আবারো প্রমাণ হলো মিজানুর রহমান মিনু ছাড়া রাজশাহীতে বিএনপি প্রায় অচল। সংকটকালে রাজশাহীতে মিনু ছাড়া বিএনপির হাল ধরারও কেউ নেই। আগামী ৩ ডিসেম্বর রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দানে বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় মহাসমাবেশ।
গত অক্টোবরে এ মহাসমাবেশের ঘোষণা আসার পর কেন্দ্রীয় নেতারা জেলায় জেলায় নেতাকর্মীদের সংগঠিত করার চেষ্টা করছেন। বিশেষ করে ২০১৪ সালে অসহযোগ আন্দোলনের সময় থেকেই রাজশাহী অঞ্চলে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন সংগঠন থেকে।
একদিকে পুলিশের মামলা গ্রেফতার হয়রানি, অন্যদিকে দিশাহীন নেতৃত্বের সঠিক নির্দেশনার অভাবে গোটা অঞ্চলজুড়ে বিএনপির সংগঠনে নেমে আসে নজিরবিহীন স্থবিরতা। রাজশাহী অঞ্চলজুড়ে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন দলটির হাজার হাজার নেতাকর্মী। কেন্দ্র থেকে বারবার কমিটিগুলোতে রদবদল এনেও তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সংগঠিত করতে ব্যর্থ হন বিএনপির হাইকমান্ড।
এদিকে খোদ রাজশাহী মহানগর ও জেলা বিএনপির সাংগঠনিক বিশৃঙ্খলাও দূর করতে পারেনি কেন্দ্র তিনবার কমিটিতে বদল এনে। গণবিচ্ছিন্নদের দায়িত্ব অর্পণের ফলে নেতাকর্মীদের আড়মোড়া ভাঙ্গাতে ব্যর্থ হন নেতারা। কেন্দ্র থেকে বারবার তাগাদা দিয়েও তৃণমূলকে সক্রিয় করতে না পারায় মহাসমাবেশ সফলে গভীর সংশয় তৈরি হয়।
পরিস্থিতি বেগতিক দেখে শেষপর্যন্ত ডাক পড়েছে মিনুর। দায়িত্ব পেয়ে মহাসমাবেশকে সফল করতে মিনু এখন বিভাগের বিভিন্ন জেলায় ছুটে বেড়াচ্ছেন। যেখানেই যাচ্ছেন সেখানেই নেতাকর্মীদের ঢল নামছে। মিনুর উপস্থিতিতে বিএনপি নেতাকর্মীরা দারুণভাবে উজ্জীবিত হয়ে উঠেছেন। দীর্ঘদিনের নিষ্ক্রিয়তা কাটিয়ে সক্রিয় হচ্ছেন দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে।
দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, মিনু ম্যাজিকেই রাজশাহী অঞ্চলে সচল হয়েছে সংগঠনের দীর্ঘদিনের স্থবিরতা ও ভেঙেছে নেতাকর্মীদের অভিমান ও নিষ্ক্রিয়তা।
দলীয় নেতাকর্মীদের মতে, ২০১৬ সালে কেন্দ্র থেকে অকারণেই মিজানুর রহমান মিনুকে সংগঠনের মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন ও নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হয় পরিকল্পিতভাবে। এতদিনে দলের স্থায়ী কমিটিতে মিনুর থাকার কথা ছিল। সেটা করা না হলেও কেন্দ্রের কতিপয় মিনুর বিরোধী নেতা তাকে দলের মূলধারা ও তৃণমূল নেতাকর্মী থেকে বিচ্ছিন্ন করেন। এতে রাজশাহী অঞ্চলে কার্যত নেতৃত্বহীন হয়ে পড়ে সংগঠন ও নেতাকর্মীরা।
এই কয়েক বছরে দলের ব্যাপক সাংগঠনিক ক্ষতি হয়ে গেছে। মহাসমাবেশ আয়োজন করতে গিয়ে স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এখন হাড়েহাড়ে টের পাচ্ছেন। ফলে নেতাকর্মীদের মাঝে স্বতঃস্ফূর্ততা ফেরাতে মিনুকেই ডাকতে হয়েছে তাদের।
জানা গেছে, ২০১৬ সালের ২৬ ডিসেম্বর রাজশাহী মহানগর কমিটির সভাপতি পদ থেকে বাদ দিয়ে মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে সভাপতি করা হয়। ওই সময় মিনু ছিলেন দলের যুগ্ম-মহাসচিব। তারও আগে দীর্ঘসময় ছিলেন দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক। বিএনপির সর্বশেষ কমিটিতে মিনুকে যুগ্ম মহাসচিব পদ থেকে বাদ দিয়ে করা হয় চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা।
