নিউইয়র্ক ০২:০১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

স্বতন্ত্র ইন্দো-প্যাসিফিক রূপরেখা ঘোষণা বাংলাদেশের

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০২:২১:১১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৩
  • / ৪৬ বার পঠিত

বাংলাদেশ ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন জাপান, যুক্তরাষ্ট্র এবং বৃটেন সফরের আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের স্বতন্ত্র ‘ইন্দো-প্যাসিফিক রূপরেখা’ ঘোষণা করা হয়েছে। আজ থেকে সরকার প্রধানের ত্রিদেশীয় সফর শুরু হচ্ছে। ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি বাস্তবায়নে সক্রিয় চতুর্দেশীয় কোয়াডের গুরুত্বপূর্ণ দুই অংশীদার যুক্তরাষ্ট্র এবং জাপান এবং পশ্চিমের প্রভাবশালী রাষ্ট্র বৃটেনে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি সফরের বিস্তারিত সোমবারের সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। আর বাংলাদেশের নিজস্ব ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুক সবিস্তারে তুলে ধরেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি।

তিনি বলেন, বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধিকে তার ‘ভিশন-২০৪১’ বাস্তবায়ন তথা ২০৪১ সালের মধ্যে একটি আধুনিক, জ্ঞান-ভিত্তিক, উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হিসেবে বিবেচনা করে। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের বৈশ্বিক জিডিপিতে সামষ্টিক অংশ, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অগ্রগণ্য অবস্থান, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সামগ্রিক কার্যক্রম এবং প্রযুক্তি খাতে গতিশীল বিকাশ বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি টেকসই অর্থনীতি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিতকল্পে একটি সুদূরপ্রসারী ভূমিকা পালন করতে পারে। বাংলাদেশ তাই এই অঞ্চলের সংশ্লিষ্ট সকলের সমৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি অবাধ, উন্মুক্ত, শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ইন্দো-প্যাসিফিকের ধারণা বাস্তবায়নের বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করে।

বাংলাদেশের নিজস্ব ‘ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুক’-এর বিস্তারিত মানবজমিনের পাঠকদের বিবেচনায় হুবহু উপস্থাপন করা হলো- মৌলিক নীতিমালা- ক. জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পররাষ্ট্রনীতির মূলমন্ত্র ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’। খ. বাংলাদেশ সংবিধান অনুসারে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মূলনীতিসমূহ যথা জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও সমতার প্রতি শ্রদ্ধা, রাজনৈতিক স্বাধীনতা, অন্যান্য রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা, আন্তর্জাতিক বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান এবং আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘের সনদে বর্ণিত নীতিসমূহের প্রতি শ্রদ্ধা; এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে শক্তিপ্রয়োগ পরিহার এবং সাধারণ ও সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণের জন্য অবিরাম প্রয়াস অব্যাহত রাখা। গ. সমুদ্র আইন সংক্রান্ত জাতিসংঘ সনদ বা আনক্লস, ১৯৮২-সহ প্রযোজ্য জাতিসংঘ চুক্তিসমূহ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক কনভেনশনসমূহ মেনে চলা। ঘ. টেকসই উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা, মানবিক কার্যক্রম এবং মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতাসমূহ সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে গঠনমূলক আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করা।

অভিলক্ষ্য- উপর্যুক্ত মৌলিক নীতিমালার আলোকে নিম্নে বর্ণিত অভিলক্ষ্যসমূহ বাংলাদেশের ইন্দো-প্যাসিফিক রূপরেখা এবং এ সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমকে পরিচালিত করবে :

১. ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে সকলের জন্য শান্তি, সমৃদ্ধি, নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতা বজায় রাখার লক্ষ্যে পারস্পরিক আস্থা ও সম্মান অক্ষুণ্ন রাখা, অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতার ক্ষেত্র সমপ্রসারণ এবং সংলাপ ও বোঝাপড়ার উপর গুরুত্ব আরোপ করা।

২. ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের মেরিটাইম বিষয়ক সুরক্ষা ও নিরাপত্তার বিদ্যমান কাঠামোকে শক্তিশালীকরণ, যথা সমুদ্রে জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত সাড়া দেয়া ও সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ কার্যক্রম পরিচালনা করা এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আনক্লস, ১৯৮২-সহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আন্তর্জাতিক আইন ও কনভেনশন অনুসারে অবাধ সামুদ্রিক চলাচল ও কোনো দেশের ভূখণ্ড বা জলসীমার উপর দিয়ে আন্তঃরাষ্ট্রীয় বিমান চলাচলের অধিকারের বিষয়ে পূর্ণ সমর্থন বজায় রাখা।

