ওয়াশিংটন: যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসম্যান ম্যাকগভার্ন বলেছেন, বড় রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টির (বিএনপি) মধ্যে ক্ষমতা নিয়ে দ্বন্দ্বে সিভিল সোসাইটি ‘ক্রসফায়ারের মধ্যে পড়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে এমন খবরও আসছে যে আল-কায়দা ও আইএসসহ আন্তঃদেশীয় সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের উপস্থিতি রয়েছে দেশটিতে’। ১ ডিসেম্বর মঙ্গলবার রাতে ওয়াশিংটনে কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটাল হিলে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার’ শীর্ষক এক শুনানিতে ম্যাকগভার্ন এসব কথা বলেন।
কংগ্রেসম্যান ম্যাকগভার্ন আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুমের খবর পাওয়া গেছে। এসব কারণে স্থিতিশীলতা ও গণতন্ত্রের চ্যালেঞ্জ বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সদস্য হিসাবে এবং মানবাধিকার চুক্তিসমূহের অংশ হিসাবে বাংলাদেশের সকলের সুরক্ষা নিশ্চিত করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
তবে ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের উপ-প্রধান মাহবুব হাসান সালেহ শুনানিতে উপস্থিত থেকে ইউএস কংগ্রেসম্যানের এসব অভিযোগ খন্ডন ও অস্বীকার করে বলেন, বাংলাদেশে আইএসের কোনো অস্বিত্ব নেই। তিনি বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধে যাদের ফাঁসি দেয়া হয়েছে তাদের বিরোধী দলের রাজনীতিক হিসাবে নয়, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী হিসাবেই আন্তর্জাতিক মানদন্ডে ট্রাইব্যুনালের দেয়া রায় কার্যকর করা হয়েছে।
মাহবুব সালেহ বলেন, বিএনপি ও জামায়াত জোট গত বছর জানুয়ারীতে অবরোধের নামে যেভাবে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে, গাড়ি জ্বালিয়েছে এবং সম্পদ ধ্বংস করেছে, সেগুলো কি মানবাধিকার লংঘন নয়? ‘জাতিরজনক’-এর মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত খুনিকে যুক্তরাষ্ট্র আশ্রয় দিয়ে কি মানবাধিকার লংঘন করছে না?
দুর্বৃত্তদের হাতে নিহত ব্লগার অভিজিৎ রায়ের স্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ও অ্যাক্টিভিস্ট লেখিকা রাফিদা বন্যা আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশে যে ইসলামপন্থী সন্ত্রাসের উত্থান হয়েছে, রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশ সরকার সেটি অস্বীকার করছে। কারণ বাংলাদেশ সরকার ধর্মীয় গ্রুপগুলোকে অসন্তোষ্ট করতে চায়না। তিনি বাংলাদেশী সাংবাদিক, লেখক, ব্লগার এবং প্রকাশকদের সুরক্ষায় সহায়তা করার জন্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
রেবার্ন হাইস অফিস বিল্ডিংয়ে ইউএস কংগ্রেসের ‘টম ল্যান্টস হিউম্যান রাইটস কমিশন’ এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ‘সিভিল সোসাইটির স্থান সঙ্কুচিত হয়ে আসছে’ শীর্ষক সিরিজ শুনানির অংশ হিসাবে এটি অনুষ্ঠিত হয়।
এতে অন্যদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক কমিশনের সিনিয়র পলিসি অ্যানালিস্ট শাহার চৌধুরী, পেন আমেরিকান সেন্টারের ‘মুক্ত মন প্রকাশ’ কার্যক্রমের পরিচালক কারিন ডয়েস কার্লেকার, আটলন্টিক কাউন্সিলের দক্ষিণ এশিয়া সেন্টারের পরিচালক ভারত গোপালাস্বামী ব্রিফিংয়ে অংশ নেন। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সেন্টার ফর ইনকোয়ারির পাবলিক পলিসি দফতরের পরিচালক মাইকেল ডি ডরা।
মাইকেল ডি ডোরা বলেন, বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। সন্ত্রাসী গ্রুপ আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, আল-কায়েদা কিংবা আইএস যদি অবাধে ঘুরে বেড়ানোর এবং দেশটির ওপর অধিক নিয়ন্ত্রণ নেয়ার সুযোগ পায়, তবে বিশ্ব সম্প্রদায় অনেক বড় সমস্যায় পড়বে। বাংলাদেশে তখন অনেক বেশি ভয়াবহ হামলা হবে। তিনি বলেন, গত দুই বছরে দুঃখজনকভাবে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এক বছরেই পাঁচজন সেক্যুলার লেখক ও প্রকাশক খুন হয়েছেন। বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতির এটা এখনও একটা কারণ। এতে করে সিভিল ও রাজনৈতিক অধিকারকে হেয় করা হচ্ছে। (দৈনিক যুগান্তর)