মামলায় আসামি মৃত ব্যক্তি, ছাত্রলীগকর্মীও

- প্রকাশের সময় : ০২:৫৬:৩৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২
- / ১৬৮ বার পঠিত
বাংলাদেশ ডেস্ক : মুন্সীগঞ্জ জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন নজরুল ইসলাম বাচ্চু। মাসছয়েক আগে তিনি মারা গেছেন। কিন্তু মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুর পুরাতন ফেরিঘাটে গত বুধবারের সংঘর্ষের মামলায় তাঁকে আসামি করেছে পুলিশ। সংঘর্ষস্থলে না থাকলেও সাংবাদিক, জেলা ক্রীড়া সংগঠক, এমনকি ছাত্রলীগকর্মীকেও আসামি করা হয়েছে। তবে যুবদলকর্মী শহিদুল ইসলাম শাওন ভূঁইয়া নিহতের ঘটনায় মামলা হয়নি। ফেরিঘাট এলাকায় শ্রমিক লীগের কার্যালয় না থাকলেও অফিস ভাঙচুরের অভিযোগেও মামলা হয়েছে বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে।
মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মিনহাজ-উল-ইসলাম বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশে আসা মিছিলের ব্যানার কেড়ে নিলে সংঘর্ষ শুরু হয়। বিএনপি কর্মীদের ছোড়া ইটপাটকেলে অতিরিক্ত এসপিসহ ৩৩ পুলিশ সদস্য জখম হন। সংঘর্ষে আহত যুবদলকর্মী শাওন ভূঁইয়া পরদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। মস্তিস্কে গুলির আঘাতে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে হাসপাতালের সনদে বলা হয়েছে। তাঁকেও আসামি করা হয় বৃহস্পতিবার দায়ের করা পুলিশের মামলায়।
সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মাঈনউদ্দিন এবং শ্রমিক লীগ নেতা আবদুল মালেক বাদী হয়ে ১ হাজার ৩৬৫ জনকে আসামি করে দুটি মামলা করেছেন। পুলিশের মামলায় মুন্সীগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার যুগ্ম সম্পাদক আয়নাল হক স্বপন ১৪১ নম্বর আসামি। তিনি সমকালকে বলেছেন, ‘শহরের সবাই জানে- আমি রাজনীতি করি না। খেলাধুলা নিয়ে আমার দিন কাটে। ভুল করে আমাকে আসামি করেছে। বিষয়টি জানানোর পর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বুঝতে পেরেছেন।’
পুলিশের মামলার ১৪৭ নম্বর আসামি ভট্টাচার্যেরবাগ এলাকার বাসিন্দা ছাত্রলীগকর্মী হাসান শেখ। তিনি জানিয়েছেন, সংঘর্ষের সময় জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ আহমেদ পাভেলের সঙ্গে তাঁর বাসায় ছিলেন। শহরের পাঁচঘরিয়াকান্দি এলাকার হুমায়ুন কবীর দৈনিক খবরপত্রের জেলা প্রতিনিধি। তিনি জানান, দুর্ঘটনায় আঙুল ভেঙে যাওয়ায় ১৫ দিন ধরে তিনি বাড়িতে। কিন্তু দুই মামলাতেই তাঁকে আসামি করা হয়েছে।
সদর উপজেলার ভিটিহোগলাকান্দি গ্রামের মৃত আবদুর রহমানের ছেলে জামাল হোসেন মালয়েশিয়াপ্রবাসী। সম্প্রতি তিনি দেশে ফিরেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ২১ সেপ্টেম্বর তিনি মুক্তারপুরেই ছিলেন না। কিন্তু তাঁকেও আসামি করা হয়েছে।
পুলিশের মামলায় ৩১৩ জনের নামসহ অজ্ঞাত ৮০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। শ্রমিক লীগ নেতার মামলায় ৫২ জনের নামসহ অজ্ঞাত ২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এজাহারে যাঁদের নাম রয়েছে, তাঁদের অধিকাংশ বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, শ্রমিকসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মী।
স্থানীয় সূত্র বলছে, কয়েক দফা এজাহার বদল করা হয়েছে। মামলার আসামি করতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের তিনটি পক্ষের কাছ থেকে বিএনপি নেতাকর্মীদের নাম নেওয়া হয়েছে। ব্যক্তিগত প্রতিহিংসার কারণে তালিকায় সংঘর্ষস্থলে না থাকা বিএনপির নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের নাম দেওয়া হয়েছে। এজাহার পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সদর উপজেলার দুই পৌরসভা ও ৯টি ইউনিয়ন এবং টঙ্গিবাড়ী, লৌহজং, শ্রীনগর, সিরাজদীখান ও গজারিয়া উপজেলার বিএনপি নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়েছে।
