নিউইয়র্ক ০১:৫৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

বাড়তি চাপ নিতে পারছে না সরবরাহ লাইন, সব বদলাতে চায় তিতাস

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০১:০৭:৩৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৩
  • / ৩৩ বার পঠিত

বাংলাদেশ ডেস্ক :  রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশে জালের মতো ছড়িয়ে থাকা তিতাস গ্যাসের ৬০ শতাংশের বেশি পাইপলাইনের কারিগরি মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এসব বিতরণ লাইন এখন গ্যাসের বাড়তি চাপ নিতে পারছে না। পাইপলাইন ছিদ্র হয়ে গ্যাস বেরিয়ে যাচ্ছে। এতে গ্যাসের অপচয়ের সঙ্গে দুর্ঘটনার শঙ্কা এবং জীবনের ঝুঁকি বাড়ছে। দেশের সবচেয়ে বড় গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানি লিমিটেডের সংশ্লিষ্ট কারিগরি সূত্র জানায়, এই সরবরাহ লাইনগুলোর মেয়াদ ছিল ৩০ বছর। কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও ওই সব পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ করতে হচ্ছে। নতুন পাইপলাইন বসানো হচ্ছে না। গত বছর তিতাসের জরুরি নিয়ন্ত্রণকক্ষে ছয় হাজার ৮৬২টি অভিযোগ আসে। এর মধ্যে গ্যাসের পাইপলাইনে ছিদ্রের অভিযোগ ছিল চার হাজার ৮৯১টি।

একই বছর ঢাকার এক হাজার ৬৮২ কিলোমিটার পাইপলাইনের মান কোন পর্যায়ে আছে, তা জানতে জরিপ চালায় তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ। এতে পাইপলাইনের ওপরে ৯ হাজার ৯২৬টি স্থানে গ্যাসের উৎস (মিথেন) শনাক্ত হয়, যার মধ্যে ৪৫৯টি ছিদ্র ধরা পড়ে। পাইপলাইনের ওপর দিয়ে এক ধরনের যন্ত্র চালিয়ে এই পরীক্ষা করা হয়। ছিদ্রগুলো সংস্কার করা হয়েছে বলে তখন জানিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। সোমবার রাতে রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকায় একযোগে গ্যাসের গন্ধ ছড়াতে থাকে। আতঙ্কিত হয়ে পড়ে সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোর বাসিন্দারা। অনেক পরিবার বাসার রান্নার চুলা বন্ধ করে রাস্তায় বের হয়ে আসে। তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ বলছে, গ্যাসের চাপের কারণে লাইনের ছিদ্র দিয়ে গ্যাস বেরিয়ে এসেছে। দ্রুত গ্যাসের চাপ কমিয়ে তাঁরা পরিস্থিতি আয়ত্তে এনেছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্যাসের চাহিদা ও সরবরাহ পরিস্থিতি ঠিকমতো সমন্বয় ও তত্ত্বাবধান না করায় এ ঘটনা ঘটেছে। তবে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ তাদের বক্তব্যে এ বিষয়টি এড়িয়ে গেছে। তারা আনুষ্ঠানিকভাবে বলেছে, গ্যাসের চাপ বেড়ে যাওয়ায় এমনটি হয়েছে। তবে পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার পেট্রোবাংলা সারা দেশে গ্যাস সরবরাহ করেছিল দুই হাজার ৪৮ মিলিয়ন ঘনফুট। এর আগের দিন রবিবার গ্যাসের সরবরাহ ছিল আরো বেশি, দুই হাজার ১৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট। অর্থাৎ রবিবারের তুলনায় সোমবারে গ্যাসের সরবরাহ কম ছিল। তার পরও কেন পাইপলাইনে গ্যাসের চাপ বৃদ্ধি পেল এবং শহরের বড় বড় এলাকায় লাইনের ছিদ্রপথে গ্যাস বেরিয়ে এলো, সেই প্রশ্নের জবাব বা ব্যাখ্যা মেলেনি।

