় নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের রূপাতলী হাউজিং আব্দুর রব সেরনিয়াবাত মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম। সে সময় তিনি ব?লেন, ‘ইভিএম নিয়ে কিছুটা সংশয়ে থাকলেও ভোটের পরিবেশ দেখে আমি দারুণ খুশি। ইভিএমের ব্যাপারটা অনেক কঠিন ও জটিল। তবে সিইসি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। উনি যেভাবে বলেছেন আশা করি সেভাবেই যেন রেজাল্ট হয়।’

ভোটের পরিবেশের বিষয়ে জানতে চাইলে ফয়জুল করীম বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর মানুষ ভোট দেওয়ার যে পরিবেশ পেয়েছে মনে হয় যেন ঈদের আনন্দ পেয়েছে। আমি চাই, এ রকম সুন্দর, আনন্দ-উৎসবমুখর পরিবেশ সব সময় থাকুক।’ ভোটের ফলাফল মেনে নেবেন কি না, জানতে চাইলে ফয়জুল করীম বলেন, ‘যদি শেষ পর্যন্ত সুষ্ঠু সুন্দর নির্বাচন হয়, তখন যে রেজাল্ট হয় তা মেনে নেব। আর যদি প্রশ্নবিদ্ধ ভোট হয়, তখন আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব, রিট করব, আন্দোলন করব।’স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী কামরুল আহসান রূপণ নগরীর কালুশাহ সড়কে আলেকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ভোট দেন। সে সময় তিনি ৫ নম্বর ওয়ার্ডের দুটি কেন্দ্রে তাঁর ১৫ পোলিং এজেন্টকে ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগ করেন।

ফয়জুল করীমের ওপর হামলার অভিযোগ : ভোটগ্রহণ চলাকালে ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মো. ফয়জুল করীমের ওপর হামলার অভিযোগ করা হয়। এ অভিযোগের পর দলটির নেতাকর্মীরা ১৫ মিনিটের মতো নগরীর চৌমাথা সড়ক অবরোধ করে রাখেন।

হাতপাখা প্রতীকের মিডিয়া সেলের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, দুপুরে ২২ নম্বর ওয়ার্ডের ছাবেরা খাতুন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে যান ফয়জুল করীম। সেখান থেকে বের হওয়ার পর হাতেম আলী কলেজ চৌমাথার কাছে ৩০ থেকে ৪০ জন ব্যক্তি মেয়র প্রার্থীর ওপর অতর্কিতভাবে হামলা চালান। হামলাকারীরা লাঠিসোঁটা ও ইটপাটকেল ব্যবহার করেন। এতে প্রার্থীসহ দলের বেশ কিছু নেতাকর্মী আহত হন।

ইসলামী আন্দোলনের পক্ষ থেকে আরো কয়েকটি অভিযোগ তোলা হয়েছে। সেগুলো হলো সিটির ৭ নম্বর ওয়ার্ডে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতাকর্মীদের ব্যবহার করা চেয়ার-টেবিল ফেলে দিয়ে তাঁদের মারধর করা হয়েছে। ২ নম্বর ওয়ার্ডের শেরেবাংলা দিবা-নৈশ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে হাতপাখা প্রতীকের পোলিং এজেন্টের কার্ড ছিনিয়ে নিয়ে কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।

৭ নম্বর ওয়ার্ডের আসমত মাস্টার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে হাতপাখা প্রতীকের ক্যাম্প ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের হরিণাফুলিয়া আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নারী ভোটারদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়ে নৌকা প্রতীকে জোর করে ভোট দেওয়া হয়েছে। ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাদের চৌধুরী সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে হাতপাখার কর্মীদের মারধর করা হয়। এই খবর পেয়ে মেয়র পদপ্রার্থী ফয়জুল করীম ঘটনাস্থলে যান। সেখানে তাঁর সঙ্গে থাকা গাড়ি ও লোকজনের ওপর হামলা করা হয়।

ভোট বর্জন : ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ওই ঘটনার প্রতিবাদে বরিশাল ও খুলনা সিটি নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান এবং আসন্ন সিলেট ও রাজশাহী সিটির নির্বাচন বর্জন করেছে। এ ছাড়া আগামী শুক্রবার জেলা ও মহানগরে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।

