নিউইয়র্ক ০৭:৫৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

বিএনপির রাজনীতি নড়বড়ে হয়ে গেছে : ড. সেলিম মাহমুদ

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১১:৫১:৪১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩ জুন ২০২৩
  • / ৯০ বার পঠিত

হককথা ডেস্ক: গত ২৪ মে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য নতুন ‘ভিসা নীতি’ ঘোষণা করেছে। ‘বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচনে উৎসাহ জোগাতে’ এই ঘোষণার পর দেশের রাজনীতিতে নানামুখী প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং বিরোধী দল বিএনপি ভিসা নীতি নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি নিয়ে সমকাল কথা বলেছে আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সমকালের সহ-সম্পাদক এহ্সান মাহমুদ।
প্রশ্ন : বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে স¤প্রতি নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নতুন ভিসা নীতিকে কীভাবে দেখছেন?
সেলিম মাহমুদ: আমেরিকা যে ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে, সেটাকে আসলে ভিসা নীতি হিসেবে দেখা যাবে না। বলা যায়, এটি বাংলাদেশের জন্য আমেরিকার ডি ফ্যাক্টো ফরেন পলিসি। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর থেকে বিএনপি এবং তাদের সমমনাদের যে রাজনীতি; আমেরিকার নতুন ভিসা নীতির ফলে সেটি অনেকটা নড়বড়ে হয়ে গেছে। চারটি কারণে বিএনপির অবস্থা নড়বড়ে হয়ে গেছে।
প্রশ্ন : কীভাবে নড়বড়ে হয়ে গেছে?
সেলিম মাহমুদ: প্রথমত, ২০১৮-এর নির্বাচনের পর বিএনপির রাজনীতির প্রধান দাবি ছিল তত্ত¡াবধায়ক সরকার। তত্ত¡াবধায়ক সরকারের দাবি মানা ছাড়া বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে তারা কোনো নির্বাচনে যাবে না। এই ভিসা নীতি চলে আসায় বিএনপির তত্ত¡াবধায়ক সরকারের দাবিটি হারিয়ে গেছে। ভিসা নীতিতে এমন কোনো কথা উল্লেখ নেই, যাতে মনে হতে পারে তারা তত্ত¡াবধায়ক সরকারের দাবি সমর্থন করেছে। স¤প্রতি ঢাকায় নিযুক্ত আমেরিকান রাষ্ট্রদূতের বাসায় লাঞ্চের আমন্ত্রণে গিয়েছিলাম। সেখানেও তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন, তত্ত¡াবধায়ক সরকার নিয়ে বিএনপির দাবি নিয়ে তাঁর কোনো বক্তব্য নেই।
প্রশ্ন : ভিসা নীতির মূলকথা তো বাংলাদেশে নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে সহায়তা করা।
সেলিম মাহমুদ: নির্বাচন ব্যবস্থাকে যারা নিয়ন্ত্রণ করতে চাইবে, তাদের প্রতি ভিসা নীতি প্রয়োগ করা হবে। সেই অনুসারে, যারা নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে হুমকি দেবে, ভোটদানকে বাধাগ্রস্ত করবে, তাদের জন্য আমেরিকার ভিসা বন্ধ হয়ে যাবে। ভিসা পলিসিতে এমন কোনো কথা লেখা নেইÑশেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হতে পারবে না। তাই আমি মনে করি, তত্ত¡াবধায়ক সরকারের দাবি নিয়ে বিএনপির আগামীতে বড় ধরনের আন্দোলনের সুযোগ নেই। বিগত কয়েক বছরে বিএনপির রাজনীতিতে একটি বিদেশনির্ভরতা দেখা গেছে। স্থানীয় সরকার থেকে শুরু করে এই সরকারের অধীনে বেশকিছু নির্বাচন বিএনপি বর্জন করেছে। এখন দেখা যাচ্ছে, তাদের প্রধান দাবি তত্ত¡াবধায়ক সরকার ব্যবস্থার প্রতি কোনো আন্তর্জাতিক সমর্থন নেই। এটি বিএনপির রাজনৈতিক পরাজয়।
প্রশ্ন : বিএনপি বলে আসছে, তাদের আন্দোলনের অংশ হিসেবে এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না…
সেলিম মাহমুদ: তারা দেশের জনগণের কাছে না গিয়ে, নির্বাচনে না গিয়ে বারবার বিদেশি রাষ্ট্রের কাছে যাচ্ছে। কিন্তু এখন দেখা গেল, বিদেশেও তাদের দাবির পক্ষে সমর্থন নেই।
প্রশ্ন : আমেরিকার নতুন ভিসা নীতি আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি কোনো চাপ কিনা?
