ঢাকা: বিএনপি’র কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব সালাউদ্দিন আহমেদের খোঁজ পাওয়া গেছে। একথা জানিয়েছেন তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদ। বেলা সোয়া একটার দিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’ থেকে বেরিয়ে তিনি অপেক্ষারত সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। বলেন, তিনি (সালাহউদ্দিন) ভারতের কোন একটি স্থান থেকে ফোন করেছিলেন। এ বিষয়ে আমি আনুষ্ঠানিকভাবে সাংবাদিকদের বিস্তারিত জানাবো। সালাহউদ্দিন আহমেদের পারিবারিক সূত্র জানায়, ১২ মে মঙ্গলবার সকাল পৌনে ১১টার দিকে ভারতের কোন এক স্থান থেকে সালাহউদ্দিন আহমেদ ফোন করেন তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদের মোবাইলে। ফোনে তিনি জানান, মেঘালয়ের একটি স্থানে তিনি আছেন। তাকে ফিরিয়ে আনার কথাও বলেছেন সালাহউদ্দিন। এরপরই বিষয়টি অবহিত করতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বাসায় চলে যান হাসিনা আহমেদ। তিনি খালেদা জিয়ার সঙ্গে বেশ কিছু সময় কথা বলেন। ওই বাসা থেকে বেরিয়ে আসার সময় তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে সালাহউদ্দিন আহমেদের সন্ধান পাওয়ার বিষয় নিশ্চিত করেন।
উল্লেখ্য, গত ১০ মার্চ রাতে সালাহ উদ্দিন আহমেদকে উত্তরার একটি বাসা থেকে সাদা পোশাকে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তুলে নিয়ে যায় বলে তার পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়। যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিষয়টি অস্বীকার করে আসছে। সর্বশেষ সালাহউদ্দিন আহমেদের নিখোঁজের দুই মাসের মাথায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া একটি অনুষ্ঠানে বলেন, সালাহউদ্দিন আহমেদ র্যাবের কাছেই আছেন। তিনি তাকে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানান।
স্ত্রীকে সালাহউদ্দিনের ফোন: ‘আমি বেঁচে আছি। সবাইকে জানিয়ে দাও’। মেঘালয়ের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ স্ত্রী হাসিনা আহমেদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার সময় এমনটিই জানিয়েছেন। তাকে উদ্ধারে পরিবারের সদস্যরা মেঘালয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন, হাসিনা আহমেদ। মঙ্গলবার দুপুরের পরে গুলশানের বাসায় আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে হাসিনা আহমেদ এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ইনশাআল্লাহ আমার স্বামী বেঁচে আছে। তিনি মেঘালয়ের একটি মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। আমরা তার কাছে অতিদ্রুততম সময়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, হঠাৎ টেলিফোনটি আসে ভারতের মেঘালয় থেকে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের একজন মহিলা কর্মকর্তা তাকে বলেন, আপনার স্বামী আপনার সঙ্গে কথা বলতে চান। হাসিনা এই সময়ে বলেন, আমি উনার মিসেস বলছি। এরপরই ওই পাশের টেলিফোনে অসুস্থ সালাহউদ্দিন আহমেদের কন্ঠ ভেসে আসে। কেমন আছো হাসিনা । আমি সালাহউদ্দিন বলছি। আমি বেঁচে আছি। আমাকে এখানে ফেলে গেছে। তিনি জানান, তার স্বামী মেঘালয়ের শিলংয়ের মিমহান্স মেন্টাল হসপিটালে ভর্তি আছেন। আল্লাহর অশেষ রহমতে আমি জানাচ্ছি, ইনশাল্লাহ আমার স্বামী বেঁচে আছেন। আমার স্বামীর সন্ধান পাওয়ায় আমি দেশবাসী, বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোট, সকল রাজনৈতিক দল ও গণমাধ্যমের কাছে কতৃজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আপনি কি সালাহউদ্দিন আহমেদের কন্ঠ নিশ্চিত হয়েছেন- এমন প্রশ্নে হাসিনা বলেন, আমি আমার স্বামীর কন্ঠ চিনি।
