ভারতের পানিসন্ত্রাস রুখতে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে

- প্রকাশের সময় : ০১:১৫:৪৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫
- / ৯০ বার পঠিত
ভারত ও বাংলাদেশের দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্কের মধ্যে সবচেয়ে বেশিদিন ধরে অস্বস্তির কারণ হয়ে আছে ফারাক্কা বাঁধ। ভারতে ফারাক্কার পোশাকি নাম ‘ফারাক্কা ব্যারাজ প্রজেক্ট’ এবং বহু আলোচনা ও বিতর্ক পেরিয়ে আজ প্রকল্পটির পঞ্চাশ বছর পূর্ণ করলো।
ইবরাহীম খলিল: ভারত ও বাংলাদেশের দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্কের মধ্যে সবচেয়ে বেশিদিন ধরে অস্বস্তির কারণ হয়ে আছে ফারাক্কা বাঁধ। ভারতে ফারাক্কার পোশাকি নাম ‘ফারাক্কা ব্যারাজ প্রজেক্ট’, এবং বহু আলোচনা ও বিতর্ক পেরিয়ে আজ প্রকল্পটির পঞ্চাশ বছর পূর্ণ করলো। ভারত কেবল বাংলাদেশের সঙ্গে নয় তার আশপাশের দেশের সাথেও একই কাজ করছে। যা রীতিমত পানি যুদ্ধের নামান্তর। সবশেষ প্রতিবেশী পাকিস্তানের সাথে সিন্ধু যুক্তি বাতিল করে ক্ষতির মধ্যে ফেলেছে। কাশ্মিরের পেহেলগামের জঙ্গি নাটকের পর ভারত পাকিস্তানের সাথে সম্পাদিত সিন্ধু নদীর পানি চুক্তি স্থগিত করে বলেছে, পাকিস্তানকে এক ফোঁটাও পানি দেওয়া হবে না। শুধু বলেই ক্ষান্ত হয়নি, এই লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
গবেষণা বলছে, বাংলাদেশে ৬৫ শতাংশ এলাকায় সেচ দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে। উজান থেকে স্বাদু পানির সরবরাহ কমে যাওয়ায় দেশের দক্ষিণাঞ্চলে লবণাক্ততা বেড়েছে। এর ফলে জমির উর্বরতা শক্তি কমে আসছে। বরেন্দ্র অঞ্চল, বিশেষ করে উচ্চ বরেন্দ্রের প্রায় শতভাগ গভীর নলকূপ অকেজো হয়ে গেছে। ২১ শতাংশ অগভীর নলকূপ প্রায় অকার্যকর। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় হস্তচালিত পাম্প অকেজো হয়ে পড়েছে। ভূ-গর্ভস্থ পানিতে আর্সেনিকের বিষাক্ত প্রভাবে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের অনেক জেলায় নলকূপের পানি খাওয়ার অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বৃহত্তর খুলনা অঞ্চলে লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় প্রচলিত ধান উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। স্বাদু পানির অভাবে খুলনা ও সাতক্ষীরা অঞ্চলে সুন্দরবনের প্রাণবৈচিত্র ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
১৯৭৫ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত গঙ্গা-পদ্মাসহ এর অসংখ্য শাখা-প্রশাখার প্রায় ২ হাজার কিলোমিটার নাব্য নৌপথ বন্ধ এবং অকার্যকর হয়ে গেছে। ভারতের উত্তরাখÐ, উত্তর প্রদেশ ও বিহার রাজ্যে সেচের জন্য গঙ্গার প্রায় ৪০০ পয়েন্ট থেকে অন্যায়ভাবে পানি সরিয়ে নিয়ে তাদের সেচ কাজে ব্যবহার করছে। এর মধ্যে বৃহদাকারের তিনটি ক্যানাল প্রজেক্ট ভারত ইতোমধ্যেই বাস্তবায়ন করেছে। সেগুলো হলো-’আপার গঙ্গা ক্যানেল প্রজেক্ট’ ‘মধ্যগঙ্গা ক্যানেল প্রজেক্ট’ এবং ‘নিম্নগঙ্গা ক্যানেল প্রজেক্ট’। গঙ্গার উজানে হরিদ্বারের সামান্য ভাটি থেকে উত্তরাখÐ, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, দিল্লি, বিহার, ঝাড়খÐের কিছু এলাকাসহ পশ্চিমবঙ্গের বিশাল এলাকা জুড়ে গঙ্গা সিস্টেমের প্রবাহ থেকে এককভাবে পানি প্রত্যাহার করে অন্যায়ভাবে ভাটির বাংলাদেশকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এর শতভাগ দায় ভারতের।