৩. ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের সংশ্লিষ্ট সহযোগীদের সঙ্গে একযোগে আন্তর্জাতিক নিরস্ত্রীকরণ, শান্তিরক্ষা, শান্তি বিনির্মাণ এবং সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমে অর্থবহ ও আন্তর্জাতিক মূল্যবোধসম্পন্ন অবদান রাখা।

৪. ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে আন্তঃদেশীয় সংঘটিত অপরাধসমূহ দমনে নীতি কাঠামো প্রণয়ন ও ব্যবহারিক পদক্ষেপের মাধ্যমে আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রয়াসকে সমর্থন করা।

৫. জাতিসংঘে বাংলাদেশ প্রবর্তিত ‘শান্তির সংস্কৃতি’ এজেন্ডা বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা সমপ্রসারণ, ‘নারী, শান্তি ও নিরাপত্তা’ এজেন্ডার উপর অব্যাহত আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার বজায় রাখা, আন্তঃধর্মীয় সমপ্রীতি রক্ষা করা এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে শান্তিপূর্ণ, ন্যায়সঙ্গত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের জন্য কার্যক্রম অব্যাহত রাখা।

৬. উন্মুক্ত, স্বচ্ছ ও নিয়ম-ভিত্তিক বহুপক্ষীয় ব্যবস্থাসমূহ সুসংহতকরণের মধ্যদিয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, উন্নয়নের অধিকার এবং সকলের সার্বিক সমৃদ্ধির মাধ্যমে ইন্দো-প্যাসিফিক এবং এর বাইরেও সুষম ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতকরণে ভূমিকা রাখা।

৭. ভৌত, প্রাতিষ্ঠানিক, জ্বালানি, ডিজিটাল এবং মনুষ্য পর্যায়ে সংযুক্তির প্রসার, নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে পণ্য, পরিষেবা, পুঁজি এবং জনগণের চলাচল সহজতর করা এবং প্রযুক্তি হস্তান্তর, অভিগম্য উদ্ভাবন এবং উন্মুক্ত ও নিরাপদ সাইবারস্পেস ও মহাকাশ-এ দায়িত্বশীল আচরণ নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে কার্যক্রম অব্যাহত রাখা।

৮. যেকোনো ভবিষ্যৎ সংকট ও বিপর্যয়মূলক পরিস্থিতি সুষ্ঠুভাবে ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিরবচ্ছিন্ন ও অবাধ বাণিজ্য প্রবাহকে সুসংহত করতে টেকসই আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক যোগান শৃঙ্খল বা ভ্যালু চেইন তৈরির উদ্দেশ্যে দেশীয় কৃষি, শিল্প এবং সেবা খাতসমূহের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করা।

৯. টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ১৪-সহ আন্তর্জাতিকভাবে সম্মত সংশ্লিষ্ট অন্যান্য উন্নয়ন অঙ্গীকারসমূহের আলোকে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে মহাসাগর, সাগর এবং সামুদ্রিক সম্পদের সংরক্ষণ, টেকসই ব্যবহার এবং ব্যবস্থাপনাকে সুসংহত করা।

১০. ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে খাদ্য নিরাপত্তা, জল-সংহতি এবং দুর্যোগ ঝুঁকি প্রশমনে দেশীয় উত্তম চর্চাসমূহকে তুলে ধরাসহ সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করা।

১১. জলবায়ু পরিবর্তন, জীববৈচিত্র্য হ্রাস, সামুদ্রিক দূষণ এবং পরিবেশের উপর ক্ষতিকারক প্রভাবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক কনভেনশন ও অঙ্গীকারসমূহের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ধারাবাহিকভাবে দৃশ্যমান কার্যক্রম গ্রহণ করা।

১২. সকলের জন্য জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি হস্তান্তরসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা।

১৩. ভবিষ্যৎ অতিমারি মোকাবিলায় সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ এবং স্বাস্থ্য নিরাপত্তা জোরদারকরণের লক্ষ্যে ভ্যাকসিন, ডায়াগনস্টিক ও চিকিৎসা সুরক্ষা সামগ্রীর মতো ‘বৈশ্বিক সম্পদ’-এ সকলের অভিগম্যতা নিশ্চিত করাসহ প্রয়োজনীয় কার্যক্রম অব্যাহত রাখা।

১৪. আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্র সমপ্রসারণ এবং পরস্পরের পরিপূরক স্বার্থসমূহ সমুন্নত রাখতে উপ-আঞ্চলিক অংশীদার ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের সঙ্গে সহযোগিতা জোরদার করা।

১৫. বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, গবেষণা এবং উদ্ভাবন খাতে সহযোগিতা ও সম্পৃক্তি বাড়ানোর মাধ্যমে সকলের সামষ্টিক কল্যাণ নিশ্চিতপূর্বক ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ রূপকল্প পূরণে অগ্রসর হওয়ার প্রয়াস অব্যাহত রাখা।
সুমি/হককথা

