নিউইয়র্ক ০৪:০৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

সুষ্ঠু নির্বাচনে দলগুলোর অঙ্গীকার আদায়ে প্রভাব খাটাতে বলেছি

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১২:৩৪:৪৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৩
  • / ৫০ বার পঠিত

ফাইল ছবি

বাংলাদেশ ডেস্ক : পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে সাম্প্রতিক বৈঠকে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরামর্শ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন। জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা কামনা করেছেন। তিনি বলেছেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সব রাজনৈতিক দলের আন্তরিক অঙ্গীকার আদায়ে তাদের কোনো প্রভাব থাকলে সেই চেষ্টা করার অনুরোধ করেছি। এ ব্যাপারে তাদের (যুক্তরাষ্ট্র) জনমত গড়ার পরামর্শ দিয়েছি। সোমবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন যুগান্তরকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন।

ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ছাড়াও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, মানবাধিকার, শ্রমমানসহ বিভিন্ন বিষয়ে ব্লিংকেন প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন। বাংলাদেশের তরফে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফিরিয়ে দেওয়া এবং র‌্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানানো হয়। এছাড়া দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদারে একগুচ্ছ প্রস্তাব দিয়েছি। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে অপপ্রয়োগের অভিযোগ করেন ব্লিংকেন। আমি বলেছি, কিছু কিছু অপপ্রয়োগ হয়েছে। আইনে কিছু দুর্বলতাও আছে। এগুলো সংশোধন করা হবে। আমরা কোনো ফেরেশতা নই। আমাদের ভুল-ত্রুটি থাকতে পারে। নির্বাচনের প্রসঙ্গে আলোচনার সূত্রপাত কীভাবে হলো জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ব্লিংকেন প্রসঙ্গটা তোলেন। তিনি (ব্লিংকেন) বলেছেন, বাংলাদেশ একটা মডেল।

বাংলাদেশ মিরাকল করেছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নে চমৎকার কাজ করেছে। বাংলাদেশ আরেকটা চমৎকার কাজ করতে পারে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করে গোটা বিশ্বকে একটা মডেল হিসাবে দেখাতে পারে বাংলাদেশ। আমি বলেছি, অবশ্যই আমরা মডেল হতে চাই। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। আমাদের প্রয়োজন সবার সমর্থন। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সব রাজনৈতিক দলের অঙ্গীকার আদায়ে তাদের যদি কোনো প্রভাব থাকে সেই চেষ্টা তারা করতে পারেন। একটা জনমত বের করতে পারেন। তিনি বলেন, নির্বাচন চলাকালে সরকারের কোনো ভূমিকা নেই। নির্বাচন কমিশনের কাছে সব ক্ষমতা। নির্বাচন কমিশন ও সরকার একা নির্বাচন সুষ্ঠু করতে পারে না। নির্বাচনের দিনে ছুটি থাকলেও অনেক স্থানে সহিংসতা হয়। যুক্তরাষ্ট্রেও কংগ্রেস হাউজে গুলিতে ছয়জন নিহত হয়েছেন। সুতরাং যুক্তরাষ্ট্রেরও একই স্টোরি আছে। তখন ব্লিংকেন বলেছেন, হ্যাঁ, আমাদেরও এমনটা হয়েছে। আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। সরকার ও নির্বাচন কমিশন একা নির্বাচন সুষ্ঠু করতে পারে না।

