বিশেষ প্রতিনিধি: কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চাঁদাবাজি, অপহরণ ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে একের পর এক ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। গত তিন দিন ধরে কুতুপালং শিবিরে নতুন ও পুরাতন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রæপের মধ্যে দফায়-দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। তিন দিনে অপহরণের শিকার হয়েছে ১০ রোহিঙ্গা। তাদের মধ্যে ৬ রোহিঙ্গা মুক্তিপণ দিয়ে ফিরেছে। রোববার (৩১ আগষ্ট) একদিনেই কয়েক দফার সংঘর্ষে ১২ জন আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে মোহাম্মদ ইউছুফ ও ছলিম উল্লাহ নাম পাওয়া গেলেও অন্যান্যদের পরিচয় পাওয়া যায়নি।
আহতরা ক্যাম্প সংলগ্ন এনজিও পরিচালিত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। দুই পরস্পর বিরোধী রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রæপের অব্যাহত সংঘর্ষের ঘটনার পর থেকে রোহিঙ্গাদের কেউ কেউ শিবির ছেড়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতেও দেখা গেছে। রোববার দুপুরের দিকে শিবিরের প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হলেও দুই পক্ষের মধ্যে এখনো উত্তেজনা বিরাজ করছে। রোবার সকাল ১১টার দিকে কুতুপালং রেজিস্ট্রার্ড ও আন-রেজিস্ট্রার্ড রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝামাঝি স্থানে দুই ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষের ঘটনাটি ঘটে। এর আগে নুর আলম নামে এক রোহিঙ্গাকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় প্রথমে কক্সবাজার পরে চট্টগ্রাম হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। তিনি কুতুপালং টু-ইস্ট ক্যাম্পের আহমদ হোসেনের ছেলে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে সূত্র জানিয়েছে। রোহিঙ্গারা জানিয়েছে, রোহিঙ্গা শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রæপ ‘মুন্না গ্রæপ’ গত তিন দিনে ১০ জন রোহিঙ্গাকে অপহরণ করেছে। এরমধ্যে মুক্তিপণ দিয়ে রোববার সকালে ফিরে এসেছে ৬ জন। এরা হলেন- কুতুপালং ক্যাম্পের বি বøকের রহমত উল্লাহ, ডি বøকের মৌলভী জিয়াবুর রহমান, ছৈয়দ আকবর, এফ বøকের আনিস উল্লাহ ও এজাহার, জি বøকের মো. জসিম। বাকী ৪ জন এখনো তাদের হাতে জিম্মিদশায় রয়েছে।
আরো জানা গেছে, গত ২৬ আগষ্ট রাতে সন্ত্রাসী গ্রæপের এক নেতা নেছার আহমদের ছেলে সদ্য জেলফেরত আবুল কালামকে অপহরণের জের ধরে একের পর এক সংঘর্ষ ও অপহরণের ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। স্বামীকে অপহরণের ঘটনায় আবুল কালামের স্ত্রী নুর জাহান বেগম বাদী হয়ে শনিবার রাতে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী আবদুল হামিদসহ ১১ জনকে আসামি করে উখিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
মো. আমির নামে এক রোহিঙ্গা জানান, গত পাঁচ দিন ধরে অপহরণ, চাঁদাবাজি ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে রেজিষ্ট্রার্ড ক্যাম্পের ই বøকের মোহাম্মদ ফরিদ ও এফ বøকের নুর হাশিম, মাস্টার মুন্না এবং আনরেজিষ্ট্রার্ড ক্যাম্পের নেতা রফিক উদ্দিন, হাফেজ জাবেদ ও সাইফুলের মধ্যে অন্তঃকোন্দল শুরু হয়। এরপর থেকে ক্যাম্পের পরিবেশ অশান্ত হয়ে ওঠে।
কুতুপালং আন-রেজিষ্ট্রার্ড ক্যাম্পের মাঝি নুরুল বশর ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, সকাল ১১টা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এ সময় ১০-১২ জন আহত হওয়ার খবর শুনেছি। ঘটনার পর থেকে ক্যাম্পে মোবাইল নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে ঠিকভাবে কোথাও যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না।
এ প্রসঙ্গে কুতুপালং রেজিষ্ট্রার্ড ক্যাম্পের আইনশৃংখলা রক্ষায় নিয়োজিত এপিবিএন-এর পরিদর্শক মো. সালেহ আহমদ পাটান বলেন, ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের মাঝে বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে থাকে। অনুরূপ রোববারও একইভাবে কিছু ঘটনা ঘটেছে। গোলাগুলির কথা অস্বীকার তিনি বলেন, বর্তমানে ক্যাম্পের পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে এবং তাদের নিয়ন্ত্রণে আছে।
এ বিষয়ে কুতুপালং ক্যাম্প ইনচার্জ মো. খলিলুর রহমান খাঁন বলেন, আমি ছুটিতে আছি। (দৈনিক কালের কন্ঠ)