নিউইয়র্ক ০১:৪২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

সংলাপের পরিবেশ তৈরিতে দুই শর্ত বিএনপির

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৪:৫৮:৫৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৩
  • / ১১৮ বার পঠিত

বাংলাদেশ ডেস্ক : অবাধ, নিরপেক্ষ ও সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন নিশ্চিত না হওয়ায় দেশে এই মুহূর্তে তপশিল ঘোষণার পরিবেশ নেই বলে মনে করে বিএনপি ও একদফার আন্দোলনে থাকা মিত্ররা। শর্তহীন সংলাপের পরিবেশ তৈরির জন্য তপশিল ঘোষণার প্রক্রিয়া দুই সপ্তাহ পেছানো এবং শীর্ষ নেতাদের মুক্তির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে তারা। তিন দিন আগে দলটির পক্ষ থেকে কূটনীতিকদের মাধ্যমে সরকারকে এমন বার্তা দেওয়া হয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।

এর আগে বিএনপি ঘোষণা দিয়েছিল, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সরকারের পদত্যাগ ছাড়া তারা কোনো সংলাপে যাবে না। শর্তহীন সংলাপের বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করে দলটি তাদের আগের অবস্থান থেকে কিছুটা সরে এসেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তবে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্রের চিঠি সরকারের ওপর আরেকটি চাপ বলে মনে করছে বিএনপি ও তাদের মিত্ররা।

বাংলাদেশে আগামীতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করতে শর্তহীন সংলাপে বসতে গত সোমবার বড় তিন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিকে চিঠি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু।

জানা গেছে, বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের এই চিঠিকে বিএনপির তরফ থেকে ইতিবাচক হিসেবেই নেওয়া হয়েছে। সরকারকে দেওয়া দুই প্রস্তাবনার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের মনোভাব ও পরিস্থিতি সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করছে দলটি। শিগগির বিএনপির পক্ষ থেকে লিখিতভাবে এ বিষয়ে ঢাকার যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসকে জানানো হবে। তবে দলের শীর্ষ ও গুরুত্বপূর্ণ নেতারা কারাগারে থাকায় তাদের মুক্তি ছাড়া কার সঙ্গে সংলাপ হবে—বিএনপির কাছে সেটাই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিএনপি মনে করে, গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এই দুটি বিষয় মানা হলে সংলাপের পরিবেশ তৈরি হবে। তখন সেই সংলাপে নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া, কোন প্রক্রিয়ায় নির্বাচন হবে— আলোচনার মাধ্যমে তা নির্ধারিত হতে পারে। যদিও সংলাপ নিয়ে বিএনপির অতীত অভিজ্ঞতা সুখকর নয়, একই সঙ্গে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত এখনো পরিবর্তন হয়নি দলটির।

জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী কালবেলাকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের চিঠি পেয়েছি। এ বিষয়ে দলীয় কোনো সিদ্ধান্ত হলে পরে জানানো হবে।’

তবে বিএনপির কোনো কোনো নেতা মনে করেন, রাজপথে সংঘাত-সহিংসতা এড়িয়ে সংলাপের মাধ্যমে যদি নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়ে রাজনৈতিক সমঝোতা করা যায়, সেটা দেশ ও জনগণের জন্য মঙ্গলজনক হবে। দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি সেই সুযোগ গ্রহণ করতে চায়। তবে অতীতের মতো সংলাপ ফলপ্রসূ না হলে সে ক্ষেত্রে রাজপথে সমাধানের ব্যাপারেও নেতাকর্মীদের অবস্থান থাকবে।

বিএনপি এখন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের একদফা দাবিতে চূড়ান্ত ধাপের আন্দোলনে রয়েছে। গত দুই সপ্তাহে চার দফায় দেশব্যাপী ৯ দিনের অবরোধ এবং এক দিনের হরতাল পালন করেছে দলটি। আজ বুধবার থেকে পঞ্চম দফায় দেশব্যাপী ফের ৪৮ ঘণ্টা সর্বাত্মক অবরোধের কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে নেমেছে বিএনপি ও মিত্ররা। এমন পরিস্থিতিতে একতরফাভাবে তপশিল ঘোষণা করা হলে রাজপথ আরও উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