লিকেজ থেকে বড় দুর্ঘটনা : পাইপের ছিদ্র দিয়ে ধীরে ধীরে গ্যাস বের হয়ে ওপরে উঠে এলে তা বাতাসে মিশে যায়। কিন্তু কোনো কারণে এই গ্যাস মাটি বা ভবনের নিচে শূন্যস্থানে জমা হতে থাকলে তা গুরুতর দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে। আগুন, উচ্চতাপ বা অন্য কোনো গ্যাসের সংস্পর্শে এলে বিস্ফোরণের আশঙ্কা আছে এতে। ২০২১ সালের ৪ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জে একটি মসজিদের নিচে থাকা গ্যাস পাইপলাইনের ছিদ্র দিয়ে বেরিয়ে আসা গ্যাস জমে বিস্ফোরণের পর অগ্নিকাণ্ডে মারা যায় ৩৪ জন। এরপর গ্যাস বিতরণ লাইনে এক হাজার ৬২২টি ছিদ্র শনাক্ত করার কথা জানায় তিতাস। ওই সব ছিদ্র মেরামত করা হয়েছে বলেও দাবি করেছিল তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ।

তিতাস সূত্রে জানা গেছে, বৃহত্তর ঢাকা এবং বৃহত্তর ময়মনসিংহ এলাকায় ১৩ হাজার ১৩৮ কিলোমিটার পাইপলাইনের মাধ্যমে ২৮ লাখ ৭৭ হাজার ৬০৪ গ্রাহককে গ্যাস বিতরণ করে প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে আবাসিক সংযোগ ২৮ লাখ ৫৭ হাজার ৯৪৮টি। জরুরি ও কারিগরি টিমের সদস্যরা যা বললেন : সোমবার রাতে রাজধানীর বাড্ডা, রামপুরা, বনশ্রী, বেইলি রোড, মতিঝিল, আরামবাগ, হাজারীবাগ, মহাখালী, পূর্ব রাজাবাজার, ক্রিসেন্ট রোড, পান্থপথসহ বিভিন্ন এলাকায় লিকেজ থেকে গ্যাসের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। অনেক এলাকার মসজিদ থেকে মাইকে ঘোষণা দিয়ে গ্যাসের চুলা না জ্বালানো এবং দেশলাই না জ্বালানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। রাতেই বিতরণ কম্পানিটির জরুরি ও কারিগরি দল এলাকাগুলোয় সরেজমিন পরিদর্শন করে সমস্যার সমাধান করে।

তিতাসের জরুরি ও কারিগরি টিমের একাধিক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে জানান, এমন ঘটনা এর আগে আর কখনো হয়নি। তাঁরাও জানান, দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় সোমবার রাতে গ্যাসের চাপ বেশি ছিল, যার কারণে এসব এলাকায় লিকেজগুলো থেকে গ্যাসের গন্ধ বের হয়েছে। তিতাসের দক্ষিণ সিটি এলাকার জরুরি ও কারিগরি টিমে ছিলেন টেকনিশিয়ান সৈয়দ সামছুর রহমান। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দক্ষিণ সিটি এলাকার মগবাজার, ইস্কাটন, মৌচাক, শান্তিনগর ও বেইলি রোড এলাকায় সোমবার রাতে হঠাৎ গ্যাসের চাপ বেড়ে গিয়েছিল। খবর পেয়ে আমরা মাঠ পর্যায়ে গিয়ে দেখার পর এক ঘণ্টার মধ্যেই জরুরি ভিত্তিতে গ্যাসের সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া হয়। আমরা সারা রাত মাঠে ছিলাম। এমন ঘটনা আর কোনো সময় ঘটেনি।’ তিতাসের উত্তর সিটির জরুরি ও কারিগরি টিমের আনিছুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাড্ডা, মিরপুর, বনানী ও মিরপুরের কিছু এলাকায় অতিরিক্ত গ্যাসের চাপ ছিল। তাত্ক্ষণিক আমাদের টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে বিষয়টি জরুরি বিভাগে জানালে গ্যাসের সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া হয়।’

