নিউইয়র্ক ১০:৪২ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৩ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

রাজনৈতিক দলে ৩৩ শতাংশ নারীর কোটা এখনো পূরণ হয়নি

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৩:১৮:২৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩
  • / ৮২ বার পঠিত

বাংলাদেশ ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী নারী, বিরোধী দল ও বড় আরেক দলের প্রধান নারী—এমন আত্মতুষ্টি রাজনীতিতে নারী নেতৃত্ব বৃদ্ধিতে কোনো কাজে আসছে না। ২০২০ সালের মধ্যে রাজনৈতিক দলের সব কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার কোটাও এখনো পূরণ হয়নি। রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়লেও নারী নেতৃত্বে অংশগ্রহণ কম। বড় দুই দল ছাড়াও বাম রাজনৈতিক দলগুলোও লক্ষ্য পূরণ করতে পারেনি। নতুন করে ২০৩০ সালের মধ্যে রাজনৈতিক দলের সকল কমিটিতে এক-তৃতীয়াংশ নারীর অন্তর্ভুক্তকরণেও নেই তেমন দৃশ্যমান কার্যক্রম। বিজ্ঞজনেরা বলেন, সদিচ্ছা ও কার্যকর পদক্ষেপ ছাড়া রাজনীতিতে বাড়বে না নারী নেতৃত্ব ।

নেত্রকোনা আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি হাবিবা রহমান খান দীর্ঘ দিন ধরে রাজনীতি করেন। এর পরও পুরুষের সমান তালে নারীরা এগিয়ে যেতে পারে না বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, এলাকায় পুরুষের চেয়ে নারীর কার্যক্রম কম নয়। অথচ শুধু পুরুষের নাম ফলাও করে প্রচার করা হয়। নারী রাজনৈতিক কর্মীর অবস্থান ভালো হলেও মাঠ পর্যায় থেকে উচ্চপর্যায়ে সেই তথ্য পৌঁছে না। নারীরা মাঠে সমান শ্রম দিলেও নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে এগিয়ে থাকেন পুরুষ। নির্বাচনি প্রচারের খবরেও পুরুষদের কথাই বেশি তুলে ধরা হয়। তার মতে নির্বাচনে নারীদের মনোনয়ন পাওয়ার বড় বাধা পুরুষ, পেশিশক্তি ও অর্থের দাপট।

দলগুলোর অবস্থা : ২০১৮ সালে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে এক-তৃতীয়াংশ নারীর প্রতিনিধিত্ব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো কী ব্যবস্থা নিয়েছে সে ব্যাপারে জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু ৪০টি দলের মধ্যে মাত্র ১০টি দল এ সংক্রান্ত তথ্য দেয়। এতে দেখা যায় কেবল গণফ্রন্ট তাদের নেতৃত্বে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধি থাকার কথা জানায়। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের ৮১ জনের মধ্যে ১৫ জন নারী, শতকরা হারে তা ১৮ শতাংশ। সংসদে দলের সরাসরি আসনে বিজয়ী ১৬ জন নারী রয়েছেন। বিএনপির সব স্তরের কমিটিতে ১৫ শতাংশ নারী সদস্য রয়েছেন। আর জাতীয় পার্টির সব পর্যায়ের কমিটিতে নারী রয়েছেন ২০ শতাংশ।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা চেষ্টা করছি, সকল পর্যায়ে যতটুকু সম্ভব নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে। তবে দুর্যোগ মোকাবিলা, প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যবেক্ষণের জন্য গঠিত কমিটিসহ ঝুঁকিপূর্ণ কাজের ক্ষেত্রে নারীদের অতটা যুক্ত করা যায় না। কেউ এ ব্যাপারে আগ্রহও দেখায় না। বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির ১৯ পদের মধ্যে এই মুহূর্তে নারী সদস্য মাত্র দুজন। বিএনপির চেয়ারপারসনের ৭৩ সদস্য বিশিষ্ট উপদেষ্টা পরিষদে নারী মাত্র ছয় জন। বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটিতে ভাইস চেয়ারম্যান পদ ৩৫টি। এর মধ্যে নারী ছিলেন মাত্র দুজন।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, আমাদের প্রচেষ্টা আছে কিন্তু নারী নেতৃত্ব অগ্রগতিতে আমরা সন্তুষ্ট নই। আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজ, ধর্মীয় অবস্থান ও পারিবারিক কাঠামো সবকিছুই নারীর রাজনীতিতে অংশগ্রহণ ও নেতৃত্বর পথে অন্তরায়। বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ইত্তেফাককে বলেন, তাদের দলে শীর্ষ পর্যায়ে ১৫ জনের মধ্যে একজন নারী। কেন্দ্রীয় কমিটিতে ৭৫ জনের মধ্যে আট জন নারী। ’৯০-এর পর থেকে বাম রাজনৈতিক দলগুলোর চেয়ে দুই বড় দলে নারীর সংখ্যা বেড়েছে। তবে নেতৃত্বে আসতে পারছেন না।

