মূল্যস্ফীতিসহ তিন চ্যালেঞ্জ নিয়ে সতর্ক করল আইএমএফ
- প্রকাশের সময় : ০৩:১৭:০৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৮ মে ২০২৩
- / ৫১ বার পঠিত
বাংলােদশ ডেস্ক : বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও টাকার ওপর চাপ অব্যাহত থাকবে বলে সতর্ক করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সংস্থাটি বলেছে, ধারাবাহিক উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বৈশ্বিক আর্থিক খাতের অস্থিরতা বৃদ্ধি ও গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদার দেশগুলোতে প্রবৃদ্ধির ধীরগতি প্রভাব ফেলবে প্রবৃদ্ধির চাকায়। দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক গতি-প্রকৃতি ও আইএমএফ সমর্থিত কর্মসূচির বাস্তবায়ন নিয়ে বাংলাদেশ সফর শেষে আইএমএফের মিশনপ্রধান রাহুল আনন্দ গতকাল রবিবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছেন। একই সঙ্গে আশাবাদের কথা জানিয়েও আইএমএফ বলেছে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখেও এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে যারা দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে, বাংলাদেশ তাদের মধ্যে অন্যতম।
এদিকে আইএমএফের পরামর্শ মেনে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভের বিষয়টি ছাড়া সামষ্টিক অর্থনীতির প্রায় সব সূচকে আইএমএফের পরামর্শ মেনে কাঙ্ক্ষিত মানে পৌঁছানোর আশা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল রবিবার এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক জানিয়েছেন, বাজারভিত্তিক সুদহার ও মুদ্রার একক বিনিময় হার চালুর দিকেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক যাচ্ছে। আইএমএফ বাংলাদেশকে যে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ দিয়েছে তার মধ্যে এগুলো সংস্থাটির অন্যতম চাওয়া ছিল।
আইএমএফের প্রতিনিধিদলটি গত ২৫ এপ্রিল থেকে গতকাল ৭ মে পর্যন্ত বাংলাদেশ সফর করেছে। সফর শেষে বাংলাদেশ মিশনের প্রধান রাহুল আনন্দ বিবৃতিতে বলেন, ‘এই সফরে আমরা সামষ্টিক অর্থনৈতিক ও আর্থিক খাতের সাম্প্রতিক গতি-প্রকৃতি নিয়ে আলোচনা করেছি। আইএমএফ সমর্থিত কর্মসূচির মূল যেসব প্রতিশ্রুতি ছিল, সেগুলো কতটা পূরণ হলো, তার অগ্রগতিও পর্যালোচনা করেছি। বর্ধিত ঋণ সুবিধা (ইসিএফ), বর্ধিত তহবিল সুবিধা (ইএফএফ), রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি (আরএসএফ) ব্যবস্থার প্রথম পর্যালোচনায় আনুষ্ঠানিকভাবে তা মূল্যায়ন করা হবে, যা এই বছরের শেষের দিকে হবে বলে আশা করা হচ্ছে।’ সফরের সময় আইএমএফ প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, অর্থসচিব ফাতিমা ইয়াসমিন এবং অন্য ঊর্ধ্বতন সরকারি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে। এ ছাড়া তারা বেসরকারি খাতের প্রতিনিধি, দ্বিপক্ষীয় দাতা ও উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গেও বৈঠক করেছে।
গত বছরের ২৪ জুলাই ঋণ চেয়ে আইএমএফের কাছে চিঠি দিয়েছিল বাংলাদেশ। এতে পরিমাণের কথা উল্লেখ ছিল না। পরে ১২ অক্টোবর ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দিয়ে গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার ৪৫০ কোটি ডলারের ঋণ সহায়তার কথা উল্লেখ করেন। এরপর চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করে আইএমএফ। এই ঋণের প্রথম কিস্তি এরই মধ্যে ছাড় করা হয়েছে। ২০২৬ সাল পর্যন্ত আইএমএফের কর্মসূচি চালু থাকার কথা রয়েছে। আইএমএফের ঋণের সঙ্গে দেওয়া বেশ কিছু শর্ত বাংলাদেশ এরই মধ্যে পূরণ করেছে এবং আরো কিছু শর্ত পূরণের প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
সুদহার বাজারভিত্তিক করার ঘোষণা আসবে নতুন মুদ্রানীতিতে : বাংলাদেশ ব্যাংক পরবর্তী মুদ্রানীতিতে বাজারভিত্তিক সুদহার চালুর বিষয়ে ঘোষণা দেবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক। একই সঙ্গে মুদ্রার একক বিনিময় হার চালুর দিকেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক যাচ্ছে বলে তিনি জানান। আইএমএফ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানানো হয়। আইএমএফ বাংলাদেশকে যে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ দিয়েছে, তার শর্ত হিসেবে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক আগামী জুলাইয়ের মধ্যে একটি সুদহার করিডর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সুদহার করিডর এমন একটি ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে সুদহারের বেঁধে দেওয়া সীমা ধীরে ধীরে তুলে নেওয়া ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি সুদহারে পরিচালনভিত্তিক পরিবর্তন করা যায়।
আরোও পড়ুন । পোর্ট সুদানে পৌঁছেছেন পাঁচ শতাধিক বাংলাদেশি
একক বিনিময় হার চালুর বিষয়টি ব্যাখ্যা করে মেজবাউল হক বলেন, মুদ্রার একক বিনিময় হার মানে এই নয় যে ডলারের ক্রয় ও বিক্রয়ের হার একই হবে। এখন একাধিক বিনিময় হার আছে, তবে সেগুলোর মধ্যকার ব্যবধান ২ শতাংশের মধ্যে এলেই বলা যাবে, মুদ্রার একক বিনিময় হার আছে। সেটা প্রায় অর্জিত হয়ে গেছে। তবে তা আরো বেশি সীমার মধ্যে আনার চেষ্টা করা হবে। এ ছাড়া আইএমএফের ব্যালান্স অব পেমেন্টস এবং ইনভেস্টমেন্ট পজিশন ম্যানুয়াল (বিপিএম-৬) অনুযায়ী রিজার্ভ গণনার বিষয়েও আগামী মুদ্রানীতিতে ঘোষণা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র।
রপ্তানি তথ্যের সংজ্ঞার গরমিলের কারণে রপ্তানি আয় দেশে না আসার পরিমাণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি জানিয়েছে, কোনো পণ্য রপ্তানি হওয়ার ১২০ দিনের মধ্যে দেশে আসার নিয়ম রয়েছে। আবার বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশিদের মালিকানাধীন কম্পানির মুনাফাও দেশে আনতে হয়। সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মেজবাউল হক বলেন, সময়মতো দেশে না আসা অর্থের পরিমাণ ১৪০ কোটি ডলার। এর মধ্যে ২৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার আটকে আছে ক্রয়াদেশের তুলনায় কম পণ্য সরবরাহ করার কারণে বিল পরিশোধ না করায়। সূত্র : কালের কণ্ঠ
বেলী / হককথা