নিউইয়র্ক ০৬:৩৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০২ জানুয়ারী ২০২৫, ১৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

সঙ্গীত শিল্পী আইয়ুব বাচ্চু আর নেই ॥ শুক্রবার জাতীয় ঈদগাহে প্রথম জানাযা, দাফন শনিবার

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৪:৪৬:৪৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ অক্টোবর ২০১৮
  • / ৭০৯ বার পঠিত

হককথা ডেস্ক: কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী আইয়ুব বাচ্চু আর নেই। বৃহস্পতিবার (১৮ অক্টোবর) সকাল ১০টার দিকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সকালে নিজের বাসায় অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে জানানো হয়, আইয়ুব বাচ্চুকে হাসপাতালে আনার আগেই তিনি মারা গেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৫৬ বছর। আইয়ুব বাচ্চুর আকস্মিক মৃত্যুর খবরে দেশ ও প্রবাসের লাখো লাখো ভক্ত শোকহত হয়েছেন। কেউ মেনে নিতে পারছেন না তার আকস্মিক মৃত্যু। এদিকে শিল্পী বাচ্চুর মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
শিল্পী আইয়ুব বাচ্চু ১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একাধারে গায়ক, লিডগিটারিস্ট, গীতিকার, সুরকার, প্লেব্যাক শিল্পী। এলআরবি ব্যান্ড দলের লিড গিটারিস্ট এবং ভোকাল বাচ্চু বাংলাদেশের ব্যান্ড জগতের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সম্মানিত ব্যক্তিত্বদের একজন। এর আগে তিনি ১০ বছর সোলস ব্যান্ডের সঙ্গে লিড গিটারিস্ট হিসেবে যুক্ত ছিলেন।
বাংলাদেশে ব্যান্ড সঙ্গীতজগতে তার যাত্রা শুরু হয় ফিলিংসের মাধ্যমে ১৯৭৮ সালে। অত্যন্ত গুণী এই শিল্পী তার শ্রোতা-ভক্তদের কাছে এবি নামেও পরিচিত। তার ডাক নাম রবিন। মূলত রক ঘরানার কণ্ঠের অধিকারী হলেও আধুনিক গান, ক্লাসিকাল সংগীত এবং লোকগীতি দিয়েও শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছেন।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শোক: এদিকে কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। এক শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানান।
শুক্রবার জাতীয় ঈদগাহে আইয়ুব বাচ্চুর প্রথম জানাযা, দাফন শনিবার: শুক্রবার (২০ অক্টোবর) বাদ জুমআ ঢাকায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে আইয়ুব বাচ্চুর প্রথম জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে। এরপর শনিবার চট্টগ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে তার মরদেহ দাফন করা হবে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে এ তথ্য জানান আইয়ুব বাচ্চুর ছোট ভাই। তিনি বলেন, আজ স্কয়ার হাসপাতালের হিমাগারে আইয়ুব বাচ্চুর মরদেহ রাখা হবে।