কেন বাড়ছে না নারী নেতৃত্ব : এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, নারী নেতৃত্বের সংকট একটি বিশ্বময় সমস্যা। পিতৃতান্ত্রিক বাংলাদেশে রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ একটি বড় চ্যালেঞ্জ। দেশের প্রধান তিন দলের নেতৃত্বে নারী থাকলেও শুধু আওয়ামী লীগের সভাপতি ছাত্রজীবনে রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। কিন্তু অন্যদের রাজনীতিতে প্রবেশ স্বামীর পথ ধরে। তারা নিজেদের মতো করে রাজনীতিতে জায়গা করে নিয়েছেন। তবে নারী নেতৃত্ব বিকাশে যে গণতান্ত্রিক চর্চা তা গড়ে ওঠেনি। রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. তাসনীম সিদ্দিকী বলেন, রাজনীতিতে আসা নারীদের পেছনে ফেলতে তাদের চরিত্র হরণ করা হয়। যে ভাবে চলছে সেভাবে নারীর অংশগ্রহণ বাড়বে না। সংসদে ৩০০ আসনকে ভেঙে ৬০০ করার পরামর্শ দেন তিনি।

জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এ ব্যাপারে বলেন, সংসদের ৪৫টি মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির পাঁচটিতে নেতৃত্ব দিচ্ছে নারী। তারা যোগ্যতা প্রমাণ করে ন্যায্যতার ভিত্তিতে এসেছেন। বর্তমানে সংসদ ৭৩ জন নারী সংসদ সদস্য আছেন যাদের মধ্যে ২৩ জন সরাসরি নির্বাচিত। স্পিকার আরও বলেন, শুধু ভোটের সময় নয়, সব সময় দল ও ভোটারের সঙ্গে নারী নেত্রীদের সম্পর্ক ভালো রাখতে হবে। এ সময় অনেক জরিপ হয়, নারীদের এমন কাজ করতে হবে যেন তাদের জনপ্রিয়তার কথা জরিপের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় কমিটিতে উঠে আসে। তাদের মনোনয়ন দিলে দল একটা সিট পাবে সে পথে হাঁটতে হবে। সূত্র : দৈনিক ইত্তেফাক

বেলী/হককথা

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

রাজনৈতিক দলে ৩৩ শতাংশ নারীর কোটা এখনো পূরণ হয়নি

প্রকাশের সময় : ০৩:১৮:২৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩

বাংলাদেশ ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী নারী, বিরোধী দল ও বড় আরেক দলের প্রধান নারী—এমন আত্মতুষ্টি রাজনীতিতে নারী নেতৃত্ব বৃদ্ধিতে কোনো কাজে আসছে না। ২০২০ সালের মধ্যে রাজনৈতিক দলের সব কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার কোটাও এখনো পূরণ হয়নি। রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়লেও নারী নেতৃত্বে অংশগ্রহণ কম। বড় দুই দল ছাড়াও বাম রাজনৈতিক দলগুলোও লক্ষ্য পূরণ করতে পারেনি। নতুন করে ২০৩০ সালের মধ্যে রাজনৈতিক দলের সকল কমিটিতে এক-তৃতীয়াংশ নারীর অন্তর্ভুক্তকরণেও নেই তেমন দৃশ্যমান কার্যক্রম। বিজ্ঞজনেরা বলেন, সদিচ্ছা ও কার্যকর পদক্ষেপ ছাড়া রাজনীতিতে বাড়বে না নারী নেতৃত্ব ।

নেত্রকোনা আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি হাবিবা রহমান খান দীর্ঘ দিন ধরে রাজনীতি করেন। এর পরও পুরুষের সমান তালে নারীরা এগিয়ে যেতে পারে না বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, এলাকায় পুরুষের চেয়ে নারীর কার্যক্রম কম নয়। অথচ শুধু পুরুষের নাম ফলাও করে প্রচার করা হয়। নারী রাজনৈতিক কর্মীর অবস্থান ভালো হলেও মাঠ পর্যায় থেকে উচ্চপর্যায়ে সেই তথ্য পৌঁছে না। নারীরা মাঠে সমান শ্রম দিলেও নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে এগিয়ে থাকেন পুরুষ। নির্বাচনি প্রচারের খবরেও পুরুষদের কথাই বেশি তুলে ধরা হয়। তার মতে নির্বাচনে নারীদের মনোনয়ন পাওয়ার বড় বাধা পুরুষ, পেশিশক্তি ও অর্থের দাপট।

