রাখাইনে তুমুল লড়াই, ফের বাংলাদেশে ঢুকছে রোহিঙ্গা
- প্রকাশের সময় : ০৯:০১:৪৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২
- / ৩৮ বার পঠিত
বাংলাদেশ ডেস্ক : মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনীর সাথে মগ বিদ্রোহীদের সশস্ত্র সংগঠন আরাকান আর্মির (এএ) তুমুল লড়াই চলছে। এতে বিপদে পড়েছে দেশটিতে থাকা সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গা সম্প্রদায়। কারণ এবার মিয়ানমার সেনাবাহিনীর পাশাপাশি আরাকান আর্মিও তাদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন চালাচ্ছে। ফলে অনেকেই বাড়িঘর ছেড়ে বাংলাদেশ সীমান্তে এসে আশ্রয় খুঁজছে।
জানা যায়, গত আগস্ট মাস থেকে রাখাইন রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর ছেড়ে মংডুর ক্যাম্পে নেওয়ার জন্য চেষ্টা করছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। তাদের কথার অবাধ্য হলেই পুরুষদের হত্যা ও নারীদের ওপর নিপীড়ন চালানো হচ্ছে।
এদিকে রাখাইনের মংডুতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর একটি ফাঁড়ি দখল করে নিয়েছে বিদ্রোহী আরাকান আর্মি। গত শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) এই ফাঁড়ি তারা দখল করেছে বলে মিয়ানমারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ইরাবতীর খবরে উল্লেখ করা হয়েছে।
পরে গত রবিবার (১১ সেপ্টেম্বর) এক বিবৃতিতে আরাকান আর্মি দাবি করে, গত শনিবার সকালে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ৩৫২ ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়নের পাহাড়ের চূড়ার একটি ফাঁড়ি দখল করা হয়েছে। যা মংডু শহর থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে জেড চাউং গ্রামে অবস্থিত।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, সামরিক সরকারের সেনাদের সঙ্গে তাদের এক ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ হয়েছে। এসময় বেশ কয়েকজন সেনা নিহত ও বাকিদের তারা আটক করেছে। জব্দকৃত অস্ত্র ও গোলাবারুদের একটি ছবিও বিবৃতির সাথে প্রকাশ করেছে আরাকান আর্মি।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ওয়েস্টার্ন নিউজ জানিয়েছে, ফাঁড়িতে হামলায় ১৩ সেনা নিহত ও চারজনকে আটক করেছে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি। এক ভিডিওতে দেখা গেছে, আটক চার সেনা সদস্যকে বলা হয়েছে ভয় না পাওয়ার জন্য, তাদের কোনো ক্ষতি করা হবে না।
অন্যদিকে গত কয়েকদিনে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ভাষ্য, শাহপরীর দ্বীপ হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টায় বর্তমানে নাফ নদীর ওপারের ধংখালীর চরে কমপক্ষে ৮০০ রোহিঙ্গা পরিবার লুকিয়ে আছে। সুযোগ বুঝে তারা অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে।
আজ মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় রাজশাহীতে এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আরাকান আর্মিদের সঙ্গে সে দেশের সরকারের যুদ্ধ হচ্ছে। এ কারণে মাঝে মাঝে আমাদের সীমান্তেও গোলা পড়ছে। মিয়ানমার সীমান্তে বিজিবিকে শক্তিশালী করা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রতিবাদ জানিয়েছে। আশা করা হচ্ছে অচিরেই গোলাগুলি থামবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ত্রাণ ও শরণার্থী প্রত্যাবাসন কর্মকর্তা বলেন, দু-একটি নতুন পরিবার মিয়ানমার থেকে এসে ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। আমাদের অবস্থান স্পষ্ট, নতুন করে কোনো রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়া হবে না।
সরেজমিনে দেখা যায়, গত সপ্তাহে সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ করে কক্সবাজারের কুতুপালং ক্যাম্পে আশ্রয় নেয় সাত রোহিঙ্গার একটি দল। তারা সবাই রাখাইনের বুথেডং গ্রামের বাসিন্দা।
এই দলের সদস্য দিলদার বেগম বলেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও মগরা নতুন করে আমাদের ওপর অত্যাচার চালাচ্ছে। তারা আমাদের এখান থেকে মংডু চলে যাওয়ার জন্য হুমকি দিয়ে আসছিল। এর প্রতিবাদ করায় আমার স্বামী শহীদুল্লাহকে ধরে নিয়ে মেরে ফেলেছে। আমার মতো অনেকের ঘরবাড়িতে হামলা চালাচ্ছে। প্রাণ ভয়ে তিন মাসের সন্তান নিয়ে ১১ দিনের মাথায় টেকনাফে পৌঁছেছি। পরে সেখান থেকে কুতুপালং ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছি।
একই ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া আবুল ওয়াফা বলেন, মগ ও সেনারা নতুন করে জুলুম-নির্যাতন করছে। এ জন্য পালিয়ে এসেছি। তারা লড়াইয়ের কথা বলে আমাদের গ্রাম থেকে তাড়ানোর চেষ্টা করছে। এখন সীমান্তের ধংখালীর চরে ৮০০-৯০০ রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। তারাও এপারে আসার চেষ্টায় আছে। মিয়ানমার সরকার নাকি মংডু টাউনশিপে ক্যাম্প করে সব রোহিঙ্গাকে সেখানে রাখার পরিকল্পনা করেছে।
সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের বাসিন্দারা জানান, রাখাইনে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সংঘর্ষ চলছে। এর প্রভাব পড়েছে সীমান্ত এলাকায়। মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে আবারো বাংলাদেশে প্রবেশ করছে রোহিঙ্গারা। তবে যে কোনো ধরনের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে নিরাপত্তা বাহিনী টহল জোরদার করেছে। ৮-এপিবিএনের অধিনায়ক আমির জাফর জানান, নতুন আসা রোহিঙ্গাদের বিষয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন তারা।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্বিচারে হত্যা ও নির্যাতন চালায়। সে সময় বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঢল নামে। তখন সীমান্ত অতিক্রম করে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়। আগে আসা রোহিঙ্গাসহ ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গার ঠাঁই হয় উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে। সূএ : সাম্প্রতিক দেশকাল
হককথা/এমউএ