এর আগে সকালে নিজের বাসায় অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে জানানো হয়, আইয়ুব বাচ্চুকে হাসপাতালে আনার আগেই তিনি মারা গেছেন। স্কয়ার হাসপাতালের মেডিকেল সার্ভিসের পরিচালক মির্জা নাজিমউদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, সকালে তার হার্ট অ্যাটাক হয়। সকাল সোয়া ৯টার দিকে তার ড্রাইভার তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। তবে তার আগেই তার মৃত্যু হয়।
সংক্ষিপ্ত জীবনী: কিশোর বয়স থেকেই স্বপ্ন বুনছিলেন সঙ্গীতের জাদুকর শিল্পী আইয়ুব বাচ্চু। পরিবারের তেমন কেউ গানের সঙ্গে না থাকলেও শৈশব থেকেই গানের প্রতি তার ঝোঁক ছিল। আধুনিক-লোকগীতি ও ক্লাসিক্যালের পাশাপাশি শুনতেন প্রচুর ওয়েস্টার্ন গান। ব্যান্ড কিংবা গিটার- দুটোতেই তিনি ছিলেন কিংবদন্তি। তাকে বলা হয়, বাংলাদেশের ব্যান্ড সঙ্গীত এগিয়ে নেয়ার অন্যতম অগ্রপথিক।
আইয়ুব বাচ্চু মানেই উন্মাতাল ভক্তে পরিপূর্ণ গ্যালারি। অথচ মাত্র ৫৬ বছর বয়সেই সবাইকে ছেড়ে চলে গেলেন রূপালি গিটার, মায়াবি সকালের মায়া। দেশীয় ব্যান্ড সঙ্গীতের তিনি মধ্যমণি। এ রক লিজেন্ডের গড়ে তোলা ব্যান্ড এলআরবি পথচলার পার করেছে ২৭ বছর। শ্রোতাদের দিয়েছেন তিনি অসংখ্য জনপ্রিয় গান। তার জনপ্রিয় গান রূপালি গিটার ফেলে সত্যি চলে গেলেন দূরের বহুদূরে। সুখের পৃথিবীতে তাকে আর করতে হল না সুখের অভিনয়।
১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন বাচ্চু। সেখানেই কেটেছে কৈশোর আর তারুণ্যের দিনগুলো। তার ডাক নাম ছিল রবিন।
এক সাক্ষাৎকারে বাচ্চু বলেছিলেন, ছেলেবেলায় গান শুনতে শুনতে নিজে চেষ্টা করতে গিয়েই তার গায়ক হয়ে ওঠা। পশ্চিমা সঙ্গীতের প্রেমে পড়ে হাত দেন গিটারে। জিমি হেন্ডরিক্স, জো স্যাটরিনি, স্টিভ মুরের মতো শিল্পীদের কাজ থেকে পেয়েছেন অনুপ্রেরণা।
কলেজে পড়ার সময় বন্ধুদের নিয়ে বাচ্চু গড়ে তোলেন একটি ব্যান্ড দল। শুরুতে ‘গোল্ডেন বয়েজ’ নাম দিলেও পরে বদলে রাখা হয় ‘আগলি বয়েজ’। পাড়া-মহল্লার বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে চলত তাদের পরিবেশনা।
পেশাদার ব্যান্ডশিল্পী হিসেবে বাচ্চুর ক্যারিয়ার শুরু ১৯৭৮ সালে। ব্যান্ড দলে ফিলিংসের সঙ্গে সেই সময় চট্টগ্রামের বিভিন্ন অভিজাত হোটেলে পারফর্ম করতেন তিনি। দু’বছরের মাথায় যোগ দেন জনপ্রিয় ব্যান্ড দল ‘সোলস’-এ। টানা ১০ বছর সোলসের লিড গিটার বাজানোর পর ১৯৯১ সালের ৫ এপ্রিল আইয়ুব বাচ্চু গড়ে তোলেন নতুন ব্যান্ড ‘এলআরবি’। সেই সময় তার সঙ্গী ছিলেন জয়, স্বপন আর এসআই টুটুল। শুরুতে এলআরবি’র পুরো নামটি ছিল ‘লিটল রিভার ব্যান্ড’, পরে তা বদলে নাম হয়- ‘লাভ রানস ব্লাইন্ড’।
এলআরবির প্রথম কনসার্ট হয়েছিল ঢাকার একটি ক্লাবে। সেখানে ইংরেজি গানই পরিবেশন করেছিলেন তারা। কিছু দিন পর ঢাকা শিশু একাডেমিতে এক কনসার্টে প্রথমবারের মতো ক্লাব বা হোটেলের বাইরে দর্শকদের সামনে আসে ‘এলআরবি’।
১৯৯২ সালে দলের নামেই বাজারে আসে এলআরবির জোড়া অ্যালবাম এলআরবি-১ ও ২। এর পর গত ২৭ বছরে সুখ, তবুও, ঘুমন্ত শহরে, স্বপ্ন, ফেরারী মন, বিস্ময়, যুদ্ধ, স্পর্শসহ ১৪টি অ্যালবাম শ্রোতাদের সামনে এনেছে এলআরবি।
