সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে শোকপ্রস্তাব গৃহীত
- প্রকাশের সময় : ১১:১২:১১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩১ মে ২০২৩
- / ৫৭ বার পঠিত
বাংলাদেশ ডেস্ক : একাদশ জাতীয় সংসদের ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য ও নন্দিত চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠান (ফারুক) এবং সাবেক প্রতিমন্ত্রী, পঞ্চম ও সপ্তম জাতীয় সংসদে রাজশাহী-২, অষ্টম জাতীয় সংসদে রাজশাহী-৫ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মো. কবীর হোসেনের মৃত্যুতে জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে শোকপ্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে। বুধবার (৩১ মে) সংসদের ২৩তম অধিবেশনে এ শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। এতে আকবর হোসেন পাঠান (ফারুক) ও সাবেক সংসদ সদস্য মো. কবীর হোসেনের মৃত্যুতে মহান জাতীয় সংসদ থেকে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করা হয়। ১৯৪৮ সালের ১৮ আগস্ট ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য আকবর হোসেন পাঠান। গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর।
নন্দিত এই চিত্রনায়ক ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন ছাড়াও ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে ‘জলছবি’ ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে বাংলা চলচ্চিত্রে পা রাখেন তিনি। পরবর্তীতে ১৯৭৩ সালে ‘আবার তোরা মানুষ হ’ ও ১৯৭৪ সালে ‘আলোর মিছিল’ নামে দুটি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এছাড়াও তিনি আলোর মিছিল, সুজন সখী, সারেং বৌ’সহ শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। ২০০৬ সালে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি পুরস্কারে (বাচসাস) চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব হিসেবে আজীবন সম্মাননা পুরস্কার ছাড়াও ২০১৬ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা পুরস্কার অর্জন করেন তিনি। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে ঢাকা-১৭ আসন থেকে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন আকবর হোসেন পাঠান। এই সংসদে তিনি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। রাজনীতির পাশাপাশি বিভিন্ন উন্নয়ন ও সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন তিনি।
এ বিষয়ে সংসদের শোকপ্রস্তাবে বলা হয়, একাদশ জাতীয় সংসদের ১৯০ ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য নন্দিত চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠানের (ফারুক) মৃত্যুতে দেশ একজন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং নিবেদিতপ্রাণ সমাজসেবককে হারাল। এ সংসদ তার মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ, তার রুহের মাগফিরাত কামনা এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিক সহমর্মিতা প্রকাশ করছে। প্রথা অনুযায়ী সংসদ সদস্য নন্দিত চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠানের (ফারুক) স্মরণে এ দিন সংসদে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নেন। এছাড়াও অন্যদের মধ্যে আলোচনায় আরও অংশ নেন সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, সরকার দলীয় সংসদ সদস্য আমীর হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আসাদুজ্জামান নূর, মেহের আফরোজ, হাবিব হাসান, বিরোধী দলের উপনেতা গোলাম মুহাম্মদ কাদের, বিরোধী দলের সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ ও আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।
আরোও পড়ুন । বাংলাদেশে নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্র ভিসার হুমকি, নজিরবিহীন পদক্ষেপ
এ দিন শোকপ্রস্তাবে স্পিকার বলেন, আমরা ইতোমধ্যে সাবেক প্রতিমন্ত্রী এবং পঞ্চম ও সপ্তম জাতীয় সংসদে রাজশাহী-২ এবং অষ্টম জাতীয় সংসদে রাজশাহী-৫ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মো. কবীর হোসেনকে হারিয়েছি। এছাড়াও সংসদের ২৩তম অধিবেশনে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ঐক্য ন্যাপের সভাপতি ও মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক পঙ্কজ ভট্টাচার্য, ভারতে বাংলা ভাষার অন্যতম জনপ্রিয় কথাশিল্পী সমরেশ মজুমদার, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রোকিয়া আফজাল রহমান, বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর প্রয়াত ভাষাসৈনিক এম এ ওয়াদুদের সহধর্মিণী ও শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনির মা রহিমা ওয়াদুদ এবং জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কনিষ্ঠ পুত্রবধূ কল্যানী কাজীর মৃত্যুতে মহান সংসদ গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করে। একই অধিবেশনে সংসদ সচিবালয়ের অফিস সহায়ক মো. আব্দুল মতিনকে হারিয়ে তার মৃত্যুতে মহান জাতীয় সংসদ গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করে।
এছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র আঘাতে মিয়ানমারে হতাহত ছাড়াও বাংলাদেশে আহত এবং দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থানে দুর্ঘটনায় হতাহতদের স্মরণে মহান জাতীয় সংসদ গভীর শোক প্রকাশসহ সকল বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জ্ঞাপন করে। এ দিন শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনার পর সর্বসম্মতিক্রমে তা গৃহীত হয়। পরে মৃতদের সম্মানে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন ছাড়াও তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য হাফেজ রুহুল আমিন মাদানী। এরপর সংসদের নিয়ম অনুযায়ী বিদ্যমান সংসদের সদস্যের মৃত্যুতে দিনের অন্যসব কার্যসূচি স্থগিত করে সংসদের বৈঠক মুলতবি ঘোষণা করা হয়। তবে এ দিন প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর টেবিলে উপস্থাপন করা হয়। সূত্র : ঢাকা মেইল
বেলী/হককথা