অংশীজনদের অভিযোগ, ফারাক্কার জন্যই পদ্মার দু পাড়ে মানুষের জীবন-জীবিকা বিপন্ন। অন্য দিকে ভারতেও ফারাক্কা নিয়ে বিতর্ক কম হয়নি। কয়েক বছর আগেই ফারাক্কা ব্যারাজ ভেঙে দেওয়ারও দাবি তুলেছিল বিহার সরকার, রাজ্যটির অভিযোগ প্রতি বছর ফারাক্কার কারণেই তাদের বন্যায় ডুবতে হয়। ফারাক্কার উজানে ও ভাটিতে গঙ্গার ভাঙনও ওই এলাকার মানুষের জন্য খুব বড় সমস্যা। তা ছাড়া অনেক বিশেষজ্ঞই মনে করেন কলকাতা বন্দরকেও বাঁচাতে পারেনি ফারাক্কা। যে কারণে উপকূলের কাছে তৈরি করতে হয়েছিল আর একটি স্যাটেলাইট বন্দর হলদিয়া।
বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে ১৮ কিলোমিটার উজানে নির্মিত এই প্রকল্পটির মূল লক্ষ্যই ছিল গঙ্গার প্রবাহ থেকে অতিরিক্ত পানি ভাগীরথীতে সরিয়ে আনা ও তার মাধ্যমে কলকাতা বন্দরকে বাঁচানো ; যার জন্য ১৯৬১ সালে অবশেষে সেই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়, আর ১৯৭৫ সালে এসে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করেন ফারাক্কা ব্যারাজ। প্রকল্পের কাজ অবশ্য তারও বছর কয়েক আগেই প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু একাত্তরে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম ফারাক্কার কমিশনিং পিছিয়ে দিয়েছিল বলে অনেকেই মনে করেন।
ফারাক্কার কাজ যখন শুরু হয়, তখন গঙ্গার ভাটিতে ছিল পাকিস্তান। কিন্তু রাতারাতি সেখানে একটি ‘বন্ধু দেশ’ চলে আসার ফলে ফারাক্কায় একতরফাভাবে গঙ্গা থেকে পানি প্রত্যাহার ভারতের জন্য বিড়ম্বনার কারণ হয়ে উঠেছিল। ১৯৭৫-এর গোড়ায় এসে ইন্দিরা গান্ধী শেখ মুজিবের সঙ্গে একটা বোঝাপড়ায় আসতে সক্ষম হন। ঠিক হয় এপ্রিল-মে মাসে প্রতি দশদিন অন্তর গঙ্গা থেকে পরীক্ষামূলকভাবে নির্দিষ্ট পরিমাণ পানি সরানো হবে। সেই ‘পরীক্ষা’ অবশ্য পরেও আরও বহু বছর ধরে চলতে থাকে।
ফারাক্কাতে নদীর ডান দিক থেকে কাটা হয়েছে ৩৮.৩ কিলোমিটার লম্বা ভাগীরথী ফিডার ক্যানাল, যা জঙ্গীপুরের কাছে ভাগীরথীতে গিয়ে মিশেছে এবং পরে সেই নদী হুগলী নামে পরিচিতি পেয়েছে। এককালের ছোট্ট গ্রাম ফারাক্কাকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে একটি আধুনিক উপনগরী, পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ও দক্ষিণপ্রান্তের মধ্যে রেল ও সড়ক যোগাযোগও স্থাপন করেছে ব্যারাজের ওপর দিয়ে তৈরি ট্রেনলাইন ও রাস্তা। ক্যানালের পানিতে প্রচুর মাছ ধরা পড়ে, এমন কী ইলিশও! ভারতে হলদিয়া থেকে এলাহাবাদ পর্যন্ত বিস্তৃত ‘১ নম্বর জাতীয় জলপথে’রও অতি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এই ক্যানাল। আশির দশকে ফারাক্কাতে এনটিপিসি-র যে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়, তারাও ব্যবহার করে এই ক্যানালের পানি। ভাঁটির দিকে মুর্শিদাবাদের সাগরদীঘিতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারও একটি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করেছে, তারাও এই পানির ওপর নির্ভরশীল। সব মিলিয়ে ফারাক্কা শুধুমাত্র একটি বাঁধ ও খালই নয়, এই প্রকল্পকে ঘিরে গত পঞ্চাশ বছরে একটা বিরাট ক্যানভাসই আঁকা হয়ে গেছে বলা চলে।
ফারাক্কার প্রায় জন্মলগ্ন থেকেই এই প্রকল্পের কার্যকারিতা নিয়ে ভারতেও অনেক বিশেষজ্ঞ সন্দিহান ছিলেন। তবে কলকাতা বন্দরকে বাঁচানোর যুক্তিটা এতটাই প্রবল ছিল যে সেই সব আপত্তি বিশেষ ধোপে টেকেনি। বিবিসির বাংলায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সেচ বিভাগের একজন শীর্ষস্থানীয় প্রকৌশলী, কপিল ভট্টাচার্য ফারাক্কার বিরোধিতা করে সরকারি চাকরিও ছেড়েছিলেন। ফারাক্কা প্রকল্প কেন বিপজ্জনক, তার পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি অনেক লেখালেখিও করেছেন। পরবর্তী জীবনে কপিল ভট্টাচার্য অ্যাক্টিভিস্টে পরিণত হন, যুক্ত ছিলেন মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআরের সঙ্গেও। ১৯৮৯ সালে মি ভট্টাচার্যের মৃত্যুর ২৭ বছর পর, ২০১৬ সালে বিহারের রাজ্য সরকার ফারাক্কা বাঁধ ‘তুলে দেওয়ার জন্য’ কেন্দ্রের কাছে আনুষ্ঠানিক দাবি জানায়। তখন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করে যুক্তি দিয়েছিলেন, ফারাক্কার জন্যই তার রাজ্য প্রতি বছর বন্যায় ভেসে যাচ্ছে অতএব বাঁধটাই তুলে দেওয়া হোক! নীতীশ কুমার তখন প্রকাশ্যেই সাংবাদিকদের বলেছিলেন, গঙ্গায় খুব বেশি পলি পড়ছে বলেই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আর যখন থেকে ফারাক্কা বাঁধ তৈরি হয়েছে তখন থেকেই এই অবস্থা। নইলে আগে নদীর প্রবাহের সঙ্গে অনেকটা পলি বঙ্গোপসাগরে চলে যেত, সমুদ্রে গিয়ে মিশত। দশ-বারো বছর ধরে ফারাক্কার ‘প্যাটার্ন’ স্টাডি করেই এ মন্তব্য করছেন, তখন এ কথাও জানিয়েছিলেন তিনি।
এদিকে ফারাক্কার প্রভাবে প্রতি বছরে শুষ্ক মৌসুমের শুরুতে বাংলাদেশের পদ্মা নদীতে চরের বিস্তার নিয়মিত ঘটনা। এর পাশাপাশি গঙ্গা-পদ্মার শাখা-প্রশাখাসহ প্রায় শতাধিক নদ-নদী ক্রমান্বয়ে মৃত খালে রূপ নিচ্ছে। ইদানিং শুষ্ক মৌসুম শুরু হতে না হতেই গঙ্গা-পদ্মার প্রবাহ আশঙ্কাজনকভাবে কমতে দেখা যাচ্ছে। পদ্মা একটি মরা নদীতে রূপ নিয়েছে। বুক চিরে চলাচল করছে বালুবাহী ট্রাক, গরু-মহিষের গাড়ি। গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যর দাবীতে মওলানা ভাসানী ১৯৭৬ সালের এই দিনে লাখ লাখ জনতাকে নিয়ে ফারক্কা অভিমুখী লং মার্চ করেন। ১৬ মে দুপুরে রাজশাহীর মাদ্রাসা ময়দান থেকে শুরু হয়ে ৬৪ কিলোমিটার লং মার্চ। শেষ হয় পরদিন বিকেলে কানসাটে।
সর্বশেষ জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের পর ভারত ত্রিপুরার ডাম্বুর জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বাঁধ খুলে দিয়ে বাংলাদেশের দক্ষিণ অঞ্চলের ৫টি জেলাকে বন্যায় ভাসিয়ে দেয়। এর পর রয়েছে এই অঞ্চলে টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের হুমকি। হুমকি রয়েছে ব্রক্ষপুত্র নদের পানি নিয়েও। আন্তঃ নদী সংযোগ প্রকল্পের আওতায় ব্রক্ষপুত্র নদ ভারতের আগ্রাধিকার প্রকল্প। এটা করা হলে বাংলাদেশে বিশাল পরিবেশ বিপর্যয় হবে। সমুদ্রের লবনাক্ততা পদ্মার গোয়ালন্দ, মধুমতির কুমারখালী, ধলেশ্বরীর মানিকগঞ্জ ও মেঘনার ভৈরব ছাড়িয়ে যাবে। সমগ্র যমুনা নদীর নাব্যতা হারিয়ে যাবে। সারাদেশের নদী ও অভ্যন্তরীণ জলাভূমির প্রায় অর্ধেক এলাকার জীববৈচিত্র ধ্বংস হয়ে যাবে। মিষ্টি পানির অভাবে দেশের অর্ধেক এলাকার ভূ-তল জীব এবং জনজীবন মহাবিপদের মুখে পড়বে। মোহনা এলাকার জীববৈচিত্র, মৎস্য ও পনিসম্পদ বিপর্যস্ত হবে।
ভারত শুধু বাংলাদেশ নয়, অন্যান্য প্রতিবেশী দেশগুলোর বিরুদ্ধেও পানিযুদ্ধ শুরু করেছে। সর্বশেষ কাশ্মিরের পেহেলগামের জঙ্গি নাটকের পর ভারত পাকিস্তানের সাথে সম্পাদিত সিন্ধু নদীর পানি চুক্তি স্থগিত করে বলেছে, পাকিস্তানকে এক ফোঁটাও পানি দেওয়া হবে না। শুধু বলেই ক্ষান্ত হয়নি, এই লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। চেনাব নদীর পানি প্রবাহ কমিয়ে দিয়েছে। চেনাব নদীর জম্মু অংশে চন্দ্রভাগা নদীর ওপর নির্মিত বাগলিহার জল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে পানি আটকে দিয়েছে। সেই সাথে ঘোষণা দিয়েছে, ঝিলাম নদীর পানি প্রবাহও কমিয়ে দেওয়া হবে। উত্তর কাশ্মিরে ঝিলাম নদীর ওপর বিশালগঙ্গা বাঁধ আছে ভারতের। এছাড়া ইরাবতি, বিপাশা ও শতদ্রæর পানি প্রবাহ কমিয়ে দেওয়ার ফন্দি-ফিকির করছে ভারত। সেইসাথে বাঁধের আটকানো পানি ছেড়ে দিয়ে ইতিমধ্যে আজাদ কাশ্মিরের বিপুল এলাকা বন্যায় ডুবিয়ে দিয়েছে। ত্রিপুরার ডাম্বুর বাঁধের পানি ছেড়ে গত বছর যেভাবে বাংলাদেশর কয়েকটি জেলাকে বন্যায় ডুবিয়ে দেয় ঠিক সেইভাবে। ভারতের এই পানিযুদ্ধ, পানি আগ্রাসন এখন কার্যত পানিসন্ত্রাসে রূপ নিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন ভারতের এই পনিযুদ্ধ, পানিসন্ত্রাস রুখতে হলে ফারাক্কা লং মার্চের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বজ্রকণ্ঠে আওয়াজ তুলতে হবে পানিসন্ত্রাস রুখে দাও। দিতে হবে। ভারতের বিরুদ্ধে সব প্রতিবেশীকে ঐক্যবদ্ধ করে দুনিয়াব্যাপী সোচ্চার হতে হবে। সোচ্চার হতে হবে সন্ত্রাসবাদ রুখে দাও, দিতে হবে। আর্ন্তজাতিক ফারাক্কা কমিটি ইতিমধ্যেই এই কাজ অনেকটা এগিয়ে নিয়েছে। এই কমিটি আমেরিকা, কানাডাসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সভা-সমাবেশ, সেমিনার করে ভারতের পানিযুদ্ধের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলছে। এখন এ বিষয়ে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। সেই সাথে নিতে হবে জনউদ্যোগ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অভিন্ন নদীর পানি সমস্যা শুধু বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বি-পাক্ষিক আলোচনায় সমাধান সম্ভব নয়। আন্তর্জাতিক নদীর পানি সুষ্ঠু ব্যবহারের স্বার্থে জাতিসংঘ ও বিশ্বব্যাংকের তত্ত¡াবধানে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, চীন, ভুটান ও মিয়ানমারকে নিয়ে একটি আঞ্চলিক পানি ফোরাম বা নদী কমিশন গঠন করতে হবে। কমিশন এ অঞ্চলের নদী অববাহিকাতে পানির সুষম বণ্টন, পরিবেশ সংরক্ষণসহ নদী তীরবর্তী জনপদগুলোর আর্থিক ও জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
সমস্যা সমাধানে ভারতকে প্রতিনিয়ত চাপ সৃষ্টি করতে হবে, যেন শুষ্ক মৌসুমে পানির প্রবাহ সচল থাকে। এক্ষেত্রে শক্তিশালী ঐক্যের প্রয়োজন। ভারত বাংলাদেশের ন্যায্য আহবানে সাড়া না দিলে এ দেশের মানুষ ও প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষার স্বার্থে শক্তিশালী বন্ধু দেশের পরামর্শ ও সহযোগিতা গ্রহণে সচেষ্ট হতে হবে। গঙ্গা, তিস্তা ও বরাকসহ সকল অভিন্ন নদীর পানি প্রত্যাহারের ফলে এখন অবধি বাংলাদেশের আর্থিক কত ক্ষতি হয়েছে, তা বিশেষজ্ঞ কমিটি দ্বারা নিরূপণ করে ভারতের কাছে অবিলম্বে ক্ষতিপূরণ দাবি করতে হবে। (দৈনিক সংগ্রাম)