জানা গেছে, যদি সবকিছু উপেক্ষা করে একতরফাভাবে তপশিল ঘোষণা করা হয়, তাহলে বিএনপি ও শরিকরা কঠোর আন্দোলনে যাবে। চলমান হরতাল-অবরোধের সঙ্গে একতরফা তপশিল ঘোষণার প্রতিবাদে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ করতে পারে তারা। এ ছাড়া পরদিন নির্বাচন কমিশন অভিমুখে ঘেরাওয়ের কর্মসূচি আসতে পারে। এসব কর্মসূচি খুব শক্তভাবে পালন করা হবে। আর নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিলে ভোট ঠেকাতে সর্বশেষ কর্মসূচি হিসেবে হরতাল-অবরোধের সঙ্গে অসহযোগ আন্দোলনেও যেতে পারে বিএনপি ও শরিকরা।

এদিকে রাজনৈতিক সমঝোতা ছাড়া তপশিল ঘোষণা করা হলে ১৫ নভেম্বর নির্বাচন কমিশন অভিমুখে গণমিছিল করবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। একতরফা তপশিল ঘোষণা করা হলে দেশবাসী তা মানবে না বলেও দাবি করেছেন দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানি।

নির্বাচন কমিশনকে একতরফা তপশিল ঘোষণা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক জেএসডির সভাপতি আ স ম আব্দুর রব বলেছেন, ‘নির্বাচনের আগে প্রচণ্ড শক্তি প্রয়োগে বিরোধী দলকে রাজনৈতিক মাঠ থেকে বিতাড়িত করা, বেশুমার আটক-গ্রেপ্তার ও নিপীড়ন করে নীলনকশার অংশ হিসেবে একতরফা তপশিল ও নির্বাচনের ঘোষণা হবে সংঘাত এবং রক্তপাতকে উসকানি দেওয়া। এর পরিণতি হবে ভয়াবহ।’

যুগপৎ আন্দোলনের শরিক গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেছেন, ‘রাজনৈতিক সমঝোতা ছাড়া তপশিল নাটক করলে পরিস্থিতি ভালো হবে না। আপনারা (ইসি) তপশিল ঘোষণা করে বাসায় ফিরতে পারবেন না, আমরা জনগণকে নিয়ে রাজপথে প্রতিহত করব।’

একদফা দাবিতে সরকারবিরোধী চূড়ান্ত ধাপের আন্দোলনের অংশ হিসেবে গত ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশ ডাকে বিএনপি। কিন্তু ওই মহাসমাবেশ ঘিরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় দলটির নেতাকর্মীরা। এরপর থেকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় তালাবদ্ধ। তখন থেকেই কার্যালয় কার্যত পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। পর্যায়ক্রমে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সেখানে অবস্থান করছেন।

এ ছাড়া দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার এড়াতে অন্য নেতারা আত্মগোপনে রয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে থাকার পাশাপাশি কূটনৈতিক অঙ্গনেও যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে বিএনপি। সেখানে বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরা হচ্ছে। একই সঙ্গে নির্বাচনী পরিবেশ তৈরিতে তপশিল দুই সপ্তাহ পেছানো এবং শীর্ষ নেতাদের যাতে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়, সে ব্যাপারে কূটনীতিকদের মাধ্যমে সরকারকে বার্তা দেওয়া হয়েছে। এর পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতে শর্তহীন সংলাপে বসতে তিন বড় দলকে এই চিঠি দেওয়া হলো।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের এই চিঠি সরকারের ওপর চাপ তৈরি করেছে বলে দাবি যুগপৎ আন্দোলনে বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ শরিক জোট গণতন্ত্র মঞ্চের। মঞ্চের অন্যতম নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক কালবেলাকে বলেন, ‘সংলাপে যাওয়ার কোনো পরিবেশ নেই। সারা দেশ এখন অবরুদ্ধ। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস অব্যাহতভাবে চলছে। বিশেষ করে বিএনপির বিরুদ্ধে দেশব্যাপী গ্রেপ্তার-আটক চলছে। দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় তালাবদ্ধ। ২৮ অক্টোবরের পর থেকে বিএনপি মহাসচিব, সিনিয়র নেতারাসহ অন্তত ১৪ হাজার নেতাকর্মী বন্দি রয়েছেন কারাগারে। ফলে সংলাপের আগে অফিস অবমুক্ত করা, নেতাকর্মীদের মুক্তি এসব প্রণিধানযোগ্য। এই পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে সরকারকেই। যুক্তরাষ্ট্রের এই চিঠি সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে সরকারের ওপর চাপ তৈরি করেছে।’  সূত্র : কালবেলা

