ভোটের হাওয়া বইছে জাতীয় পার্টিতে
- প্রকাশের সময় : ১২:৪১:০৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ জুন ২০২৩
- / ৪৬ বার পঠিত
বাংলাদেশ ডেস্ক : পুরোদমে নির্বাচনি প্রস্তুতি শুরু করেছে জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের হাতে গড়া এই রাজনৈতিক দলটি আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বড় ধরনের চমক দেখাতে চায়। এর অংশ হিসাবে বর্তমান চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদেরের নেতৃত্বে ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে দলটি। পাশাপাশি জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণের ভাবনাও উড়িয়ে দিতে নারাজ জাতীয় পার্টি। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে নির্বাচনের আগমুহূর্তে তখনকার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে। এমনটাই জানিয়েছেন দলটির একাধিক শীর্ষ নেতা।
সোমবার নবাবগঞ্জের বর্ধনপাড়ায় উৎসবমুখর পরিবেশে ঢাকা জেলা জাতীয় পার্টির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। প্রখর খরতাপ উপেক্ষা করে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে এতে অংশ নেন দলের নেতাকর্মী, সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ীরা। এই সম্মেলন থেকে আগামী সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১ আসনের (দোহার ও নবাবগঞ্জ) প্রার্থী হিসাবে অ্যাডভোকেট সালমা ইসলামের নাম ঘোষণা করা হয়। মাটি ও মানুষের কাছাকাছি থেকে রাজনীতি করা অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এর আগেও নৌকার প্রার্থীকে পরাজিত করে ঢাকা-১ আসন থেকে নির্বাচতি হয়েছিলেন। বিষয়টি মাথায় রেখেই তাকে আগামী নির্বাচনেও লাঙ্গলের প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করেন জিএম কাদের।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য হাতে খুব বেশি সময় নেই। আর নির্বাচন মানেই একটি রাজনৈতিক দলের জন্য ঢাকার আসনে বিজয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ঢাকা জেলা জাতীয় পার্টির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন এবং এই সম্মেলন থেকে দলীয় প্রার্থী হিসাবে অ্যাডভোকেট সালমা ইসলামের নাম ঘোষণার মধ্য দিয়ে জাতীয় পার্টি কার্যত তাদের আনুষ্ঠানিক নির্বাচনি প্রস্তুতির বিষয়টিই অপরাপর রাজনৈতিক দলকে জানান দিল। সংশ্লিষ্টদের মতে, নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং মাঠের বিরোধী দল বিএনপি যখন মুখোমুখি অবস্থানে, ঠিক তখন ভোটের হাওয়া বিরাজ করছে জাতীয় পার্টিতে।
আরোও পড়ুন। ৮ কেন্দ্রে ভোট ডাকাতি করে নৌকার জয় নিশ্চিত করেছি : যুবলীগ নেতা
এ প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির মহাসচিব ও সাবেক মন্ত্রী মো. মুজিবুল হক চুন্নু মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, আমরা আমাদের নির্বাচনি প্রস্তুতি শুরু করেছি। আগামীতে ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছি। নবাবগঞ্জে ঢাকা জেলা জাতীয় পার্টির সম্মেলন থেকে ঢাকা-১ আসনে নির্বাচনের জন্য আমরা অ্যাডভোকেট সালমা ইসলামের নাম ঘোষণা করেছি। এর আগেও তিনি এই আসন থেকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসাবে জয়ী হয়েছিলেন। পরেরবারের নির্বাচনে তার জয় ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। ভোট অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হলে এবং মানুষ তার পছন্দের মানুষকে বেছে নিতে পারলে অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম আগামী নির্বাচনেও বিপুল ভোটে জয়ী হবেন।
তিনি আরও বলেন, অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান। তিনি এবং আমি ২০১৪ সালে একই সঙ্গে নির্বাচনকালীন সরকারে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছি। এর চেয়েও বড় কথা-অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম একজন নিবেদিতপ্রাণ রাজনীতিবিদ। সজ্জন মানুষ, ভালো মানুষ। তিনি মানুষকে নিয়ে সব সময় ভাবেন, মানুষের জন্য রাজনীতি করেন। মানুষের কল্যাণে কাজ করেন। যে কারণে দোহার ও নবাবগঞ্জে তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয়। মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, পর্যায়ক্রমে আমরা আমাদের দলের অন্যান্য প্রার্থীর নামও ঘোষণা করব। বলা যেতে পারে, ঢাকা থেকে আমরা আমাদের নির্বাচনি কার্যক্রম শুরু করলাম।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব বলেন, নবাবগঞ্জে গিয়ে বুঝতে পারলাম দেশের মানুষ এখন আর আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। তারা জিএম কাদেরকে ক্ষমতায় দেখতে চায়। জাতীয় পার্টিকে ক্ষমতায় দেখতে চায়। নবাবগঞ্জে ঢাকা জেলা জাতীয় পার্টির সম্মেলনে হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতি এমনটাই প্রমাণ করেছে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো দলীয়করণ করেছে। ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। মানুষের নাভিশ্বাস চরমে। আমরা মনে করি, জাতীয় পার্টিই পারবে এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ দিতে, সাধারণ মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা পূরণ করতে এবং দেশের মানুষের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব করতে। এজন্য আমরা মানুষের কাছাকাছি যাচ্ছি। আগামী দিনে দেশের মানুষের জন্য কী করব, সেই পরিকল্পনা তৈরি করছি।