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম. তামিম গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, তিতাস গ্যাস তাদের চাহিদার সঙ্গে সরবরাহের মিল রাখতে পারেনি। লাইনে গ্যাসের চাপ সঠিকভাবে মনিটর করতে হবে। তিনি বলেন, পুরনো পাইপ পরিবর্তন করে নতুন পাইপ বসানোর পরিকল্পনা তিতাস বহুদিন আগে নিলেও এখনো বাস্তবায়ন করা হয়নি। তাই বড় বড় লিকেজ চিহ্নিত করে দ্রুত সময়ের মধ্যে বন্ধ করার উদ্যোগ নিতে হবে। তা না হলে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আড়াইহাজার অর্থনৈতিক অঞ্চলে বসছে নতুন পাইপ : নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার অর্থনৈতিক অঞ্চলে (জাপানিজ ইকোনমিক জোন) আগের গ্যাস সঞ্চালন লাইন পরিবর্তন করে নতুন পাইপলাইন বসানো হচ্ছে। তিতাস গ্যাস সূত্র বলছে, জাপানিজ ইকোনমিক জোন কর্তৃপক্ষ গ্যাসের চাপ বৃদ্ধির জন্য পুরনো পাইপলাইন পরিবর্তন করে নতুন পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহের প্রস্তাব দিয়েছিল, যার কারণে এখন নতুন পাইপলাইন বসানো হচ্ছে।

কত পুরনো তিতাসের লাইন : ১৯৬৭ সালে ঢাকায় পাইপলাইন নির্মাণের কাজ শুরু করেছিল তিতাস। ঢাকা শহরে তিতাসের পাইপলাইন বিস্তৃত হয় ১৯৮০ সালের পর। তিতাসের ১৩ হাজার ১৩৮ কিলোমিটার পাইপলাইনের মধ্যে ঢাকায় আছে সাত হাজার কিলোমিটারের বেশি পাইপলাইন। এখন এর ৬০ শতাংশ অতি ঝুঁকিপূর্ণ।জানতে চাইলে তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী মো. হারুনুর রশিদ মোল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের পুরনো সব লাইন পরিবর্তন করে নতুন পাইপলাইন স্থাপনের জন্য একটি মেগাপ্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এটি অনুমোদনের জন্য ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) পাঠানো হয়েছে। আশা করছি, খুব শিগগির প্রকল্পটি অনুমোদন পাবে।’ তিনি আরো বলেন, কাজটি সময়সাপেক্ষ হওয়ায় এখন শুরু হলেও শেষ হতে কয়েক বছর লেগে যাবে।
সুমি/হককথা

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

বাড়তি চাপ নিতে পারছে না সরবরাহ লাইন, সব বদলাতে চায় তিতাস

প্রকাশের সময় : ০১:০৭:৩৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৩

বাংলাদেশ ডেস্ক :  রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশে জালের মতো ছড়িয়ে থাকা তিতাস গ্যাসের ৬০ শতাংশের বেশি পাইপলাইনের কারিগরি মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এসব বিতরণ লাইন এখন গ্যাসের বাড়তি চাপ নিতে পারছে না। পাইপলাইন ছিদ্র হয়ে গ্যাস বেরিয়ে যাচ্ছে। এতে গ্যাসের অপচয়ের সঙ্গে দুর্ঘটনার শঙ্কা এবং জীবনের ঝুঁকি বাড়ছে। দেশের সবচেয়ে বড় গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানি লিমিটেডের সংশ্লিষ্ট কারিগরি সূত্র জানায়, এই সরবরাহ লাইনগুলোর মেয়াদ ছিল ৩০ বছর। কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও ওই সব পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ করতে হচ্ছে। নতুন পাইপলাইন বসানো হচ্ছে না। গত বছর তিতাসের জরুরি নিয়ন্ত্রণকক্ষে ছয় হাজার ৮৬২টি অভিযোগ আসে। এর মধ্যে গ্যাসের পাইপলাইনে ছিদ্রের অভিযোগ ছিল চার হাজার ৮৯১টি।

