নিউইয়র্ক ০৯:৪১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়া ঠেকানোর নতুন কৌশল

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৪:৩২:৩৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৩
  • / ৬৭ বার পঠিত

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বাংলাদেশ ডেস্ক : বিএনপি ও আরো কিছু বিরোধী দল নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্তে থাকায় নতুন কৌশল নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এবার এক আসনে নিজেদের একাধিক প্রার্থী রাখার সুযোগ রেখেছে ক্ষমতাসীন দলটি৷ কৌশলটা ভোটের লড়াইয়ে কতটা সুফল দিতে পারে? বিপদের আশঙ্কাই বা কতটুকু?

শুরুতে বলা হয়েছিল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে যারা পাবেন না তারা আর প্রার্থী হতে পারবেন না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা ডামি প্রার্থীর সিদ্ধান্ত দেয়ায় আওয়ামী লীগ থেকে যেন ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থীর ঢল নেমেছে।

রবিবার বিকালে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মনোয়ন প্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করেন। সেদিন সকালে মনোনয়ন প্রার্থীদের সঙ্গে মত বিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী এবং দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে তিনি নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও উৎসবমূখর করার নির্দেশনা দেন। এজন্য তিনি যা করতে বলেন তা হলো:

১. বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা বা বিনা ভোটে কেউ পাশ করতে পারবেন না। আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের ডামি প্রার্থী রাখতে হবে।

২. স্বতন্ত্র এবং বিদ্রোহী প্রার্থীদের সহযোগিতা করতে হবে। তাদের উৎসাহিত করতে হবে। আওয়ামী লীগে বিদ্রোহী প্রার্থী হতে কোনো বাধা নেই।

৩. অন্য দলের প্রার্থীদেরও সহযোগিতা ও উৎসাহ দিতে হবে।

আওয়ামী লীগ থেকে ৩০০ আসনে এবার মনোনয়ন চেয়েছিলেন তিন হাজার ৩৬২ জন। প্রতি আসনে গড়ে প্রার্থী ছিলেন ১১ জন। এর মধ্যে ২৯৮ আসনে মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়েছে। ফলে বিপুল সংখ্যক প্রার্থী মনোনয়ন না পেয়ে যেমন হতাশ হয়েছেন, তেমনি প্রধানমন্ত্রীর কথায় ‘স্বতন্ত্র’ বা ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হতে উৎসাহিতও হয়েছেন। এখন এমন কোনো আসন নেই যেখানে আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় প্রার্থী নেই। কোনো কোনো আসনে একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থীও আছেন। ৩০ নভেম্বর নির্বাচন কমিশনে মনোনয়ন পত্র দাখিলের শেষ দিন। ওই দিন পার হলে বোঝা যাবে এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব মিলিয়ে কতজন প্রার্থী হবেন।

শুরুতে বলা হয়েছিল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে যারা পাবেন না তারা আর প্রার্থী হতে পারবেন না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা ডামি প্রার্থীর সিদ্ধান্ত দেয়ায় আওয়ামী লীগ থেকে যেন ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থীর ঢল নেমেছে।

ফরিদপুর-৩ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও এফবিসিসিআই-এর সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ। এই আসনে ১১ জন মনোনয়ন চেয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক। এ কে আজাদ বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যারা দলের মনোনয়ন চেয়েছেন, তারা সবাই আওয়ামী লীগের লোক। যারা মনোনয়ন পায়নি, তারা যদি নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন, তাহলে দলের আপত্তি নেই। উৎসাহ দেয়ার কথা বলেছেন। বলেছেন, ‘‘নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে এবং কারুর প্রতি পক্ষপাতিত্ব হবে না। আমার সঙ্গে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মী ছাড়াও কেন্দ্রীয় নেতারাও আছেন। ”

তার কথা, “ফরিদপুরের শিল্প, শিক্ষা এবং কর্মসংস্থানে আমার কিছু বিশেষ পরিকল্পনা আছে। এরইমধ্যে আমি বেশ কিছু কাজ করেছি। আরো কাজ করার জন্য নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছি।”

আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের যে সংজ্ঞা দিয়েছেন, সেটার প্রতিফলন ঘটাতে চান এবার নির্বাচনে। তিনি বলেছেন, “সব দল বিষয় নয়, জনগণ নির্বাচনে অংশ নিলেই নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে।” তাই এবার নতুন কৌশল নেয়া হয়েছে। যদি প্রার্থী বেশি হয়, পপুলার প্রার্থী মাঠে থাকে, তাহলে ভোটার উপস্থিতিও বেশি হবে। কারণ, এবারের নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রে ভোটাররের উপস্থিতিই আওয়ামী লীগের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।”

