ভাষাসৈনিক মতিনের চোখে পৃথিবী দেখছেন ইকবাল কবীর ও রেশমা নাসরীন
- প্রকাশের সময় : ১১:০৯:৪৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০১৪
- / ৭৭২ বার পঠিত
ইকবাল কবীর ও রেশমা নাসরীনভাষাসৈনিক আবদুল মতিনের চোখ দিয়ে নতুন করে পৃথিবী দেখছেন কলেজশিক্ষক ইকবাল কবীর ও স্বাস্থ্যকর্মী রেশমা নাসরীন। তাঁদের দুই চোখে ভাষাসৈনিকের দুই কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। দুজনই প্রথম আলোকে বলেছেন, বাকি জীবন তাঁরা ভাষাসৈনিকের আদর্শ অনুসরণ করে চলবেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় ৫ সেপ্টেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য দেহ ও সন্ধানীকে চক্ষুদানের সিদ্ধান্তের কথা জানান আবদুল মতিন। ৮ সেপ্টেম্বর মারা যাওয়ার পর তাঁর চোখ সংগ্রহ করে সন্ধানী। পরদিন রাজধানীর সন্ধানী চক্ষু হাসপাতালে তাঁর দুই কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করা হয় ইকবাল ও রেশমার চোখে।
রেশমা নাসরীন (২৭) ঢাকার ধামরাই উপজেলার শিয়ালপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ওই উপজেলায় সুয়াপুর কমিউনিটি ক্লিনিকে হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার হিসেবে কাজ করেন। দুই বছর আগে তাঁর বাম চোখের কর্নিয়ায় সমস্যা (ক্যারাটোকোনাস) দেখা দেয়। একপর্যায়ে ওই চোখে তিনি আর কিছুই দেখতে পেতেন না। এখন তিনি দুই চোখেই দেখছেন। গত শনিবার রেশমা মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভাষাসৈনিক আবদুল মতিনের মতো বড় মাপের একজন মানুষের চোখ দিয়ে পৃথিবীর আলো দেখছি। এটা আমার জন্য অনেক বড় ব্যাপার।’
মো. ইকবাল কবীর (৪০) ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলার বাংলাবাজার চাঁদগাজী স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষকতা করেন। গ্লুকোমায় আক্রান্ত হয়ে দুই বছর আগে তিনি বাম চোখের দৃষ্টিশক্তি হারান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই মহান মানুষটি সারা জীবন মানুষের জন্য কাজ করেছেন। তাঁর শরীরের একটি অংশ এখন আমার শরীরে। তাঁর চোখেই আমি পৃথিবী দেখব। তাঁকে আদর্শ মেনেই আমি ভাবনাগুলো পরিচালনা করব।’ তিনি বলেন, এখন থেকে ছাত্রছাত্রী আর নিজস্ব পরিমণ্ডলের মানুষকে মরণোত্তর চক্ষুদান বিষয়ে সচেতন করবেন।
এই দুজনের চোখে সফলভাবে কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করেছেন বিএসএমএমইউয়ের চক্ষু বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. শীষ রহমান। তিনি বলেন, দুজনই বাম চোখে কিছুই দেখতে পেতেন না। কর্নিয়া প্রতিস্থাপনের পরদিন থেকেই তাঁরা দেখতে শুরু করেছেন।
সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতির কর্মকর্তারা জানান, এ পর্যন্ত সংগঠনটি তিন হাজার ৮১০টি কর্নিয়া সংগ্রহ করে তিন হাজার ২৯৬ জন মানুষের চোখে প্রতিস্থাপন করেছেন। তবে মরণোত্তর চক্ষুদানের পরিমাণ আগের তুলনায় কমে গেছে। তবে তাঁরা মনে করেন, ভাষাসৈনিক আবদুল মতিনের মতো মানুষের চক্ষুদানের খবরে অনেকেই মরণোত্তর চক্ষুদানে উৎসাহিত হবে।