সালাহ উদ্দিনকে আটক করে মেঘালয় পুলিশ: নিখোঁজ বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদকে গত সোমবার (১১ মে) সকালে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলংয়ে স্থানীয় পুলিশ আটক করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। এ খবর দিয়েছে মেঘালয়ের সংবাদ মাধ্যম শিলং টাইমস। ‘বাংলাদেশি ম্যান হেল্ড’ শিরোনামে একটি সংবাদ মঙ্গলবার পত্রিকাটির তৃতীয় পৃষ্ঠায় প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশী নাগরিক সালাহউদ্দিন আহমেদকে (৫৪) শিলংয়ের গলফ লিংক থেকে আটক করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। মঙ্গলবার দুপুরে সালাহউদ্দিনের সন্ধান পাওয়ার বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানান তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদ।
ঘটনাটি খতিয়ে দেখবে পুলিশ-আইজিপি: বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ কিভাবে ভারত গেলেন তা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) একেএম শহীদুল হক। মঙ্গলবার (১২ মে) দুপুরে পুলিশ সদর দপ্তরে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, সালাহউদ্দিনের সাথে তার স্ত্রী হাসিনা আহেমেদের কথপোকথনের মাধ্যমে এটা পরিষ্কার যে বিএনপির এই নেতাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অপহরণ করেনি।
মেঘালয় যাচ্ছেন স্ত্রী: বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিনকে দেশে আনতে ভারতের মেঘালয়ে যাচ্ছেন তার স্ত্রী সাবেক এমপি হাসিনা আহমেদ। মঙ্গলবার রাতে ছোট বোন জামাই মাহবুবুল কবির মুনমুন ও এক নিকটাত্মীয়কে নিয়ে রওনা হবেন তিনি। বিকালে মাহবুবুল কবির মুনমুন জানান, ভিসা প্রসেসিংয়ের জন্য পাসপোর্ট নিয়ে ভারতীয় হাইকমিশনে যাচ্ছি। আশা করছি ভিসা হয়ে গেলে রাতেই রওনা হব। আমার সঙ্গে হাসিনা আপা ও এক আত্মীয় যাবেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান জানান, ভিসা প্রসেসিংয়ের জন্য বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবিহউদ্দিন আহমেদকে সঙ্গে নিয়ে সালাহউদ্দিন ভাইয়ের ছোট ভায়রা ভারতীয় হাইকমিশনে গেছেন। মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে ভারতের মেঘালয়ের পাসতোর হিলসে মেঘালয় ইস্টিটিউট অব মেন্টাল হেলথ অ্যান্ড নিউরো সাইন্স (মিমহাস) হসপিটালের কর্তৃপক্ষ সালাহউদ্দিন আহমেদের স্ত্রীকে ফোন দেন। এসময় সালাহউদ্দিন তার স্ত্রীকে পাসপোর্টসহ যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে দেশে আনার কথা বলেন।