হককথা/নাছরিন

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

সংলাপের পরিবেশ তৈরিতে দুই শর্ত বিএনপির

প্রকাশের সময় : ০৪:৫৮:৫৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৩

বাংলাদেশ ডেস্ক : অবাধ, নিরপেক্ষ ও সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন নিশ্চিত না হওয়ায় দেশে এই মুহূর্তে তপশিল ঘোষণার পরিবেশ নেই বলে মনে করে বিএনপি ও একদফার আন্দোলনে থাকা মিত্ররা। শর্তহীন সংলাপের পরিবেশ তৈরির জন্য তপশিল ঘোষণার প্রক্রিয়া দুই সপ্তাহ পেছানো এবং শীর্ষ নেতাদের মুক্তির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে তারা। তিন দিন আগে দলটির পক্ষ থেকে কূটনীতিকদের মাধ্যমে সরকারকে এমন বার্তা দেওয়া হয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।

এর আগে বিএনপি ঘোষণা দিয়েছিল, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সরকারের পদত্যাগ ছাড়া তারা কোনো সংলাপে যাবে না। শর্তহীন সংলাপের বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করে দলটি তাদের আগের অবস্থান থেকে কিছুটা সরে এসেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তবে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্রের চিঠি সরকারের ওপর আরেকটি চাপ বলে মনে করছে বিএনপি ও তাদের মিত্ররা।

বাংলাদেশে আগামীতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করতে শর্তহীন সংলাপে বসতে গত সোমবার বড় তিন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিকে চিঠি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু।

জানা গেছে, বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের এই চিঠিকে বিএনপির তরফ থেকে ইতিবাচক হিসেবেই নেওয়া হয়েছে। সরকারকে দেওয়া দুই প্রস্তাবনার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের মনোভাব ও পরিস্থিতি সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করছে দলটি। শিগগির বিএনপির পক্ষ থেকে লিখিতভাবে এ বিষয়ে ঢাকার যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসকে জানানো হবে। তবে দলের শীর্ষ ও গুরুত্বপূর্ণ নেতারা কারাগারে থাকায় তাদের মুক্তি ছাড়া কার সঙ্গে সংলাপ হবে—বিএনপির কাছে সেটাই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিএনপি মনে করে, গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এই দুটি বিষয় মানা হলে সংলাপের পরিবেশ তৈরি হবে। তখন সেই সংলাপে নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া, কোন প্রক্রিয়ায় নির্বাচন হবে— আলোচনার মাধ্যমে তা নির্ধারিত হতে পারে। যদিও সংলাপ নিয়ে বিএনপির অতীত অভিজ্ঞতা সুখকর নয়, একই সঙ্গে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত এখনো পরিবর্তন হয়নি দলটির।

জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী কালবেলাকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের চিঠি পেয়েছি। এ বিষয়ে দলীয় কোনো সিদ্ধান্ত হলে পরে জানানো হবে।’

তবে বিএনপির কোনো কোনো নেতা মনে করেন, রাজপথে সংঘাত-সহিংসতা এড়িয়ে সংলাপের মাধ্যমে যদি নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়ে রাজনৈতিক সমঝোতা করা যায়, সেটা দেশ ও জনগণের জন্য মঙ্গলজনক হবে। দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি সেই সুযোগ গ্রহণ করতে চায়। তবে অতীতের মতো সংলাপ ফলপ্রসূ না হলে সে ক্ষেত্রে রাজপথে সমাধানের ব্যাপারেও নেতাকর্মীদের অবস্থান থাকবে।

বিএনপি এখন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের একদফা দাবিতে চূড়ান্ত ধাপের আন্দোলনে রয়েছে। গত দুই সপ্তাহে চার দফায় দেশব্যাপী ৯ দিনের অবরোধ এবং এক দিনের হরতাল পালন করেছে দলটি। আজ বুধবার থেকে পঞ্চম দফায় দেশব্যাপী ফের ৪৮ ঘণ্টা সর্বাত্মক অবরোধের কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে নেমেছে বিএনপি ও মিত্ররা। এমন পরিস্থিতিতে একতরফাভাবে তপশিল ঘোষণা করা হলে রাজপথ আরও উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

