শক্তি প্রদর্শনে মাঠে বড় দুই দল
- প্রকাশের সময় : ০২:২৩:৪৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৯ অক্টোবর ২০২২
- / ৪৩ বার পঠিত
দলীয় শক্তি প্রদর্শনে অনেক আগেই মাঠে নেমেছে বিএনপি। আজ থেকে মাঠে নামছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আজ রাজধানীতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে দলটির ঢাকা জেলা সম্মেলন। এই সম্মেলনে ২ লাখেরও বেশি নেতাকর্মী জমায়েত করে বিএনপিকে দেখিয়ে দিতে চায় আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে আজ রংপুরে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সেখানে স্মরণকালের সর্ববৃহৎ জমায়েতের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। বড় দুই দলের এই শক্তি প্রদর্শনের মহড়ায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন।
দলীয় সূত্র জানায়, এর আগে কয়েকটি বিভাগীয় সমাবেশে নেতাকর্মী ও সমর্থকদের উপস্থিতি নিয়ে উচ্ছ্বসিত বিএনপিকে ব্যাপক জনসমাগম দেখিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এ লক্ষ্যে দীর্ঘ আট বছর পর আজ শনিবার অনুষ্ঠিতব্য ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনকে বেছে নেওয়া হয়েছে। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে সাবেক আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার মাঠে সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে জনসমুদ্রে রূপ দিয়ে বিএনপিকে সরকারের জনপ্রিয়তার বিশেষ বার্তাটিও দিতে চায় দলটি। অনুষ্ঠানটি দলীয় কর্মসূচি হলেও পুরো মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ করার পরিকল্পনা নিয়েছেন ক্ষমতাসীনরা। ইতিমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। তৃণমূল নেতাকর্মীদেরও কেন্দ্রের পক্ষ থেকে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি বলেছেন, ‘জনসমাগম কাকে বলে তা আজ বিএনপিকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে।’ অন্যদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সবকিছু বন্ধ করেও আমাদের সমাবেশে জনস্রোত ঠেকানো যাবে না। গতকাল শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত আলোচনাসভায় তিনি এ কথা বলেন।
পুরো ঢাকা জেলা বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত থাকলেও নবম থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলার পাঁচটি আসন আওয়ামী লীগের হাতে চলে যায়। এ ধারা অব্যাহত রাখতে চায় দলটি। দুই লক্ষাধিক নেতাকর্মী ও সমর্থক জমায়েতের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের বিশাল আয়োজন করছে। সম্মেলন উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম এমপি। প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সম্মেলন সফল করার লক্ষ্যে জেলার ধামরাই, সাভার, আশুলিয়া, কেরানীগঞ্জ, দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলাসহ সাতটি ইউনিটের নেতাকর্মীরা ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন।
রংপুরে বিএনপির সমাবেশ আজ : স্টাফ রিপোর্টার, রংপুর জানান, রংপুরে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ আজ। কিন্তু সমাবেশের এক দিন আগে হঠাৎ করে জেলা মোটর মালিক সমিতির ডাকা ধর্মঘটের কারণে রংপুরে সব ধরনের পরিবহন বন্ধ রয়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। বিএনপির নেতারা বলছেন, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও খুলনার পর রংপুরেও সরকারের পক্ষ থেকে বাধা সৃষ্টি করতে ইচ্ছা করেই ধর্মঘট দেওয়া হয়েছে। তবে ধর্মঘটসহ যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করে আজ শনিবার রংপুর বিভাগীয় গণসমাবেশে লাখ লাখ নেতাকর্মী উপস্থিত হবেন বলে তারা আশা প্রকাশ করেছেন।