সেলিম মাহমুদ: না। আমেরিকার নতুন ভিসা নীতি আমাদের জন্য কোনো চাপ নয়। বরং এটি আমাদের জন্য ভালো হয়েছে। অনেক সুবিধা হয়েছে।
প্রশ্ন : সুবিধাগুলো যদি বলেন…
সেলিম মাহমুদ: বিএনপি বলে আসছে, আওয়ামী লীগের অধীনে তারা নির্বাচন বর্জন এবং প্রতিহত করা হবে। সেখানে প্রতিহত করতে এলেই তো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা হবে। এই যে বিএনপির কথিত প্রতিরোধ বা প্রতিরোধ, তা আমরা ২০১৩-১৪ সালে দেখেছি। মানুষের জানমালের ওপর হামলা করা হয়েছে। আমেরিকা বা পশ্চিমা বিশ্ব এ ধরনের সহিংসতার বিরুদ্ধে সোচ্চার। রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া, যানবাহনে হামলা করা তো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকেই বাধা দেওয়া। আর আওয়ামী লীগ নির্বাচনমুখী রাজনৈতিক দল। ধরুন, এক দল ভালো ছাত্র। তারা সারাবছর ক্লাস করেছে, পড়াশোনা করেছে। বার্ষিক পরীক্ষায় তারা আনন্দের সঙ্গে অংশ নেবেÑএটাই স্বাভাবিক। এর বিপরীতে ক্লাসে অনুপস্থিত, ঠিকমতো পড়াশোনা করেনিÑতারাই কিন্তু পরীক্ষার রুটিন পেছানো, পরীক্ষা বানচালের চেষ্টা করে। এখন নির্বাচনের জন্য আমরা প্রস্তুত। বিএনপির তো প্রস্তুতি নেই।
প্রশ্ন : এর আগে র‌্যাবের কিছু সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তার প্রতি নিষেধাজ্ঞা এসেছিল যুক্তরাষ্ট্র থেকে। কেউ কেউ বলছেন, নতুন ভিসা নীতি তারই ধারাবাহিকতা। এটা আওয়ামী লীগের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ। আপনি কী মনে করেন?
সেলিম মাহমুদ: পরিষ্কারভাবে বলছি যে, ভিসা নীতি আওয়ামী লীগের জন্য কোনো চ্যালেঞ্জ নয়। এটি ক্ষমতাসীন কিংবা বিরোধী যে কোনো দলের জন্যই সমানভাবে প্রযোজ্য। তাই ভিসা নীতি আওয়ামী লীগের জন্য আলাদা কোনো বিষয় নয়। একটি তথ্য এখানে জানাতে চাই। তাহলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্কটা বোঝা সহজ হবে। ১৯৯৬ সালের আগে বাংলাদেশে মার্কিন বিনিয়োগ ছিল ২৫ মিলিয়ন ডলারের কম। সেই বিনিয়োগ এখন ২০ বিলিয়ন ডলারে এসে পৌঁছেছে। এটি সম্ভব হয়েছে একমাত্র অওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারণে। আবার আমাদের এখানে যে ব্যবহৃত গ্যাস, যার ৫৫ শতাংশ বিনিয়োগ হচ্ছে আমেরিকান কোম্পানি শেভরনের। বাকি ৪৫ শতাংশ হচ্ছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি পেট্রোবাংলার। এই যে এখানে আমেরিকার বিনিয়োগ, এটি হয়েছে শেখ হাসিনার সময়ে। ভিসা নীতির দিকে তাকালেও