আর আওয়ামী লীগের ডামি প্রার্থী রাখার নির্দেশের কারণ কারো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বা বিনা ভোটে নির্বচিত হওয়ার আশঙ্কা দূরে রাখা। ২০১৪ সালের নির্বাচনে ৩০০ আসনের অর্ধেকের বেশি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিনা ভোটে নির্বাচিত হন, এবার যেন সেই পরিস্থিতি না হয়।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, “এবার নির্বাচনে আওয়ামী লীগ একটি নতুন রাজনৈতিক কৌশল নিয়েছে। সেই কৌশলের পুরোটা তো প্রকাশ করা যাবে না। তবে তার উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা যায়। আমরা এবার চাই নির্বাচন যেন উৎসবমূখর পরিবেশে হয়। নির্বাচনে প্রার্থী যত বেশি হবে ভোটারদের নির্বাচনে আগ্রহ তত বাড়বে। ভোট কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি তত বাড়বে। আমরা চাই ভোটাররা যাতে ভোট কেন্দ্রে যায়।”

তবে সভানেত্রীর কাছ থেকে সবুজ সঙ্কেত পেয়েই আওয়ামী লীগের ডামি প্রার্থী হওয়াদের কারণে তৃণমূলে কোন্দল এবং নির্বাচনের সময় সংঘাত, সংঘর্ষের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

মনোনয়ন ঘোষণার পর দেশের কয়েকটি এলাকায় হামলা ও সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। তবে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ধুলিশহর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মিজানুর রহমান মনে করেন, “স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে বাধা না থাকলেও শেখ হাসিনা তো নৌকার প্রার্থীদের জন্য ভোট চাইবেন। সেভাবে নির্দেশনাও আসবে। স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সেটা বুঝতে হবে। আশা করি সংঘাত হবে না।”

আর মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ” আশা করি, দলের স্থানীয় পর্যায়ে কোন্দল বা সংঘাত হবে না। আমাদের নজর থাকবে।”

তবে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে ফেসবুক লাইভ করে আলোচিত হবিগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়েও প্রার্থী হওয়া ব্যারিস্টার সৈয়দ ছায়েদুল হক সুমন বলেন, “সংঘাত- সংঘর্ষের আশঙ্কা থাকলেও আমি প্রধানমন্ত্রী, নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের কথায় আস্থা রাখতে চাই। তারা বলেছেন, নির্বাচন নিরপেক্ষ ও পক্ষপাতহীন হবে। আর আমরা নির্বচিত হলে তো আওয়ামী লীগেরই থাকবো।”

ব্যারিস্টার সুমন যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা। এবার তিনি আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চেয়ে পাননি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন,” আমি তো নৌকার প্রার্থী। মনোনয়ন পাইনি। প্রধানমন্ত্রী স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দিয়েছেন। আমি সেই সুযোগ নিয়েছি। আরো অনেকেই নিচ্ছেন। যদি ঠিকমতো ভোট হয়, তাহলে এবার জানা যাবে আওয়ামী লীগ যাদের মনোনয়ন দেয় তারা পপুলার, না দলে তার বাইরেও আরো পপুলার প্রার্থী আছে। আমার মনে হয়, অনেক পপুলার প্রার্থী, যারা মনোনয়ন পাননি, তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন। বিএনপি নির্বাচনে না থাকলেও পপুলার প্রার্থীদের কারণে নির্বাচন জমে যাবে।”

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, “এবারের নির্বাচনে একটি অভিনব পরিস্থিতি আমরা দেখতে পাচ্ছি। বিএনপিসহ তাদের সমমনা দলগুলো নির্বাচনে নেই। ফলে এবার দলীয়ভাবেই আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগের মধ্যে নির্বাচনকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। তাতে হয়ত নৌকা প্রতীক আর স্বতন্ত্র মিলিয়ে আওয়ামী লীগেরই এক আসনে একাধিক প্রার্থী থাকবে। কিন্তু এটা তো নদীর স্বাভাবিক গতি নয়। গতি আনার চেষ্টা। সব দল নির্বাচনে থাকলে তার উত্তেজনা, আগ্রহ আলাদা। এভাবে নির্বাচনে সাধারণ মানুষের আগ্রহ বাড়বে কিনা তা নির্বাচন হলেই দেখা যাবে।”

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, “এবার এই একাধিক প্রার্থী নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে আওয়ামী লীগের কোন্দল ও সংঘাত ঠেকানো যাবে বলে মনে হয় না। আমরা স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও দেখেছি সংঘাত হয়েছে।” তার কথা, “গত ১৫ বছরে ভোট, রাজনীতি কেমন যেন হয়ে গেছে। সব দল নির্বাচনে এলে অনেক ভালো প্রার্থী পাওয়া যায়। ভোটারদের আগ্রহ থাকে। এবার এই অভিনব পরিস্থিতিতে কী ফল আসে দেখা যাক।” সূত্র : DW

হককথা/নাছরিন

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়া ঠেকানোর নতুন কৌশল

প্রকাশের সময় : ০৪:৩২:৩৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৩

বাংলাদেশ ডেস্ক : বিএনপি ও আরো কিছু বিরোধী দল নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্তে থাকায় নতুন কৌশল নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এবার এক আসনে নিজেদের একাধিক প্রার্থী রাখার সুযোগ রেখেছে ক্ষমতাসীন দলটি৷ কৌশলটা ভোটের লড়াইয়ে কতটা সুফল দিতে পারে? বিপদের আশঙ্কাই বা কতটুকু?