আইয়ুব বাচ্চুর প্রথম একক অ্যালবাম রক্ত গোলাপ বাজারে আসে ১৯৮৬ সালে। তখনও তিনি সোলসে। প্রথম অ্যালবাম খুব একটা সাড়া না পেলেও ১৯৮৮ সালে ময়না অ্যালবামে গায়ক হিসেবে বাচ্চু শ্রোতাপ্রিয় হতে শুরু করেন। ১৯৯৫ সালে প্রকাশিত বাচ্চুর তৃতীয় একক অ্যালবাম কষ্ট দারুণ ব্যবসা সফল হয়।
পরের বছরগুলোতে সময়, একা, প্রেম তুমি কি, কাফেলা, পথের গান, জীবন, রিমঝিম বৃষ্টি, বলিনি কখনো’র মতো একক অ্যালবাম নিয়ে শ্রোতাদের কাছে পৌঁছেন আইয়ুব বাচ্চু। ২০১৫ বাজারে আসে তার একক অ্যালবাম জীবনের গল্প।
এ ছাড়া লাল বাদশা, গুন্ডা নাম্বার ওয়ান, ব্যাচেলর ও চোরাবালি সিনেমায় প্লেব্যাক করেছেন বাচ্চু। চলচ্চিত্রে তার গাওয়া প্রথম গান- ‘অনন্ত প্রেম তুমি দাও আমাকে’ দারুণ জনপ্রিয় হয়।
আইয়ুব বাচ্চু ও এলআরবির অ্যালবাম: একক- রক্তগোলাপ (১৯৮৬), ময়না (১৯৮৬), কষ্ট (১৯৯৫), সময় (১৯৯৯), একা (১৯৯৯), প্রেম তুমি কী (২০০০), দুটি মন (২০০২), কাফেলা (২০০২), প্রেম প্রেমের মতো (২০০৩), পথের গান (২০০৪), ভাটির গানে মাটির টানে (২০০৬), জীবন (২০০৬), সাউন্ড অব সাইলেন্স-ইন্সট্রুমেন্টাল (২০০৭), রিমঝিম বৃষ্টি (২০০৮) ও বলিনি কখনও (২০০৯)।
ব্যান্ড: এলআরবি-১ ও ২ (১৯৯২), সুখ (১৯৯৩), তবুও (১৯৯৪), ঘুমন্ত শহরে (১৯৯৫), স্বপ্ন (১৯৯৬), আমাদের বিস্ময় (১৯৯৮), মন চাইলে মন পাবে (২০০১), অচেনা জীবন (২০০৩), মনে আছে নাকি নাই (২০০৫), লাইভ অ্যালবাম ফেরারি মন (আন প্ল্যাগড ১৯৯৬), স্পর্শ (২০০৮)।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

About Author Information

সঙ্গীত শিল্পী আইয়ুব বাচ্চু আর নেই ॥ শুক্রবার জাতীয় ঈদগাহে প্রথম জানাযা, দাফন শনিবার

প্রকাশের সময় : ০৪:৪৬:৪৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ অক্টোবর ২০১৮

হককথা ডেস্ক: কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী আইয়ুব বাচ্চু আর নেই। বৃহস্পতিবার (১৮ অক্টোবর) সকাল ১০টার দিকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সকালে নিজের বাসায় অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে জানানো হয়, আইয়ুব বাচ্চুকে হাসপাতালে আনার আগেই তিনি মারা গেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৫৬ বছর। আইয়ুব বাচ্চুর আকস্মিক মৃত্যুর খবরে দেশ ও প্রবাসের লাখো লাখো ভক্ত শোকহত হয়েছেন। কেউ মেনে নিতে পারছেন না তার আকস্মিক মৃত্যু। এদিকে শিল্পী বাচ্চুর মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
শিল্পী আইয়ুব বাচ্চু ১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একাধারে গায়ক, লিডগিটারিস্ট, গীতিকার, সুরকার, প্লেব্যাক শিল্পী। এলআরবি ব্যান্ড দলের লিড গিটারিস্ট এবং ভোকাল বাচ্চু বাংলাদেশের ব্যান্ড জগতের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সম্মানিত ব্যক্তিত্বদের একজন। এর আগে তিনি ১০ বছর সোলস ব্যান্ডের সঙ্গে লিড গিটারিস্ট হিসেবে যুক্ত ছিলেন।