দেখা যাবে, এখানে সরকারকে কোনো খোঁচা দেওয়া হয়নি। এখন এখানকার পরিস্থিতি তো আমাদের নিয়ন্ত্রণে। বিএনপির যে প্রত্যাশা ছিলÑবড় ধরনের একটি স্যাংশন আসবে। এ জন্য তারা তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষা করেছিল। প্রয়োজনে দেশ ধ্বংস হয়ে যাক, বিনিময়ে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে- সেটি তো হচ্ছে না। পরিস্থিতি যদি এমন হতো, সরকার নিজেই বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রাখতে চায়; তাহলে ভিসা নীতি নিয়ে আওয়ামী লীগের ভাবনার দরকার ছিল। কিন্তু সরকার তো সব ঠিক করে রেখেছে; নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন সব তো নিয়ম মেনেই হচ্ছে। সরকারও চায় যে, বিএনপি নির্বাচনে আসুক। সবকিছু মিলিয়ে ভিসা নীতি আমাদের জন্য কোনো চ্যালেঞ্জ নয়।
প্রশ্ন : বিএনপি এই ভিসা নীতিকে আওয়ামী লীগের জন্য চাপ এবং দেশের জন্য লজ্জাজনক হিসেবে দেখছে।
সেলিম মাহমুদ: এটিকে আমি বাংলাদেশের জন্য, আমাদের জন্য লজ্জাজনক হিসেবে দেখছি না। একটা কথা বলি, ঢাকায় আমেরিকান রাষ্ট্রদূতের বাসায় আমাদের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের দেখা হয়েছিল। তাদের চেহারা দেখে মনে হয়েছেÑদে আর নট হ্যাপি, অ্যাট অল। তারা একটা বড় স্যাংশন আশা করেছিল। সেটি হয়নি। আবার, আমেরিকার নির্বাচনের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই, সেখানে ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনের ফল মেনে নেননি। সেখানে ক্যাপিটল হিলে হামলা হয়েছে। তাই এই পরিবর্তিত অবস্থাটাও বুঝতে হবে।
প্রশ্ন : দেশে যদি সুষ্ঠু নির্বাচনের অনুকূল পরিস্থিতি থাকত, তাহলে এ ধরনের নীতি ঘোষণা করার প্রয়োজন ছিল?
সেলিম মাহমুদ: না। এটি মনে করার কারণ নেই। তারা কাকে ভিসা দেবে, কাকে দেবে না, সেটি তাদের সিদ্ধান্ত। বিষয়টি এমন যে, আমেরিকান কোনো নাগরিক যদি পৃথিবীর যে কোনো দেশে গিয়ে কোনো দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকে; তাদের আইন অনুযায়ী বিচারের আওতায় আনা যাবে। ধরেন, ওই নাগরিক অপরাধ করল নাইজেরিয়া কিংবা পাকিস্তানে বসে। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার বিচার দেশেই করতে পারবে।
প্রশ্ন : বিএনপি বলছে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের কথা। আওয়ামী লীগ সরাসরি তা নাকচ করে দিচ্ছে। এতে আগামী নির্বাচন ঘিরে কোনো সহিংসতা দেখা দিতে পারে কিনা?