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

স্বতন্ত্র ইন্দো-প্যাসিফিক রূপরেখা ঘোষণা বাংলাদেশের

প্রকাশের সময় : ০২:২১:১১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৩

বাংলাদেশ ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন জাপান, যুক্তরাষ্ট্র এবং বৃটেন সফরের আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের স্বতন্ত্র ‘ইন্দো-প্যাসিফিক রূপরেখা’ ঘোষণা করা হয়েছে। আজ থেকে সরকার প্রধানের ত্রিদেশীয় সফর শুরু হচ্ছে। ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি বাস্তবায়নে সক্রিয় চতুর্দেশীয় কোয়াডের গুরুত্বপূর্ণ দুই অংশীদার যুক্তরাষ্ট্র এবং জাপান এবং পশ্চিমের প্রভাবশালী রাষ্ট্র বৃটেনে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি সফরের বিস্তারিত সোমবারের সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। আর বাংলাদেশের নিজস্ব ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুক সবিস্তারে তুলে ধরেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি।

তিনি বলেন, বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধিকে তার ‘ভিশন-২০৪১’ বাস্তবায়ন তথা ২০৪১ সালের মধ্যে একটি আধুনিক, জ্ঞান-ভিত্তিক, উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হিসেবে বিবেচনা করে। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের বৈশ্বিক জিডিপিতে সামষ্টিক অংশ, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অগ্রগণ্য অবস্থান, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সামগ্রিক কার্যক্রম এবং প্রযুক্তি খাতে গতিশীল বিকাশ বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি টেকসই অর্থনীতি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিতকল্পে একটি সুদূরপ্রসারী ভূমিকা পালন করতে পারে। বাংলাদেশ তাই এই অঞ্চলের সংশ্লিষ্ট সকলের সমৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি অবাধ, উন্মুক্ত, শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ইন্দো-প্যাসিফিকের ধারণা বাস্তবায়নের বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করে।

বাংলাদেশের নিজস্ব ‘ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুক’-এর বিস্তারিত মানবজমিনের পাঠকদের বিবেচনায় হুবহু উপস্থাপন করা হলো- মৌলিক নীতিমালা- ক. জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পররাষ্ট্রনীতির মূলমন্ত্র ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’। খ. বাংলাদেশ সংবিধান অনুসারে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মূলনীতিসমূহ যথা জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও সমতার প্রতি শ্রদ্ধা, রাজনৈতিক স্বাধীনতা, অন্যান্য রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা, আন্তর্জাতিক বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান এবং আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘের সনদে বর্ণিত নীতিসমূহের প্রতি শ্রদ্ধা; এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে শক্তিপ্রয়োগ পরিহার এবং সাধারণ ও সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণের জন্য অবিরাম প্রয়াস অব্যাহত রাখা। গ. সমুদ্র আইন সংক্রান্ত জাতিসংঘ সনদ বা আনক্লস, ১৯৮২-সহ প্রযোজ্য জাতিসংঘ চুক্তিসমূহ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক কনভেনশনসমূহ মেনে চলা। ঘ. টেকসই উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা, মানবিক কার্যক্রম এবং মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতাসমূহ সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে গঠনমূলক আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করা।

অভিলক্ষ্য- উপর্যুক্ত মৌলিক নীতিমালার আলোকে নিম্নে বর্ণিত অভিলক্ষ্যসমূহ বাংলাদেশের ইন্দো-প্যাসিফিক রূপরেখা এবং এ সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমকে পরিচালিত করবে :

১. ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে সকলের জন্য শান্তি, সমৃদ্ধি, নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতা বজায় রাখার লক্ষ্যে পারস্পরিক আস্থা ও সম্মান অক্ষুণ্ন রাখা, অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতার ক্ষেত্র সমপ্রসারণ এবং সংলাপ ও বোঝাপড়ার উপর গুরুত্ব আরোপ করা।

২. ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের মেরিটাইম বিষয়ক সুরক্ষা ও নিরাপত্তার বিদ্যমান কাঠামোকে শক্তিশালীকরণ, যথা সমুদ্রে জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত সাড়া দেয়া ও সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ কার্যক্রম পরিচালনা করা এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আনক্লস, ১৯৮২-সহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আন্তর্জাতিক আইন ও কনভেনশন অনুসারে অবাধ সামুদ্রিক চলাচল ও কোনো দেশের ভূখণ্ড বা জলসীমার উপর দিয়ে আন্তঃরাষ্ট্রীয় বিমান চলাচলের অধিকারের বিষয়ে পূর্ণ সমর্থন বজায় রাখা।

৩. ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের সংশ্লিষ্ট সহযোগীদের সঙ্গে একযোগে আন্তর্জাতিক নিরস্ত্রীকরণ, শান্তিরক্ষা, শান্তি বিনির্মাণ এবং সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমে অর্থবহ ও আন্তর্জাতিক মূল্যবোধসম্পন্ন অবদান রাখা।

৪. ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে আন্তঃদেশীয় সংঘটিত অপরাধসমূহ দমনে নীতি কাঠামো প্রণয়ন ও ব্যবহারিক পদক্ষেপের মাধ্যমে আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রয়াসকে সমর্থন করা।

৫. জাতিসংঘে বাংলাদেশ প্রবর্তিত ‘শান্তির সংস্কৃতি’ এজেন্ডা বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা সমপ্রসারণ, ‘নারী, শান্তি ও নিরাপত্তা’ এজেন্ডার উপর অব্যাহত আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার বজায় রাখা, আন্তঃধর্মীয় সমপ্রীতি রক্ষা করা এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে শান্তিপূর্ণ, ন্যায়সঙ্গত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের জন্য কার্যক্রম অব্যাহত রাখা।

৬. উন্মুক্ত, স্বচ্ছ ও নিয়ম-ভিত্তিক বহুপক্ষীয় ব্যবস্থাসমূহ সুসংহতকরণের মধ্যদিয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, উন্নয়নের অধিকার এবং সকলের সার্বিক সমৃদ্ধির মাধ্যমে ইন্দো-প্যাসিফিক এবং এর বাইরেও সুষম ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতকরণে ভূমিকা রাখা।

৭. ভৌত, প্রাতিষ্ঠানিক, জ্বালানি, ডিজিটাল এবং মনুষ্য পর্যায়ে সংযুক্তির প্রসার, নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে পণ্য, পরিষেবা, পুঁজি এবং জনগণের চলাচল সহজতর করা এবং প্রযুক্তি হস্তান্তর, অভিগম্য উদ্ভাবন এবং উন্মুক্ত ও নিরাপদ সাইবারস্পেস ও মহাকাশ-এ দায়িত্বশীল আচরণ নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে কার্যক্রম অব্যাহত রাখা।

৮. যেকোনো ভবিষ্যৎ সংকট ও বিপর্যয়মূলক পরিস্থিতি সুষ্ঠুভাবে ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিরবচ্ছিন্ন ও অবাধ বাণিজ্য প্রবাহকে সুসংহত করতে টেকসই আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক যোগান শৃঙ্খল বা ভ্যালু চেইন তৈরির উদ্দেশ্যে দেশীয় কৃষি, শিল্প এবং সেবা খাতসমূহের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করা।

৯. টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ১৪-সহ আন্তর্জাতিকভাবে সম্মত সংশ্লিষ্ট অন্যান্য উন্নয়ন অঙ্গীকারসমূহের আলোকে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে মহাসাগর, সাগর এবং সামুদ্রিক সম্পদের সংরক্ষণ, টেকসই ব্যবহার এবং ব্যবস্থাপনাকে সুসংহত করা।

১০. ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে খাদ্য নিরাপত্তা, জল-সংহতি এবং দুর্যোগ ঝুঁকি প্রশমনে দেশীয় উত্তম চর্চাসমূহকে তুলে ধরাসহ সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করা।

১১. জলবায়ু পরিবর্তন, জীববৈচিত্র্য হ্রাস, সামুদ্রিক দূষণ এবং পরিবেশের উপর ক্ষতিকারক প্রভাবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক কনভেনশন ও অঙ্গীকারসমূহের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ধারাবাহিকভাবে দৃশ্যমান কার্যক্রম গ্রহণ করা।

১২. সকলের জন্য জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি হস্তান্তরসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা।

১৩. ভবিষ্যৎ অতিমারি মোকাবিলায় সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ এবং স্বাস্থ্য নিরাপত্তা জোরদারকরণের লক্ষ্যে ভ্যাকসিন, ডায়াগনস্টিক ও চিকিৎসা সুরক্ষা সামগ্রীর মতো ‘বৈশ্বিক সম্পদ’-এ সকলের অভিগম্যতা নিশ্চিত করাসহ প্রয়োজনীয় কার্যক্রম অব্যাহত রাখা।

১৪. আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্র সমপ্রসারণ এবং পরস্পরের পরিপূরক স্বার্থসমূহ সমুন্নত রাখতে উপ-আঞ্চলিক অংশীদার ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের সঙ্গে সহযোগিতা জোরদার করা।

১৫. বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, গবেষণা এবং উদ্ভাবন খাতে সহযোগিতা ও সম্পৃক্তি বাড়ানোর মাধ্যমে সকলের সামষ্টিক কল্যাণ নিশ্চিতপূর্বক ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ রূপকল্প পূরণে অগ্রসর হওয়ার প্রয়াস অব্যাহত রাখা।
সুমি/হককথা