আমি কিন্তু বাংলাদেশের একজন ভিআইপি- ভারতীয় পুলিশকে সালাহউদ্দিন: ১০ মে সোমবার ভোরে মেঘালয়ের রাজধানী শিলংয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ পুলিশের কাছে বলেছেন, ‘দেখুন আমি কিন্তু বাংলাদেশের একজন ভিআইপি। আমি সে দেশে ক্যাবিনেট মিনিস্টারও ছিলাম!’ ইস্ট খাসি হিলসের পুলিশ সুপার এম খারক্রাং স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে এ বিষয়ে বলেন, ওই ভদ্রলোক থানায় গিয়েই বলতে শুরু করেন, ‘দেখুন আমি কিন্তু বাংলাদেশের একজন ভিআইপি। আমি সে দেশে ক্যাবিনেট মিনিস্টারও ছিলাম!’ এদিকে ভদ্রলোকের পকেটে একটা কাগজ পর্যন্ত নেই। কোনও টাকা-পয়সা দূরে থাক, পকেটে একটা মানিব্যাগও নেই, ফলে যথারীতি শিলংয়ের পুলিশ প্রথমে তার কথা একেবারেই বিশ্বাস করেনি, পাগলের প্রলাপ বলেই উড়িয়ে দিয়েছিল।
সোমবার ভোরে যখন গলফ ক্লাবের সামনে অচেনা লোককে দেখে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দেন, তখন সেখান দিয়েই যাচ্ছিল পুলিশ পেট্রলের একটি জিপ। টহলদার বাহিনী লোকটিকে ধরে নিয়ে কাছেই শিলংয়েন প্যাসটিওর বিটহাউস থানাতে নিয়ে যাওয়ার পরেই সালাহউদ্দিন এসব কথা বলেন।
পুলিশ তার পরিচয় জানতে চাওয়ায় তিনি ফ্যালফ্যাল করে তাদের দিকে তাকিয়ে থাকেন, মুখে কোনও কথা জোগায় না। ওনার অবস্থা দেখে থানাতেই সিদ্ধান্ত হয় ইনি নিশ্চয় মানসিক ভারসাম্যহীন, আর তারপরই পুলিশ তাকে শিলংয়ের মিমহ্যানসে (মেঘালয় ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল অ্যান্ড নিউরোলজিক্যাল সায়েন্স) ভর্তি করানোর ব্যবস্থা করে। মিমহ্যানস শিলংয়ে মানসিক প্রতিবন্ধীর হাসপাতাল বলেই পরিচিত। সালাহউদ্দিন আহমেদের গতি হয় সেখানেই।
মিমহ্যানসে ডাক্তারদের চিকিৎসায় সোমবার রাত থেকেই অল্প অল্প করে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরার লক্ষণ দেখাতে শুরু করেন তিনি। তারপর মঙ্গলবার সকালে তিনি মিমহ্যানসের ডাক্তারদের জানান, ঢাকায় তার স্ত্রীর টেলিফোন নম্বর তার মনে পড়েছে– সেখানে তিনি ফোন করে কথা বলতে চান। এরপরই তিনি ঢাকায় স্ত্রী হাসিনা আহমেদকে ফোন করে জানান, তিনি ভাল আছেন, মেঘালয়ের একটি হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছে।
সোমবার সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ যখন শিলং গলফ ক্লাবের সামনে থেকে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে, তখন তিনি কপর্দকশূন্য অবস্থায় থাকলেও তার শরীরে কোনও আঘাতের চিহ্ন ছিল না। তবে মিমহ্যানসে চিকিৎসকরা এদিন তাকে পরীক্ষা করে দেখেছেন তার হৃদযন্ত্রে কিছু দুর্বলতার লক্ষণ আছে। ফলে মানসিক হাসপাতাল থেকে সরিয়ে নিয়ে এদিন বিকেলে তাকে শিলং সিভিল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
এদিকে গ্রেপ্তারের পর মেঘালয় পুলিশ তার পরিচয় নিশ্চিত করতে না পারলেও হাসপাতাল স্থানান্তরের সময় সালাহউদ্দিন নিজেই গণমাধ্যমকে বলেন, ‘হ্যাঁ, আমিই বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন। আমাকে উত্তরা থেকে অচেনা লোকজন তুলে নিয়েছিল। আমি জানি না, কিভাবে এখানে এলাম।’
ধারণা করা হচ্ছে, শিলংয়ের সবচেয়ে কাছে বাংলাদেশ সীমান্তের ডাউকি সেটাও প্রায় ৪০/৪২ মাইল দূরে। প্রাথমিকভাবে মেঘালয় পুলিশ অনুমান করছে রোববার (১০ মে) রাতে সেই ডাউকির কাছে সীমান্ত পেরিয়েই ভারতে ঢোকেন সালাউদ্দিন আহমেদ– কিংবা তাকে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়! তারপর সেখান থেকে কোনও বাস বা ভাড়ার টেম্পোয় চেপে তিনি সোমবার ভোরে শিলংয়ে পৌঁছান এবং কিছুক্ষণ পর পলিশের কাছে ধরা পড়েন।(সূত্র: দৈনিক মানবজমিন/দৈনিক কালের কন্ঠ)