রাজনৈতিক কমিটমেন্ট থাকতে হবে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে সব দলের আন্তরিক অঙ্গীকার থাকতে হবে। এটা ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন করা কঠিন। তিনি বলেছেন, নির্বাচন হলো একমাত্র উপায় যার মাধ্যমে দেশ পরিচালনা করা যায়। আমি বললাম, অবশ্যই বিএনপির ২০১৪ সালে নির্বাচন বর্জন করা উচিত হয়নি। এটা কোনো গণতন্ত্রের চর্চা হতে পারে না। ম্যান্ডেট ছাড়া কেউ দেশ পরিচালনা করতে পারে না। ম্যান্ডেট পাওয়ার একমাত্র পথ হলো নির্বাচন। বিরোধী দলের অবশ্যই নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়া উচিত। এর কোনো বিকল্প নেই। আমি তাকে বলেছি, বাংলাদেশে আমাদের সংবিধানের আলোকে নির্বাচন হবে। এই নির্বাচন পরিচালনা করবে নির্বাচন কমিশন। যুক্তরাষ্ট্র পর্যবেক্ষক পাঠাতে পারে। আমরা শুধু আশা করি, কোনো সহিংসতা হবে না।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে প্রশ্ন : ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে কী আলোচনা হয়েছে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, ‘ব্লিংকেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছেন। আমি বললাম, যুক্তরাষ্ট্রেও সাইবার সিকিউরিটি আইন আছে। আমরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করেছি দুই কারণে, এক. কেউ যেন আমাদের জাতীয় পতাকা, জাতীয় সংগীত অবমাননা করতে না পারে। কেউ যেন সাইবার স্পেসে এমন কিছু করতে না পারে যা ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার সৃষ্টি করতে পারে। যাতে কোনো দাঙ্গার সৃষ্টি না হয় তার লক্ষ্যে এই আইন করা হয়। আরেকটি কারণ হলো, কাউকে যেন মিডিয়ার মাধ্যমে কেউ অহেতুক হেয় করতে না পারে। ব্লিংকেন বললেন, আইনের অপব্যবহার হচ্ছে বলে তার কাছে অভিযোগ এসেছে। আমি বললাম, আমি একমত। আইনের কিছু অপব্যবহার হয়েছে। আমরা এটা দেখছি। আইনেও কিছু দুর্বলতা থাকতে পারে। আমাদের আইনমন্ত্রী ইতোমধ্যে উল্লেখ করেছেন, কোনো দুর্বলতা থাকলে তিনি তা সংশোধন করবেন। আমরা কোনো ফেরেশতা নই যে, আমরা যা করব তাতে কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি নেই। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানেও বহুবার সংশোধন হয়েছে। আমরা সেটা করব। আইন বিভিন্ন সময়ে পরিবর্তন হবে।’

শ্রমমান ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা : পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন করেছে। আমি বলেছি, আমাদের দেশে ৪৩টি বেসরকারি টলিভিশন রয়েছে। বাংলাদেশে প্রতিদিন ১২৫১টি দৈনিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়। যুক্তরাষ্ট্র অনেক বড় দেশ। যুক্তরাষ্ট্রে ১২৭৯ দৈনিক পত্রিকা আছে। এটা আমাদের প্রায় সমান। তখন শ্রম অধিকার নিয়ে তিনি আমাকে প্রশ্ন করেছেন। আমি বললাম, আমরা এ ব্যাপারে কাজ করছি। এজন্য দুটি কমিটি রয়েছে। একটি সিনিয়র কমিটি। আরেকটি কারিগরি কমিটি। আমেরিকানরাও এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত রয়েছেন। আমরা আইএলও’র সঙ্গেও কাজ করছি। ইকো-ফ্রেন্ডলি ১০টি ফ্যাক্টরির মধ্যে আটটিই বাংলাদেশে অবস্থিত।

র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা : পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, র‌্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে আমরা নিজেরা বলেছি, র‌্যাব হলো আমাদের দেশে সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য প্রতিষ্ঠান। আজ পর্যন্ত সাধারণ মানুষ তাদের খুব ভালোবাসে। তখন তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টা প্রসেসের মধ্যে আছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফিরিয়ে আনার প্রশ্নে বলেছি, যুক্তরাষ্ট্র আইনের দেশ। আমরা এজন্য গর্ব করি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে যুক্তরাষ্ট্রেও কিছু ব্ল্যাকহোল আছে। দণ্ডিত আত্মস্বীকৃত খুনিকে যুক্তরাষ্ট্র আশ্রয় দিয়েছে। ব্লিংকেন বলেন, আমি জানি। কিন্তু এটা বিচার বিভাগের আওতাধীন।

রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ : পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা নিয়ে আলাপ হয়েছে। তিনি বলেছেন, যতদিন পর্যন্ত সমস্যার সমাধান না হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত তারা আমাদের সহায়তা করে যাবেন। আমি বলেছি, আমাদের এখানে রোহিঙ্গাদের থাকার জায়গা নেই। প্রতি বর্গমাইলে ২৯০০ লোক থাকে। যুক্তরাষ্ট্রে থাকে ৪০ জন। যুক্তরাষ্ট্র কিছু লোককে রিসেটলমেন্টের জন্য নিয়ে যেতে পারে। ব্লিংকেন বলেছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে কিছু রোহিঙ্গাকে নিয়ে যাবেন। অপরাপর বন্ধু দেশকে কিছু রোহিঙ্গাকে নিয়ে যেতে বলবেন। আমি বলেছি, এটাই সব নয়। এদের ফেরত দিতে হবে। আপনি রাখাইন রাজ্যে একটা সেইফ জোন করতে পারেন।

কসভোতে যা করেছেন একই জিনিস করতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব ছাড়া এটা হবে না। তিনি বললেন, সেখানে এই মুহূর্তে মারামারি হচ্ছে। সেখানে যাওয়া নিরাপদ নয়। আমি বললাম, আপনার লোক সেখানে গেলে সবই শান্তিময় হয়ে যাবে। ব্লিংকেন বলেন, এই মুহূর্তে আমরা চাই প্রথমে গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তন। আমি বললাম, আগে যখন সত্তর ও আশির দশকে রোহিঙ্গারা এসেছিল; তখনো আর্মির সরকার ছিল, তখন ফেরত পাঠানো হয়েছিল। তখন মিয়ানমারের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের স্যাংশন ছিল। ২০১৬ সালে ওবামা স্যাংশন তুলে নেন। তারপরই ঝামেলা শুরু হয়েছে। মিয়ানমার এখন কোনো কথা শোনে না। তিনি বললেন, রোহিঙ্গাদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য কিছু ট্রেনিং দিতে হবে। ভাসানচরে আপনারা ট্রেনিং দেন।

বাংলাদেশের একগুচ্ছ প্রস্তাব : পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমি উনাকে (ব্লিংকেন) বলেছি, আপনার দেশ বড় দেশ। আপনার দেশের আয়তনের এক দশমিক ছয় শতাংশ মাত্র আমাদের দেশ। অথচ আমাদের দেশের জনসংখ্যা আপনার দেশের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক।আমাদের দুদেশের মধ্যে সম্পর্ক বাড়ানোর একটি ক্ষেত্র হলো ওষুধের ক্ষেত্রে। বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র বিনিয়োগ বেশির ভাগই জ্বালানি খাতে। এখন এটা বহুমুখী করার সময় এসেছে। আপনাদের দেশে ওষুধের দাম খুব বেশি। আপনি যদি আপনার দেশের জনগণকে সস্তায় ওষুধ দিতে পারেন তবে খুব নাম হবে। বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে ওষুধ উৎপাদন করলে যুক্তরাষ্ট্রে সস্তায় বিক্রি করতে পারবেন।’

মন্ত্রী মোমেন আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে মেডিকেল টেকনিশিয়ানের খুব সংকট। বাংলাদেশে টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট তৈরি করে বাংলাদেশের মানুষকে মেডিকেল টেকনিক শেখাতে পারেন। স্টিল ইন্ডাস্ট্রিতে সব ইন্টারমেডিয়েট পণ্য চীন থেকে আসে। আমাদের দেশে ইন্টারমেডিয়েট স্টিল খুব ভালো। যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারমেডিয়েট স্টিলের কাজ বাংলাদেশে করতে পারে। চূড়ান্ত স্টিল যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে তৈরি করতে পারে। এতে উভয় দেশের লাভ হবে।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন করতে চায়। এ ব্যাপারে প্রযুক্তি ও পুঁজি দিয়ে সহায়তা করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। জন কেরি এবং সামান্থা পাওয়ার রাজি ছিলেন। একটি কারিগরি প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছিলেন। বাংলাদেশের ৪৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূল রয়েছে। বর্তমানে যে বাঁধ আছে সেটা খুবই দুর্বল। ইউএসএআইডির সহায়তায় ষাট ও সত্তরের দশকে তৈরি হয়েছিল। আমি প্রস্তাব করেছি, উপকূলীয় বাঁধটিকে আরও বড় ও উঁচু করতে চাই। অনেকটা বাধ্য হয়ে উঁচু করতে চাই। কারণ বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে গেছে। এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চেয়েছি। সূত্র : যুগান্তর