শুরুতে বলা হয়েছিল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে যারা পাবেন না তারা আর প্রার্থী হতে পারবেন না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা ডামি প্রার্থীর সিদ্ধান্ত দেয়ায় আওয়ামী লীগ থেকে যেন ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থীর ঢল নেমেছে।

রবিবার বিকালে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মনোয়ন প্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করেন। সেদিন সকালে মনোনয়ন প্রার্থীদের সঙ্গে মত বিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী এবং দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে তিনি নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও উৎসবমূখর করার নির্দেশনা দেন। এজন্য তিনি যা করতে বলেন তা হলো:

১. বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা বা বিনা ভোটে কেউ পাশ করতে পারবেন না। আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের ডামি প্রার্থী রাখতে হবে।

২. স্বতন্ত্র এবং বিদ্রোহী প্রার্থীদের সহযোগিতা করতে হবে। তাদের উৎসাহিত করতে হবে। আওয়ামী লীগে বিদ্রোহী প্রার্থী হতে কোনো বাধা নেই।

৩. অন্য দলের প্রার্থীদেরও সহযোগিতা ও উৎসাহ দিতে হবে।

আওয়ামী লীগ থেকে ৩০০ আসনে এবার মনোনয়ন চেয়েছিলেন তিন হাজার ৩৬২ জন। প্রতি আসনে গড়ে প্রার্থী ছিলেন ১১ জন। এর মধ্যে ২৯৮ আসনে মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়েছে। ফলে বিপুল সংখ্যক প্রার্থী মনোনয়ন না পেয়ে যেমন হতাশ হয়েছেন, তেমনি প্রধানমন্ত্রীর কথায় ‘স্বতন্ত্র’ বা ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হতে উৎসাহিতও হয়েছেন। এখন এমন কোনো আসন নেই যেখানে আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় প্রার্থী নেই। কোনো কোনো আসনে একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থীও আছেন। ৩০ নভেম্বর নির্বাচন কমিশনে মনোনয়ন পত্র দাখিলের শেষ দিন। ওই দিন পার হলে বোঝা যাবে এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব মিলিয়ে কতজন প্রার্থী হবেন।

শুরুতে বলা হয়েছিল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে যারা পাবেন না তারা আর প্রার্থী হতে পারবেন না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা ডামি প্রার্থীর সিদ্ধান্ত দেয়ায় আওয়ামী লীগ থেকে যেন ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থীর ঢল নেমেছে।

ফরিদপুর-৩ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও এফবিসিসিআই-এর সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ। এই আসনে ১১ জন মনোনয়ন চেয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক। এ কে আজাদ বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যারা দলের মনোনয়ন চেয়েছেন, তারা সবাই আওয়ামী লীগের লোক। যারা মনোনয়ন পায়নি, তারা যদি নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন, তাহলে দলের আপত্তি নেই। উৎসাহ দেয়ার কথা বলেছেন। বলেছেন, ‘‘নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে এবং কারুর প্রতি পক্ষপাতিত্ব হবে না। আমার সঙ্গে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মী ছাড়াও কেন্দ্রীয় নেতারাও আছেন। ”

তার কথা, “ফরিদপুরের শিল্প, শিক্ষা এবং কর্মসংস্থানে আমার কিছু বিশেষ পরিকল্পনা আছে। এরইমধ্যে আমি বেশ কিছু কাজ করেছি। আরো কাজ করার জন্য নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছি।”

আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের যে সংজ্ঞা দিয়েছেন, সেটার প্রতিফলন ঘটাতে চান এবার নির্বাচনে। তিনি বলেছেন, “সব দল বিষয় নয়, জনগণ নির্বাচনে অংশ নিলেই নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে।” তাই এবার নতুন কৌশল নেয়া হয়েছে। যদি প্রার্থী বেশি হয়, পপুলার প্রার্থী মাঠে থাকে, তাহলে ভোটার উপস্থিতিও বেশি হবে। কারণ, এবারের নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রে ভোটাররের উপস্থিতিই আওয়ামী লীগের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।”