দলগুলোর অবস্থা : ২০১৮ সালে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে এক-তৃতীয়াংশ নারীর প্রতিনিধিত্ব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো কী ব্যবস্থা নিয়েছে সে ব্যাপারে জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু ৪০টি দলের মধ্যে মাত্র ১০টি দল এ সংক্রান্ত তথ্য দেয়। এতে দেখা যায় কেবল গণফ্রন্ট তাদের নেতৃত্বে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধি থাকার কথা জানায়। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের ৮১ জনের মধ্যে ১৫ জন নারী, শতকরা হারে তা ১৮ শতাংশ। সংসদে দলের সরাসরি আসনে বিজয়ী ১৬ জন নারী রয়েছেন। বিএনপির সব স্তরের কমিটিতে ১৫ শতাংশ নারী সদস্য রয়েছেন। আর জাতীয় পার্টির সব পর্যায়ের কমিটিতে নারী রয়েছেন ২০ শতাংশ।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা চেষ্টা করছি, সকল পর্যায়ে যতটুকু সম্ভব নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে। তবে দুর্যোগ মোকাবিলা, প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যবেক্ষণের জন্য গঠিত কমিটিসহ ঝুঁকিপূর্ণ কাজের ক্ষেত্রে নারীদের অতটা যুক্ত করা যায় না। কেউ এ ব্যাপারে আগ্রহও দেখায় না। বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির ১৯ পদের মধ্যে এই মুহূর্তে নারী সদস্য মাত্র দুজন। বিএনপির চেয়ারপারসনের ৭৩ সদস্য বিশিষ্ট উপদেষ্টা পরিষদে নারী মাত্র ছয় জন। বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটিতে ভাইস চেয়ারম্যান পদ ৩৫টি। এর মধ্যে নারী ছিলেন মাত্র দুজন।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, আমাদের প্রচেষ্টা আছে কিন্তু নারী নেতৃত্ব অগ্রগতিতে আমরা সন্তুষ্ট নই। আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজ, ধর্মীয় অবস্থান ও পারিবারিক কাঠামো সবকিছুই নারীর রাজনীতিতে অংশগ্রহণ ও নেতৃত্বর পথে অন্তরায়। বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ইত্তেফাককে বলেন, তাদের দলে শীর্ষ পর্যায়ে ১৫ জনের মধ্যে একজন নারী। কেন্দ্রীয় কমিটিতে ৭৫ জনের মধ্যে আট জন নারী। ’৯০-এর পর থেকে বাম রাজনৈতিক দলগুলোর চেয়ে দুই বড় দলে নারীর সংখ্যা বেড়েছে। তবে নেতৃত্বে আসতে পারছেন না।

কেন বাড়ছে না নারী নেতৃত্ব : এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, নারী নেতৃত্বের সংকট একটি বিশ্বময় সমস্যা। পিতৃতান্ত্রিক বাংলাদেশে রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ একটি বড় চ্যালেঞ্জ। দেশের প্রধান তিন দলের নেতৃত্বে নারী থাকলেও শুধু আওয়ামী লীগের সভাপতি ছাত্রজীবনে রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। কিন্তু অন্যদের রাজনীতিতে প্রবেশ স্বামীর পথ ধরে। তারা নিজেদের মতো করে রাজনীতিতে জায়গা করে নিয়েছেন। তবে নারী নেতৃত্ব বিকাশে যে গণতান্ত্রিক চর্চা তা গড়ে ওঠেনি। রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. তাসনীম সিদ্দিকী বলেন, রাজনীতিতে আসা নারীদের পেছনে ফেলতে তাদের চরিত্র হরণ করা হয়। যে ভাবে চলছে সেভাবে নারীর অংশগ্রহণ বাড়বে না। সংসদে ৩০০ আসনকে ভেঙে ৬০০ করার পরামর্শ দেন তিনি।

জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এ ব্যাপারে বলেন, সংসদের ৪৫টি মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির পাঁচটিতে নেতৃত্ব দিচ্ছে নারী। তারা যোগ্যতা প্রমাণ করে ন্যায্যতার ভিত্তিতে এসেছেন। বর্তমানে সংসদ ৭৩ জন নারী সংসদ সদস্য আছেন যাদের মধ্যে ২৩ জন সরাসরি নির্বাচিত। স্পিকার আরও বলেন, শুধু ভোটের সময় নয়, সব সময় দল ও ভোটারের সঙ্গে নারী নেত্রীদের সম্পর্ক ভালো রাখতে হবে। এ সময় অনেক জরিপ হয়, নারীদের এমন কাজ করতে হবে যেন তাদের জনপ্রিয়তার কথা জরিপের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় কমিটিতে উঠে আসে। তাদের মনোনয়ন দিলে দল একটা সিট পাবে সে পথে হাঁটতে হবে। সূত্র : দৈনিক ইত্তেফাক

বেলী/হককথা