সেলিম মাহমুদ: বিএনপি ২০১৩-১৪ সালে নির্বাচন ভন্ডুল করার জন্য যে ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম করেছে, তার ফলে দেশের মানুষ কিন্তু তাদের পাশে দাঁড়ায়নি। এখন আগামী নির্বাচন আমরা সংবিধান অনুসারে করার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। দেশের মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করার অপেক্ষায় আছে। এমন সময়ে বিএনপি যদি নির্বাচনে না এসে ধ্বংসাত্মক কাজে নিজেদের নিয়োজিত রাখতে চায়, তাহলে দেশের জনগণ আবারও তাদের প্রত্যাখ্যান করবে। আবার এই ভিসা নীতির দিকে তাকাই, তাহলে বলতে পারি, আন্তর্জাতিকভাবেও তারা পাশে কাউকে পাবে না।

 

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

বিএনপির রাজনীতি নড়বড়ে হয়ে গেছে : ড. সেলিম মাহমুদ

প্রকাশের সময় : ১১:৫১:৪১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩ জুন ২০২৩

হককথা ডেস্ক: গত ২৪ মে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য নতুন ‘ভিসা নীতি’ ঘোষণা করেছে। ‘বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচনে উৎসাহ জোগাতে’ এই ঘোষণার পর দেশের রাজনীতিতে নানামুখী প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং বিরোধী দল বিএনপি ভিসা নীতি নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি নিয়ে সমকাল কথা বলেছে আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সমকালের সহ-সম্পাদক এহ্সান মাহমুদ।
প্রশ্ন : বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে স¤প্রতি নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নতুন ভিসা নীতিকে কীভাবে দেখছেন?
সেলিম মাহমুদ: আমেরিকা যে ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে, সেটাকে আসলে ভিসা নীতি হিসেবে দেখা যাবে না। বলা যায়, এটি বাংলাদেশের জন্য আমেরিকার ডি ফ্যাক্টো ফরেন পলিসি। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর থেকে বিএনপি এবং তাদের সমমনাদের যে রাজনীতি; আমেরিকার নতুন ভিসা নীতির ফলে সেটি অনেকটা নড়বড়ে হয়ে গেছে। চারটি কারণে বিএনপির অবস্থা নড়বড়ে হয়ে গেছে।
প্রশ্ন : কীভাবে নড়বড়ে হয়ে গেছে?
সেলিম মাহমুদ: প্রথমত, ২০১৮-এর নির্বাচনের পর বিএনপির রাজনীতির প্রধান দাবি ছিল তত্ত¡াবধায়ক সরকার। তত্ত¡াবধায়ক সরকারের দাবি মানা ছাড়া বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে তারা কোনো নির্বাচনে যাবে না। এই ভিসা নীতি চলে আসায় বিএনপির তত্ত¡াবধায়ক সরকারের দাবিটি হারিয়ে গেছে। ভিসা নীতিতে এমন কোনো কথা উল্লেখ নেই, যাতে মনে হতে পারে তারা তত্ত¡াবধায়ক সরকারের দাবি সমর্থন করেছে। স¤প্রতি ঢাকায় নিযুক্ত আমেরিকান রাষ্ট্রদূতের বাসায় লাঞ্চের আমন্ত্রণে গিয়েছিলাম। সেখানেও তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন, তত্ত¡াবধায়ক সরকার নিয়ে বিএনপির দাবি নিয়ে তাঁর কোনো বক্তব্য নেই।
প্রশ্ন : ভিসা নীতির মূলকথা তো বাংলাদেশে নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে সহায়তা করা।
সেলিম মাহমুদ: নির্বাচন ব্যবস্থাকে যারা নিয়ন্ত্রণ করতে চাইবে, তাদের প্রতি ভিসা নীতি প্রয়োগ করা হবে। সেই অনুসারে, যারা নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে হুমকি দেবে, ভোটদানকে বাধাগ্রস্ত করবে, তাদের জন্য আমেরিকার ভিসা বন্ধ হয়ে যাবে। ভিসা পলিসিতে এমন কোনো কথা লেখা নেইÑশেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হতে পারবে না। তাই আমি মনে করি, তত্ত¡াবধায়ক সরকারের দাবি নিয়ে বিএনপির আগামীতে বড় ধরনের আন্দোলনের সুযোগ নেই। বিগত কয়েক বছরে বিএনপির রাজনীতিতে একটি বিদেশনির্ভরতা দেখা গেছে। স্থানীয় সরকার থেকে শুরু করে এই সরকারের অধীনে বেশকিছু নির্বাচন বিএনপি বর্জন করেছে। এখন দেখা যাচ্ছে, তাদের প্রধান দাবি তত্ত¡াবধায়ক সরকার ব্যবস্থার প্রতি কোনো আন্তর্জাতিক সমর্থন নেই। এটি বিএনপির রাজনৈতিক পরাজয়।
প্রশ্ন : বিএনপি বলে আসছে, তাদের আন্দোলনের অংশ হিসেবে এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না…
সেলিম মাহমুদ: তারা দেশের জনগণের কাছে না গিয়ে, নির্বাচনে না গিয়ে বারবার বিদেশি রাষ্ট্রের কাছে যাচ্ছে। কিন্তু এখন দেখা গেল, বিদেশেও তাদের দাবির পক্ষে সমর্থন নেই।
প্রশ্ন : আমেরিকার নতুন ভিসা নীতি আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি কোনো চাপ কিনা?