ফয়জুলের ওপর হামলার অভিযোগে আটক ১ : সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীমের ওপর হামলার অভিযোগে একজনকে আটক করেছে পুলিশ। তাঁর নাম স্বপন। তবে তাঁর রাজনৈতিক কোনো পরিচয় আছে কি না তা জানাতে পারেনি পুলিশ। বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘স্বপনকে আটক করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় এখনো প্রার্থী বা ইসলামী আন্দোলনের পক্ষ থেকে থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়নি।’

হামলার অভিযোগ নাকচ আ. লীগের : যারা সৈয়দ ফয়জুল করীমের ওপর হামলা করেছে, তাদের গলায় আওয়ামী লীগের ব্যাজ ছিল—এমন অভিযোগ নাকচ করেছে আওয়ামী লীগ। গতকাল বিকেলে নৌকার প্রার্থীর নির্বাচন সমন্বয় অফিসে এক সংবাদ সম্মেলন করেন বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা।সংবাদ সম্মেলনে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আফজালুল করিম বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা একটি অভিযোগ। তিন দিন ধরে এ রকম নানা মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে আসছে। আমাদের সঙ্গে তাদের এখন পর্যন্ত কোনো সংঘর্ষ হয়নি।’

ফয়জুল করীমের ওপর হামলার ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত বলে মন্তব্য করে আফজালুল করিম বলেন, ‘একটা ভিডিও দেখেছি, হঠাৎ করে তাদের কার্যালয়ের ভেতরে অরাজকতা। এ দ্বারা আমার মনে হয়, সুপরিকল্পিত কোনো বিষয় থাকতে পারে শহরের ভেতর অরাজকতা তৈরির জন্য। আমাদের দিক থেকে তাদের সঙ্গে কোনো বৈরিতা নেই, ছিলও না, ভবিষ্যতেও থাকবে না।’নগরে ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীদের লাঠিসোঁটা নিয়ে মহড়া প্রসঙ্গে আফজালুল করিম বলেন, ‘মহড়া দিয়ে, লাঠি নিয়ে, অস্ত্র নিয়ে, রামদা নিয়ে কিভাবে সিটি করপোরেশন নির্বাচন চলার সময় তারা শহরে ঢুকল? আমরা মনে করি, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন ব্যাহত করার জন্য বাইরের লোক এনে তারা এভাবে মিছিলসহকারে শহরে প্রবেশ করেছে।’

নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য : বরিশালে মুফতি সৈয়দ মো. ফয়জুল করীমের হাতপাখার প্রার্থীর ওপর হামলা হওয়াটা ‘আপেক্ষিক’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেছেন, “উনি কি ইন্তেকাল করেছেন? উনার রক্তক্ষরণটা দেখিনি। যতটা শুনেছি, উনাকে কেউ পেছন দিক থেকে ঘুষি মেরেছে। উনার বক্তব্যও শুনেছি, উনিও বলেছেন, ‘ভোট বাধাগ্রস্ত হচ্ছে না। আমাকে আক্রমণ করা হয়েছে।’ আক্রমণের ঘটনার বিষয়ে জানার সঙ্গে সঙ্গে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় ভোট বাধাগ্রস্ত হয়নি।”

এর আগে ঘটনাটিকে ‘আকস্মিক ও বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবিব খান। তিনি বলেন, ‘ফয়জুল করীমের ওপর হামলার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের জন্য এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় দোষীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।’ এই হামলার ঘটনা ছাড়া বরিশাল ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের (বিএমপি) কমিশনার সাইফুল ইসলামও সাংবাদিকদের বলেন, মাঠে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী আছে। জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আ. লীগের পাল্টা অভিযোগ : অন্যদিকে নৌকার প্রার্থীর কর্মীদের মারধর ও ভোটারদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ করেছে আওয়ামী লীগ। নৌকা প্রতীকের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট মো. আফজালুল করিম রিটার্নিং অফিসারের কাছে লিখিত এই অভিযোগ করেন। এতে বলা হয়, হাতপাখার প্রার্থী ফয়জুল করীম সদলবলে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ঢুকে ভোটারদের প্রভাবিত করছেন। তাঁকে বাধা প্রদান করলে নৌকা প্রতীকের কর্মীদের মারধর করা হয়েছে। তাঁর হাতপাখা মার্কার কর্মীরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছেন। হাতপাখা প্রতীকের নারী কর্মীরা লাইনে দাঁড়ানো নারী ভোটারদের ভোট প্রদানে প্রভাবিত করেছেন। ভোটকেন্দ্রে নিয়োজিত দায়িত্বপ্রাপ্তদের অভিযোগ করলেও তাঁরা অসহযোগিতা করেছেন।

