নিউইয়র্ক ০৬:১০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১২ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

রায়হানের খুনিদের শাস্তি দাবিতে উত্তাল সিলেট

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০২:২৭:০২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ অক্টোবর ২০২০
  • / ৮৮ বার পঠিত

ঢাকা ডেস্ক: সিলেটের বন্দর ফাঁড়িতে পুলিশি নির্যাতনে রায়হানকে হত্যার জন্য দায়ীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠছে সিলেট। মঙ্গলবার (১৩ অক্টোবর) দিনভর নগরীর বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ করেছে বিভিন্ন সংগঠন। এ সময় আন্দোলনকারীরা বলেন, আইনের রক্ষকরাই ভক্ষক হয়ে উঠেছে। তারা দুর্নীতিবাজ খুনি পুলিশ সদস্যদের দ্রæত গ্রেফতার করে বিচারের দাবি জানান। একই দাবিতে নগরীর আখালিয়া, আম্বরখানা, কোর্ট পয়েন্ট, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকা ও বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। এদিকে পুলিশ হেফাজতে রায়হানের মৃত্যুর ঘটনায় স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়ে মঙ্গলবার হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে। বিচারপতি মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের বেঞ্চে এ রিট করা হয়। এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) স্থানান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনার দায়ে বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে সোমবার চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এরপর থেকে তিনি পলাতক।
নির্যাতন করে হত্যার প্রতিবাদে মঙ্গলবার বিকালে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘দুষ্কাল প্রতিরোধে আমরা’ নামের নাগরিক প্ল্যাটফর্ম বিক্ষোভ সমাবেশ করে। এতে বক্তারা বলেন, রায়হানকে হত্যার দায়ে প্রধান অভিযুক্ত বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আকবরকে গ্রেফতার করা হয়নি। শোনা যাচ্ছে তিনি পালিয়ে গেছেন। আমরা মনে করি, মহানগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাই তাকে লুকিয়ে রেখেছেন। নিজেদের অপকর্ম প্রকাশ হয়ে যাওয়ার ভয়ে আকবরকে লুকিয়েছেন তারা। নতুবা ব্যারাক থেকে একজন পুলিশ সদস্য কীভাবে পালিয়ে যান। অবিলম্বে আকবরসহ এ ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়। সমাবেশে রায়হানের মামা তরেক আহমদ মিলাদ বলেন, আমার নিরীহ ভাগ্নেকে ধরে পুলিশ মেরে ফেলেছে। তার ওপর অবর্ণনীয় নির্যাতন চালানো হয়েছে। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।
সিলেট মহানগর বিএনপির নিন্দা: সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন বলেছেন, একের পর এক অপরাধের জন্ম দিয়ে সিলেটের মাটিকে কলঙ্কিত করছে বর্তমান সরকারের দলের নেতাকর্মী ও পুলিশবাহিনী। সিলেটের ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজের রেশ কাটতে না-কাটতেই আরও একটি ঘটনার জন্ম হল সিলেটের এই পবিত্র মাটিতে। সরকারের কথিত পুলিশবাহিনী এক তরতাজা প্রাণ কেড়ে নিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, বর্তমানে দেশে আইন বলতে কিছু নেই। দলটির নেতারা রায়হানের রুহের মাগফিরাত কামনা করে তার পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।
ন্যাপের উদ্বেগ: সিলেটের কোতোয়ালি মডেল থানার বন্দরবাজার ফাঁড়িতে পুলিশের নির্যাতনে রায়হান উদ্দিন (৩০) নামে যুবককে পিটিয়ে হত্যার নিন্দা জানিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে দলটির চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া এ নিন্দা জানান।
যেভাবে লাপাত্তা আকবর: এদিকে, ফাঁড়িতে নিয়ে নির্যাতনের পর রায়হানের মৃত্যুর ঘটনায় আকবরসহ চার পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তাদের পুলিশ লাইনে অস্ত্রাগারে কঠোর নিরাপত্তায় থাকতে নির্দেশনা দেয়া হয়। কিন্তু সোমবার এই নির্দেশনা পেয়েই ফোন বন্ধ করে লাপাত্তা হয়ে যান আকবর। সিলেট কোতোয়ালি থানার একটি সূত্র জানায়, নির্দেশনা অনুযায়ী ৩ পুলিশ সদস্যকে তারা এসএমপি পুলিশ লাইনে রিজার্ভ ইন্সপেক্টরের কাছে বুঝিয়ে দেয়। কিন্তু আকবরের ফোন বন্ধ থাকায় তাকে তারা খুঁজে পায়নি। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তার কোনো তথ্যও তাদের কাছে ছিল না। এ বিষয়ে রিজার্ভ ইন্সপেক্টর আবদুস সালামের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তিনি ফোন রিসিভ করে যুগান্তরের পরিচয় শুনেই ব্যস্ত আছেন বলে লাইন কেটে দেন।
মামলা পিবিআইয়ে স্থানান্তর: এদিকে ‘পুলিশি নির্যাতনে’ রায়হানের মৃত্যুর ঘটনায় দায়েরকৃত মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) স্থানান্তর করা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরের পর পুলিশ সদর দফতরের এআইজি ক্রাইম বিধান ত্রিপুরা স্বাক্ষরিত এক নির্দেশে মামলাটি পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এসএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) জ্যোতির্ময় সরকার। তবে পিবিআই সিলেটের পুলিশ সুপার খালেদুজ্জামান যুগান্তরকে জানান, তিনি এখনও এ বিষয়ে কোনো অফিশিয়াল চিঠি হাতে পাননি। তবে গণমাধ্যমে দেখেই তারা মামলাটি তদন্তের প্রস্তুতি নিয়েছেন বলে জানান।
নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে রিট: সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী সৈয়দ ফজলে এলাহী জনস্বার্থে এ রিট করেন। রিটে স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শক, সিলেটের পুলিশ কমিশনার, সিলেটের ডিসি-এসপিসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়েছে। রিট আবেদনে বিভিন্ন পত্রিকায় এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন সংযুক্ত করা হয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়: সিলেটে পুলিশ হেফাজতে রায়হানের মৃত্যুর ঘটনায় নির্যাতনের বিষয়ে প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে তদন্ত কমিটি। নগরীর বন্দরবাজার ফাঁড়ি ইনচার্জ আকবর হোসেনের নেতৃত্বে এ নির্যাতন চালানো হয়। ইনচার্জসহ ৭ পুলিশ সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য মিলেছে।
ফাঁড়ি ইনচার্জ আকবরের যত অপকর্ম: অভিযোগ উঠেছে সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়ার অপকর্মের শেষ নেই। ২০১৯ সালের ৬ নভেম্বর এসএমপির কোতোয়ালি থানার বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ হিসেবে যোগ দেন এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া। এরপর থেকেই বেপরোয়া হয়ে ওঠেন তিনি। শুরু করেন চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্ম। ফাঁড়ির ইনচার্জ হলেও তার ভাব ছিল থানার ওসির মতোই। প্রতিদিনই টাকার ভাগ-ভাটোয়ারা নিয়ে সালিশ বসাতেন ফাঁড়িতেই। ফাঁড়ির ভেতরে একটি রুমকে টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহার করতেন তিনি। ফাঁড়ি এলাকার ফুটপাতের দোকানপাট, আবাসিক হোটেলে অবৈধ ব্যবসা, চোরাকারবারি ও মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়মিত সকাল-বিকাল চাঁদা আদায় করতেন। প্রতিমাসে সাড়ে ১৬ লাখ টাকা শুধু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আদায় হতো। নগরীর প্রধান ব্যস্ততম এলাকা জিন্দাবাজার থেকে বন্দরবাজার এবং বন্দরবাজার কুদরতউল্লাহ মার্কেটের সামনে থেকে কিনব্রিজ পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশের ফুটপাতে ভাসমান দোকানদারদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করেন। এ জন্য আছে ৭ লাইনম্যান। কোনো ব্যবসায়ী চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তার ওপর নেমে আসত নির্যাতনের স্টিম রোলার। ফাঁড়িতে ডেকে এনে টর্চার সেলে আটকে রেখে নির্যাতন করতেন। এ ছাড়া জেলা প্রশাসকের অফিসের সামনের রাস্তায় ও সিলেট জর্জ কোর্ট এলাকার সামনের রাস্তায় ভাসমান পতিতাদের কাছ থেকেও চাঁদা আদায় করে পতিতাবৃত্তিতে সহযোগিতা করেন এই ফাঁড়ির ইনচার্জ। লাইনম্যান লোকমান ও জাহাঙ্গীর বন্দরবাজার এলাকার ১৫০টি ভাসমান ফলের দোকান থেকে প্রতিদিন সকালে ৫০ টাকা ও বিকালে ৫০ টাকা করে চাঁদা আদায় করেন। যা দৈনিক ১৫ হাজার করে মাসে সাড়ে ৪ লাখ টাকা। জিন্দাবাজার ও বন্দরবাজার এলাকার ২৫০টি ভাসমান কাপড়ের দোকান থেকে প্রতিদিন ১০০ টাকা দিনে ২৫ হাজার ও মাসে সাড়ে ৭ লাখ টাকা আদায় করেন লাইনম্যান রাহীন ও লিটন। বন্দরবাজার ও ডিসি অফিসের সামনের ৫০ জন ভাসমান মাছ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে রাত ৯টার মধ্যে জনপ্রতি ৩০০ টাকা করে দিনে ১৫ হাজার-মাসে সাড়ে ৪ লাখ টাকা আদায় করেন লাইনম্যান রুমন, সুমন ও রাকীব। লাইনম্যানরা চাঁদা আদায় শেষে প্রতি রাতে এসআই আকবরকে টাকা বুঝিয়ে দিয়ে নিজেদের ভাগ নিয়ে যান। অভিযোগ উঠেছে এই টাকার বড় একটি অংশ ঊর্ধ্বতনদের হাতেও পৌঁছে যেত। কাজেই আকবরের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ থাকলেও বন্দর ফাঁড়ি থেকে তাকে সরানো হতো না। এ ছাড়া আকবরের হয়রানি-নির্যাতনের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে রাজি নন। (দৈনিক যুগান্তর)

 

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

রায়হানের খুনিদের শাস্তি দাবিতে উত্তাল সিলেট

প্রকাশের সময় : ০২:২৭:০২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ অক্টোবর ২০২০

ঢাকা ডেস্ক: সিলেটের বন্দর ফাঁড়িতে পুলিশি নির্যাতনে রায়হানকে হত্যার জন্য দায়ীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠছে সিলেট। মঙ্গলবার (১৩ অক্টোবর) দিনভর নগরীর বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ করেছে বিভিন্ন সংগঠন। এ সময় আন্দোলনকারীরা বলেন, আইনের রক্ষকরাই ভক্ষক হয়ে উঠেছে। তারা দুর্নীতিবাজ খুনি পুলিশ সদস্যদের দ্রæত গ্রেফতার করে বিচারের দাবি জানান। একই দাবিতে নগরীর আখালিয়া, আম্বরখানা, কোর্ট পয়েন্ট, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকা ও বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। এদিকে পুলিশ হেফাজতে রায়হানের মৃত্যুর ঘটনায় স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়ে মঙ্গলবার হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে। বিচারপতি মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের বেঞ্চে এ রিট করা হয়। এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) স্থানান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনার দায়ে বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে সোমবার চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এরপর থেকে তিনি পলাতক।
