বাংলাদেশ ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশে সবক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে। নারীর ক্ষমতায়নে তার সরকারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী জানান, “বাংলাদেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে নারীর অবদান ৩৪ শতাংশ। আমরা ২০২১ সালের মধ্যে প্রতিটি খাতে ৪০ শতাংশ এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়েছি।”
জাতিসংঘ সদরদপ্তরে সংস্থার সদস্যভুক্ত দেশগুলোর নারী নেতাদের নিয়ে ট্রাস্টিশিপ কাউন্সিলে আয়োজিত এক বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। নিউইয়র্কে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার বিকালে তিনি এ বক্তৃতা দেন।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে নারীদের ক্ষমতায়ন, আইনি সুরক্ষা সুনিশ্চিত এবং আর্থিক স্বাধীনতা অর্জনে বাংলাদেশের বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের কথা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “আমরা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় লিঙ্গ সমতা নিশ্চিত করে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এমডিজি) তিনটি লক্ষ্য অর্জন করেছি। লিঙ্গ সমতা এবং নারীর ক্ষমতায়নের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্পে ৪০ লাখেরও বেশি নারী কাজ করছেন এবং দেশের ৩৫ শতাংশ নারীর ব্যাংক একাউন্ট আছে।সংকটকালে নারীরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে এমন পরিস্থিতিতে কার্যকর সমাধান খুঁজে পেতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের মতো বিষয়ে নারীদের অংশগ্রহণের উপর জোর দেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশে প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীদের উপস্থিতি উজ্জ্বল হয়ে উঠছে, গতানুগতিকতা ভেঙে তারা অদম্য সাহস এবং নেতৃত্বে দক্ষতা দেখাচ্ছে। নেতৃত্বে নারীদের অংশগ্রহণ এই কারণে খুব গুরুত্বপূর্ণ যে সমস্যা সমাধানে তাদের অভিজ্ঞতা ও দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয়ে থাকে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তব্যের শুরুতে বহুল প্রতীক্ষিত উদ্যোগ ‘ইউএনজিএ প্ল্যাটফর্ম অব উইমেন লিডারস’ এর জন্য জাতিসংঘের ৭৬তম সাধারণ অধিবেশনের প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লাহ শহীদকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। জাতিসংঘের নারী নেতাদের ওই প্ল্যাটফর্মের ফের সম্মেলন আয়োজন করায় ৭৭তম অধিবেশনের প্রেসিডেন্ট সাবা ক্রোসির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।
অধিবেশনের সভাপতির উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি তিনটি বিষয় তুলে ধরে বক্তব্য শেষ করতে চাই। লিঙ্গ সমতা সম্পর্কিত অ্যাডভাইজরি বোর্ড প্রতিষ্ঠার জন্য আমি আপনাকে সাধুবাদ জানাই। এটি এখন স্থানীয় পর্যায়ে বাস্তবায়ন দরকার।” বিশ্বব্যাপী নারী নেতৃত্বকে উৎসাহিত করতে জাতিসংঘের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের সমর্থন অব্যাহত থাকবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “নারী নেতৃত্বাধীন সুশীল সমাজের সংগঠনগুলোকে যথেষ্ট রাজনৈতিক ও আর্থিকভাবে সহায়তা ও পৃষ্ঠপোষকতা করতে হবে। এ ধরনের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করার ক্ষেত্রে জাতিসংঘের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।” লিঙ্গ সমতায় অভিন্ন এজেন্ডাকে শক্তিশালী করার জন্য একটি শীর্ষ সম্মেলন করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “কেবল আমাদের নয়, সকল নেতাদেরই সেখানে যোগ দেওয়া উচিৎ এবং লিঙ্গ সমতা ও নারীর ক্ষমতায়নকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য দৃঢ় অঙ্গীকার করা প্রয়োজন।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে, সরকারের শীর্ষ স্তর থেকে শুরু করে সর্বনিম্ন স্তর পর্যন্ত নারীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ। আমরা সকল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে আমাদের নারীদের সামনের সারিতে নিয়ে আসছি।” নারী উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করা তার সরকারের অন্যতম লক্ষ্য জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা লিঙ্গ সমতায় সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি, যেমন- ব্যবসায়ের জন্য নারী ও পুরুষ উদ্যোক্তাদের জন্য অর্থের সমান প্রাপ্যতা নিশ্চিত করে।”
বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক নারী উদ্যোক্তাদের ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জামানতবিহীন ঋণ দিচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, পুনঃঅর্থায়ন প্রকল্পের ১৫ শতাংশ তহবিল, ১০ শতাংশ শিল্প প্লট এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা তহবিলের ১০ শতাংশ নারীদের জন্য বরাদ্দ করা হয়। “প্রতিটি ব্যাংক এবং ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ডেডিকেটেড ডেস্ক রয়েছে।” সূএ : সংবাদ
হককথা/এমউএ