আওয়ামী লীগের অভিযোগে হাতপাখার কর্মীদের বিরুদ্ধে যেসব কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগ তোলা হয়েছে সেগুলো হলো ৬ নম্বর ওয়ার্ডের এ করিম আইডিয়াল কলেজ, ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব রূপাতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মাহামুদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের পুরানপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের একে স্কুল ইনস্টিটিউশন। সূত্র : কালের কন্ঠ
সুমি/হককথা

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

হাতপাখার বাতাস নৌকায় লাগেনি

প্রকাশের সময় : ১১:২৪:২১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ জুন ২০২৩

বাংলাদেশ ডেস্ক :  বরিশালে জয়ের মালা পরলেন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত। রিটার্নিং অফিসার ঘোষিত ১২৬টি কেন্দ্রের সব কটির বেসরকারি ফলাফলে তিনি পেয়েছেন ৮৭ হাজার ৮০৮ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মো. ফয়জুল করীম পেয়েছেন ৩৩ হাজার ৮২৮ ভোট। মেয়র পদে ভোট হাতপাখার বাতাস নৌকায় লাগেনিদিয়েছেন ৫১.৩০ শতাংশ ভোটার।

শান্তিপূর্ণ পরিবেশে হঠাৎ অপ্রীতিকর ঘটনা, পাল্টাপাল্টি অভিযোগ এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিটি নির্বাচন বর্জনের মধ্য দিয়ে গতকাল সম্পন্ন হয়েছে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন। ইভিএমে আঙুলের ছাপ না মেলা এবং কিছু কেন্দ্রে এই মেশিনের ত্রুটির কারণে ভোটের গতিও ছিল ধীর। সকালে ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটারের উপস্থিতি অনেকটা কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা বাড়তে থাকে। তবে বিকেল পৌনে ৩টার পর থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টি ভোটকেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি কমিয়ে আনে।

ভোট শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল সাংবাদিকদের বলেন, বিচ্ছিন্ন দু-চারটি ঘটনা ছাড়া সার্বিক অর্থে সুন্দর ও সুচারুভাবে নির্বাচন হয়েছে। কমিশন সন্তুষ্ট। ভোট চলাকালে অনেক কেন্দ্রের সামনে নৌকা প্রতীকের সমর্থকের ভিড় দেখা গেলেও ভোটাররা প্রভাব খাটানোর কোনো অভিযোগ করেননি। বাইরের তুলনায় কেন্দ্রের ভেতরের পরিবেশ ছিল অপেক্ষাকৃত শান্ত।

ভোটগ্রহণের পুরো সময় শহরজুড়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ও প্রশাসনের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে দুপুরে হাতপাখার প্রার্থীর ওপর নৌকা প্রতীকের সমর্থকদের হামলার ঘটনার পর উভয় পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে ভোটকেন্দ্রে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ করে। সকালে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি অনেকটা কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা বাড়তে থাকে। তবে বিকেল পৌনে ৩টার পর থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টি কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি কমিয়ে আনে।

ভোট দিয়ে যা বলেছিলেন প্রার্থীরা : গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় সরকারি বরিশাল কলেজ কেন্দ্রে ভোট দেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত। ভোট দেওয়া শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হচ্ছে। আমি আমার সমর্থকদের বলেছি কোনো ধরনের অনিয়মে না জড়াতে। কেউ অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।’

নির্বাচনে জয়ের আশাবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আমি জয়ী হলে নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে দেব।’সকাল ৮টায় নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের রূপাতলী হাউজিং আব্দুর রব সেরনিয়াবাত মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম। সে সময় তিনি ব?লেন, ‘ইভিএম নিয়ে কিছুটা সংশয়ে থাকলেও ভোটের পরিবেশ দেখে আমি দারুণ খুশি। ইভিএমের ব্যাপারটা অনেক কঠিন ও জটিল। তবে সিইসি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। উনি যেভাবে বলেছেন আশা করি সেভাবেই যেন রেজাল্ট হয়।’

