মাওলানা হাবিব, তসলিমা নাসরিন ও সাংবাদিক ফতেহ ওসমানী
- প্রকাশের সময় : ১১:৩৫:৩৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩
- / ১৩৬ বার পঠিত
হককথা ডেস্ক : প্রায় ৩০ বছর আগের কথা। সিলেটের একটি প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখছিলেন সিলেটের আলোচিত ব্যক্তিত্ব মাওলানা হাবিবুর রহমান। সেই সভা কভার করা সাংবাদিক কিংবা উপস্থিত শ্রোতা কেউই বুঝে উঠতে পারেননি এই সভা একদিন ইতিহাস হবে! তসলিমা নাসরিনের আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে উঠার গল্প এ সভা থেকেই শুরু। তসলিমা নাসরিন। বাংলাদেশের নির্বাসনে থাকা কবি ও লেখিকা। এখানে বলতে হয়, অকাল প্রয়াত সাংবাদিক ফতেহ ওসমানীর কথা। সময়টা ১৯৯৪ সাল। বাংলাদেশের প্রখ্যাত সাংবাদিক-কলামিস্ট দৈনিক মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী তখন একটি নতুন ধারার কাগজ দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকা প্রকাশ করেছেন। অল্পসময়ে ব্যাপক পাঠক প্রিয় হওয়া এই কাগজের সিলেট ব্যুরোর দায়িত্বে ছিলেন ফতেহ ওসমানী। ফতেহ ওসমানী ২০১০ সালের ১৮ এপ্রিল আততায়ীর হামলায় গুরুতর আহত হন এবং ২৮ এপ্রিল ঢাকার আ্যপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
নাস্তিক-মুরতাদের বিচার ও দেশে ব্ল্যাসফেমি আইন প্রণয়নের দাবিতে সিলেটের ঐতিহাসিক কোর্ট পয়েন্টে প্রতিবাদ সভা ডেকেছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস।
খেলাফতের কেন্দ্রীয় আমীর প্রয়াত প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবিবুর রহমান। সিলেটের কাজির বাজার মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল তিনি । সব ঘরানার রাজনীতিবিদরা তাকে মান্য করেন,সমীহ করেন। রাজনীতির মাঠেও তার প্রভাব প্রতিপত্তি ব্যাপক। জেলা প্রসাশনসহ সকল মহল তাকে খাতির-তোয়াজ করে চলেন। তার ভক্ত-মুরিদ,শিষ্যের সংখ্যা প্রচুর । তার সভা মানে বিরাট কিছু। তার নিজের হাতে গড়া কাজির বাজার মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক ছাড়াও অনুসারী গৌষ্ঠী রয়েছে। অনেক রাজনৈতিক দলের চেয়ে তার সভা-সমাবেশে লোক সমাগম হয় বেশি। মাওলানার ভাষণও জ্বালাময়ী এবং সিলেটের মানুষ তাকে পছন্দ করেন। একটা টান-টান উত্তেজনা থাকে তার সভা সমাবেশ ঘিরে। বাম ঘরনার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং সিলেটের সুশীলরা তাকে আদর করে “বুলবুলি”মাওলানা বলে ডাকতেন।
তীব্র জামায়াত বিরোধী হওয়ার কারণে মাওলানা হাবিবুর রহমান বাম ও প্রগতিশীলদের খুব কাছের মানুষ ছিলেন। সিলেটের প্রায় সকল সংবাদিকের সাথে তার ছিল গভীর সখ্যতা। সভায় মাওলানা হাবিবুর রহমান তসলিমা নাসরিন, সালমান রুশদী সহ অনেক স্বঘোষতি নাস্তিকদের কঠোর সমালোচনা করলেন। বললেন এরা মুরতাদ। দীর্ঘ বক্তৃতায় বলেন,আমাদের দেশে ইসলামিক আইন থাকলে এদের মৃত্যুদণ্ড হত। শরিয়া আইন বা বিধান না থাকায় চাইলেও এদেরকে সর্বোচ্চ দণ্ডে দণ্ডিত করতে পারি না। এদের হত্যার জন্য পঞ্চাশ হাজার বা একলাখ টাকার পুরস্কার ঘোষণা করতে পারি না ।
নাস্তিকদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, দেশে ইসলামী আইন থাকলে ইসলাম ও বিশ্বনবীকে অবমাননা এবং দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের আবেগ অনুভূতিতে আঘাত হানার অপরাধে তাদের ফাঁসি হতো। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশ হলেও দুঃখজনক ইসলাম ধর্মকে আঘাত করেও নাস্তিক মুরতাদরা বারবার পার পেয়ে যায়। আমরা ইসলাম ধর্মকে অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তির বিধান রেখে কঠোর আইন চাই। এসকল নাস্তিকদের কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ করি। তওবা করে ধর্মে ফিরে আসারও আহবান জানান তিনি। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, দেশে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা থাকলে আমি প্রত্যেক নাস্তিকের বিপরীতে ৫০ হাজার টাকা করে “ইনাম” ঘোষণা করতাম।
পরেরদিন বাংলাবাজার পত্রিকায় ওসমানীর নামে রিপোর্টটি “তসলিমার মাথার দাম ৫০ হাজার টাকা ঘোষণা” শিরোনামে মাওলানা হাবিবুর রহমানকে উদ্ধৃত করে প্রথম পাতায় লিড নিউজ হিসেবে প্রকাশিত হলে সারা দেশে হুলস্থুল পড়ে যায়। নিন্দা-বিবৃতি ও প্রতিবাদের ঝড় উঠে সর্বত্র। সকল জাতীয় পত্রিকায় দেশের শীর্ষস্হানীয় বুদ্ধিজীবীদের বক্তব্য বিবৃতিও আসতে থাকে। শুরু হয় মিছিল-মিটিং। মাওলানা হাবিবুর রহমান রাতারাতি দেশের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন। পরেরদিন এবিষয়ে তার বক্তব্য জানতে কাজির বাজার মাদ্রাসায় হুমড়ি খেয়ে পড়েন সিলেটের সকল সাংবাদিক। কিন্তু মজার বিষয় সব সময় আলোচনায় থাকতে পছন্দ করা মাওলানা বক্তব্যটি স্বীকার বা অস্বীকার কোনটাই করলেন না। খুবই কৌশলী জবাব দিলেন সাংবাদিকদের। মাওলানা এটিকে তার একটি বড় অর্জন হিসাবে নিলেন মনে হলো। এরপরের ঘটনা সকলের জানা, তীব্র আন্দোলনের মুখে তসলিমা দেশ ছেড়ে যান এবং সুইডেনে রাজনৈতিক আশ্রয় লাভ করেন। সূত্র : মানবজিমন
সাথী / হককথা