বেলী / হককথা

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

সুষ্ঠু নির্বাচনে দলগুলোর অঙ্গীকার আদায়ে প্রভাব খাটাতে বলেছি

প্রকাশের সময় : ১২:৩৪:৪৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৩

বাংলাদেশ ডেস্ক : পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে সাম্প্রতিক বৈঠকে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরামর্শ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন। জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা কামনা করেছেন। তিনি বলেছেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সব রাজনৈতিক দলের আন্তরিক অঙ্গীকার আদায়ে তাদের কোনো প্রভাব থাকলে সেই চেষ্টা করার অনুরোধ করেছি। এ ব্যাপারে তাদের (যুক্তরাষ্ট্র) জনমত গড়ার পরামর্শ দিয়েছি। সোমবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন যুগান্তরকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন।

ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ছাড়াও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, মানবাধিকার, শ্রমমানসহ বিভিন্ন বিষয়ে ব্লিংকেন প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন। বাংলাদেশের তরফে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফিরিয়ে দেওয়া এবং র‌্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানানো হয়। এছাড়া দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদারে একগুচ্ছ প্রস্তাব দিয়েছি। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে অপপ্রয়োগের অভিযোগ করেন ব্লিংকেন। আমি বলেছি, কিছু কিছু অপপ্রয়োগ হয়েছে। আইনে কিছু দুর্বলতাও আছে। এগুলো সংশোধন করা হবে। আমরা কোনো ফেরেশতা নই। আমাদের ভুল-ত্রুটি থাকতে পারে। নির্বাচনের প্রসঙ্গে আলোচনার সূত্রপাত কীভাবে হলো জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ব্লিংকেন প্রসঙ্গটা তোলেন। তিনি (ব্লিংকেন) বলেছেন, বাংলাদেশ একটা মডেল।

বাংলাদেশ মিরাকল করেছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নে চমৎকার কাজ করেছে। বাংলাদেশ আরেকটা চমৎকার কাজ করতে পারে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করে গোটা বিশ্বকে একটা মডেল হিসাবে দেখাতে পারে বাংলাদেশ। আমি বলেছি, অবশ্যই আমরা মডেল হতে চাই। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। আমাদের প্রয়োজন সবার সমর্থন। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সব রাজনৈতিক দলের অঙ্গীকার আদায়ে তাদের যদি কোনো প্রভাব থাকে সেই চেষ্টা তারা করতে পারেন। একটা জনমত বের করতে পারেন। তিনি বলেন, নির্বাচন চলাকালে সরকারের কোনো ভূমিকা নেই। নির্বাচন কমিশনের কাছে সব ক্ষমতা। নির্বাচন কমিশন ও সরকার একা নির্বাচন সুষ্ঠু করতে পারে না। নির্বাচনের দিনে ছুটি থাকলেও অনেক স্থানে সহিংসতা হয়। যুক্তরাষ্ট্রেও কংগ্রেস হাউজে গুলিতে ছয়জন নিহত হয়েছেন। সুতরাং যুক্তরাষ্ট্রেরও একই স্টোরি আছে। তখন ব্লিংকেন বলেছেন, হ্যাঁ, আমাদেরও এমনটা হয়েছে। আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। সরকার ও নির্বাচন কমিশন একা নির্বাচন সুষ্ঠু করতে পারে না।