সেই থেকে রাজশাহী জেলা ও মহানগর ছাড়াও গোটা অঞ্চলজুড়ে মিনু অনুসারীরা অনেকটা নিষ্ক্রিয় ছিলেন সংগঠনে। ফলে রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলের জেলায় জেলায় বিএনপির সংগঠনে ধস নামে। অনেক নেতাকর্মী দল ছেড়ে চলে যান অন্য দলে। অনেকেই ক্ষোভে অভিমান দলের নেতৃত্ব ছাড়েন।
নেতাকর্মীরা বলছেন, তারা আবারো ফিরতে শুরু করেছেন দলে মিনুর সক্রিয় হওয়ার খবরে।
দলীয় সূত্রে আরও জানা গেছে, রাজশাহী বিভাগীয় মহাসমাবেশের প্রধান সমন্বয়কারী করা হয়েছে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুকে। দুলু দিনরাত ছুটে বেড়াচ্ছেন বিভাগের বিভিন্ন জেলায় জেলায় মহাসমাবেশকে সফল করতে। তবে মহাসমাবেশের প্রধান দলনেতা বা টিম লিডার করা হয়েছে মিজানুর রহমান মিনুকেই; যার কাঁধে ভার পড়েছে রাজশাহীর মহাসমাবেশে বিভাগের প্রতিটি জেলা থেকে দলে দলে নেতাকর্মীর অংশগ্রহণ নিশ্চিতে। মহাসমাবেশের স্থানীয় ব্যবস্থাপনার বড় দায়িত্বও তাকেই দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, গত ৯ নভেম্বর রাজশাহী বিভাগীয় মহাসমাবেশের সমন্বয় কমিটির সভায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু দেশের এই ক্রান্তিকালে রাজশাহীর মহাসমাবেশ সফল করতে মিনুকে সর্বশক্তি দিয়ে মাঠে নামার অনুরোধ করেন। টুকু দলের চেয়ারম্যানের নির্দেশ বার্তা পৌঁছে দেন মিনুকে। সব অভিমান ভুলে মিনু ও তার অনুসারীরা এখন বিভাগের সর্বত্র ছুটে বেড়াচ্ছেন।
এদিকে ৩ ডিসেম্বরের মহাসমাবেশকে সফল করতে রাজশাহী মহানগরীর প্রতিটি মহল্লা ওয়ার্ড ও থানায় থানায় যাচ্ছেন মিনু। ঘর থেকে নেতাকর্মীদের বের করে তাদের দিচ্ছেন বিভিন্ন দায়িত্ব। নেতাকর্মীরাও অনেকদিন পর তাদের প্রিয় নেতাকে মাঠে দেখতে পেয়ে ছুটে যাচ্ছেন তার কাছে। নিজেরাই দায়িত্ব ভাগাভাগি করে নিচ্ছেন। দিনরাত কাজ করছেন নিজ নিজ এলাকায়। প্রতিটি এলাকায় বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঝে দেখা দিয়েছে প্রাণচাঞ্চল্য।
নেতাকর্মীরা বলছেন, সবটাই মিনু ম্যাজিকের কারণে ঘটছে। কারণ মিনু তাদের বহুদিনের পরীক্ষিত নেতা। রাজশাহী অঞ্চলে বিএনপির অপ্রতিদ্বন্দ্বী ও নিবেদিতপ্রাণ সংগঠক।
দলীয় সূত্রে আরও জানা গেছে, রাজশাহীর মহাসমাবেশ হবে অন্য বিভাগীয় মহাসমাবেশের চেয়ে আলাদা ও জনসমাগমে সর্ববৃহৎ। বিশেষ করে বিএনপি প্রভাবিত রাজশাহী অঞ্চলের মান রাখতে নেতাকর্মীদের এই প্রাণান্ত চেষ্টা। তারা কেন্দ্রকে আলাদা কিছু করে দেখাতে এখন মরিয়া।
এ প্রসঙ্গে বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান মিনু বলেন, আমি ছাত্রদল যুবদল বিএনপি- সবস্তরেই সফলভাবে নেতৃত্ব দিয়েছি। রাজশাহী সিটির মেয়র ছিলাম একটানা ১৭ বছর। দুইবার ছিলাম সংসদ সদস্য। আজকের রাজশাহীর যে চেহারা তার গোড়াপত্তন করেছিলাম আমি। রাজশাহীতে ২০ লাখ মানুষের বাস। আমি ব্যক্তিগতভাবে অধিকাংশ মানুষকে চিনি। দলমত নির্বিশেষে সবার সঙ্গে আমার দেখা-সাক্ষাত ঘটে। রাজশাহীসহ গোটা উত্তরাঞ্চল বিএনপি প্রভাবিত এলাকা। নানা কারণে নেতাকর্মীরা নিষ্ক্রিয় হয়েছেন। বিভাগীয় মহাসমাবেশ উপলক্ষে নেতাকর্মীদের মাঝে প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। রাজশাহীর মহাসমাবেশ হবে স্মরণকালের বৃহৎ সমাবেশ। এ মহাসমাবেশ থেকে সরকারকে হলুদ কার্ড দেখানো হবে। ঢাকার মহাসমাবেশে দেখানো হবে লাল কার্ড।