সেলিম মাহমুদ: না। আমেরিকার নতুন ভিসা নীতি আমাদের জন্য কোনো চাপ নয়। বরং এটি আমাদের জন্য ভালো হয়েছে। অনেক সুবিধা হয়েছে।
প্রশ্ন : সুবিধাগুলো যদি বলেন…
সেলিম মাহমুদ: বিএনপি বলে আসছে, আওয়ামী লীগের অধীনে তারা নির্বাচন বর্জন এবং প্রতিহত করা হবে। সেখানে প্রতিহত করতে এলেই তো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা হবে। এই যে বিএনপির কথিত প্রতিরোধ বা প্রতিরোধ, তা আমরা ২০১৩-১৪ সালে দেখেছি। মানুষের জানমালের ওপর হামলা করা হয়েছে। আমেরিকা বা পশ্চিমা বিশ্ব এ ধরনের সহিংসতার বিরুদ্ধে সোচ্চার। রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া, যানবাহনে হামলা করা তো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকেই বাধা দেওয়া। আর আওয়ামী লীগ নির্বাচনমুখী রাজনৈতিক দল। ধরুন, এক দল ভালো ছাত্র। তারা সারাবছর ক্লাস করেছে, পড়াশোনা করেছে। বার্ষিক পরীক্ষায় তারা আনন্দের সঙ্গে অংশ নেবেÑএটাই স্বাভাবিক। এর বিপরীতে ক্লাসে অনুপস্থিত, ঠিকমতো পড়াশোনা করেনিÑতারাই কিন্তু পরীক্ষার রুটিন পেছানো, পরীক্ষা বানচালের চেষ্টা করে। এখন নির্বাচনের জন্য আমরা প্রস্তুত। বিএনপির তো প্রস্তুতি নেই।
প্রশ্ন : এর আগে র‌্যাবের কিছু সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তার প্রতি নিষেধাজ্ঞা এসেছিল যুক্তরাষ্ট্র থেকে। কেউ কেউ বলছেন, নতুন ভিসা নীতি তারই ধারাবাহিকতা। এটা আওয়ামী লীগের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ। আপনি কী মনে করেন?
সেলিম মাহমুদ: পরিষ্কারভাবে বলছি যে, ভিসা নীতি আওয়ামী লীগের জন্য কোনো চ্যালেঞ্জ নয়। এটি ক্ষমতাসীন কিংবা বিরোধী যে কোনো দলের জন্যই সমানভাবে প্রযোজ্য। তাই ভিসা নীতি আওয়ামী লীগের জন্য আলাদা কোনো বিষয় নয়। একটি তথ্য এখানে জানাতে চাই। তাহলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্কটা বোঝা সহজ হবে। ১৯৯৬ সালের আগে বাংলাদেশে মার্কিন বিনিয়োগ ছিল ২৫ মিলিয়ন ডলারের কম। সেই বিনিয়োগ এখন ২০ বিলিয়ন ডলারে এসে পৌঁছেছে। এটি সম্ভব হয়েছে একমাত্র অওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারণে। আবার আমাদের এখানে যে ব্যবহৃত গ্যাস, যার ৫৫ শতাংশ বিনিয়োগ হচ্ছে আমেরিকান কোম্পানি শেভরনের। বাকি ৪৫ শতাংশ হচ্ছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি পেট্রোবাংলার। এই যে এখানে আমেরিকার বিনিয়োগ, এটি হয়েছে শেখ হাসিনার সময়ে। ভিসা নীতির দিকে তাকালেও দেখা যাবে, এখানে সরকারকে কোনো খোঁচা দেওয়া হয়নি। এখন এখানকার পরিস্থিতি তো আমাদের নিয়ন্ত্রণে। বিএনপির যে প্রত্যাশা ছিলÑবড় ধরনের একটি স্যাংশন আসবে। এ জন্য তারা তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষা করেছিল। প্রয়োজনে দেশ ধ্বংস হয়ে