অমীমাংসিত কিছু বিষয়
শুল্কছাড় নিয়ে আবার আলোচনায় বসবে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ
- প্রকাশের সময় : ১১:০১:০৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫
- / ৬৬ বার পঠিত
হককথা ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের শুল্কছাড় নিয়ে আলোচনায় কয়েকটি বিষয় অমীমাংসিত রয়ে গেছে। তিন দিনের আলোচনার পর দুই পক্ষ কয়েকটি বিষয়ে একমত হতে পারেনি। ফলে শুল্কছাড়ের বিষয়ে দুই দেশ আবার আলোচনায় বসবে। শনিবার (১২ জুলাই) ওয়াশিংটন থেকে পাঠানো বাংলাদেশ দূতাবাসের এক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়।
ওয়াশিংটন থেকে পাঠানো বার্তায় জানানো হয়েছে, দ্বিতীয় দফার বাণিজ্য আলোচনার তৃতীয় ও শেষ দিনে আরও কিছু বিষয়ে দুই দেশ একমত হয়েছে। তবে কয়েকটি বিষয় এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে। দুই পক্ষ চুক্তি-তর্কে আলোচনা করেছে, সম্পূর্ণ একমত হতে পারেনি কয়েকটি বিষয়ে। দুই পক্ষই এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে নিজেদের মধ্যে আন্তমন্ত্রণালয় আলোচনা করতে হবে। তারপর আবার দুই দেশের প্রতিনিধিরা আলোচনায় বসবেন। সেই আলোচনা ভার্চুয়ালি এবং সামনাসামনি-দুই প্রক্রিয়াতেই হতে পারে। খুব দ্রæত সেই সময় ও তারিখ নির্ধারিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জানা গেছে, বাণিজ্য উপদেষ্টার নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল দেশে ফিরছে। প্রয়োজন হলে এর মধ্যে তারা আবার আসবে। তিন দিনের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন ও বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান আশাবাদী যে নির্ধারিত সময়ের মধধ্যে একটি ইতিবাচক অবস্থানে পৌঁছানো যাবে।
বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ তৈয়্যব ঢাকা থেকে ভার্চুয়ালী অংশগ্রহণ করেন। ভার্চুয়ালী আরও উপস্থিত ছিলেন সরকারি সিনিয়র কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা।
আলোচনার অগ্রগতি জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, দ্বিপক্ষীয় আলোচনাটি মোটের উপর সফল। যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবের ৮০ শতাংশ বিষয়ে আমরা নীতিগতভাবে একমত হয়েছি। তারা আমাদের অবস্থানে সন্তুষ্ট। তবে কয়েকটি মৌলিক ইস্যুতে এখনো মতৈক্য হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের কাছে যেসব দাবি এসেছে, তার মধ্যে রয়েছে- আমেরিকান পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা নিশ্চিত করা, মেধাস্বত্ব সুরক্ষায় অগ্রাধিকার দেওয়া এবং শুল্ক ও অশুল্ক প্রতিবন্ধকতা কমানো। এছাড়া কৃষিপণ্য, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, গম, তুলা, এলএনজি, ভোজ্যতেল, যানবাহন, বোয়িং বিমান ও সামরিক সরঞ্জাম আমদানিতে যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণ বাড়ানোর প্রস্তাবেও বাংলাদেশ সম্মতি দিয়েছে।
তবে আলোচনায় কিছু স্পর্শকাতর শর্তে বাংলাদেশ আপত্তি তুলেছে। যেমন-যুক্তরাষ্ট্র যদি কোনো দেশকে নিষেধাজ্ঞা দেয়, তবে বাংলাদেশকেও তা মেনে চলতে হবে, কিংবা যেসব আমেরিকান পণ্যকে বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত সুবিধা দেবে, সেগুলো অন্য কোনো দেশকে না দেওয়ার শর্ত। এসব বিষয় বাংলাদেশের জন্য গ্রহণযোগ্য নয় বলেই জানানো হয়েছে।
এছাড়াও আমেরিকান প্রতিনিধিরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, বাংলাদেশের চীন ও ভারতের সঙ্গে অতিমাত্রার বাণিজ্যিক নির্ভরতা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি বাড়াচ্ছে। জবাবে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল যুক্তরাষ্ট্রকে আশ্বস্ত করেছে, বাণিজ্য ভারসাম্য রক্ষায় তারা আন্তরিক এবং ইতোমধ্যে পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে। তবে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী, বাংলাদেশকে বহুপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্ক বজায় রাখতে হয়- কারণে একতরফা শর্ত পূরণ সব সময় সম্ভব নয়। সংলাপের শেষে ইউএসটিআরের প্রতিনিধিরা আলোচনা সংশ্লিষ্ট সব বিষয় লিপিবদ্ধ করেছেন এবং তা হোয়াইট হাউসে পাঠানো হবে। এরপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের পক্ষ থেকে।
এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের প্রেস মিনিস্টার গোলাম মোর্তজা বলেন, আলোচনাটি অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে হয়েছে। পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট আলোচনা হয়েছে। এখনো কিছু বিষয় অসমাপ্ত থাকলেও আলোচনা আবার শুরু হবে-তা সরাসরি নাকি ভার্চুয়ালি, তা দু-এক দিনের মধ্যেই নির্ধারণ হবে। সব মিলিয়ে, আলোচনার ফল এখনো অনিশ্চিত হলেও, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের বেশিরভাগ প্রস্তাবে সম্মতি দেওয়ায় একটি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির পথ কিছুটা সুগম হয়েছে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গত এপ্রিলে বাংলাদেশসহ ৫৭টি দেশের পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ঘোষিত শুল্ক হার ছিল ৩৭। এর পরপরই শুল্ক কমানো নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে বাংলাদেশ। একপর্যায়ে তা ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করে যুক্তরাষ্ট্র। ৯ জুলাই এই স্থগিতাদেশের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে এরই মধ্যে ৭ জুলাই বাংলাদেশসহ ১৪টি দেশের পণ্যের ওপর নতুন করে বাড়তি শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন ট্রাম্প। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এ শুল্ক হার ৩৫। উল্লেখ্য, বাড়তি শুল্কছাড় নিয়ে গত ৯ জুলাই বুধবার দুই দেশের মধ্যে তিন দিনের আলোচনা শুরু হয়।
















