বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে তা নিরসনে কোনো পথ দেখা যাচ্ছে না বলে মনে করেন সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া। মানবজমিনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ক্ষমতার পালাবদল নিয়ে যেহেতু এই সংকট, এই সংকট সহসা নিরসন হবে না। তা চলমান থাকবে। এ অবস্থা উত্তরণের ব্যাপারে যে ধরনের পদক্ষেপ দরকার তাও দৃশ্যমান নয়। বিএনপি বলছে- তারা বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধীনে নির্বাচনে যাবে না। তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়। কিন্তু বর্তমান সংবিধান তা পারমিট করে না। সংকট উত্তরণে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজস্ব কৌশল প্রয়োগ করতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু’র সফর রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হলেও তা আগামী নির্বাচনে খুব বেশি প্রভাব ফেলবে না বলে মনে করেন দিলীপ বড়ুয়া। তিনি বলেন, বিদেশিরা কাউকে সরাসরি কিছু বলবে না। তারা কূটনৈতিক ভাষায় কথা বলে।
তারা সবসময় ভালো সম্পর্ক বজায় রাখার কথা বলবে। এর আগেও তারা বিএনপিকে নির্বাচনে আনার বিষয়ে চেষ্টা করেছে। ২০১৪তে এরকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। সে সময় সকল চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। বিএনপিকে এনে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে হলে নির্বাচন ব্যবস্থাপনা রিফর্ম করতে হবে।
দিলীপ বড়ুয়ার মতে, অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন একটা আপেক্ষিক বিষয়। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হচ্ছে কিনা। পশ্চিমারা যে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা বলছে সেখানে কিছুটা অস্পষ্টতা রয়েছে। তারা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বলতে বিএনপি’র অংশ নেয়াকে বোঝাচ্ছে। কিন্তু বিএনপি না এলে অংশগ্রহণমূলক হবে কিনা তা বলছে না। আবার বিএনপি না আসলেও নির্বাচন করা ছাড়া সরকারের উপায় নেই। কারণ তাদের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। পশ্চিমারা অনেক দূর থেকে বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করছে। যদিও তারা হোমওয়ার্ক করেই আসে।
আগামী জাতীয় নির্বাচনে পশ্চিমাদের হস্তক্ষেপ ভালো ফল আনবে না উল্লেখ করে দিলীপ বড়ুয়া বলেন, মিয়ানমারের সঙ্গে সব থেকে ভালো সম্পর্ক চীন, রাশিয়া কিংবা ভারতের। কিন্তু মিয়ানমারের সঙ্গে বাহ্যিকভাবে সম্পর্ক খারাপ আমেরিকার। যদি সেটা হয়ে থাকে তবে বাংলাদেশ যে ভারসাম্যমূলক সম্পর্কের কথা বলে তাতে ভারত, চীন বা রাশিয়ার সঙ্গেও সমান সম্পর্ক রাখতে হয়। কিন্তু পশ্চিমারা ভারসাম্যপূর্ণ কূটনীতি চায় না। তারা নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ চায়। এই জায়গায় হবে সংকট। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমাদের যে চাপ রয়েছে তা অব্যাহত থাকলে সরকার কীভাবে তা মোকাবিলা করতে পারে-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাজনৈতিক নেতৃত্বের চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সংকট মোকাবিলা করা। রাজনীতির পথ তো কুসুমাস্তীর্ণ নয়। নতুন পথ তৈরি করাই রাজনৈতিক নেতৃত্বের ক্যাপাসিটি। সেটা তো বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর আছে। উনি এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারবেন বলে মনে করি। কারণ উনি তো আর একা না। বিশ্বের পশ্চিমারাও তো একক সত্তা নয়। আরও বহু শক্তি আছে যারা পশ্চিমাদের চ্যালেঞ্জ করছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে বিদেশিদের চাপে নত হচ্ছেন না, এটার জন্য তিনি প্রশংসার দাবিদার। অনেক দ্বন্দ্ব সংঘাত আসবে। সেগুলো মোকাবিলা করাই রাজনৈতিক নেতৃত্বের দায়িত্ব বা কারিশমা। দিলীপ বড়ুয়া বলেন, আমি মনে করছি, ভারসাম্যপূর্ণ কূটনীতিতে বর্তমান সরকার আজ পর্যন্ত সফল। প্রধানমন্ত্রী অনেক দক্ষ যা বিরোধী দলের নেই। তার কাছে অনেক পথ আছে যেগুলো ব্যবহার করে তিনি পার পেতে পারেন। আমি মনে করি বিএনপি’র উচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাদ দিয়ে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি করা এবং অংশগ্রহণ করা। জনগণ তাদের পক্ষে থাকবে, তারা দাবি তুলতে পারে নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করা। নির্বাচন কমিশনের অধীনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রাখা বা অন্যান্য মন্ত্রণালয় রাখা। কিন্তু ওনারা যেটা দাবি করছেন, ‘সাত মণ তেলও পুড়বে না, রাধাও নাচবে না’। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, দাবি তুললেই হয় না। আন্দোলন করে বাধ্য করতে হয়, কেউ কাউকে ক্ষমতা এমনিতে দেয় না। সবাই চায় ক্ষমতায় আসতে। বিএনপি বহু বিরোধী দলকে নিয়ে তারা ঐক্য করছে। আমরা তাহলে কী এমন কৌশল নেব বা এমন সুযোগ দেব যেন অন্যরা ক্ষমতায় চলে যায়-প্রশ্ন রাখেন তিনি। দিলীপ বড়ুয়ার মতে, আগে যেভাবে ক্ষমতার পালাবদল হতো সেটা এখন বদলে গেছে। ডেমোগ্রাফিক্যালি পরিবর্তন হয়েছে, অর্থনৈতিক পরিবর্তন হয়েছে। যারা রুলিং পার্ট, ক্ষমতার নিয়ামক শক্তি তাদের মধ্যে অনেক পরিবর্তন এসেছে। যে পরিবর্তনের ফলে এখন সরকারকে নাড়া দেবে আর সরকার পড়ে যাবে এত সহজ না।
ক্ষমতার নিয়ামক শক্তি ম্যানেজার যে ভালো তার পক্ষে থাকবে। যে রাইজিং স্টার তার পক্ষে থাকবে। আগামী নির্বাচন নিয়ে সাম্যবাদী দলের ভাবনা সম্পর্কে দিলীপ বড়ুয়া বলেন, আমরা তো ১৪ দলীয় জোটে আছি, আমরা মনে করি সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হওয়া উচিত। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবো। সূত্র : মানবজমিন