একই বছর ঢাকার এক হাজার ৬৮২ কিলোমিটার পাইপলাইনের মান কোন পর্যায়ে আছে, তা জানতে জরিপ চালায় তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ। এতে পাইপলাইনের ওপরে ৯ হাজার ৯২৬টি স্থানে গ্যাসের উৎস (মিথেন) শনাক্ত হয়, যার মধ্যে ৪৫৯টি ছিদ্র ধরা পড়ে। পাইপলাইনের ওপর দিয়ে এক ধরনের যন্ত্র চালিয়ে এই পরীক্ষা করা হয়। ছিদ্রগুলো সংস্কার করা হয়েছে বলে তখন জানিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। সোমবার রাতে রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকায় একযোগে গ্যাসের গন্ধ ছড়াতে থাকে। আতঙ্কিত হয়ে পড়ে সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোর বাসিন্দারা। অনেক পরিবার বাসার রান্নার চুলা বন্ধ করে রাস্তায় বের হয়ে আসে। তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ বলছে, গ্যাসের চাপের কারণে লাইনের ছিদ্র দিয়ে গ্যাস বেরিয়ে এসেছে। দ্রুত গ্যাসের চাপ কমিয়ে তাঁরা পরিস্থিতি আয়ত্তে এনেছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্যাসের চাহিদা ও সরবরাহ পরিস্থিতি ঠিকমতো সমন্বয় ও তত্ত্বাবধান না করায় এ ঘটনা ঘটেছে। তবে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ তাদের বক্তব্যে এ বিষয়টি এড়িয়ে গেছে। তারা আনুষ্ঠানিকভাবে বলেছে, গ্যাসের চাপ বেড়ে যাওয়ায় এমনটি হয়েছে। তবে পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার পেট্রোবাংলা সারা দেশে গ্যাস সরবরাহ করেছিল দুই হাজার ৪৮ মিলিয়ন ঘনফুট। এর আগের দিন রবিবার গ্যাসের সরবরাহ ছিল আরো বেশি, দুই হাজার ১৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট। অর্থাৎ রবিবারের তুলনায় সোমবারে গ্যাসের সরবরাহ কম ছিল। তার পরও কেন পাইপলাইনে গ্যাসের চাপ বৃদ্ধি পেল এবং শহরের বড় বড় এলাকায় লাইনের ছিদ্রপথে গ্যাস বেরিয়ে এলো, সেই প্রশ্নের জবাব বা ব্যাখ্যা মেলেনি।

লিকেজ থেকে বড় দুর্ঘটনা : পাইপের ছিদ্র দিয়ে ধীরে ধীরে গ্যাস বের হয়ে ওপরে উঠে এলে তা বাতাসে মিশে যায়। কিন্তু কোনো কারণে এই গ্যাস মাটি বা ভবনের নিচে শূন্যস্থানে জমা হতে থাকলে তা গুরুতর দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে। আগুন, উচ্চতাপ বা অন্য কোনো গ্যাসের সংস্পর্শে এলে বিস্ফোরণের আশঙ্কা আছে এতে। ২০২১ সালের ৪ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জে একটি মসজিদের নিচে থাকা গ্যাস পাইপলাইনের ছিদ্র দিয়ে বেরিয়ে আসা গ্যাস জমে বিস্ফোরণের পর অগ্নিকাণ্ডে মারা যায় ৩৪ জন। এরপর গ্যাস বিতরণ লাইনে এক হাজার ৬২২টি ছিদ্র শনাক্ত করার কথা জানায় তিতাস। ওই সব ছিদ্র মেরামত করা হয়েছে বলেও দাবি করেছিল তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ।

তিতাস সূত্রে জানা গেছে, বৃহত্তর ঢাকা এবং বৃহত্তর ময়মনসিংহ এলাকায় ১৩ হাজার ১৩৮ কিলোমিটার পাইপলাইনের মাধ্যমে ২৮ লাখ ৭৭ হাজার ৬০৪ গ্রাহককে গ্যাস বিতরণ করে প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে আবাসিক সংযোগ ২৮ লাখ ৫৭ হাজার ৯৪৮টি। জরুরি ও কারিগরি টিমের সদস্যরা যা বললেন : সোমবার রাতে রাজধানীর বাড্ডা, রামপুরা, বনশ্রী, বেইলি রোড, মতিঝিল, আরামবাগ, হাজারীবাগ, মহাখালী, পূর্ব রাজাবাজার, ক্রিসেন্ট রোড, পান্থপথসহ বিভিন্ন এলাকায় লিকেজ থেকে গ্যাসের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। অনেক এলাকার মসজিদ থেকে মাইকে ঘোষণা দিয়ে গ্যাসের চুলা না জ্বালানো এবং দেশলাই না জ্বালানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। রাতেই বিতরণ কম্পানিটির জরুরি ও কারিগরি দল এলাকাগুলোয় সরেজমিন পরিদর্শন করে সমস্যার সমাধান করে।