জানা গেছে, যদি সবকিছু উপেক্ষা করে একতরফাভাবে তপশিল ঘোষণা করা হয়, তাহলে বিএনপি ও শরিকরা কঠোর আন্দোলনে যাবে। চলমান হরতাল-অবরোধের সঙ্গে একতরফা তপশিল ঘোষণার প্রতিবাদে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ করতে পারে তারা। এ ছাড়া পরদিন নির্বাচন কমিশন অভিমুখে ঘেরাওয়ের কর্মসূচি আসতে পারে। এসব কর্মসূচি খুব শক্তভাবে পালন করা হবে। আর নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিলে ভোট ঠেকাতে সর্বশেষ কর্মসূচি হিসেবে হরতাল-অবরোধের সঙ্গে অসহযোগ আন্দোলনেও যেতে পারে বিএনপি ও শরিকরা।

এদিকে রাজনৈতিক সমঝোতা ছাড়া তপশিল ঘোষণা করা হলে ১৫ নভেম্বর নির্বাচন কমিশন অভিমুখে গণমিছিল করবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। একতরফা তপশিল ঘোষণা করা হলে দেশবাসী তা মানবে না বলেও দাবি করেছেন দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানি।

নির্বাচন কমিশনকে একতরফা তপশিল ঘোষণা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক জেএসডির সভাপতি আ স ম আব্দুর রব বলেছেন, ‘নির্বাচনের আগে প্রচণ্ড শক্তি প্রয়োগে বিরোধী দলকে রাজনৈতিক মাঠ থেকে বিতাড়িত করা, বেশুমার আটক-গ্রেপ্তার ও নিপীড়ন করে নীলনকশার অংশ হিসেবে একতরফা তপশিল ও নির্বাচনের ঘোষণা হবে সংঘাত এবং রক্তপাতকে উসকানি দেওয়া। এর পরিণতি হবে ভয়াবহ।’

যুগপৎ আন্দোলনের শরিক গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেছেন, ‘রাজনৈতিক সমঝোতা ছাড়া তপশিল নাটক করলে পরিস্থিতি ভালো হবে না। আপনারা (ইসি) তপশিল ঘোষণা করে বাসায় ফিরতে পারবেন না, আমরা জনগণকে নিয়ে রাজপথে প্রতিহত করব।’

একদফা দাবিতে সরকারবিরোধী চূড়ান্ত ধাপের আন্দোলনের অংশ হিসেবে গত ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশ ডাকে বিএনপি। কিন্তু ওই মহাসমাবেশ ঘিরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় দলটির নেতাকর্মীরা। এরপর থেকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় তালাবদ্ধ। তখন থেকেই কার্যালয় কার্যত পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। পর্যায়ক্রমে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সেখানে অবস্থান করছেন।

এ ছাড়া দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার এড়াতে অন্য নেতারা আত্মগোপনে রয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে থাকার পাশাপাশি কূটনৈতিক অঙ্গনেও যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে বিএনপি। সেখানে বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরা হচ্ছে। একই সঙ্গে নির্বাচনী পরিবেশ তৈরিতে তপশিল দুই সপ্তাহ পেছানো এবং শীর্ষ নেতাদের যাতে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়, সে ব্যাপারে কূটনীতিকদের মাধ্যমে সরকারকে বার্তা দেওয়া হয়েছে। এর পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতে শর্তহীন সংলাপে বসতে তিন বড় দলকে এই চিঠি দেওয়া হলো।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের এই চিঠি সরকারের ওপর চাপ তৈরি করেছে বলে দাবি যুগপৎ আন্দোলনে বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ শরিক জোট গণতন্ত্র মঞ্চের। মঞ্চের অন্যতম নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক কালবেলাকে বলেন, ‘সংলাপে যাওয়ার কোনো পরিবেশ নেই। সারা দেশ এখন অবরুদ্ধ। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস অব্যাহতভাবে চলছে। বিশেষ করে বিএনপির বিরুদ্ধে দেশব্যাপী গ্রেপ্তার-আটক চলছে। দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় তালাবদ্ধ। ২৮ অক্টোবরের পর থেকে বিএনপি মহাসচিব, সিনিয়র নেতারাসহ অন্তত ১৪ হাজার নেতাকর্মী বন্দি রয়েছেন কারাগারে। ফলে সংলাপের আগে অফিস অবমুক্ত করা, নেতাকর্মীদের মুক্তি এসব প্রণিধানযোগ্য। এই পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে সরকারকেই। যুক্তরাষ্ট্রের এই চিঠি সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে সরকারের ওপর চাপ তৈরি করেছে।’  সূত্র : কালবেলা

হককথা/নাছরিন