বিএনপি নেতা হত্যার সাথে এমপি রানা ও ভাইয়েরা জড়িত!
- প্রকাশের সময় : ০৪:১৭:৫৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৯ ফেব্রুয়ারী ২০১৫
- / ৭৭৮ বার পঠিত
টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানার একের পর এক অপকর্ম এখন থলের বিড়ালের মতো বেড়িয়ে আসতে শুরু করেছে। এমপি রানা ও তার ভাইয়েরা যে কতো হিং¯্র তা এখন আর গোপন করার কিছু নেই। খান পরিবারের ৪ ভাইয়ের আধিপত্য বিস্তারের জন্য একের পর এক মারাত্মক ঘটনা সৃষ্টি করেছেন। ধর্ষণ, জমি দখল, নারী নির্যাতন থেকে শুরু করে হত্যার মতো জঘন্য অপরাধ করতে দিধা করেননি এমপি রানা ও তার ভাইয়েরা। খোদ নিজ দলীয় নেতাদেরও হত্যা করেছেন বলে জানা গেছে।
শুধু আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক আহমদ নন, এবার বেরিয়ে এলো টাঙ্গাইল সদর উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও দাইন্যা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম ফারুক হত্যাকান্ডের সাথে এমপি রানা ও তার ভাইদের সম্পৃক্ততার কথা। বহুল আলোচিত এই খান পরিবারের ছোট ছেলে ও এমপি রানার ভাই ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পার নির্দেশেই তার দেহরক্ষী শাহজাহান মিয়া আরও কয়েকজনকে সাথে নিয়ে ওই বিএনপি নেতা ফারুক চেয়ারম্যানকে হত্যা করেন। শাহজাহান মিয়া রিমান্ড শেষে গত ৫ ফেব্রুয়ারী বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় টাঙ্গাইল বিচারিক হাকিম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে এ কথা উল্লেখ করেছেন বলে টাঙ্গাইল গোয়েন্দা পুলিশের উপ পরিদর্শক (এসআই) অশোক কুমার সিংহ জানান।
এর আগে, টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগ নেতা মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমদ হত্যা মামলায় গ্রেফতারকৃত আসামি আনিসুল ইসলাম রাজা ও মোহাম্মদ আলী গত আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে আদালতে জবানবন্দি দেন। ওই সময় তারা জবানবন্দিতে ফারুক আহমদ হত্যাকান্ডে টাঙ্গাইল-৩ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা এবং তার অপর তিনভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি, ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান কাকন ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পা জড়িত থাকার বিষয়টি বের হয়ে আসে। এরপর থেকেই এই চার ভাই এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে রয়েছেন। তাদের গ্রেফতার করতে পুলিশ ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে একাধিক অভিযান চালিয়েছে।
টাঙ্গাইল গোয়েন্দা পুলিশের উপ পরিদর্শক (এসআই) অশোক কুমার সিংহ জানান, শাহজাহান মিয়াকে গত সোমবার শহরের কলেজপাড়া এলাকার ভাড়া বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরদিন গত মঙ্গলবার তাকে বিচারিক হাকিম আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। দু’দিনের জিজ্ঞাসাবাদেই শাহজাহান মিয়া আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হন। পরে গোয়েন্দা পুলিশ গত ৫ ফেব্রুয়ারী বৃহস্পতিবার তাকে আদালতে হাজির করে। জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম লুনা আক্তার শাহজাহান মিয়ার জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন।
আদালত সূত্র ও মামলার তদন্তের সাথে সংশ্লিষ্টরা জানান, শাহজাহান জবানবন্দিতে জানিয়েছেন, তিনি আগে নিষিদ্ধঘোষিত চরমপন্থী দলের সাথে যুক্ত ছিলেন। পরে এমপি রানার ছোট ভাই বাপ্পার দেহরক্ষী হিসেবে দায়িত্ব নেন। বাপ্পা তাকে দায়িত্ব দেন টাঙ্গাইল সদর উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও দাইন্যা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম ফারুককে হত্যার। বাপ্পার নির্দেশেই শাহজাহান তার আরও কয়েকজন সহযোগীকে সাথে নিয়ে ২০১৩ সালের ২০ ডিসেম্বর ভোরবেলা চেয়ারম্যান ফারুককে শহরের আকুরটাকুর এলাকার বটতলা বাজারে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করে। এ হত্যাকান্ডের জন্য বাপ্পা তাকে পাঁচ লাখ টাকা দিয়েছিলেন বলেও জবানবন্দিতে শাহজাহান উল্লেখ করেছেন।
বিএনপি নেতা ফারুক চেয়ারম্যানের মৃত্যুর পর তার ভাই লাবু মিয়া বাদী হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় গোয়েন্দা পুলিশকে। গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) অশোক কুমার সিংহ চাঞ্চল্যকর এই মামলাটি তদন্ত করছেন।
এ ব্যাপারে মামলার বাদী লাবু মিয়া জানান, তার ভাইয়ের হত্যা মামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে শাহজাহানের গ্রেফতার হওয়ার কথা শুনেছেন। স্বীকারোক্তি দেয়ার বিষয়ে কিছু জানেন না। তবে তদন্তকারীদের প্রতি তার পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে বলে তিনি জানান।
ফারুক চেয়ারম্যান নিহত হওয়ার পর তার ভাই এই মামলার বাদী আজাহারুল ইসলাম লাবু মিয়া উপ নির্বাচনে দাইন্যা ইউপির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
টাঙ্গাইল জেলা পুলিশ সুপার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, গ্রেফতারকৃত শাহজাহানের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে যাদের নাম এসেছে তাদের গ্রেফতারের জন্য ইতোমধ্যে কয়েকটি স্থানে অভিযান চালানো হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে এই মুহূর্তে জড়িতদের নাম প্রকাশ করা যাচ্ছেনা। (বাংলাদেশ প্রতিদিন)