তবে সংঘর্ষস্থলে থাকা বিএনপির অনেক নেতাকে আসামি করা হয়নি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা বলেছেন, ভবিষ্যতে বিএনপি যাতে ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি করতে না পারে, সে জন্য সবাইকে আসামি করা হয়নি।
শাওন হত্যায় মামলা হয়নি: মৃত্যুর চার দিন পার হলেও যুবদল নেতা শাওন নিহত হওয়ার ঘটনায় মামলা হয়নি। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তারিকুজ্জামান এ তথ্য জানিয়েছেন। শাওনের ছোট ভাই সোহান বলেছে, ‘মামলা করলে সমস্যা হবে। ভেজালে পড়তে চাই না। পুলিশ থানায় ডেকেছিল। কিন্তু আমরা মামলা করব না। বিএনপি মামলা করতে বললেও মামলা করব না। এটাই আমাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।’
এজাহারে আছে, বাস্তবে নেই শ্রমিক লীগের কার্যালয়: আবদুল মালেকের দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, মুক্তারপুর শ্রমিক লীগের কার্যালয় ভাঙচুর করেছে বিএনপি। এতে শ্রমিক লীগের কর্মী-সমর্থকরা আহত হয়েছেন।
তবে সরেজমিনে দেখা গেছে, মুক্তারপুর সেতুর ঢালে বাঁশের খুঁটির ওপরে ত্রিপলের একটি ছাউনি রয়েছে। বেড়াহীন এই ছাউনিতে হামলায় পাঁচ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে মামলার বাদী আবদুল মালেকের অভিযোগ। ছাউনির দক্ষিণে চায়ের দোকান এবং উত্তরে মুক্তারপুর সেতুর ওয়ে স্কেলের কার্যালয়। জায়গাটি সেতু বিভাগের। ছাউনিতে মুক্তারপুর স্ট্যান্ড কমিউনিটি পুলিশের এবং মুন্সীগঞ্জ জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের ব্যানার দেখা যায়।
মামলার প্রধান আসামি সদর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মহিউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, মুক্তারপুরে শ্রমিক লীগের কার্যালয় নেই। অতি উৎসাহী হয়ে নিজেকে শ্রমিক লীগ নেতা দাবি করে আবদুল মালেক বানোয়াট মামলা করেছেন বিএনপি নেতাকর্মীদের হয়রানি করতে। আবদুল মালেক বলেছেন, শ্রমিক লীগের কার্যালয়ের বয়স ৯ বছর। সেতু বিভাগের জমিতে কীভাবে কার্যালয় বানালেন- প্রশ্নে তিনি বলেছেন, পরিত্যক্ত জায়গায় অস্থায়ী কার্যালয় বানানো হয়েছে বসার জন্য।
জেলা শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক আক্কাস আলী জানান, মুক্তারপুর ফেরিঘাট ও সেতু এলাকায় তাঁর সংগঠনের কার্যালয় নেই। সেতুর ঢালে শ্রমিক লীগ নেতা আবদুল মালেক অস্থায়ী কার্যালয় বানিয়েছেন।
বিএনপি নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে: সংঘর্ষের পর থেকেই আত্মগোপনে বিএনপির নেতাকর্মীরা। জেলা কার্যালয়ও কেউ আসছেন না। কার্যালয়টিতে তালা ঝুলছে। স্থানীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, গ্রেপ্তার এড়াতে গা-ঢাকা দিয়েছেন। কেউ কেউ উচ্চ আদালত থেকে আগাম জামিনের চেষ্টা করছেন।
পুলিশ যা বলছে: এজাহারে মৃত ব্যক্তি, ক্রীড়া সংগঠন, ছাত্রলীগকর্মীর নাম থাকার বিষয়ে ওসি মো. তারিকুজ্জামান সমকালকে বলেন, সংঘর্ষের পর গ্রেপ্তার ২৪ জনের তথ্যে আসামি করা হয়েছে। তাঁরাই মৃত, প্রবাসী ও ঘটনার সঙ্গে জড়িত নেই- এমন ব্যক্তিদের নাম বলেছে। তদন্ত চলছে। যাঁরা সংঘর্ষে জড়িত নয়, তাঁদের বাদ দিয়ে অভিযোগপত্র দেওয়া হবে আদালতে। আওয়ামী লীগের কাছ থেকে তালিকা নিয়ে আসামি করার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ওসি। সূএ : সমকাল
হককথা/এমউএ