রাজনৈতিক কমিটমেন্ট থাকতে হবে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে সব দলের আন্তরিক অঙ্গীকার থাকতে হবে। এটা ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন করা কঠিন। তিনি বলেছেন, নির্বাচন হলো একমাত্র উপায় যার মাধ্যমে দেশ পরিচালনা করা যায়। আমি বললাম, অবশ্যই বিএনপির ২০১৪ সালে নির্বাচন বর্জন করা উচিত হয়নি। এটা কোনো গণতন্ত্রের চর্চা হতে পারে না। ম্যান্ডেট ছাড়া কেউ দেশ পরিচালনা করতে পারে না। ম্যান্ডেট পাওয়ার একমাত্র পথ হলো নির্বাচন। বিরোধী দলের অবশ্যই নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়া উচিত। এর কোনো বিকল্প নেই। আমি তাকে বলেছি, বাংলাদেশে আমাদের সংবিধানের আলোকে নির্বাচন হবে। এই নির্বাচন পরিচালনা করবে নির্বাচন কমিশন। যুক্তরাষ্ট্র পর্যবেক্ষক পাঠাতে পারে। আমরা শুধু আশা করি, কোনো সহিংসতা হবে না।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে প্রশ্ন : ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে কী আলোচনা হয়েছে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, ‘ব্লিংকেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছেন। আমি বললাম, যুক্তরাষ্ট্রেও সাইবার সিকিউরিটি আইন আছে। আমরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করেছি দুই কারণে, এক. কেউ যেন আমাদের জাতীয় পতাকা, জাতীয় সংগীত অবমাননা করতে না পারে। কেউ যেন সাইবার স্পেসে এমন কিছু করতে না পারে যা ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার সৃষ্টি করতে পারে। যাতে কোনো দাঙ্গার সৃষ্টি না হয় তার লক্ষ্যে এই আইন করা হয়। আরেকটি কারণ হলো, কাউকে যেন মিডিয়ার মাধ্যমে কেউ অহেতুক হেয় করতে না পারে। ব্লিংকেন বললেন, আইনের অপব্যবহার হচ্ছে বলে তার কাছে অভিযোগ এসেছে। আমি বললাম, আমি একমত। আইনের কিছু অপব্যবহার হয়েছে। আমরা এটা দেখছি। আইনেও কিছু দুর্বলতা থাকতে পারে। আমাদের আইনমন্ত্রী ইতোমধ্যে উল্লেখ করেছেন, কোনো দুর্বলতা থাকলে তিনি তা সংশোধন করবেন। আমরা কোনো ফেরেশতা নই যে, আমরা যা করব তাতে কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি নেই। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানেও বহুবার সংশোধন হয়েছে। আমরা সেটা করব। আইন বিভিন্ন সময়ে পরিবর্তন হবে।’

শ্রমমান ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা : পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন করেছে। আমি বলেছি, আমাদের দেশে ৪৩টি বেসরকারি টলিভিশন রয়েছে। বাংলাদেশে প্রতিদিন ১২৫১টি দৈনিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়। যুক্তরাষ্ট্র অনেক বড় দেশ। যুক্তরাষ্ট্রে ১২৭৯ দৈনিক পত্রিকা আছে। এটা আমাদের প্রায় সমান। তখন শ্রম অধিকার নিয়ে তিনি আমাকে প্রশ্ন করেছেন। আমি বললাম, আমরা এ ব্যাপারে কাজ করছি। এজন্য দুটি কমিটি রয়েছে। একটি সিনিয়র কমিটি। আরেকটি কারিগরি কমিটি। আমেরিকানরাও এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত রয়েছেন। আমরা আইএলও’র সঙ্গেও কাজ করছি। ইকো-ফ্রেন্ডলি ১০টি ফ্যাক্টরির মধ্যে আটটিই বাংলাদেশে অবস্থিত।

র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা : পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, র‌্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে আমরা নিজেরা বলেছি, র‌্যাব হলো আমাদের দেশে সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য প্রতিষ্ঠান। আজ পর্যন্ত সাধারণ মানুষ তাদের খুব ভালোবাসে। তখন তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টা প্রসেসের মধ্যে আছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফিরিয়ে আনার প্রশ্নে বলেছি, যুক্তরাষ্ট্র আইনের দেশ। আমরা এজন্য গর্ব করি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে যুক্তরাষ্ট্রেও কিছু ব্ল্যাকহোল আছে। দণ্ডিত আত্মস্বীকৃত খুনিকে যুক্তরাষ্ট্র আশ্রয় দিয়েছে। ব্লিংকেন বলেন, আমি জানি। কিন্তু এটা বিচার বিভাগের আওতাধীন।

রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ : পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা নিয়ে আলাপ হয়েছে। তিনি বলেছেন, যতদিন পর্যন্ত সমস্যার সমাধান না হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত তারা আমাদের সহায়তা করে যাবেন। আমি বলেছি, আমাদের এখানে রোহিঙ্গাদের থাকার জায়গা নেই। প্রতি বর্গমাইলে ২৯০০ লোক থাকে। যুক্তরাষ্ট্রে থাকে ৪০ জন। যুক্তরাষ্ট্র কিছু লোককে রিসেটলমেন্টের জন্য নিয়ে যেতে পারে। ব্লিংকেন বলেছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে কিছু রোহিঙ্গাকে নিয়ে যাবেন। অপরাপর বন্ধু দেশকে কিছু রোহিঙ্গাকে নিয়ে যেতে বলবেন। আমি বলেছি, এটাই সব নয়। এদের ফেরত দিতে হবে। আপনি রাখাইন রাজ্যে একটা সেইফ জোন করতে পারেন।

কসভোতে যা করেছেন একই জিনিস করতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব ছাড়া এটা হবে না। তিনি বললেন, সেখানে এই মুহূর্তে মারামারি হচ্ছে। সেখানে যাওয়া নিরাপদ নয়। আমি বললাম, আপনার লোক সেখানে গেলে সবই শান্তিময় হয়ে যাবে। ব্লিংকেন বলেন, এই মুহূর্তে আমরা চাই প্রথমে গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তন। আমি বললাম, আগে যখন সত্তর ও আশির দশকে রোহিঙ্গারা এসেছিল; তখনো আর্মির সরকার ছিল, তখন ফেরত পাঠানো হয়েছিল। তখন মিয়ানমারের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের স্যাংশন ছিল। ২০১৬ সালে ওবামা স্যাংশন তুলে নেন। তারপরই ঝামেলা শুরু হয়েছে। মিয়ানমার এখন কোনো কথা শোনে না। তিনি বললেন, রোহিঙ্গাদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য কিছু ট্রেনিং দিতে হবে। ভাসানচরে আপনারা ট্রেনিং দেন।

বাংলাদেশের একগুচ্ছ প্রস্তাব : পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমি উনাকে (ব্লিংকেন) বলেছি, আপনার দেশ বড় দেশ। আপনার দেশের আয়তনের এক দশমিক ছয় শতাংশ মাত্র আমাদের দেশ। অথচ আমাদের দেশের জনসংখ্যা আপনার দেশের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক।আমাদের দুদেশের মধ্যে সম্পর্ক বাড়ানোর একটি ক্ষেত্র হলো ওষুধের ক্ষেত্রে। বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র বিনিয়োগ বেশির ভাগই জ্বালানি খাতে। এখন এটা বহুমুখী করার সময় এসেছে। আপনাদের দেশে ওষুধের দাম খুব বেশি। আপনি যদি আপনার দেশের জনগণকে সস্তায় ওষুধ দিতে পারেন তবে খুব নাম হবে। বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে ওষুধ উৎপাদন করলে যুক্তরাষ্ট্রে সস্তায় বিক্রি করতে পারবেন।’

মন্ত্রী মোমেন আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে মেডিকেল টেকনিশিয়ানের খুব সংকট। বাংলাদেশে টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট তৈরি করে বাংলাদেশের মানুষকে মেডিকেল টেকনিক শেখাতে পারেন। স্টিল ইন্ডাস্ট্রিতে সব ইন্টারমেডিয়েট পণ্য চীন থেকে আসে। আমাদের দেশে ইন্টারমেডিয়েট স্টিল খুব ভালো। যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারমেডিয়েট স্টিলের কাজ বাংলাদেশে করতে পারে। চূড়ান্ত স্টিল যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে তৈরি করতে পারে। এতে উভয় দেশের লাভ হবে।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন করতে চায়। এ ব্যাপারে প্রযুক্তি ও পুঁজি দিয়ে সহায়তা করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। জন কেরি এবং সামান্থা পাওয়ার রাজি ছিলেন। একটি কারিগরি প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছিলেন। বাংলাদেশের ৪৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূল রয়েছে। বর্তমানে যে বাঁধ আছে সেটা খুবই দুর্বল। ইউএসএআইডির সহায়তায় ষাট ও সত্তরের দশকে তৈরি হয়েছিল। আমি প্রস্তাব করেছি, উপকূলীয় বাঁধটিকে আরও বড় ও উঁচু করতে চাই। অনেকটা বাধ্য হয়ে উঁচু করতে চাই। কারণ বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে গেছে। এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চেয়েছি। সূত্র : যুগান্তর

বেলী / হককথা