ভোটের পরিবেশের বিষয়ে জানতে চাইলে ফয়জুল করীম বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর মানুষ ভোট দেওয়ার যে পরিবেশ পেয়েছে মনে হয় যেন ঈদের আনন্দ পেয়েছে। আমি চাই, এ রকম সুন্দর, আনন্দ-উৎসবমুখর পরিবেশ সব সময় থাকুক।’ ভোটের ফলাফল মেনে নেবেন কি না, জানতে চাইলে ফয়জুল করীম বলেন, ‘যদি শেষ পর্যন্ত সুষ্ঠু সুন্দর নির্বাচন হয়, তখন যে রেজাল্ট হয় তা মেনে নেব। আর যদি প্রশ্নবিদ্ধ ভোট হয়, তখন আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব, রিট করব, আন্দোলন করব।’স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী কামরুল আহসান রূপণ নগরীর কালুশাহ সড়কে আলেকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ভোট দেন। সে সময় তিনি ৫ নম্বর ওয়ার্ডের দুটি কেন্দ্রে তাঁর ১৫ পোলিং এজেন্টকে ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগ করেন।

ফয়জুল করীমের ওপর হামলার অভিযোগ : ভোটগ্রহণ চলাকালে ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মো. ফয়জুল করীমের ওপর হামলার অভিযোগ করা হয়। এ অভিযোগের পর দলটির নেতাকর্মীরা ১৫ মিনিটের মতো নগরীর চৌমাথা সড়ক অবরোধ করে রাখেন।

হাতপাখা প্রতীকের মিডিয়া সেলের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, দুপুরে ২২ নম্বর ওয়ার্ডের ছাবেরা খাতুন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে যান ফয়জুল করীম। সেখান থেকে বের হওয়ার পর হাতেম আলী কলেজ চৌমাথার কাছে ৩০ থেকে ৪০ জন ব্যক্তি মেয়র প্রার্থীর ওপর অতর্কিতভাবে হামলা চালান। হামলাকারীরা লাঠিসোঁটা ও ইটপাটকেল ব্যবহার করেন। এতে প্রার্থীসহ দলের বেশ কিছু নেতাকর্মী আহত হন।

ইসলামী আন্দোলনের পক্ষ থেকে আরো কয়েকটি অভিযোগ তোলা হয়েছে। সেগুলো হলো সিটির ৭ নম্বর ওয়ার্ডে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতাকর্মীদের ব্যবহার করা চেয়ার-টেবিল ফেলে দিয়ে তাঁদের মারধর করা হয়েছে। ২ নম্বর ওয়ার্ডের শেরেবাংলা দিবা-নৈশ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে হাতপাখা প্রতীকের পোলিং এজেন্টের কার্ড ছিনিয়ে নিয়ে কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।

৭ নম্বর ওয়ার্ডের আসমত মাস্টার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে হাতপাখা প্রতীকের ক্যাম্প ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের হরিণাফুলিয়া আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নারী ভোটারদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়ে নৌকা প্রতীকে জোর করে ভোট দেওয়া হয়েছে। ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাদের চৌধুরী সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে হাতপাখার কর্মীদের মারধর করা হয়। এই খবর পেয়ে মেয়র পদপ্রার্থী ফয়জুল করীম ঘটনাস্থলে যান। সেখানে তাঁর সঙ্গে থাকা গাড়ি ও লোকজনের ওপর হামলা করা হয়।

ভোট বর্জন : ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ওই ঘটনার প্রতিবাদে বরিশাল ও খুলনা সিটি নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান এবং আসন্ন সিলেট ও রাজশাহী সিটির নির্বাচন বর্জন করেছে। এ ছাড়া আগামী শুক্রবার জেলা ও মহানগরে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।

ফয়জুলের ওপর হামলার অভিযোগে আটক ১ : সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীমের ওপর হামলার অভিযোগে একজনকে আটক করেছে পুলিশ। তাঁর নাম স্বপন। তবে তাঁর রাজনৈতিক কোনো পরিচয় আছে কি না তা জানাতে পারেনি পুলিশ। বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘স্বপনকে আটক করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় এখনো প্রার্থী বা ইসলামী আন্দোলনের পক্ষ থেকে থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়নি।’

