শরিকদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে নজর বিএনপির
- প্রকাশের সময় : ১২:০৬:৫০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৬ মার্চ ২০২৪
- / ৪৩ বার পঠিত
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে বেশ কিছু দিন মাঠ চাঙা রাখলেও শেষ পর্যন্ত আন্দোলন সফল করতে পারেনি বিএনপি। এ নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে যেমন হতাশা রয়েছে, তেমনি হতাশ দলটির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করা শরিক দলগুলোও। এ অবস্থায় সামনের দিনে শরিকদের সঙ্গে সম্পর্ক যাতে খারাপ না হয়, সেদিকে জোর দিচ্ছে বিএনপি।
শরিকদের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক কেমন যাবে—এই আলোচনা উসকে দিয়েছে সম্প্রতি ফাঁস হওয়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের একটি ফোনালাপ। সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের দল দীর্ঘদিন বিএনপির সঙ্গে ছিল। কিন্তু ২০ নভেম্বর তিনি পুরোনো মিত্রদের ছেড়ে আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেন। সেই নির্বাচনে কক্সবাজার-১ আসন থেকে সংসদ সদস্যও নির্বাচিত হন তিনি। তবে বিএনপির সংঘ ত্যাগ করার আগেই তারেক রহমানের সঙ্গে কথা হয় ইবরাহিমের। ইউটিউবে প্রকাশিত ২৭ মিনিটের ফোনালাপে আন্দোলন থেকে সরে না যাওয়ার জন্য ইবরাহিমকে নানাভাবে অনুরোধ করেন তারেক রহমান। বিপরীতে অনুরোধ রাখবেন কি রাখবেন না, তা পরিষ্কার না করলেও নিজের মূল্যায়ন হয়নি বলে অনুযোগ করেন ইবরাহিম। একই সঙ্গে সরকারের দিক থেকে আসা চাপের বিষয়টিও তারেক রহমানকে বোঝানোর চেষ্টা করেন তিনি। যুগপৎ আন্দোলনের কোনো কোনো শরিক দলের নেতাদের নিয়েও প্রশ্ন তোলেন কল্যাণ পার্টির এই নেতা। তিনি তারেককে বলেন, গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ অনেকে আছেন, যাঁরা কামাল হোসেনের গড়া ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রেতাত্মা’। এসব জানার পরও বিএনপি তাঁদেরকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের বক্তব্যের সূত্র ধরে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের এবং দলটির শরিক দলের নেতাদের সঙ্গে আজকের পত্রিকার কথা হয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের কাছে জানতে চাইলে তিনি গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘চলে যাওয়ার উছিলা খুঁজলে সেখানে আর কিছু লাগে না। আমার মনে হয় তাঁকে (সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম) বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। যেকোনো সভা বা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁকে রাখা হতো। ব্যক্তি ইবরাহিম সরকারের জন্য বড় কিছু নয়। বিএনপির কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে, এটিই ছিল আওয়ামী লীগের আনন্দ।’
শরিকদের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘সবারই দায়িত্ব আছে। তাঁদের ছোট বলে তো আমরা হেলা করি না। তাঁরা নিজেদের বেশি যোগ্য মনে করলে করতে পারেন। এ সম্পর্কের ব্যাপারে আন্তরিকতা এবং পারস্পরিক সহযোগিতা থাকা দরকার।’
গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাদের নিয়ে ইবরাহিমের বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মঞ্চের অন্যতম নেতা ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, যখন কেউ কোথাও যান, তখন তার পক্ষে নানা যুক্তি দেখানোর চেষ্টা করেন। সৈয়দ ইবরাহিমও তা-ই করেছেন।
বিএনপির সঙ্গে শরিকদের সম্পর্কের বিষয়ে সাকি বলেন, ‘আন্দোলন নিয়ে আমাদের আলাপ-আলোচনা-পর্যালোচনা চলছে। এসব আলোচনা ও পর্যালোচনার মধ্য দিয়েই আমরা আগামী দিনের কর্মপন্থা নির্ধারণ করব।’
বিএনপিসহ যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত দলের সূত্রগুলো বলছে, নির্বাচনের পর বিগত দিনের ভুলত্রুটি নিয়ে পর্যালোচনা চলছে। বিএনপি ও আন্দোলনে যুক্ত দলগুলো পৃথকভাবে এ পর্যালোচনা করছে। এসব পর্যালোচনা থেকে এরই মধ্যে বেশ কিছু ভুলত্রুটি চিহ্নিতও করা গেছে, যেখানে আন্দোলনে বিএনপির ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে।
নাম প্রকাশ না করে গণতন্ত্র মঞ্চের এক নেতা বলেন, আন্দোলনের যে সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছিল, বিএনপির অতিআত্মবিশ্বাস এবং সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত না নেওয়ার কারণে তা ব্যর্থ হয়েছে। এখানে বিএনপির বড় দায় আছে। কর্মসূচি নির্ধারণের ক্ষেত্রে অনেক ক্ষেত্রেই বিএনপি একক সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন এই নেতা।
তবে বিএনপির নেতারা বলছেন, আন্দোলনের মধ্য দিয়েই এই সরকারের পতন ঘটাতে হবে। এ বিষয়ে আন্দোলনে যুক্ত সবাই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বৃহত্তর স্বার্থে আগামী দিনের আন্দোলনকে সুসংহত করতে শরিকদের সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক রাখতে বিএনপি আন্তরিক। নির্বাচনের পর বর্তমান পরিস্থিতিতে সম্পর্ক অধিকতর উন্নত করতে দলের পক্ষ থেকে চেষ্টা চলছে। সৈয়দ ইবরাহিমের মতো আর কেউ যেন আন্দোলন থেকে বিচ্যুত না হন, সে বিষয়েও সতর্ক থাকার তাগিদ উঠেছে দলে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘শরিকদের সঙ্গে যাতে কোনোভাবেই সম্পর্ক খারাপ না হয়, সে ব্যাপারে আমরা সতর্ক হয়েছি। চেষ্টা করে যাচ্ছি যাতে নিজেদের মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝি সৃষ্টি না হয়।’ সূত্র : আজকের পত্রিকা।