মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকী ১৭ নভেম্বর

- প্রকাশের সময় : ১১:৫৩:২০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ নভেম্বর ২০১৬
- / ১০২৫ বার পঠিত
নিউইয়র্ক: স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা, আফ্রো-এশিয়া ল্যাতিন আমেরিকার মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকী ১৭ নভেম্বর। দিনটি পালন উপলক্ষ্যে টাঙ্গাইলসহ দেশ ও প্রবাসে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। টাঙ্গাইলের সন্তোষস্থ মওলানার মাজার প্রাঙ্গণে নেয়া হয়েছে দিনব্যাপী কর্মসূচি। বিভিন্ন রাজনৈতিক, সাসমাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবি সংগঠনের পক্ষ থেকে দিনটি স্মরণে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। মওলানা ভাসানী ফাউন্ডেশন নিউইয়র্ক-এর পক্ষ থেকে তিনটি স্মরণে ২০ নভেম্বর নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে।
হুজুর ভাসানীর জন্ম ১৮৮০ সালে সিরাজগঞ্জ জেলার ধানগড়া গ্রামে। জীবনের শুরুতে মক্তবে শিক্ষা গ্রহণ এবং মক্তবেই কিছুকাল শিক্ষকতা করেন। ১৯০৩ সালে আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯১৯ সালে কংগ্রেসে যোগ দিয়ে অসহযোগ আন্দোলনে অংশ নেন। এ সময় ১০ মাস কারা ভোগ করেন। ১৯২৯ সালে আসামের ধুবড়ী জেলার ব্রহ্মপুত্র নদের ভাসানচরে প্রথম কৃষক সম্মেলন করেন। সেই থেকে তার নামের সাথে ভাসানী শব্দ যুক্ত হয়। ১৯৩১ সালে টাঙ্গাইলের সন্তোষের কাগমারীতে, ১৯৩২ সালে সিরাজগঞ্জের কাওরাখোলায় এবং ১৯৩৩ সালে গাইবান্ধায় বিশাল কৃষক সম্মেলন করেন। বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে ১৯৫২ সালের ৩০ জানুয়ারী ঢাকা জেলা বার লাইব্রেরী হলে তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদ গঠিত হয়। তিনি এর অন্যতম সদস্য নিযুক্ত হন। ১৯৫২ সালে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে পুনরায় গ্রেফতার হন। ১৯৫৩ সালের ২৩ জুন প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ মুসলিম আওয়ামী লীগের (বর্তমানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন মওলানা ভাসানী এবং প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন টাঙ্গাইলের জননেতা শামসুল হক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন সেই কমিটির যুগ্ম সম্পাদক। ১৯৫৬ সালে বাংলার দুর্ভিক্ষ রোধকল্পে কেন্দ্রীয় সরকারের নিকট ৫০ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যে ঢাকায় অনশন করেন। মওলানা ভাসানী ১৯৬৯ সালে আইয়ুব বিরোধী গণ-আন্দোলনে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১ দফা কর্মসূচির প্রতি দৃঢ় সমর্থন দেন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার এবং শেখ মুজিবুর রহমানসহ এ মামলার সকল আসামীর নিঃশর্ত মুক্তি দাবী করেন। ১৯৭০ সালের নভেম্বরে উপকূলীয় এলাকায় প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড় হলে দূর্গত এলাকায় ত্রাণ কাজে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭০ সালের ৪ ডিসেম্বর ঢাকার পল্টন ময়দানে এক জনসভায় ভাষণ দিয়ে স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান দাবী উত্থাপন করেন। ১৯৭১ সালের অসহযোগ আন্দোলনের প্রতি তিনি সমর্থন দেন। ১৯৭১ সালে মুজিবনগর সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হন। এসময় তিনি ভারতে ছিলেন। ১৯৭২ সালের ২২ জানুয়ারী স্বাধীন বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন এবং একই বছর ২৫ ফেব্রুয়ারী সাপ্তাহিক হককথা পত্রিকা প্রকাশ করেন। মুজিব সরকারের ব্যাংক বীমা ও শিল্প প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণনীতি ও ১৯৭২ সালে সংবিধানের প্রতি সমর্থন প্রদান করেন। তিনি ১৯৭৬ সালের ১৭ নভেম্বর ইন্তেকাল করেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। মেহনতি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তিনি আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে। পাকিস্তানী ঔপনিবেশিক শাসকদের অত্যাচার-নিপীড়নের বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠ ছিলেন মওলানা ভাসানী। সেই সাথে বাঙালী জাতিসত্তা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। মওলানা ভাসানী ছিলেন দেশের রাজনৈতিক নেতাদের নেতা। দেশের মুকুটহীন সম্রাট।
টাঙ্গাইল থেকে মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন রিপন জানান, মওলানা ভাসানীর ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে: ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আলাউদ্দিন-এর নেতৃত্বে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ পুস্পস্তবক অর্পণ, ক্যাম্পাসস্থ মুক্তমঞ্চে ‘মাওলানা ভাসানীর ধর্মচিন্তা ও বর্তমান প্রেক্ষিত’ শীর্ষক সেমিনার। সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আলাউদ্দিন। মুখ্য আলোচক হিসেবে আলোচনা করবেন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের প্রো ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আনোয়ারুল ইসলাম। এছাড়া বিশ^বিদ্যালয়ের লাইফ সায়েন্স অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. পিনাকী দে ও মাওলানা ভাসানী রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক ও মাওলানা ভাসানীর ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকী উদ্যাপন কমিটির আহবায়ক প্রফেসর ড. এ. কে. এম. মহিউদ্দিন আলোচনা করবেন।
সেমিনারে মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন মাওলানা ভাসানী স্ট্যাডিজ কোর্স-এর শিক্ষক সৈয়দ ইরফানুল বারী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন ড. মোহাম্মদ মতিউর রহমান।