বাংলাদেশে ব্যান্ড সঙ্গীতজগতে তার যাত্রা শুরু হয় ফিলিংসের মাধ্যমে ১৯৭৮ সালে। অত্যন্ত গুণী এই শিল্পী তার শ্রোতা-ভক্তদের কাছে এবি নামেও পরিচিত। তার ডাক নাম রবিন। মূলত রক ঘরানার কণ্ঠের অধিকারী হলেও আধুনিক গান, ক্লাসিকাল সংগীত এবং লোকগীতি দিয়েও শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছেন।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শোক: এদিকে কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। এক শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানান।
শুক্রবার জাতীয় ঈদগাহে আইয়ুব বাচ্চুর প্রথম জানাযা, দাফন শনিবার: শুক্রবার (২০ অক্টোবর) বাদ জুমআ ঢাকায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে আইয়ুব বাচ্চুর প্রথম জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে। এরপর শনিবার চট্টগ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে তার মরদেহ দাফন করা হবে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে এ তথ্য জানান আইয়ুব বাচ্চুর ছোট ভাই। তিনি বলেন, আজ স্কয়ার হাসপাতালের হিমাগারে আইয়ুব বাচ্চুর মরদেহ রাখা হবে।
এর আগে সকালে নিজের বাসায় অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে জানানো হয়, আইয়ুব বাচ্চুকে হাসপাতালে আনার আগেই তিনি মারা গেছেন। স্কয়ার হাসপাতালের মেডিকেল সার্ভিসের পরিচালক মির্জা নাজিমউদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, সকালে তার হার্ট অ্যাটাক হয়। সকাল সোয়া ৯টার দিকে তার ড্রাইভার তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। তবে তার আগেই তার মৃত্যু হয়।
সংক্ষিপ্ত জীবনী: কিশোর বয়স থেকেই স্বপ্ন বুনছিলেন সঙ্গীতের জাদুকর শিল্পী আইয়ুব বাচ্চু। পরিবারের তেমন কেউ গানের সঙ্গে না থাকলেও শৈশব থেকেই গানের প্রতি তার ঝোঁক ছিল। আধুনিক-লোকগীতি ও ক্লাসিক্যালের পাশাপাশি শুনতেন প্রচুর ওয়েস্টার্ন গান। ব্যান্ড কিংবা গিটার- দুটোতেই তিনি ছিলেন কিংবদন্তি। তাকে বলা হয়, বাংলাদেশের ব্যান্ড সঙ্গীত এগিয়ে নেয়ার অন্যতম অগ্রপথিক।
আইয়ুব বাচ্চু মানেই উন্মাতাল ভক্তে পরিপূর্ণ গ্যালারি। অথচ মাত্র ৫৬ বছর বয়সেই সবাইকে ছেড়ে চলে গেলেন রূপালি গিটার, মায়াবি সকালের মায়া। দেশীয় ব্যান্ড সঙ্গীতের তিনি মধ্যমণি। এ রক লিজেন্ডের গড়ে তোলা ব্যান্ড এলআরবি পথচলার পার করেছে ২৭ বছর। শ্রোতাদের দিয়েছেন তিনি অসংখ্য জনপ্রিয় গান। তার জনপ্রিয় গান রূপালি গিটার ফেলে সত্যি চলে গেলেন দূরের বহুদূরে। সুখের পৃথিবীতে তাকে আর করতে হল না সুখের অভিনয়।
১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন বাচ্চু। সেখানেই কেটেছে কৈশোর আর তারুণ্যের দিনগুলো। তার ডাক নাম ছিল রবিন।