নির্যাতন করে হত্যার প্রতিবাদে মঙ্গলবার বিকালে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘দুষ্কাল প্রতিরোধে আমরা’ নামের নাগরিক প্ল্যাটফর্ম বিক্ষোভ সমাবেশ করে। এতে বক্তারা বলেন, রায়হানকে হত্যার দায়ে প্রধান অভিযুক্ত বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আকবরকে গ্রেফতার করা হয়নি। শোনা যাচ্ছে তিনি পালিয়ে গেছেন। আমরা মনে করি, মহানগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাই তাকে লুকিয়ে রেখেছেন। নিজেদের অপকর্ম প্রকাশ হয়ে যাওয়ার ভয়ে আকবরকে লুকিয়েছেন তারা। নতুবা ব্যারাক থেকে একজন পুলিশ সদস্য কীভাবে পালিয়ে যান। অবিলম্বে আকবরসহ এ ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়। সমাবেশে রায়হানের মামা তরেক আহমদ মিলাদ বলেন, আমার নিরীহ ভাগ্নেকে ধরে পুলিশ মেরে ফেলেছে। তার ওপর অবর্ণনীয় নির্যাতন চালানো হয়েছে। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।
সিলেট মহানগর বিএনপির নিন্দা: সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন বলেছেন, একের পর এক অপরাধের জন্ম দিয়ে সিলেটের মাটিকে কলঙ্কিত করছে বর্তমান সরকারের দলের নেতাকর্মী ও পুলিশবাহিনী। সিলেটের ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজের রেশ কাটতে না-কাটতেই আরও একটি ঘটনার জন্ম হল সিলেটের এই পবিত্র মাটিতে। সরকারের কথিত পুলিশবাহিনী এক তরতাজা প্রাণ কেড়ে নিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, বর্তমানে দেশে আইন বলতে কিছু নেই। দলটির নেতারা রায়হানের রুহের মাগফিরাত কামনা করে তার পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।
ন্যাপের উদ্বেগ: সিলেটের কোতোয়ালি মডেল থানার বন্দরবাজার ফাঁড়িতে পুলিশের নির্যাতনে রায়হান উদ্দিন (৩০) নামে যুবককে পিটিয়ে হত্যার নিন্দা জানিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে দলটির চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া এ নিন্দা জানান।
যেভাবে লাপাত্তা আকবর: এদিকে, ফাঁড়িতে নিয়ে নির্যাতনের পর রায়হানের মৃত্যুর ঘটনায় আকবরসহ চার পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তাদের পুলিশ লাইনে অস্ত্রাগারে কঠোর নিরাপত্তায় থাকতে নির্দেশনা দেয়া হয়। কিন্তু সোমবার এই নির্দেশনা পেয়েই ফোন বন্ধ করে লাপাত্তা হয়ে যান আকবর। সিলেট কোতোয়ালি থানার একটি সূত্র জানায়, নির্দেশনা অনুযায়ী ৩ পুলিশ সদস্যকে তারা এসএমপি পুলিশ লাইনে রিজার্ভ ইন্সপেক্টরের কাছে বুঝিয়ে দেয়। কিন্তু আকবরের ফোন বন্ধ থাকায় তাকে তারা খুঁজে পায়নি। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তার কোনো তথ্যও তাদের কাছে ছিল না। এ বিষয়ে রিজার্ভ ইন্সপেক্টর আবদুস সালামের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তিনি ফোন রিসিভ করে যুগান্তরের পরিচয় শুনেই ব্যস্ত আছেন বলে লাইন কেটে দেন।
মামলা পিবিআইয়ে স্থানান্তর: এদিকে ‘পুলিশি নির্যাতনে’ রায়হানের মৃত্যুর ঘটনায় দায়েরকৃত মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) স্থানান্তর করা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরের পর পুলিশ সদর দফতরের এআইজি ক্রাইম বিধান ত্রিপুরা স্বাক্ষরিত এক নির্দেশে মামলাটি পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এসএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) জ্যোতির্ময় সরকার। তবে পিবিআই সিলেটের পুলিশ সুপার খালেদুজ্জামান যুগান্তরকে জানান, তিনি এখনও এ বিষয়ে কোনো অফিশিয়াল চিঠি হাতে পাননি। তবে গণমাধ্যমে দেখেই তারা মামলাটি তদন্তের প্রস্তুতি নিয়েছেন বলে জানান।
নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে রিট: সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী সৈয়দ ফজলে এলাহী জনস্বার্থে এ রিট করেন। রিটে স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শক, সিলেটের পুলিশ কমিশনার, সিলেটের ডিসি-এসপিসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়েছে। রিট আবেদনে বিভিন্ন পত্রিকায় এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন সংযুক্ত করা হয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়: সিলেটে পুলিশ হেফাজতে রায়হানের মৃত্যুর ঘটনায় নির্যাতনের বিষয়ে প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে তদন্ত কমিটি। নগরীর বন্দরবাজার ফাঁড়ি ইনচার্জ আকবর হোসেনের নেতৃত্বে এ নির্যাতন চালানো হয়। ইনচার্জসহ ৭ পুলিশ সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য মিলেছে।
ফাঁড়ি ইনচার্জ আকবরের যত অপকর্ম: অভিযোগ উঠেছে সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়ার অপকর্মের শেষ নেই। ২০১৯ সালের ৬ নভেম্বর এসএমপির কোতোয়ালি থানার বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ হিসেবে যোগ দেন এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া। এরপর থেকেই বেপরোয়া হয়ে ওঠেন তিনি। শুরু করেন চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্ম। ফাঁড়ির ইনচার্জ হলেও তার ভাব ছিল থানার ওসির মতোই। প্রতিদিনই টাকার ভাগ-ভাটোয়ারা নিয়ে সালিশ বসাতেন ফাঁড়িতেই। ফাঁড়ির ভেতরে একটি রুমকে টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহার করতেন তিনি। ফাঁড়ি এলাকার ফুটপাতের দোকানপাট, আবাসিক হোটেলে অবৈধ ব্যবসা, চোরাকারবারি ও মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়মিত সকাল-বিকাল চাঁদা আদায় করতেন। প্রতিমাসে সাড়ে ১৬ লাখ টাকা শুধু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আদায় হতো। নগরীর প্রধান ব্যস্ততম এলাকা জিন্দাবাজার থেকে বন্দরবাজার এবং বন্দরবাজার কুদরতউল্লাহ মার্কেটের সামনে থেকে কিনব্রিজ পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশের ফুটপাতে ভাসমান দোকানদারদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করেন। এ জন্য আছে ৭ লাইনম্যান। কোনো ব্যবসায়ী চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তার ওপর নেমে আসত নির্যাতনের স্টিম রোলার। ফাঁড়িতে ডেকে এনে টর্চার সেলে আটকে রেখে নির্যাতন করতেন। এ ছাড়া জেলা প্রশাসকের অফিসের সামনের রাস্তায় ও সিলেট জর্জ কোর্ট এলাকার সামনের রাস্তায় ভাসমান পতিতাদের কাছ থেকেও চাঁদা আদায় করে পতিতাবৃত্তিতে সহযোগিতা করেন এই ফাঁড়ির ইনচার্জ। লাইনম্যান লোকমান ও জাহাঙ্গীর বন্দরবাজার এলাকার ১৫০টি ভাসমান ফলের দোকান থেকে প্রতিদিন সকালে ৫০ টাকা ও বিকালে ৫০ টাকা করে চাঁদা আদায় করেন। যা দৈনিক ১৫ হাজার করে মাসে সাড়ে ৪ লাখ টাকা। জিন্দাবাজার ও বন্দরবাজার এলাকার ২৫০টি ভাসমান কাপড়ের দোকান থেকে প্রতিদিন ১০০ টাকা দিনে ২৫ হাজার ও মাসে সাড়ে ৭ লাখ টাকা আদায় করেন লাইনম্যান রাহীন ও লিটন। বন্দরবাজার ও ডিসি অফিসের সামনের ৫০ জন ভাসমান মাছ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে রাত ৯টার মধ্যে জনপ্রতি ৩০০ টাকা করে দিনে ১৫ হাজার-মাসে সাড়ে ৪ লাখ টাকা আদায় করেন লাইনম্যান রুমন, সুমন ও রাকীব। লাইনম্যানরা চাঁদা আদায় শেষে প্রতি রাতে এসআই আকবরকে টাকা বুঝিয়ে দিয়ে নিজেদের ভাগ নিয়ে যান। অভিযোগ উঠেছে এই টাকার বড় একটি অংশ ঊর্ধ্বতনদের হাতেও পৌঁছে যেত। কাজেই আকবরের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ থাকলেও বন্দর ফাঁড়ি থেকে তাকে সরানো হতো না। এ ছাড়া আকবরের হয়রানি-নির্যাতনের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে রাজি নন। (দৈনিক যুগান্তর)