শিক্ষক, সাহিত্যিক, সাংবাদিকের নিরাপত্তা জোরদারে সুপারিশ গোয়েন্দা সংস্থার
- প্রকাশের সময় : ১১:৫৩:৫১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ মে ২০১৬
- / ৭৫২ বার পঠিত
ঢাকা: মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী শিক্ষক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, লেখক, ব্লগারসহ প্রগতিশীল ব্যক্তিদের নিরাপত্তা জোরদারে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে একটি গোয়েন্দা সংস্থা। ইতিমধ্যে কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি সরকারের কাছে নিরাপত্তা চেয়েছেন।
গত সপ্তাহে দেওয়া একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে দেশের সর্বশেষ পরিস্থিতি তুলে ধরে প্রগতিশীল ব্যক্তিদের নিরাপত্তা জোরদারের সুপারিশ করা হয়। সরকার তাঁদের নিরাপত্তামূলক সহায়তা দিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এ ব্যাপারে নির্দেশ দিয়ে বলা হয়েছে, তাঁদের বাসভবন ও কর্মস্থল থেকে আসা-যাওয়ার সময় ও অনুষ্ঠানে অবস্থানকালে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার থাকবে। এসব ব্যক্তির বাসাবাড়ি ও আশপাশের এলাকায় অযথা অবস্থানকারীদের ওপর নজরদারি করা হবে। সন্দেহ হলে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তল্লাশি করা হবে।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গতকাল রোববার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের কাছে যাঁরা নিরাপত্তা চাইতে আসছেন বা এসেছিলেন, আমরা সবাইকে সহায়তা করছি। অনেকের বাসায় বা অফিসে অথবা ব্যক্তিগত চলাফেরার সময় নিরাপত্তার জন্য পুলিশ দেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের কাছে যাঁরাই আসছেন, তাঁদের জিডি করার পরামর্শ দিচ্ছি। তবে এসব হুমকি-ধমকিতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।’
গোয়েন্দা প্রতিবেদনে জঙ্গিদের সম্ভাব্য টার্গেট কিলিং বন্ধের সুপারিশে বলা হয়, তথ্য সংগ্রহে সাইবার ইন্টেলিজেন্স গুরুত্ব দিয়ে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের পাশাপাশি বিশ্ব এজেন্ট, সোর্স নিয়োগসহ প্রশাসনে জঙ্গিবাদসংশ্লিষ্ট মনোভাবাপন্ন ব্যক্তিদের অবস্থান ও অনুপ্রবেশে সচেতনতা তৈরি ও গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় ও গোয়েন্দা সংস্থার গোপন তথ্য চুরি ও হ্যাকিং রোধে সর্বোচ্চ সতর্কতা নিশ্চিত করতে হবে।
গোয়েন্দা প্রতিবেদনে সুপারিশে বলা হয়েছে, দেশের স্থিতিশীল পরিস্থিতি বজায় রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সতর্ক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো, সর্বজন গ্রহণযোগ্য আলেম-ওলামাসহ বিভিন্ন ধর্মীয় নেতাদের মাধ্যমে ধর্মের বিধিবিধান-সংক্রান্ত সঠিক ব্যাখ্যা, করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়গুলো ব্যাপক প্রচারণার উদ্যোগ নিতে হবে।
এতে বলা হয়, জঙ্গিবাদ দমনে জনসচেতনতা বাড়াতে মসজিদের ইমামদের মাধ্যমে জুমার নামাজে খুতবার পর্বে বক্তব্য দিতে হবে। মাদ্রাসা ও ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জঙ্গিবাদের কুফলসংক্রান্ত পাঠদান চালু করা, মিডিয়া, সামাজিক সংগঠন ও বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে জঙ্গিবাদবিরোধী সচেতনতা বৃদ্ধি, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে কথিত প্রগতিশীল, মুক্তমনা ও সুশীল নামধারী ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যমূলকভাবে ধর্ম ও ধর্মীয় নেতাদের বিরুদ্ধে অশালীন, কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য, ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ, ধর্ম ও দেশের প্রচলিত আইনবিরোধী কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখতে হবে। প্রয়োজনে এসব লোকের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে উগ্রপন্থীদের ধর্মীয় অপপ্রচার রোধে সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সরকারের উচ্চপর্যায়ের একটি সূত্রে জানায়, একাধিক মন্ত্রীকেও তাঁদের মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠিয়ে হুমকি দেওয়া হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এর আগে সময় প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী ফরিদ আহমেদকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একে ‘উচ্চ ঝুঁকির হুমকি’ (হাই রিস্ক থ্রেট) হিসেবে দেখছে এবং তাঁকে সতর্কতার সঙ্গে চলার পরামর্শ দিয়েছে। ফরিদ আহমেদও নিরাপত্তা চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন।