ভারতে শেখ হাসিনাকে অভ্যর্থনা জানাতে প্রতিমন্ত্রী কেন
- প্রকাশের সময় : ০২:০৮:১০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২
- / ৩১ বার পঠিত
বাংলােদশ ডেস্ক : ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমন্ত্রণে চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে নয়াদিল্লি পৌঁছলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভ্যর্থনা জানান দেশটির রেলওয়ে ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী দর্শনা বিক্রম জারদোশ। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে ব্যাপক আলোচনা। দিল্লি বিমানবন্দরে শেখ হাসিনাকে অভ্যর্থনা জানাতে কেন একজন প্রতিমন্ত্রী গেলেন, এমন প্রশ্ন অনেকের। তারা বলছেন, এতে বাংলাদেশের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়েছে। কেউ কেউ বিষয়টি বিগত সরকার প্রধানদের রাষ্ট্রীয় সফরের সঙ্গেও তুলনা করে রাজনৈতিক মেরুকরণের চেষ্টা করেছেন।
এ বিষয়ে আলোচনা যখন তুঙ্গে, তখন বিভিন্ন ফাইল ঘেটে বের করা পুরনো বেশকিছু ছবি বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বা কানাডার প্রধানমন্ত্রীর মতো রাষ্ট্রনেতারা ভারত সফরে গেলে তাদের অভ্যর্থনা জানাতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বিমানবন্দরে যাননি। তবে রাষ্ট্রপতি ভবনে তাদের গার্ড অব অনার দেওয়া হয়, যেটি যথারীতি শেখ হাসিনাও পেয়েছেন। এই আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমেই রাষ্ট্রপ্রধানদের সফরের মূল কার্যক্রম শুরু হয়।
অন্যকোনো দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা ভারত সফরে গেলে তাদের বিমানবন্দরে স্বাগত জানানোর ব্যাপারে ভারতের রাষ্ট্রাচার বা ‘প্রোটোকল’ কী বলে, তা জানার চেষ্টা করেছে ইত্তেফাক অনলাইন। এ বিষয়ে ভারত ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা ব্যাখা জানিয়েছেন। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রোটোকল অনুযায়ী একজন সফররত সরকারপ্রধান হিসেবে শেখ হাসিনাকে সর্বোচ্চ সম্মানই দেওয়া হয়েছে। এতে কোনোকিছুর ব্যতয় ঘটেনি। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, এধরনের রীতিনীতির ক্ষেত্রে দেশ বা রাষ্ট্রভেদে ভিন্নতা থাকে। ভারত নিজেদের নির্ধারিত রীতি অনুযায়ীই শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানিয়েছে।
এবার কিছুটা পেছনে ফিরে দেখা যাক। নরেন্দ্র মোদি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর দিল্লিতে শেখ হাসিনার প্রথম সফর ছিল ২০১৭ সালের এপ্রিলে। সেবার শেখ হাসিনাকে অভ্যর্থনা জানাতে হাজির হন খোদ নরেন্দ্র মোদি নিজেই। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে ভারতের বিভিন্ন জাতীয় গণমাধ্যমে সমালোচনার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতেও ব্যাপক আলোচনা হয়। কারণ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রোটোকল ভেঙেছেন! অর্থাৎ, অন্যকোনো দেশের রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানাতে হলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বিমানবন্দরে যাবেন, এমন কোনো রীতি নেই। নরেন্দ্র মোদি সেবার গিয়েছেন, এটি ছিল শেখ হাসিনার সঙ্গে তার হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্কের খাতিরে।
জানা যায়, শেখ হাসিনার সেই সফরে বিমানবন্দরে তাকে অভ্যর্থনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের একজন প্রতিমন্ত্রীকে। তিনি তৎকালীন কেন্দ্রীয় নগর উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। আসানসোলে বিজেপির এমপি ছিলেন তিনি। পূর্বপরিকল্পনা না থাকলেও শেষমুহূর্তে নরেন্দ্র মোদিও বিমানবন্দরে উপস্থিত হন। তবে অভ্যর্থনার আনুষ্ঠানিক রুটিন দায়িত্ব প্রতিমন্ত্রী সুপ্রিয়ই সম্পন্ন করেন।
এরপর ২০১৯ সালের অক্টোবরে শেখ হাসিনা যখন আবার দিল্লিতে যান, তখন বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানানোর দায়িত্ব পান আরেকজন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী ও পশ্চিমবঙ্গ থেকে নির্বাচিত বিজেপি’র এমপি দেবশ্রী চৌধুরী। সেবার নরেন্দ্র মোদি নিজে বিমানবন্দরে যাননি।
এবছর যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ভারত সফরে আহমেদাবাদ পৌঁছালে বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ভুপেন্দ্র প্যাটেল। এর আগে ২০১৮ সালে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ভারত সফর করেন। সেসময় তাকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানান কৃষি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী গজেন্দ্র সিংহ শেখাওয়াত।
২০১৭ সালের ৯ এপ্রিল অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুল চার দিনের সফরে ভারতে যান। দিল্লির পালাম বিমানবন্দরে তাকে অভ্যর্থনা জানান ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজিব প্রতাপ রেড্ডি। ২০০০ সালের শুরুর দিকে ভারত সফর করেছিলেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন। সেসময় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যশবন্ত সিং বিল ক্লিনটনকে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন।
হককথা/এমউএ