সীমান্তে গুলি ছোড়া বন্ধসহ ১২ প্রস্তাব বাংলাদেশের
- প্রকাশের সময় : ১১:৩১:৩০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ জুন ২০২৩
- / ৮২ বার পঠিত
বাংলাদেশ ডেস্ক : ভারতের নয়াদিল্লিতে বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ে সম্মেলন চলছে। এবারের সম্মেলনেও সীমান্তে নিরস্ত্র বাংলাদেশি নাগরিকদের ওপর গুলি চালিয়ে হত্যা, আহত করা এবং আটকের বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। এ নিয়ে বিজিবির পক্ষ থেকে বিএসএফকে অন্তত ১২টি প্রস্তাব দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, প্রতিবারই উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে সীমান্তে হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার দাবি জানায় বিজিবি। আর ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফও এসব বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দেয়। তবে বাস্তবে তাদের প্রতিশ্রুতি কার্যকর হয় না। সীমান্তে প্রাণঘাতী নয়, এমন অস্ত্র ব্যবহারের কথা বলা হয়। তবে এর কোনো বাস্তবায়ন হয় না বছরের পর বছরেও। ভারতের নয়াদিল্লিতে রোববার এ সম্মেলন শুরু হয়েছে। এর আগে শনিবার বিজিবি মহাপরিচালকের নেতৃত্বে ১৪ সদস্যের একটি দল নয়াদিল্লিতে পৌঁছায়। একই দিন দুপুর দেড়টার দিকে ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার জগদল সীমান্ত এলাকায় বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়েছেন জিন্নাত আলী নামে এক বাংলাদেশি।
তিনি স্থানীয় ধর্মগড় চেকপোস্ট কলোনি গ্রামের বাসিন্দা। গবাদি পশুর ঘাস কাটতে জগদল সীমান্তের ৩৭৪ নম্বর পিলার এলাকায় যেতেই বিএসএফ তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। কোমরে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। বিজিবি সূত্র জানায়, বিএসএফের ১৫২ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা তাকে গুলি করেছেন। এ বিষয়ে কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে বিজিবির পক্ষ থেকে।এদিকে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পরিসংখ্যানে ওঠে এসেছে চলতি বছর প্রথম পাঁচ মাসে বিএসএফের গুলিতে ৯ জন নিহত হয়েছেন। আগের বছর পাঁচ মাসে এ সংখ্যা ছিল চারজন। সীমান্তে এ সময়ে আহত হয়েছেন ১০ জন।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক এয়ার কমোডর (অব.) ইশফাক ইলাহী চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, সীমান্তে হত্যা বন্ধ করতে হলে সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করা দরকার। যদি তারা বেআইনিভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে তাহলে কেন করছে, সে কারণ খুঁজতে হবে। সীমান্তে হত্যা বন্ধে উভয় দেশের মধ্যে যে প্রতিশ্রুতি রয়েছে তা কেন মাঠপর্যায়ে মানা হচ্ছে না তার পেছনে কী ধরনের অনুঘটক রয়েছে বাংলাদেশ-ভারতকে তার কারণ বের করতে হবে। এরপর দুদেশের মধ্যে মতবিনিময় করে যৌথ ব্যবস্থাপত্র প্রণয়ন করা জরুরি। বিশ্লেষকরা বলছেন, সীমান্তে হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনতে প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার বন্ধের বিষয়ে বাংলাদেশ ও ভারত শুধু সম্মতই হয়। তবে সীমান্তে সহিংসতা থামেনি, বরং বেড়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের প্রতিটি দ্বিপক্ষীয় সম্মেলনে একটি অন্যতম এজেন্ডা থাকে সীমান্ত হত্যা বন্ধের বিষয়টি।
বিএসএফের গুলিতে আলোচিত ফেলানী হত্যার পর বাংলাদেশের দাবির মুখে ২০১৪ সালে দিল্লিতে বিএসএফ ও বিজিবির মহাপরিচালকদের বৈঠকের পর ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে হত্যার ঘটনা শূন্যে নামিয়ে আনার বিষয়ে একটি সমঝোতায় আসে। সীমান্ত অতিক্রমের ঘটনায় প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার না করার ব্যাপারে ২০১৮ সালের এপ্রিলে দুদেশের মধ্যে একটি চুক্তিও স্বাক্ষর হয়।
এদিকে বিজিবির জনসংযোগ বিভাগের পরিচালক মো. শরিফুল ইসলাম রোববার যুগান্তরকে জানান, নয়াদিল্লিতে শুরু হওয়া ৪ দিনব্যাপী ৫৩তম সীমান্ত সম্মেলনে বিজিবি-বিএসএফের মধ্যে সীমান্ত হত্যা, সীমান্তে নিরস্ত্র বাংলাদেশি নাগরিকদের ওপর গুলি চালানো, আহত করা ও আটক করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
বিজিবি জানায়, এবারের সম্মেলনে সীমান্ত হত্যা, সীমান্তে নিরস্ত্র বাংলাদেশি নাগরিকদের ওপর গুলি চালানো, আটক করা নিয়ে আলোচনা ছাড়াও ভারত থেকে বাংলাদেশে বিভিন্ন রকম মাদকদ্রব্য, অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ বিভিন্ন নিষিদ্ধ দ্রব্যের চোরাচালান, আন্তর্জাতিক সীমানা লঙ্ঘন করে অবৈধ অনুপ্রবেশ বিশেষ করে ভারত সীমান্ত দিয়ে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ, সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে অনুমোদনহীন উন্নয়নমূলক অবকাঠামো নির্মাণ এবং বন্ধ থাকা অন্যান্য উন্নয়নমূলক কাজ নিষ্পত্তি, আগরতলা থেকে আখাউড়ার দিকে প্রবাহিত সীমান্তবর্তী খালের বর্জ্য পানি অপসারণে উপযুক্ত পানি শোধনাগার স্থাপন, জকিগঞ্জের কুশিয়ারা নদীর সঙ্গে রহিমপুর খালের মুখ পুনরায় উন্মুক্তকরণ, আঞ্চলিক বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর ক্যাম্পের সম্ভাব্য অবস্থান ও তাদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কিত তথ্য বিনিময়, বাংলাদেশ সীমান্তের অভ্যন্তরে ভারতীয় টেলিকম নেটওয়ার্কের বিস্তার রোধের বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে। সীমান্ত সম্মেলনের ‘যৌথ আলোচনার দলিল’ (জয়েন্ট রেকর্ড অব ডিসকাশন) স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে ১৪ জুন সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি হবে। ওইদিনই বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল দেশে ফিরবে।
সুমি/হককথা