নিউইয়র্ক ০৭:৪২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

সোহেল তাজ কি আওয়ামী লীগের হাল ধরছেন?

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১২:৪৫:০৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৮ নভেম্বর ২০২৪
  • / ২০ বার পঠিত

ঢাকা ডেস্ক: বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরাগভাজন হয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদপুত্র সোহেল তাজ। ইস্তফার কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা, অন্যায়গুলো মেনে নিয়ে জি হুজুর বলে থাকার মানুষ না তিনি। চূড়ান্ত প্রতিবাদ হিসেবে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি।
সম্প্রতি দেশের একটি জাতীয় দৈনিকের সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তাজপুত্র সোহেল। সেখানে তিনি নানা বিষয়ে কথা বলেছেন। কথা বলেছেন স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক সংগঠন আওয়ামী লীগের সংকটকালীন হাল ধরার বিষয়েও। ৭৫ পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের হাল ধরেছিলেন তাজউদ্দীন আহমদের সহধর্মিণী, সোহেল তাজের মা সৈয়দ জোহরা তাজউদ্দীন। এবারও দলটির সংকটময় সময়ে তার পরিবারের কেউ দলটির হাল ধরতে পারেন এমন আলোচনা চলছে। এই আলোচনার সত্যতা কতটুকু, সেই সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয় তার কাছে।
সোহেল তাজ বলেন, দেখেন আমি বারবার একটা কথা বলেছি আওয়ামী লীগে ছিলাম, আছি, থাকব। কিন্তু এই আওয়ামী লীগে না। এটা আমার আওয়ামী লীগ না। এটা কোনো আওয়ামী লীগ না। এটা হচ্ছে লুটেরা লীগ, এটা হচ্ছে খুনি লীগ, এটা হচ্ছে গুম লীগ, এটা হচ্ছে অব্যবস্থাপনা লীগ, দুর্নীতি লীগ। এটা সাধারণ মানুষ হত্যাকারী লীগ। এই আওয়ামী লীগের তো আমি হতে চাইনি। তিনি বলেন, আমি আশ্চর্য হয়েছি এই যে, আত্মোপলব্ধি, আত্মসমালোচনা, অনুশোচনা, এটা দেখছি না আওয়ামী লীগের ভেতর। এটা আমাকে খুব হতাশ করেছে। আমি মনে করি এখনো আওয়ামী লীগের ভেতরে ভালো মানুষ আছে।
তিনি বলেন, ছাত্র আন্দোলনের ঘটনাগুলো বিবেককে এমনভাবে নাড়া দিয়েছে যে, আমি বাধ্য হয়েছি প্রতিবাদ করতে। আমি আমার অবস্থান থেকে প্রতিবাদ করেছি। আমি ২৭ জুলাই ডিবি অফিসে গিয়েছি ছাত্র সমন্বয়কদের সেখানে আটকে রাখা হয়েছিল। আন্দোলন প্রত্যাহারের ফলস স্টেটমেন্ট যখন দেয়া হলো, আমি আশ্চর্য হয়েছি যখন দেখলাম প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) মেট্রোরেলের