আর আওয়ামী লীগের ডামি প্রার্থী রাখার নির্দেশের কারণ কারো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বা বিনা ভোটে নির্বচিত হওয়ার আশঙ্কা দূরে রাখা। ২০১৪ সালের নির্বাচনে ৩০০ আসনের অর্ধেকের বেশি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিনা ভোটে নির্বাচিত হন, এবার যেন সেই পরিস্থিতি না হয়।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, “এবার নির্বাচনে আওয়ামী লীগ একটি নতুন রাজনৈতিক কৌশল নিয়েছে। সেই কৌশলের পুরোটা তো প্রকাশ করা যাবে না। তবে তার উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা যায়। আমরা এবার চাই নির্বাচন যেন উৎসবমূখর পরিবেশে হয়। নির্বাচনে প্রার্থী যত বেশি হবে ভোটারদের নির্বাচনে আগ্রহ তত বাড়বে। ভোট কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি তত বাড়বে। আমরা চাই ভোটাররা যাতে ভোট কেন্দ্রে যায়।”

তবে সভানেত্রীর কাছ থেকে সবুজ সঙ্কেত পেয়েই আওয়ামী লীগের ডামি প্রার্থী হওয়াদের কারণে তৃণমূলে কোন্দল এবং নির্বাচনের সময় সংঘাত, সংঘর্ষের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

মনোনয়ন ঘোষণার পর দেশের কয়েকটি এলাকায় হামলা ও সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। তবে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ধুলিশহর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মিজানুর রহমান মনে করেন, “স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে বাধা না থাকলেও শেখ হাসিনা তো নৌকার প্রার্থীদের জন্য ভোট চাইবেন। সেভাবে নির্দেশনাও আসবে। স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সেটা বুঝতে হবে। আশা করি সংঘাত হবে না।”

আর মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ” আশা করি, দলের স্থানীয় পর্যায়ে কোন্দল বা সংঘাত হবে না। আমাদের নজর থাকবে।”

তবে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে ফেসবুক লাইভ করে আলোচিত হবিগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়েও প্রার্থী হওয়া ব্যারিস্টার সৈয়দ ছায়েদুল হক সুমন বলেন, “সংঘাত- সংঘর্ষের আশঙ্কা থাকলেও আমি প্রধানমন্ত্রী, নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের কথায় আস্থা রাখতে চাই। তারা বলেছেন, নির্বাচন নিরপেক্ষ ও পক্ষপাতহীন হবে। আর আমরা নির্বচিত হলে তো আওয়ামী লীগেরই থাকবো।”

ব্যারিস্টার সুমন যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা। এবার তিনি আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চেয়ে পাননি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন,” আমি তো নৌকার প্রার্থী। মনোনয়ন পাইনি। প্রধানমন্ত্রী স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দিয়েছেন। আমি সেই সুযোগ নিয়েছি। আরো অনেকেই নিচ্ছেন। যদি ঠিকমতো ভোট হয়, তাহলে এবার জানা যাবে আওয়ামী লীগ যাদের মনোনয়ন দেয় তারা পপুলার, না দলে তার বাইরেও আরো পপুলার প্রার্থী আছে। আমার মনে হয়, অনেক পপুলার প্রার্থী, যারা মনোনয়ন পাননি, তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন। বিএনপি নির্বাচনে না থাকলেও পপুলার প্রার্থীদের কারণে নির্বাচন জমে যাবে।”

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, “এবারের নির্বাচনে একটি অভিনব পরিস্থিতি আমরা দেখতে পাচ্ছি। বিএনপিসহ তাদের সমমনা দলগুলো নির্বাচনে নেই। ফলে এবার দলীয়ভাবেই আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগের মধ্যে নির্বাচনকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। তাতে হয়ত নৌকা প্রতীক আর স্বতন্ত্র মিলিয়ে আওয়ামী লীগেরই এক আসনে একাধিক প্রার্থী থাকবে। কিন্তু এটা তো নদীর স্বাভাবিক গতি নয়। গতি আনার চেষ্টা। সব দল নির্বাচনে থাকলে তার উত্তেজনা, আগ্রহ আলাদা। এভাবে নির্বাচনে সাধারণ মানুষের আগ্রহ বাড়বে কিনা তা নির্বাচন হলেই দেখা যাবে।”

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, “এবার এই একাধিক প্রার্থী নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে আওয়ামী লীগের কোন্দল ও সংঘাত ঠেকানো যাবে বলে মনে হয় না। আমরা স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও দেখেছি সংঘাত হয়েছে।” তার কথা, “গত ১৫ বছরে ভোট, রাজনীতি কেমন যেন হয়ে গেছে। সব দল নির্বাচনে এলে অনেক ভালো প্রার্থী পাওয়া যায়। ভোটারদের আগ্রহ থাকে। এবার এই অভিনব পরিস্থিতিতে কী ফল আসে দেখা যাক।” সূত্র : DW

হককথা/নাছরিন