হামলার অভিযোগ নাকচ আ. লীগের : যারা সৈয়দ ফয়জুল করীমের ওপর হামলা করেছে, তাদের গলায় আওয়ামী লীগের ব্যাজ ছিল—এমন অভিযোগ নাকচ করেছে আওয়ামী লীগ। গতকাল বিকেলে নৌকার প্রার্থীর নির্বাচন সমন্বয় অফিসে এক সংবাদ সম্মেলন করেন বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা।সংবাদ সম্মেলনে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আফজালুল করিম বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা একটি অভিযোগ। তিন দিন ধরে এ রকম নানা মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে আসছে। আমাদের সঙ্গে তাদের এখন পর্যন্ত কোনো সংঘর্ষ হয়নি।’

ফয়জুল করীমের ওপর হামলার ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত বলে মন্তব্য করে আফজালুল করিম বলেন, ‘একটা ভিডিও দেখেছি, হঠাৎ করে তাদের কার্যালয়ের ভেতরে অরাজকতা। এ দ্বারা আমার মনে হয়, সুপরিকল্পিত কোনো বিষয় থাকতে পারে শহরের ভেতর অরাজকতা তৈরির জন্য। আমাদের দিক থেকে তাদের সঙ্গে কোনো বৈরিতা নেই, ছিলও না, ভবিষ্যতেও থাকবে না।’নগরে ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীদের লাঠিসোঁটা নিয়ে মহড়া প্রসঙ্গে আফজালুল করিম বলেন, ‘মহড়া দিয়ে, লাঠি নিয়ে, অস্ত্র নিয়ে, রামদা নিয়ে কিভাবে সিটি করপোরেশন নির্বাচন চলার সময় তারা শহরে ঢুকল? আমরা মনে করি, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন ব্যাহত করার জন্য বাইরের লোক এনে তারা এভাবে মিছিলসহকারে শহরে প্রবেশ করেছে।’

নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য : বরিশালে মুফতি সৈয়দ মো. ফয়জুল করীমের হাতপাখার প্রার্থীর ওপর হামলা হওয়াটা ‘আপেক্ষিক’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেছেন, “উনি কি ইন্তেকাল করেছেন? উনার রক্তক্ষরণটা দেখিনি। যতটা শুনেছি, উনাকে কেউ পেছন দিক থেকে ঘুষি মেরেছে। উনার বক্তব্যও শুনেছি, উনিও বলেছেন, ‘ভোট বাধাগ্রস্ত হচ্ছে না। আমাকে আক্রমণ করা হয়েছে।’ আক্রমণের ঘটনার বিষয়ে জানার সঙ্গে সঙ্গে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় ভোট বাধাগ্রস্ত হয়নি।”

এর আগে ঘটনাটিকে ‘আকস্মিক ও বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবিব খান। তিনি বলেন, ‘ফয়জুল করীমের ওপর হামলার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের জন্য এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় দোষীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।’ এই হামলার ঘটনা ছাড়া বরিশাল ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের (বিএমপি) কমিশনার সাইফুল ইসলামও সাংবাদিকদের বলেন, মাঠে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী আছে। জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আ. লীগের পাল্টা অভিযোগ : অন্যদিকে নৌকার প্রার্থীর কর্মীদের মারধর ও ভোটারদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ করেছে আওয়ামী লীগ। নৌকা প্রতীকের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট মো. আফজালুল করিম রিটার্নিং অফিসারের কাছে লিখিত এই অভিযোগ করেন। এতে বলা হয়, হাতপাখার প্রার্থী ফয়জুল করীম সদলবলে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ঢুকে ভোটারদের প্রভাবিত করছেন। তাঁকে বাধা প্রদান করলে নৌকা প্রতীকের কর্মীদের মারধর করা হয়েছে। তাঁর হাতপাখা মার্কার কর্মীরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছেন। হাতপাখা প্রতীকের নারী কর্মীরা লাইনে দাঁড়ানো নারী ভোটারদের ভোট প্রদানে প্রভাবিত করেছেন। ভোটকেন্দ্রে নিয়োজিত দায়িত্বপ্রাপ্তদের অভিযোগ করলেও তাঁরা অসহযোগিতা করেছেন।

আওয়ামী লীগের অভিযোগে হাতপাখার কর্মীদের বিরুদ্ধে যেসব কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগ তোলা হয়েছে সেগুলো হলো ৬ নম্বর ওয়ার্ডের এ করিম আইডিয়াল কলেজ, ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব রূপাতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মাহামুদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের পুরানপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের একে স্কুল ইনস্টিটিউশন। সূত্র : কালের কন্ঠ
সুমি/হককথা