বিজয়ের মাস ডিসেম্বর শুরু

- প্রকাশের সময় : ১২:১৭:৫৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২ ডিসেম্বর ২০২০
- / ১৪৬ বার পঠিত
হককথা ডেস্ক: আজ ১ ডিসেম্বর। শুরু হলো মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বিজয়ের মাস। ১৯৭১ সালের এই মাসেই অর্জিত হয় মহান স্বাধীনতা। ভারতের সহযোগিতায় পাকিস্তানকে পর্যুদস্ত করে অর্জিত এ বিজয় ছিল আনন্দ ও গৌরবের। একই সঙ্গে ছিল প্রিয়জন হারানো শোকের। যা ত্রিশ লাখ শহীদ আর দু’লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সাক্ষর। করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঝুঁকির কারণে এবার দেশ ও প্রবাসে সীমিত পরিসরে পালিত হবে কর্মসূচি। বাংলাদেশের সুদীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাসে শ্রেষ্ঠতম ঘটনা ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ। ‘জাতির জনক’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামের এক ঐতিহাসিক ঘটনার মধ্য দিয়ে বাঙালী জাতির কয়েক হাজার বছরের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বপ্নসাধ পূরণ হয় এ মাসে। এ মাসের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালী জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন মুক্তিযুদ্ধের অবিস্মরণীয় গৌরবদীপ্ত চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়।
স্বাধীন জাতি হিসেবে সমগ্র বিশ্বে আত্মপরিচয় লাভ করে বাঙালীরা। অর্জন করে নিজস্ব ভূ-খন্ড। সবুজের বুকে লাল সূর্য খচিত জাতীয় পতাকা। আর এই স্বাধীনতা অর্জনে বিজয়ের মাসে আরো যাঁদের নাম স্মরণ করতেই হয় তাঁরা হলেন- বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা, মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান, স্বাধীনতার সেনাপ্রধান আতাউল গণি ওসমানী (এম এ জি ওসমানী), মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ প্রমুখ-কে।
ইতিহাস বলে- ৫২’র বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের পথ ধরেই এগিয়ে যায় বাঙালীদের স্বাধীনতার আন্দোলন। ১৯৫৮ সালে মওলানা ভাসানী পাকিস্তানীদের প্রথম ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলে বিদায় জানানোর পর ৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভূমিধ্বস বিজয়ের পরও তাৎকালীন ইয়াহিয়া সরকার ক্ষমতা হস্তান্তর না করার পর ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ডাক দিয়েছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। ঐতিহাসিক সেই ভাষণে উদ্দীপ্ত বাঙালী জাতি সেদিন দৃঢ় শপথ নিয়েছিল স্বাধীনতা অর্জনের। ২৫ মার্চের নির্মম নৃশংস হত্যাকান্ডের পর তারা রুখে দাঁড়িয়েছিল শোষণের বিরুদ্ধে। এক সাগর রক্ত, ৩০ লাখ প্রাণ আর দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে বীর বাঙালী বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল ১৬ ডিসেম্বর। তবে এ মাসের প্রতিটি দিনই ছিল ঘটনাবহুল। স্বাধীনতাকামী বাঙালির হৃদয়ে বৈজয়ন্তী উড়িয়ে এসেছিল সেই সোনাঝরা গৌরবের দিনগুলো।
১৯৭১ সালে ডিসেম্বরের শুরু থেকেই বাঙালী বীর সন্তানদের সঙ্গে যুদ্ধে একের পর এক পরাজিত হতে থাকে পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী। মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা আক্রমণ আর ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত যৌথ বাহিনীর জল, স্থল ও আকাশপথে সাঁড়াশি অভিযানের মুখে ক্রমাগত পরাজিত হতে থাকে তারা। হয়ে পড়ে দিশেহারা।
১৯৭১ সালের ১ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত দ্যা নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ভেতরে গেরিলা আক্রমণ অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর পদস্থ কর্মকর্তাদের নির্দেশে সেনাবাহিনী আরও ভয়াবহভাবে নিরীহ জনগণের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। বুড়িগঙ্গা নদীর অপর পারে জিঞ্জিরায় সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে একদিনেই হত্যা করা হয় ৮৭ জনকে। এ সময় বাঙালীর জন্মভূমি শত্রæমুক্ত করার লড়াইকে আড়ালে রাখতে পাক-ভারত যুদ্ধ শুরু হয়েছে বলে বেতারে ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান। কিন্তু সেদিন কোনো ষড়যন্ত্রই বাঙালীকে বিজয় অর্জন থেকে পিছিয়ে দিতে পারেনি। মাতৃভূমিকে হানাদারমুক্ত করতে তারা মরণপণ লড়াই চালিয়ে যান।
প্রাণ বাঁচাতে পাকিস্তানী হানাদাররা বীর বাঙালীর কাছে আত্মসমর্পণের পথ খুঁজতে থাকে। বাংলাদেশ দ্রæত মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয়ের দিকে এগিয়ে যায়। একপর্যায়ে সেই রেসকোর্স ময়দানেই পাকিস্তানী বাহিনী নতি স্বীকারে বাধ্য হয়। রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পথ বেয়ে আসে পরম কাংখিত স্বাধীনতা।
ইতিহাস আরো বলে- ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকেই মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা আক্রমণ আর ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনীর জল, স্থল আর আকাশপথে সাঁড়াশি আক্রমণের মুখে বর্বর পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর পরাজয়ের খবর চারদিক থেকে ভেসে আসতে থাকে। এ মাসেই স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার-আলবদর ও আল-শামসদের সহযোগিতায় দেশের মেধা, শ্রেষ্ঠ সন্তান-বুদ্ধিজীবী হত্যার নৃশংস হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠে। সমগ্র জাতিকে মেধাহীন করে দেয়ার এধরনের ঘৃণ্য হত্যাযজ্ঞের দ্বিতীয় কোনো নজির বিশ্বে নেই। ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) পাকিস্তানী বাহিনী আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। যেখান থেকে ৭ মার্চ স্বাধীনতার স্থপতি ‘জাতির পিতা’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম,’ বলে স্বাধীনতার ডাক দেন, সেখানেই পরাজয়ের দলিলে স্বাক্ষর করেন পাকিস্তানী জেনারেল নিয়াজী। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। আর জাতি অর্জন করে হাজার বছরের স্বপ্নের স্বাধীনতা।
ঢাকা থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, বিজয়ের মাস উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার সকালে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শিখা চিরন্তন চত্বরে সমাবেশ, শ্রদ্ধা নিবেদন ও শপথ গ্রহণের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি শাহজাহান খান এমপি’র নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, মুক্তিযোদ্ধা ঐক্যপরিষদ, মুক্তিযোদ্ধা ঐক্যজোট, মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদ, মুক্তিযোদ্ধা সংগ্রাম পরিষদসহ বিভিন্ন মুক্তিযোদ্ধা সংগঠন। সকাল ১০টায় সেগুনবাগিচাস্থ স্বাধীনতা ভবনে সম্মিলিত মুক্তিযোদ্ধা সংসদ আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ বরাবরের মতোই আজ ১ ডিসেম্বর দেশব্যাপী ‘মুক্তিযোদ্ধা দিবস’ পালন করবে।
অপরদিকে নিউইয়র্ক তথা উত্তর আমেরিকায় আগামী ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবস পালন উপলক্ষে প্রবাসী বাংলাদেশীদের উদ্যোগে শুরু হয়েছে নানা প্রস্তুতি।