এক সাক্ষাৎকারে বাচ্চু বলেছিলেন, ছেলেবেলায় গান শুনতে শুনতে নিজে চেষ্টা করতে গিয়েই তার গায়ক হয়ে ওঠা। পশ্চিমা সঙ্গীতের প্রেমে পড়ে হাত দেন গিটারে। জিমি হেন্ডরিক্স, জো স্যাটরিনি, স্টিভ মুরের মতো শিল্পীদের কাজ থেকে পেয়েছেন অনুপ্রেরণা।
কলেজে পড়ার সময় বন্ধুদের নিয়ে বাচ্চু গড়ে তোলেন একটি ব্যান্ড দল। শুরুতে ‘গোল্ডেন বয়েজ’ নাম দিলেও পরে বদলে রাখা হয় ‘আগলি বয়েজ’। পাড়া-মহল্লার বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে চলত তাদের পরিবেশনা।
পেশাদার ব্যান্ডশিল্পী হিসেবে বাচ্চুর ক্যারিয়ার শুরু ১৯৭৮ সালে। ব্যান্ড দলে ফিলিংসের সঙ্গে সেই সময় চট্টগ্রামের বিভিন্ন অভিজাত হোটেলে পারফর্ম করতেন তিনি। দু’বছরের মাথায় যোগ দেন জনপ্রিয় ব্যান্ড দল ‘সোলস’-এ। টানা ১০ বছর সোলসের লিড গিটার বাজানোর পর ১৯৯১ সালের ৫ এপ্রিল আইয়ুব বাচ্চু গড়ে তোলেন নতুন ব্যান্ড ‘এলআরবি’। সেই সময় তার সঙ্গী ছিলেন জয়, স্বপন আর এসআই টুটুল। শুরুতে এলআরবি’র পুরো নামটি ছিল ‘লিটল রিভার ব্যান্ড’, পরে তা বদলে নাম হয়- ‘লাভ রানস ব্লাইন্ড’।
এলআরবির প্রথম কনসার্ট হয়েছিল ঢাকার একটি ক্লাবে। সেখানে ইংরেজি গানই পরিবেশন করেছিলেন তারা। কিছু দিন পর ঢাকা শিশু একাডেমিতে এক কনসার্টে প্রথমবারের মতো ক্লাব বা হোটেলের বাইরে দর্শকদের সামনে আসে ‘এলআরবি’।
১৯৯২ সালে দলের নামেই বাজারে আসে এলআরবির জোড়া অ্যালবাম এলআরবি-১ ও ২। এর পর গত ২৭ বছরে সুখ, তবুও, ঘুমন্ত শহরে, স্বপ্ন, ফেরারী মন, বিস্ময়, যুদ্ধ, স্পর্শসহ ১৪টি অ্যালবাম শ্রোতাদের সামনে এনেছে এলআরবি।
আইয়ুব বাচ্চুর প্রথম একক অ্যালবাম রক্ত গোলাপ বাজারে আসে ১৯৮৬ সালে। তখনও তিনি সোলসে। প্রথম অ্যালবাম খুব একটা সাড়া না পেলেও ১৯৮৮ সালে ময়না অ্যালবামে গায়ক হিসেবে বাচ্চু শ্রোতাপ্রিয় হতে শুরু করেন। ১৯৯৫ সালে প্রকাশিত বাচ্চুর তৃতীয় একক অ্যালবাম কষ্ট দারুণ ব্যবসা সফল হয়।
পরের বছরগুলোতে সময়, একা, প্রেম তুমি কি, কাফেলা, পথের গান, জীবন, রিমঝিম বৃষ্টি, বলিনি কখনো’র মতো একক অ্যালবাম নিয়ে শ্রোতাদের কাছে পৌঁছেন আইয়ুব বাচ্চু। ২০১৫ বাজারে আসে তার একক অ্যালবাম জীবনের গল্প।
এ ছাড়া লাল বাদশা, গুন্ডা নাম্বার ওয়ান, ব্যাচেলর ও চোরাবালি সিনেমায় প্লেব্যাক করেছেন বাচ্চু। চলচ্চিত্রে তার গাওয়া প্রথম গান- ‘অনন্ত প্রেম তুমি দাও আমাকে’ দারুণ জনপ্রিয় হয়।
আইয়ুব বাচ্চু ও এলআরবির অ্যালবাম: একক- রক্তগোলাপ (১৯৮৬), ময়না (১৯৮৬), কষ্ট (১৯৯৫), সময় (১৯৯৯), একা (১৯৯৯), প্রেম তুমি কী (২০০০), দুটি মন (২০০২), কাফেলা (২০০২), প্রেম প্রেমের মতো (২০০৩), পথের গান (২০০৪), ভাটির গানে মাটির টানে (২০০৬), জীবন (২০০৬), সাউন্ড অব সাইলেন্স-ইন্সট্রুমেন্টাল (২০০৭), রিমঝিম বৃষ্টি (২০০৮) ও বলিনি কখনও (২০০৯)।
ব্যান্ড: এলআরবি-১ ও ২ (১৯৯২), সুখ (১৯৯৩), তবুও (১৯৯৪), ঘুমন্ত শহরে (১৯৯৫), স্বপ্ন (১৯৯৬), আমাদের বিস্ময় (১৯৯৮), মন চাইলে মন পাবে (২০০১), অচেনা জীবন (২০০৩), মনে আছে নাকি নাই (২০০৫), লাইভ অ্যালবাম ফেরারি মন (আন প্ল্যাগড ১৯৯৬), স্পর্শ (২০০৮)।