তিনি আরও বলেন, মানুষ চায় অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। দলীয় সরকারের অধীনে বলেন কিংবা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে বলেন-নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন ছিল সব সময়। এই দুই সরকারের অধীনেই সুষ্ঠু নির্বাচনের নজির নেই। তাই নির্বাচন পদ্ধতির পরিবর্তন দরকার। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য প্রধানমন্ত্রী উদ্যোগী হলে, তিনি নতুন কোনো রূপরেখা দিলে বা সুস্পস্ট কোনো প্রস্তাব দিলে, তখন আমরাও দলীয় ফোরামে আলাপ আলোচনা করে আমাদের প্রস্তাবনা উত্থাপন করব।
এদিকে নবাবগঞ্জের বর্ধনপাড়ায় অনুষ্ঠিত ঢাকা জেলা জাতীয় পার্টির সম্মেলনের পর থেকে চাঙা দলটির নেতাকর্মীরা। দেশের রাজনীতিতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয় ঢাকা। এখানে যারা ভোটের মাঠে শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে পারেন, তারাই সারা দেশে সুবিধা পান-রাজনীতিতে এমন কথা সর্বজনবিদিত। তাই নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে, ঢাকাকে ঘিরে নির্বাচনি তৎপরতা বাড়াচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো। এক্ষেত্রে জাতীয় পার্টি এগিয়ে থাকল নবাবগঞ্জে হাজার হাজার নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে একটি সফল সম্মেলন আয়োজনের মধ্য দিয়ে। এগিয়ে রইলেন এই এলাকার জাতীয় পার্টির প্রার্থী অ্যাডভোকেট সালমা ইসলামও। সম্মেলন থেকে তাকে ঢাকা জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি পদে পুনর্নির্বাচিত করা হয়। এ সময় সমবেত জনতা তুমুল করতালি দিয়ে অ্যাডভোকেট সালমা ইসলামকে স্বাগত জানান।
জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি যুগান্তরকে বলেন, আমি রাজনীতি করি মানুষের জন্য। মানুষের পশে থাকতে আমার ভালো লাগে। মানুষের জন্য কিছু করতে পারলে আমি আনন্দিত হই। তিনি আরও বলেন, আমি সুখে-দুঃখে দোহার ও নবাবগঞ্জের মানুষের পাশে ছিলাম, আছি, আগামী দিনেও থাকব। একইভাবে তাদের ভালোবাসাই আমার জীবনের একমাত্র চাওয়া। একজন মুসলমান হিসাবে আমি বিশ্বাস করি, মানুষকে ভালোবাসলে, মানুষের ভালোবাসা অর্জন করলে, মহান আল্লাহও তাকে ভালোবাসেন। অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম বলেন, প্রখর খরতাপ উপেক্ষা করে হাজার হাজার নেতাকর্মী, সমর্থক সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। তারা আমাকে যে সম্মান জানিয়েছেন, আমার ডাকে সাড়া দিয়ে এখানে সমবেত হয়েছেন, এজন্য আমি অভিভূত ও কৃতজ্ঞ।
অ্যাডভোকেট সালমা ইসলামের এ কথারই প্রতিধ্বনি পাওয়া যায় স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায়ও। কাঠানকান্দা গ্রাম থেকে হেঁটে সম্মেলনে আসেন দুই সন্তানের জননী সবিতা রানী। জানতে চাইলে তিনি বলেন, অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম সব সময় আমাদের খোঁজখবর রাখেন। বিপদে আপদে পাশে থাকেন। তাই তার ডাকে এখানে ছুটে এসেছি। তিনি আমাদের কাছে মায়ের মতো। পাঠান কান্দার বাসিন্দা ইস্রাফিল মিয়া বলেন, অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম নিজের টাকায় রাস্তাঘাট নির্মাণ করে দিয়েছেন। শীতের সময় খবর নেন। ঈদের সময় খবর নেন। এছাড়াও বিপদে-আপদে তিনি আমাদের পাশে থাকেন। তাই তার ডাকে এসেছি।
অ্যাডভোকেট সালমা ইসলামের নেতৃত্ব এবং তার মানবিক গুণাবলির ভূয়সী প্রশংসা করে দোহার উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি হায়দার বেপারী বলেন, অ্যাডভোকেট সালমা ইসলামকে এখানকার মানুষ নিজেদের মায়ের মতো মনে করেন। শ্রদ্ধা ও সম্মান করেন। তাই তার ডাকে হাজার হাজার মানুষ দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে এসেছেন। তিনি আরও বলেন, দুর্দিনে, দুঃসময়ে সাধারণ মানুষ অ্যাডভোকেট সালমা ইসলামকে কাছে পান। তার দরজা সব সময় সবার জন্য খোলা থাকে। অনেকে রাজনীতি করে টাকা উপার্জন করেন। আর অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম নিজের টাকা খরচ করে রাজনীতি করেন। নিজের টাকায় স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, ব্রিজ, কালভার্ট, রাস্তাঘাট নির্মাণ করেছেন। ঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস বলেন, শীত বলেন, নদীর ভাঙার সময় বলেন, ঈদের সময় বলেন-নানান সময় মানুষের বিপদে-আপদে পাশে থাকেন অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম। সূত্র : যুগান্তর
সুমি/হককথা