যাক, বিনিময়ে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে- সেটি তো হচ্ছে না। পরিস্থিতি যদি এমন হতো, সরকার নিজেই বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রাখতে চায়; তাহলে ভিসা নীতি নিয়ে আওয়ামী লীগের ভাবনার দরকার ছিল। কিন্তু সরকার তো সব ঠিক করে রেখেছে; নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন সব তো নিয়ম মেনেই হচ্ছে। সরকারও চায় যে, বিএনপি নির্বাচনে আসুক। সবকিছু মিলিয়ে ভিসা নীতি আমাদের জন্য কোনো চ্যালেঞ্জ নয়।
প্রশ্ন : বিএনপি এই ভিসা নীতিকে আওয়ামী লীগের জন্য চাপ এবং দেশের জন্য লজ্জাজনক হিসেবে দেখছে।
সেলিম মাহমুদ: এটিকে আমি বাংলাদেশের জন্য, আমাদের জন্য লজ্জাজনক হিসেবে দেখছি না। একটা কথা বলি, ঢাকায় আমেরিকান রাষ্ট্রদূতের বাসায় আমাদের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের দেখা হয়েছিল। তাদের চেহারা দেখে মনে হয়েছেÑদে আর নট হ্যাপি, অ্যাট অল। তারা একটা বড় স্যাংশন আশা করেছিল। সেটি হয়নি। আবার, আমেরিকার নির্বাচনের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই, সেখানে ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনের ফল মেনে নেননি। সেখানে ক্যাপিটল হিলে হামলা হয়েছে। তাই এই পরিবর্তিত অবস্থাটাও বুঝতে হবে।
প্রশ্ন : দেশে যদি সুষ্ঠু নির্বাচনের অনুকূল পরিস্থিতি থাকত, তাহলে এ ধরনের নীতি ঘোষণা করার প্রয়োজন ছিল?
সেলিম মাহমুদ: না। এটি মনে করার কারণ নেই। তারা কাকে ভিসা দেবে, কাকে দেবে না, সেটি তাদের সিদ্ধান্ত। বিষয়টি এমন যে, আমেরিকান কোনো নাগরিক যদি পৃথিবীর যে কোনো দেশে গিয়ে কোনো দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকে; তাদের আইন অনুযায়ী বিচারের আওতায় আনা যাবে। ধরেন, ওই নাগরিক অপরাধ করল নাইজেরিয়া কিংবা পাকিস্তানে বসে। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার বিচার দেশেই করতে পারবে।
প্রশ্ন : বিএনপি বলছে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের কথা। আওয়ামী লীগ সরাসরি তা নাকচ করে দিচ্ছে। এতে আগামী নির্বাচন ঘিরে কোনো সহিংসতা দেখা দিতে পারে কিনা?
সেলিম মাহমুদ: বিএনপি ২০১৩-১৪ সালে নির্বাচন ভন্ডুল করার জন্য যে ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম করেছে, তার ফলে দেশের মানুষ কিন্তু তাদের পাশে দাঁড়ায়নি। এখন আগামী নির্বাচন আমরা সংবিধান অনুসারে করার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। দেশের মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করার অপেক্ষায় আছে। এমন সময়ে বিএনপি যদি নির্বাচনে না এসে ধ্বংসাত্মক কাজে নিজেদের নিয়োজিত রাখতে চায়, তাহলে দেশের জনগণ আবারও তাদের প্রত্যাখ্যান করবে। আবার এই ভিসা নীতির দিকে তাকাই, তাহলে বলতে পারি, আন্তর্জাতিকভাবেও তারা পাশে কাউকে পাবে না।