সামনে গিয়ে কান্নাকাটি করছেন যে আমাদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অথচ শত শত প্রাণ আমরা হারিয়েছি। তিনি বলেন, আমি মানুষের কাছে মেসেজটা দিতে চেয়েছিলাম। কারণ সাংঘাতিকভাবে মিডিয়াতে একই জিনিস রিপিট করা হচ্ছিল, মেট্রোরেলের ক্ষতি হয়েছে, অবকাঠামোর ক্ষতি হয়েছে। আমি আশ্চর্য হলাম যে মানুষ ভুলে যাচ্ছে মেট্রোরেল, পদ্মা ব্রিজ- এগুলো জনগণের টাকায় তৈরি হয়েছে। এগুলো আবার পরে গড়ে নিতে পারব। যারা প্রাণ হারিয়েছে তাদের তো আমরা ফিরে পাব না। তখন আমি এই মেসেজটা দিলাম- একটা প্রাণ হচ্ছে অমূল্য।
তাজপুত্র বলেন, আমি ডিবি অফিসে যখন গেলাম তখন সংবাদ মাধ্যম ছিল। সেই সংবাদ মাধ্যমে আমি জানালাম যে সমন্বয়করা সেফ কাস্টডিতে না। তারা গ্রেপ্তার অবস্থায় আছে, তারা গ্রেপ্তার অবস্থায় থাকা মানে আমি ইন্ডিকেট করলাম ‘স্টেটমেন্ট ইজ নট ভ্যালিড’। দ্বিতীয়ত হচ্ছে- ক্ষয়ক্ষতি কিছুই না, প্রাণ হচ্ছে অমূল্য। তৃতীয় মেসেজ নতুন প্রজন্ম তোমরাই পারবে, তোমাদের দেশ এটা, আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগের ক্ষমা চাওয়া উচিত কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সোহেল তাজ বলেন, দেখেন যে ঘটনাটা ঘটেছে এখানে হাজারের ওপরে মানুষ মারা গেছে। মারা গেছে নিরীহ ছাত্র, পোশাক শ্রমিক, রিকশাচালক, সাধারণ মানুষ। বাংলাদেশের ইতিহাসে কেন, গত ৫০ বছরে এশিয়ার ইতিহাসে নেই এ রকম জঘন্য হত্যাকাÐ। নির্বিচারে গুলি করা হয়েছে। পুলিশ গুলি করেছে, বিজিবি গুলি করেছে, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা গুলি করেছে, যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা গুলি করেছে। যারা এ হত্যাকাÐের সঙ্গে জড়িত প্রত্যেককে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
তিনি বলেন, গত ১৫ বছর যারা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, যারা টাকা পাচার করেছে বিদেশে তাদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে। যারা অনিয়ম করেছে, হত্যা, গুম, নির্যাতনের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের প্রত্যেককে বিচারের আওতায় আনতে হবে। সে আওয়ামী লীগার হোক আর না হোক। এই শুদ্ধি অপারেশন করার পর যদি কোনো আওয়ামী লীগার থাকে তাকে অনুশোচনা করতে হবে। আত্মসমালোচনা করতে হবে, আত্মোপলব্ধি করতে হবে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

