শাবিতে ড. জাফর ইকবাল ছুরিকাহত : আটক ১
- প্রকাশের সময় : ০৬:২০:১৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩ মার্চ ২০১৮
- / ৮৮৫ বার পঠিত
সিলেট: শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। সন্ত্রাসী হামলায় আহত হওয়ার সাথে সাথে তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার সিটিস্ক্যান করা হয়েছে। তিনি শঙ্কামুক্ত কি না চিকিৎসকরা তা জানাতে পারেননি। সিলেটে অবস্থানরত শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা তাকে হাসপাতালে দেখতে যান। হামলার প্রতিবাদের তাৎক্ষণিকভাবে শাবি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা।
শাবির সহকারী প্রক্টর আবু হেনা পহিল জানান, শনিবার (৩ মার্চ) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। এ সময় কে বা কারা পেছন দিকে তাকে আক্রমণ করে। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। তাকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হামলার ঘটনায় এসএমপির জালালাবাদ থানা পুলিশ একজনকে আটক করেছে। ঘটনার সাথে তার কতটুকু সম্পৃক্ততা রয়েছে পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে বলে তিনি জানান।
ড. জাফর ইকবালের পেছনে অভিযুক্ত যুবক। (লাল বৃত্ত)
শাবিপ্রবি’র ইলেকট্রিকাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান খান জানান, শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিকাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগে ফেস্টিভ্যাল চলছিল ক্যাম্পাসের মুক্তমঞ্চে। এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অধ্যাপক জাফর ইকবাল। সেই উৎসবে অংশ নিয়ে অন্যদের সঙ্গে মুক্তমঞ্চে বসে ছিলেন মুহাম্মদ জাফর ইকবাল। সন্ধ্যার ৫টা ৪০ মিনিটের দিকে এক যুবক হঠাৎ পেছন থেকে তাঁর মাথায় ছুরিকাঘাত করেন। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। দ্রæত তাঁকে উদ্ধার করে পুলিশের একটি মাইক্রোবাসে করে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। মাথায় আঘাত থাকায় তাকে ওসমানী হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়। হামলাকারী ওই যুবককে আটক করে গণপিটুনি দিয়েছেন উপস্থিত শিক্ষার্থীরা। ওই যুবককে এখন আটক করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ভবনে রাখা হয়েছে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী না বহিরাগত সে সম্পর্কে এখনো কিছু জানা যায়নি এবং কী কারণে এই হামলা চালিয়েছে, সে বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কিছুই জানা সম্ভব হয়নি। সর্বশেষে জানা গেছে যে, তাকে উন্নত চিকিৎসাদানের জন্য ঢাকায় নেয়া হচ্ছে।
শিক্ষার্থীর শাস্তি প্রসঙ্গে জাফর ইকবাল
এদিকে, গত শুক্রবার (২ মার্চ) শাবিতে একটি অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল মন্তব্য করেন, র্যাগিংয়ের দায়ে বহিষ্কৃত পাঁচ শিক্ষার্থীকে পুলিশে দেয়া উচিত ছিল। ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়া আইআইসিটি ভবনে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দুইদিনব্যাপী ‘ইইই-ফেস্টিভ্যালে’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। “তাদের যে শাস্তি দেয়া হয়েছে তা আসলে খুবই কম। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, তাদেরকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া দরকার ছিল এবং রাষ্ট্রীয় আইনে তাদের বিচার করার দরকার ছিল।” তিনি বলেন, “আমি যে বিশ্ববিদ্যালযে শিক্ষক হিসেবে পড়াই; সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা এই কাজ করেছে। আমি খুবই লজ্জিত। আমি জাতির কাছে ক্ষমা চাইছি, কারণ আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা এই কাজ করেছে।”
র্যাগিংয়ের দায়ে জড়িতদের যে শাস্তি দেয়া হয়েছে ‘বেশি হয়ে গেছে’ দাবি করে বহিষ্কৃতদের রক্ষায় তাদের বন্ধুরা আন্দোলনে নেমেছে। বহিষ্কৃতদের পক্ষে আন্দোলনের একদিন পর এমন মন্তব্য করলেন জাফর ইকবাল।
উল্লেখ্য, গত ১৫ ফেব্রæয়ারী বিশ্ববিদ্যালয় প্রধান ফটকের তপোবন আবাসিক এলাকার ‘তাফাদার ভিলায়’ সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের ছয় নবীন শিক্ষার্থীকে রাত ১০টা থেকে পরদিন সকাল ৬টা পর্যন্ত আটকে রেখে অর্ধনগ্ন করে র্যাগ দেয় একই বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের ২০ শিক্ষার্থী এবং পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের এক শিক্ষার্থী। পরিচয় দেয়ার নামে তাদেরকে অর্ধনগ্ন করে র্যাগ দেয়াসহ অর্ধনগ্ন না হতে চাইলে একপর্যায়ে মারধরও করা হয়। পরবর্তীতে তাদেরকে জোর করে অর্ধনগ্ন ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন অশ্লীল ক্যাপশন দিয়ে একটি গ্রæপে পোস্ট এবং বেশ কিছু সময় পরে ডিলিট করা হয়। বিষয়গুলো কাউকে বললে তাদের শিক্ষাজীবন হুমকির মুখে ঠেলে দেয়া হবে বলেও হুমকি দেন সিনিয়ররা।
নবাগত ছয় শিক্ষার্থীকে র্যাগিং ও মারধরের পর নগ্ন ছবি তুলে তা তাদেরকে দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করার অপরাধে গত ২৮ ফেব্রæয়ারী সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দুই ছাত্রকে আজীবন বহিষ্কারসহ পাঁচ ছাত্রকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করা হয়। এছাড়া আরও ১৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে জরিমানা ও সতর্ক করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
জাফর ইকবাল বলেন, তাদের অপরাধ প্রমাণ হওয়ায় শাস্তি দেয়া হয়েছে। শাস্তি গ্রহণ করে ওদের ক্ষমা চাওয়া উচিত ছিল। কিন্তু সেটা না করে তারা আন্দোলন করা শুরু করেছে। বিশ্বদ্যিালয়ের বাকি ছাত্রদের কষ্ট দিচ্ছে। শুধু তাই নয়; তারা শিক্ষকদের সাথে বেয়াদবিও করেছে। এটা খুবই লজ্জার। “বিশ্বদ্যিালয় কর্তৃপক্ষ যেন এই ধরনের কুৎসিত আন্দোলনে মাথা না নোয়ায় এবং শাস্তি বহাল রাখে। তাতেই এ ধরনের অপরাধ কমবে।” (দৈনিক সংগ্রাম)