সার্চ কমিটির প্রস্তাবিত নাম গণমাধ্যমে প্রকাশের অনুরোধ

- প্রকাশের সময় : ০৯:২৬:২১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২২
- / ৭৮ বার পঠিত
বাংলাদেশ ডেস্ক : প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে রাষ্ট্রপতির কাছে দেয়া সার্চ কমিটির প্রস্তাবিত নাম গণমাধ্যমে প্রকাশের অনুরোধ জানানো হয়েছে। এছাড়া প্রস্তাবিত নামে যেন কোনো বিতর্কিত ব্যক্তিকে না রাখা হয় সে অনুরোধও করা হয়েছে।
শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুর আড়াইটায় বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের সেমিনার কক্ষ থেকে বৈঠক শেষে বেরিয়ে এসব কথা জানান বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। এর আগে দুপুর ১টায় সার্চ কমিটির ডাকা বৈঠকে যোগ দেন তারা।
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী বলেন, একজন আইনজীবী ও মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে আমি বলেছি, অনুসন্ধান কমিটি যাদের মনোনয়ন করবেন তারা যেন স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি হয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে। বৈঠকে যারা ছিলেন তারা সবাই আমার বক্তব্য সমর্থন করে অনুসন্ধান কমিটিকে অনুরোধ করেছেন, যাদের নাম প্রস্তাব করা হবে তারা যেন, সৎ, নিষ্ঠাবান এবং যোগ্য হন। আর্থিক বা যেকোনো মোহের বাইরে থেকে যেন নির্বাচন কমিশন পরিচালনা করতে পারেন, সেরকম ব্যক্তিদের বাছাইয়ের বিষয়েও আমি মত দিয়েছি।
বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক মাহফুজা খানম বলেন, আমি বলেছি সার্চ কমিটি যাদের নাম প্রস্তাব করবে তাদের চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য হতে হবে, তিনি যেন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষ হন। আমলা বা যেকোনো পেশা থেকে তিনি বা তাদের নাম আসতে পারে। যে পেশা থেকেই আসুক না কেন, তাদের স্বচ্ছ চরিত্র ও সততা থাকতে হবে। অর্থের মোহ যেন তাদের না থাকে। আমি মনে করি, এই অনুসন্ধান কমিটির ভেতর দিয়ে আগামী দিনের বাংলাদেশে যে নির্বাচন কমিশন হবে তাদের মাধ্যমে এদেশে গণতন্ত্র সুদৃঢ় হবে। সেই সঙ্গে সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশে যেন আমরা যেতে পারি। জনগণ যাতে বিশ্বাস করতে পারে সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।
আলী ইমাম মজুমদার বলেন, অনুসন্ধান কমিটির কাছে একটি বিশেষ বিষয় উপস্থাপন করে বলেছি, কোনো দলীয় সরকারের সময় বিশেষভাবে সুবিধাভোগী কোনো ব্যক্তি যাতে নির্বাচন কমিশনে স্থান না পায়। অনেকেই এ দাবিতে সমর্থন করেছেন।
ঢাবি অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, যারা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পাবে তারা যেন আগের কোনো সরকারের আমলে বিশেষ সুবিধাভোগী না হন। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মাধ্যমে, চাকরির মেয়াদ বাড়িয়ে নেয়ার মাধ্যমে, জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের মাধ্যমে কোনো কোনো সরকার বিশ্বস্ত লোকদের সুবিধা দিয়ে থাকে। এই ধরনের লোক যেন নির্বাচন কমিশনে না আসেন। অনেকে অবসরে যাওয়ার পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে সরাসরিভাবে, তারা যেন না আসেন। যাদের সাথে সরকারের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সম্পর্ক আছে তারা যেন না আসেন। আমরা আরো বলেছি, এ নির্বাচন কমিশনে যারা আসবে তাদের যেন অবশ্যই একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করার মত মানসিকতা থাকে, সাহসিকতা থাকে, ব্যক্তিত্ব থাকে। যাদের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে তাদের সব নাম যেন আগেই প্রকাশ করা হয়। কমিটি যদি ৩০ জনের নাম প্রস্তাব করে, সেখানে যদি দেখা যায় কোনো একজন কোনো একটি রাজনৈতিক দলের পক্ষে বক্তব্য দিয়েছেন বা সরকারি চাকরিতে থাকা অবস্থায় কোনো টকশোতে অংশ নিয়ে একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের পক্ষে-বিপক্ষে কথা বলেছেন, তাদের যেন বাদ দেয়া হয়।
আসিফ নজরুল আরো বলেন, আমাদের কাছে মনে হয়েছে অনুসন্ধান কমিটি মন দিয়ে আমাদের কথা শুনেছে। এখন আমাদের কথা কতটুকু রাখবে, সেটি নাম প্রকাশ করার পর আমরা বুঝতে পারবো। আমাদের থেকে কেউ কোনো নাম প্রস্তাব করেননি। তবে কিভাবে কিসের ভিত্তিতে ইসির সদস্য বাছাই করা উচিত বা উচিত না, আমরা সে বিষয়ে বলেছি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, অনুসন্ধান কিমিটির ওপর শতভাগ আস্থা রাখার সুযোগ নেই। আগের অনুসন্ধান কমিটি আপনারা দেখেছেন, কি করেছে না করেছে। অনুসন্ধান কমিটির গঠন নিয়েও সমাজে কিছু ভিন্ন মত ছিল। কাজেই এখানে শতভাগ আস্থার কোনো জায়গা নাই। আমাদের কথা হচ্ছে, বৃক্ষ তোমার নাম কি ফলে পরিচয়। সর্বোপরি কী কমিশন গঠন করা হয়, কোন ১০ জনের নাম প্রস্তাব করা হয় সেটাই হচ্ছে আমাদের দেখার বিষয়।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আমরা সব নাম প্রকাশ করতে বলেছি। আমরা বলেছি যদিও বিএনপি এবং আরো কিছু রাজনৈতিক দল আসছে না, তারা তাদের সরকার পরিবর্তনের আন্দোলন করতে থাকুক। তাহলেও তো একটা নির্বাচন লাগবে। নির্বাচন কমিশনে যদি ভাল ও সাহসী লোক না যায়, কেবল সরকার পরিবর্তন হলেই হবে না। নতুন কমিশনের জন্য সংখ্যালঘুদের থেকে একজন প্রতিনিধিত্ব রাখার পক্ষেও মত দিয়েছি।
চ্যানেল টুয়েন্টিফোরের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ বলেন, রাষ্ট্রপতির কাছে যে ১০ জনের নাম প্রস্তাব করা হবে, রাষ্ট্রপতির সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতা রয়েছে, উনি ১০ জনের বাইরে যেতে পারবেন না। কিন্তু সার্চ কমিটির দায়িত্ব সারা বাংলাদেশের মধ্যে, যে যোগ্য ব্যক্তিত্ব রয়েছেন তাদের খুঁজে বের করা।
দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, বিগত নির্বাচন কমিশনকে নিয়ে নানা বিতর্ক ছিল। আগামী নির্বাচনটি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন করতে হলে একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন দরকার। আর এটি করার দায়িত্ব এই সার্চ কমিটির। যেকোনো নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ভিকটিম হয় সংখ্যালঘুরা। এই নির্বাচন কমিশনে সংখ্যালঘু, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব ছিল না। তাদের যাতে প্রতিনিধিত্ব থাকে। আমরা বলেছি- গণমাধ্যম থেকে প্রতিনিধিত্ব নিতে। যাদের সিভিল সোসাইটিতে ভালো অধিকার আছে তাদের থেকে প্রতিনিধিত্ব নিতে।
দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক সাইফুল আলম বলেন, এই আলোচনায় আমাদের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। প্রথমত যেটি বলা হয়েছে, সার্চ কমিটি যে দশ জনের নাম দেবে সেই দশজনের যোগ্যতার পাশাপাশি তারা যেন সাহসী এবং নির্লোভ ব্যক্তি হন। অধিকাংশ মানুষের বিশ্বাস ও আস্থার জায়গায় আছেন- এমন দশজনের নাম যেন দেওয়া হয়।
বৈঠক শেষে বেরিয়ে একাত্তর টেলিভিশনের সিইও মোজাম্মেল বাবু বলেন, রাজনৈতিক বিভাজনের এই সময়ে শতভাগ বিতর্কমুক্ত নির্বাচন কমিশন গঠন কঠিন। তবুও চেষ্টা করতে হবে কোনো বিতর্কিত লোক যেন কমিশনে না আসে। এখানে গণমাধ্যম থেকেও যেন নাম রাখা হয় তা বলেছি। গণমাধ্যমের সিনিয়র সাংবাদিকরা নির্বাচন ও নির্বাচন প্রক্রিয়া অত্যন্ত কাছ থেকে দেখেন। এখানে যাদের নাম দেওয়া হয় তাদের নাম যেন কয়েকদিন আগেই গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। এতে নামগুলো নিয়ে জনগণের প্রতিক্রিয়া জানা যাবে।খবর সাম্প্রতিক দেশকাল
হককথা/এমউএ