শর্ত মেনে বিদেশ যেতে ‘রাজি নন’ খালেদা জিয়া
- প্রকাশের সময় : ০৬:১১:০৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩
- / ৩৫ বার পঠিত
বাংলাদেশ ডেস্ক : সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে ইতিবাচক ইঙ্গিতেই গত সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দিতে তার পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে সিঙ্গাপুরে নেওয়ার বার্তা থাকলেও সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে জার্মানিতে চিকিৎসা করাতে চাইছে তার দল বিএনপি। তবে সরকারের কোনও শর্ত মেনে বিদেশে যেতে নেতাদের রাজি হতে বারণ করে দিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন। শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাতে বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চের লিয়াজোঁ কমিটির অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে নেতাদের আলোচনায় এসব বিষয় উঠে এসেছে।
রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ূম ও জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে অংশ নেওয়া সূত্র জানায়, সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের পর খালেদা জিয়ার পরিবারকে সরকারের কাছে আবেদন দেওয়ার কথা জানানো হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৫ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়ার ভাই শামীম ইস্কান্দার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেন। বিষয়টি নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার আলাপকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছিলেন, আবেদনটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে, উপর্যুক্ত বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য।
বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের একটি সূত্র জানায়, আবেদন দেওয়ার পর খালেদা জিয়াকে সিঙ্গাপুরে নেওয়ার জন্য সরকারের একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী তার (খালেদা জিয়া) ভাই শামীম ইস্কান্দারকে অবহিত করেন। যদিও বিএনপির পক্ষ থেকে জার্মানিতে চিকিৎসা করানোর বিষয়েই জোর দেওয়া হয়েছে।
দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের নির্ভরযোগ্য একজন উল্লেখ করেন, গত ১৩ সেপ্টেম্বর গুলশান কার্যালয়ে এসেছিলেন জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ইয়ান রুল্ফ ইয়ানোভস্কি। ওই দিনই বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার প্রসঙ্গটিও আসে। সেদিনই বিএনপির পক্ষ থেকে জার্মান দূতাবাসের এই কর্মকর্তার কাছে তার দেশের বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়।
২০২১ সালের ২৮ নভেম্বর খালেদা জিয়ার প্রধান চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. ফখরুদ্দিন মোহাম্মদ সিদ্দিকী (এফএম সিদ্দিকী) সাংবাদিকদের সামনে বলেছিলেন, ২০২১ সালের ১৭, ১৮ নভেম্বরের পর আবারও (২৮ নভেম্বর) তৃতীয় দফায় রক্তক্ষরণ হয় খালেদা জিয়ার। তার উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য বা জার্মানিতে উন্নত চিকিৎসা দরকার। এসব রোগীর ফেইলর হলে লাইফ সেভ কীভাবে করা হয়, তার চিকিৎসা সেখানে সম্ভব।’
শুক্রবার অনুষ্ঠিত বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চের লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠকে অংশগ্রহণ করা একাধিক নেতা জানান, শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে সোয়া ৮টা পর্যন্ত গুলশানে বৈঠক হয়। এতে আগামী দিনের কর্মসূচি, চলমান যুগপৎ কর্মসূচি, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য ও তার উন্নত চিকিৎসা নিয়েও কথা বলেন নেতারা।
বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, খালেদা জিয়াকে কোন দেশে পাঠানো হবে, তা এখনও নির্ধারণ করা যায়নি। এ বিষয়টি নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কিছুই জানানো হয়নি।
নেতারা মনে করছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন দেশের বাইরে অবস্থান করায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে সময় লাগতে পারে।
বিএনপি ও মঞ্চের একাধিক নেতা জানান, বৈঠকে বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা জানিয়েছেন, খালেধা জিয়া কোনও অবস্থাতেই রাজনৈতিক শর্ত মেনে বিদেশে চিকিৎসা নিতে আগ্রহী নন। তিনি পরিষ্কার করে দলের হাইকমান্ডকে বার্তা দিয়েছেন— দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার শর্তে বেগম জিয়ার মুক্তির প্রশ্নে সম্মতি না দিতে।’
জানতে চাইলে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আমি কিছুদিন আগে বেগম জিয়াকে দেখে এসেছি। চিকিৎসকরা বলেছেন এবং আমরা নিজেরাও যা দেখেছি, তাতে আমি ভীত, যেকোনও সময় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে ওই রকম কিছু ঘটলে সরকারের পক্ষে তা ভারী হয়ে যাবে।’
আরেক নেতা বলেন, ‘বেগম জিয়ার চিকিৎসার জন্য নির্বাচনে যাবে বিএনপি, এমনটি ভুলে যেতে হবে। শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই।’
গণতন্ত্র মঞ্চের একাধিক নেতা এ প্রতিবেদককে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার খালেদা জিয়ার শারীরিক অবনতির বিষয়টির দায় নেবে না। সেক্ষেত্রে বিদেশে যাওয়ার বিষয়টি সম্ভব হতে পারে। যদিও প্রধানমন্ত্রী দেশে ফেরার আগে এ ধরনের সিদ্ধান্ত আদৌ বাস্তবায়নযোগ্য কিনা, তা নিয়ে অনেকের প্রশ্ন রয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। কয়েকদিন পর তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
এ বিষয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, ‘আজ অনেক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে ম্যাডাম জিয়ার বিষয়টিও ছিল। সরকার থেকে এখনও আবেদনের কোনও জবাব দেওয়া হয়নি। বিএনপি চায় জার্মানিতে নিতে। ম্যাডামের দ্রুত বিদেশে উন্নত চিকিৎসা দরকার।’
সোমবার মতামত দেবে আইন মন্ত্রণালয়
জানতে চাইলে শুক্রবার রাতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘আমাদের কাছে আবেদনটি এসেছে। আমরা আশা রাখি আগামী সোমবার (২ অক্টোবর) আইনি মতামত জানিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেবো।’
বেগম জিয়া কি বিদেশে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন? এমন প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘এটা তো এখনই বলা যাবে না। আমরা সোমবার মতামত জানাবো, ইনশাল্লাহ।’
খালেদা জিয়ার সর্বশেষ অবস্থা
বিএনপির চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, ‘অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। বেগম জিয়ার শারীরিক অবস্থার কোনও উন্নতি নেই। তাকে বিকালে সিসিইউতে নেওয়া হয়েছিল। আবার কেবিনে আনা হয়েছে। সূত্র : ভোরের পাতা