সোহেল তাজ কি আওয়ামী লীগের হাল ধরছেন?

প্রকাশের সময় : ১২:৪৫:০৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৮ নভেম্বর ২০২৪

ঢাকা ডেস্ক: বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরাগভাজন হয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদপুত্র সোহেল তাজ। ইস্তফার কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা, অন্যায়গুলো মেনে নিয়ে জি হুজুর বলে থাকার মানুষ না তিনি। চূড়ান্ত প্রতিবাদ হিসেবে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি।
সম্প্রতি দেশের একটি জাতীয় দৈনিকের সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তাজপুত্র সোহেল। সেখানে তিনি নানা বিষয়ে কথা বলেছেন। কথা বলেছেন স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক সংগঠন আওয়ামী লীগের সংকটকালীন হাল ধরার বিষয়েও। ৭৫ পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের হাল ধরেছিলেন তাজউদ্দীন আহমদের সহধর্মিণী, সোহেল তাজের মা সৈয়দ জোহরা তাজউদ্দীন। এবারও দলটির সংকটময় সময়ে তার পরিবারের কেউ দলটির হাল ধরতে পারেন এমন আলোচনা চলছে। এই আলোচনার সত্যতা কতটুকু, সেই সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয় তার কাছে।
সোহেল তাজ বলেন, দেখেন আমি বারবার একটা কথা বলেছি আওয়ামী লীগে ছিলাম, আছি, থাকব। কিন্তু এই আওয়ামী লীগে না। এটা আমার আওয়ামী লীগ না। এটা কোনো আওয়ামী লীগ না। এটা হচ্ছে লুটেরা লীগ, এটা হচ্ছে খুনি লীগ, এটা হচ্ছে গুম লীগ, এটা হচ্ছে অব্যবস্থাপনা লীগ, দুর্নীতি লীগ। এটা সাধারণ মানুষ হত্যাকারী লীগ। এই আওয়ামী লীগের তো আমি হতে চাইনি। তিনি বলেন, আমি আশ্চর্য হয়েছি এই যে, আত্মোপলব্ধি, আত্মসমালোচনা, অনুশোচনা, এটা দেখছি না আওয়ামী লীগের ভেতর। এটা আমাকে খুব হতাশ করেছে। আমি মনে করি এখনো আওয়ামী লীগের ভেতরে ভালো মানুষ আছে।
তিনি বলেন, ছাত্র আন্দোলনের ঘটনাগুলো বিবেককে এমনভাবে নাড়া দিয়েছে যে, আমি বাধ্য হয়েছি প্রতিবাদ করতে। আমি আমার অবস্থান থেকে প্রতিবাদ করেছি। আমি ২৭ জুলাই ডিবি অফিসে গিয়েছি ছাত্র সমন্বয়কদের সেখানে আটকে রাখা হয়েছিল। আন্দোলন প্রত্যাহারের ফলস স্টেটমেন্ট যখন দেয়া হলো, আমি আশ্চর্য হয়েছি যখন দেখলাম প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) মেট্রোরেলের সামনে গিয়ে কান্নাকাটি করছেন যে আমাদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অথচ শত শত প্রাণ আমরা হারিয়েছি। তিনি বলেন, আমি মানুষের কাছে মেসেজটা দিতে চেয়েছিলাম। কারণ সাংঘাতিকভাবে মিডিয়াতে একই জিনিস রিপিট করা হচ্ছিল, মেট্রোরেলের ক্ষতি হয়েছে, অবকাঠামোর ক্ষতি হয়েছে। আমি আশ্চর্য হলাম যে মানুষ ভুলে যাচ্ছে মেট্রোরেল, পদ্মা ব্রিজ- এগুলো জনগণের টাকায় তৈরি হয়েছে। এগুলো আবার পরে গড়ে নিতে পারব। যারা প্রাণ হারিয়েছে তাদের তো আমরা ফিরে পাব না। তখন আমি এই মেসেজটা দিলাম- একটা প্রাণ হচ্ছে অমূল্য।
তাজপুত্র বলেন, আমি ডিবি অফিসে যখন গেলাম তখন সংবাদ মাধ্যম ছিল। সেই সংবাদ মাধ্যমে আমি জানালাম যে সমন্বয়করা সেফ কাস্টডিতে না। তারা গ্রেপ্তার অবস্থায় আছে, তারা গ্রেপ্তার অবস্থায় থাকা মানে আমি ইন্ডিকেট করলাম ‘স্টেটমেন্ট ইজ নট ভ্যালিড’। দ্বিতীয়ত হচ্ছে- ক্ষয়ক্ষতি কিছুই না, প্রাণ হচ্ছে অমূল্য। তৃতীয় মেসেজ নতুন প্রজন্ম তোমরাই পারবে, তোমাদের দেশ এটা, আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগের ক্ষমা চাওয়া উচিত কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সোহেল তাজ বলেন, দেখেন যে ঘটনাটা ঘটেছে এখানে হাজারের ওপরে মানুষ মারা গেছে। মারা গেছে নিরীহ ছাত্র, পোশাক শ্রমিক, রিকশাচালক, সাধারণ মানুষ। বাংলাদেশের ইতিহাসে কেন, গত ৫০ বছরে এশিয়ার ইতিহাসে নেই এ রকম জঘন্য হত্যাকাÐ। নির্বিচারে গুলি করা হয়েছে। পুলিশ গুলি করেছে, বিজিবি গুলি করেছে, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা গুলি করেছে, যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা গুলি করেছে। যারা এ হত্যাকাÐের সঙ্গে জড়িত প্রত্যেককে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
তিনি বলেন, গত ১৫ বছর যারা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, যারা টাকা পাচার করেছে বিদেশে তাদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে। যারা অনিয়ম করেছে, হত্যা, গুম, নির্যাতনের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের প্রত্যেককে বিচারের আওতায় আনতে হবে। সে আওয়ামী লীগার হোক আর না হোক। এই শুদ্ধি অপারেশন করার পর যদি কোনো আওয়ামী লীগার থাকে তাকে অনুশোচনা করতে হবে। আত্মসমালোচনা করতে হবে, আত্মোপলব্ধি করতে হবে।