তিতাসের জরুরি ও কারিগরি টিমের একাধিক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে জানান, এমন ঘটনা এর আগে আর কখনো হয়নি। তাঁরাও জানান, দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় সোমবার রাতে গ্যাসের চাপ বেশি ছিল, যার কারণে এসব এলাকায় লিকেজগুলো থেকে গ্যাসের গন্ধ বের হয়েছে। তিতাসের দক্ষিণ সিটি এলাকার জরুরি ও কারিগরি টিমে ছিলেন টেকনিশিয়ান সৈয়দ সামছুর রহমান। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দক্ষিণ সিটি এলাকার মগবাজার, ইস্কাটন, মৌচাক, শান্তিনগর ও বেইলি রোড এলাকায় সোমবার রাতে হঠাৎ গ্যাসের চাপ বেড়ে গিয়েছিল। খবর পেয়ে আমরা মাঠ পর্যায়ে গিয়ে দেখার পর এক ঘণ্টার মধ্যেই জরুরি ভিত্তিতে গ্যাসের সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া হয়। আমরা সারা রাত মাঠে ছিলাম। এমন ঘটনা আর কোনো সময় ঘটেনি।’ তিতাসের উত্তর সিটির জরুরি ও কারিগরি টিমের আনিছুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাড্ডা, মিরপুর, বনানী ও মিরপুরের কিছু এলাকায় অতিরিক্ত গ্যাসের চাপ ছিল। তাত্ক্ষণিক আমাদের টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে বিষয়টি জরুরি বিভাগে জানালে গ্যাসের সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া হয়।’

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম. তামিম গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, তিতাস গ্যাস তাদের চাহিদার সঙ্গে সরবরাহের মিল রাখতে পারেনি। লাইনে গ্যাসের চাপ সঠিকভাবে মনিটর করতে হবে। তিনি বলেন, পুরনো পাইপ পরিবর্তন করে নতুন পাইপ বসানোর পরিকল্পনা তিতাস বহুদিন আগে নিলেও এখনো বাস্তবায়ন করা হয়নি। তাই বড় বড় লিকেজ চিহ্নিত করে দ্রুত সময়ের মধ্যে বন্ধ করার উদ্যোগ নিতে হবে। তা না হলে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আড়াইহাজার অর্থনৈতিক অঞ্চলে বসছে নতুন পাইপ : নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার অর্থনৈতিক অঞ্চলে (জাপানিজ ইকোনমিক জোন) আগের গ্যাস সঞ্চালন লাইন পরিবর্তন করে নতুন পাইপলাইন বসানো হচ্ছে। তিতাস গ্যাস সূত্র বলছে, জাপানিজ ইকোনমিক জোন কর্তৃপক্ষ গ্যাসের চাপ বৃদ্ধির জন্য পুরনো পাইপলাইন পরিবর্তন করে নতুন পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহের প্রস্তাব দিয়েছিল, যার কারণে এখন নতুন পাইপলাইন বসানো হচ্ছে।

কত পুরনো তিতাসের লাইন : ১৯৬৭ সালে ঢাকায় পাইপলাইন নির্মাণের কাজ শুরু করেছিল তিতাস। ঢাকা শহরে তিতাসের পাইপলাইন বিস্তৃত হয় ১৯৮০ সালের পর। তিতাসের ১৩ হাজার ১৩৮ কিলোমিটার পাইপলাইনের মধ্যে ঢাকায় আছে সাত হাজার কিলোমিটারের বেশি পাইপলাইন। এখন এর ৬০ শতাংশ অতি ঝুঁকিপূর্ণ।জানতে চাইলে তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী মো. হারুনুর রশিদ মোল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের পুরনো সব লাইন পরিবর্তন করে নতুন পাইপলাইন স্থাপনের জন্য একটি মেগাপ্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এটি অনুমোদনের জন্য ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) পাঠানো হয়েছে। আশা করছি, খুব শিগগির প্রকল্পটি অনুমোদন পাবে।’ তিনি আরো বলেন, কাজটি সময়সাপেক্ষ হওয়ায় এখন শুরু হলেও শেষ হতে কয়েক বছর লেগে যাবে।
সুমি/হককথা