শপথ নিলেন নবনির্বাচিত ২৯৮ সংসদ-সদস্য

- প্রকাশের সময় : ১১:১২:২৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৪
- / ৯৫ বার পঠিত
ঢাকা ডেস্ক: দ্বাদশ জাতীয় সংসদে নির্বাচিত ২৯৮ এমপি শপথ নিয়েছেন। বুধবার (১০ জানুয়ারী) সকালে প্রথমে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের ২২২ জন নবনির্বাচিত সংসদ-সদস্য শপথ নেন। বাকিরা পর্যায়ক্রমে শপথ নেন। সকাল সোয়া ১০টায় সংসদ ভবনের শপথ কক্ষে তাদের শপথবাক্য পড়ান স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। সংসদ ভবনের পূর্ব বøকের প্রথম লেভেলের শপথ কক্ষে এ শপথ অনুষ্ঠিত হয়। সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব একেএম আব্দুস সালাম অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন।
শপথ অনুষ্ঠানের শুরুতেই স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সংবিধান ও কার্যপ্রণালি বিধি অনুযায়ী এমপি হিসাবে নিজে শপথগ্রহণ করেন এবং শপথ বইয়ে স্বাক্ষর করেন। ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী বরিশাল-২ আসন থেকে নৌকা নিয়ে জয়ী বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এবং বগুড়া-৪ আসন থেকে নৌকা নিয়ে জয়ী জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের একেএম রেজাউল করিম তানসেন আওয়ামী লীগের সংসদ-সদস্যদের সঙ্গে শপথ নেন। পরে বেলা ১১টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী শপথ পড়ান ৬২ জন স্বতন্ত্র সংসদ-সদস্যকে। সবশেষে জাতীয় পার্টির ১১ জন নবনির্বাচিত সংসদ-সদস্য স্পিকারের কাছে শপথ নেন। বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম নবনির্বাচিত সংসদ-সদস্য হিসাবে স্বতন্ত্র সদস্যদের সঙ্গে শপথ নেন। দেশের নির্বাচনের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ৬২ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা ঘটল। সংসদ-সদস্যদের শপথের পর সংসদের রেজিস্ট্রারে স্বাক্ষর করতে বলা হয়। এমপিরা স্পিকারের সামনে শপথ ফরমে স্বাক্ষর করেন। সংবিধান অনুযায়ী, গেজেট প্রকাশের ৩ দিনের মধ্যে সংসদ-সদস্যদের শপথ নিতে হয়। সে অনুযায়ী নবনির্বাচিত সংসদ-সদস্যদের শপথ পড়ান একাদশ সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
শেখ হাসিনাকে টানা চতুর্থবারের মতো সংসদ নেতা নির্বাচিত
শপথ শেষে সংসদ ভবনের নবম তলায় সরকারি দলের সভা কক্ষে অনুষ্ঠিত হয় আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভা। এই সভায় শেখ হাসিনাকে টানা চতুর্থবারের মতো সংসদ নেতা নির্বাচিত করা হয়। জাতীয় সংসদ ভবনের নবম তলায় সরকারি দলের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এ সভায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সংসদ নেতা হিসাবে শেখ হাসিনার নাম প্রস্তাব করেন। একাদশ জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটন এ প্রস্তাবের পক্ষে সমর্থন জানান। পরে সর্বসম্মতিক্রমে তা গ্রহণ করা হয়। এ সময় দলটির নবনির্বাচিত সংসদ-সদস্যরা তাকে করতালি দিয়ে অভিনন্দন জানান।
আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভায় এদিন সংসদ উপনেতা এবং চিফ হুইপও নির্বাচন করা হয়। টানা দ্বিতীয় দফায় সংসদ উপনেতা নির্বাচিত হন প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী। চিফ হুইপ নির্বাচিত হন নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটন। তিনিও দ্বিতীয় দফা এ দায়িত্ব পালন করবেন। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সেক্রেটারি হিসাবে নির্বাচিত হন নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটন। দলের এ সভায় বর্তমান স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকে আবারও স্পিকার হিসাবে এবং অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকুকে আবারও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
শেখ হাসিনা সরকারে থাকাবস্থায় একাদশ নির্বাচনে ভরাডুবির অভিজ্ঞতা মাথায় নিয়ে নির্বাচনকালীন তত্ত¡াবধায়ক সরকারের দাবিতে এবারও ভোট বর্জন করেছে বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো। দফায় দফায় হরতাল-অবরোধের মধ্যে ২০১৩-২০১৫ সালের মতো নাশকতাও ফিরে এসেছে। সেই সহিংসতা মোকাবিলা করে এবারও নির্বাচনি বৈতরণী পেরিয়ে এলেন শেখ হাসিনা। ভোটে জনগণের অংশগ্রহণ বাড়াতে নতুন কৌশল নিয়ে এক আসনে নিজ দলের একাধিক প্রার্থীর অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছিলেন তিনি। এবারের নির্বাচনের ইশতেহারেও আওয়ামী লীগ গুরুত্ব দিয়েছে অর্থনৈতিক অগ্রগতির ওপর। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট সোনার বাংলা গড়ার কথা বলছে দলটি। শেখ হাসিনা প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন, অগ্রগতির ধারাবাহিকতায় ২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উচ্চ মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট ‘সোনার বাংলা’য় পরিণত করবেন তিনি।
শেখ হাসিনা ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে যখন দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন, তখন বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল পাঁচের কাছাকাছি, ২০১৮ সালের নির্বাচনের প্রাক্কালে সেই প্রবৃদ্ধি ছিল ৮ ছুঁই ছুঁই। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ২০২১ সালে জিডিপি প্রবৃদ্ধি দশের ঘরে নেওয়ার প্রতিশ্রæতি থাকলেও, ২০২০ সালের মার্চে করোনাভাইরাস মহামারির ধাক্কা লাগে দেশের অর্থনীতিতে। মহামারির খাঁড়া সামলানোর মধ্যে দুই বছর পর অর্থনীতির ‘বোঝার উপর শাকের আঁটি’ হিসাবে আবির্ভূত হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ।
এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৬৮টি আসনে দল মনোনীত প্রার্থী দেয়। আসন সমঝোতার অংশ হিসাবে ২৬টি আসনে জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেয় তারা। আর ১৪ দলীয় জোটের তিন দলকে আওয়ামী লীগ ছাড় দেয় ৬টি আসনে। নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ১১টি আসন, স্বতন্ত্র ৬২টি আসন এবং বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ ও বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি একটি করে আসনে জয়ী হয়। ৩০০ সংসদীয় আসনের মধ্যে একটি আসনে নির্বাচন হয়নি। আর একটি আসনে ফলাফল ঘোষণা স্থগিত রেখেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। মঙ্গলবার জয়ী প্রার্থীদের নাম ও আসন প্রকাশ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন। এর পরপরই বুধবার নবনির্বাচিত সংসদ-সদস্যরা শপথ নেন। (দৈনিক যুগান্তর)