এ সমাবেশ ঘিরে যে কোনো ধরনের নাশকতা বা বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে সতর্ক দৃষ্টি রাখছে পুলিশ প্রশাসন। শুক্রবার সকাল থেকে পুলিশের বিশেষ দল জেলা জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। অর্ধশতাধিক চেকপোস্ট বসানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার (ক্রাইম) আবু মারুফ হোসেন।
বিএনপির সমাবেশ সফল করতে সব প্রস্তুতি ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন সমাবেশের আয়োজক কমিটি। সমাবেশে প্রধান অতিথি থাকবেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। নেতাকর্মীদের অনেকেই এক দিন আগেই সমাবেশস্থলে অবস্থান নিয়েছেন। তবে তারা পুলিশের হয়রানির আশঙ্কা করছেন। সমাবেশের জন্য জেলা স্কুল মাঠ চেয়ে বিএনপি আবেদন করলেও মহানগর পুলিশ মৌখিক অনুমতি দিয়েছে কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে। দলীয় নেতাকর্মীরা হেঁটে রংপুরের গণসমাবেশে অংশ নিতে আগে থেকেই হাজির হচ্ছে। কেউ কেউ চিড়া-মুড়ি-গুড়সহ সঙ্গে এনেছেন কাঁথা-কম্বল। বৃহস্পতিবার অনেক নেতাকর্মীই আবাসিক হোটেল, ছাত্রাবাস, স্বজন-পরিজন ছাড়াও নগরীর বাইরে বিভিন্ন উপজেলায় আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে অবস্থান নিয়েছেন।
রংপুর বিভাগীয় গণসমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটির সমন্বয়ক এবং বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু সাংবাদিকদের বলেন, স্মরণকালের সর্ববৃহৎ উপস্থিতি নিশ্চিত করতে আমাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। শুধু বিএনপি নেতাকর্মী নয়, সাধারণ মানুষও এ কর্মসূচিতে অংশ নিবেন।
হঠাৎ ধর্মঘটে ভোগান্তি : জানা যায়, হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে মহাসড়কে যান চলাচল এবং রংপুর-কুড়িগ্রাম রুটে প্রশাসনিক হয়রানির প্রতিবাদে শুক্রবার ভোর ৬টা থেকে শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৩৬ ঘণ্টা রংপুর জেলার সব রুটের বাস-মিনিবাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করা হয়। রংপুরের সঙ্গে সারা দেশের পরিবহন যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। বাধ্য হয়ে বিভিন্ন স্থানে যাত্রীরা ভেঙে ভেঙে যাওয়ায় গুনতে হচ্ছে বেশি ভাড়া। অনেকেই আবার গন্তব্যে না যেতে পেরে বাড়িতে ফিরে যাচ্ছেন। রংপুরের বদরগঞ্জ থেকে মেয়েকে নিয়ে কুড়িগ্রামের রাজারহাট জামাই বাড়িতে যেতে হবে জিহাদুল রহমানের। তিনি বলেন, ‘হামরা তো জানি না গাড়ি বন্ধ আছে। টার্মিনালোত আসি শোনোচি গাড়ি নাকি কোনোটে যাবার নয়। হামরা এ্যালা অটোত করি রাজার হাট যামো।’
রাজশাহী বগুড়া থেকেও রংপুর রুটে বাস চলাচল বন্ধ : স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী জানান, রাজশাহী থেকে রংপুরগামী বাস চলাচল দুই দিন বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন রাজশাহীর পরিবহন নেতারা। রাজশাহী সড়ক পরিবহন গ্রুপের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মতিউল হক টিটো বলেন, রংপুর বাসমালিকদের পক্ষ থেকে তাদেরও রংপুরে বাস না চালানোর জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। এ কারণে তারা বাস চলাচল দুই দিন বন্ধ রাখবেন।
স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া জানান, রংপুরে বিএনপির গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে বগুড়া থেকে রংপুর বিভাগের সব জেলায় শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে বাস চলাচল আকস্মিকভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। বগুড়া জেলা বিএনপির সদস্যসচিব ও বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের সংসদ সদস্য মোশারফ হোসেন বলেন, নেতাকর্মীরা যাতে রংপুরের সমাবেশে যোগ দিতে না পারেন, এ কারণেই সরকার নানা কৌশলে রংপুর বিভাগকে সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করার কৌশলের পথে হাঁটছে। সূত্র : দৈনিক ইত্তেফাক