নিউইয়র্ক ০৭:২৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

বর্ষবরণের শোভাযাত্রাকে সর্বজনীন ভাবনায় বিধৌত করা হোক

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০২:০৮:৪৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
  • / ১১২ বার পঠিত

বাংলা বর্ষবরণ বাংলাদেশের আপামর মানুষের উৎসব। শুধু তাদের জন্য উৎসব নয়, যারা পাশ্চাত্যের সাথে একীভূত হয়ে এই ভূখণ্ডের ভাষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও স্বকীয়তা ভুলতে চান। আবার আরেক শ্রেণির মানুষ আছেন, যারা জীবনাচরণে শুধু বৈশ্বিক ইসলামিক ট্রাডিশন রেখে বাকিটুকু বর্জন করতে চান । তাদের কাছে পয়লা বৈশাখ কোনো গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয় । এ দেশ মুসলিম-হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানসহ নানা ধর্মীয় সম্প্রদায় ও নৃগোষ্ঠীগত জাতি সকলের । বৈশাখের উৎসব বাঙালির এবং সুনির্দিষ্টভাবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সীমার মধ্যে বসবাসকারী সকল বাংলাদেশি নাগরিকের । অতীতে দেখা যায়, নববর্ষের অনুষ্ঠানকে সামান্য গুটিকয়েক মানুষ মনেপ্রাণে গ্রহণ করতে না পারলেও ব্যাপক জনগোষ্ঠী নববর্ষ উদযাপনের স্পিরিটের সাথে একমত । কিন্তু নববর্ষ পালনের উদ্যোক্তা যারা, তারা একে কুক্ষিগত করে ধর্মপ্রাণ মুসলমানকে বাইরে রাখার ফর্মুলা বের করেছেন । ওদের ভয়, সবাই আসলে উদ্যোক্তাগণ মাইনরিটিতে পরিণত হবে । সকলের বিশ্বাস এবং মতকে গুরুত্ব দিয়ে সর্বজনীন অনুষ্ঠান করার পরিবর্তে বলা হচ্ছে , এটা আমাদের অনুষ্ঠানের আঙ্গিক , এটাই চলবে, মানলে আসো, না মানলে যাও ! ফলে জাতীয় একটা অনুষ্ঠানকে খণ্ডিত রূপ দেয়ার অপচেষ্টা লক্ষ্য করা যায় ।

গায়ের রঙ, রক্তের গ্রুপ, চোখের রঙ, চুলের রঙ, ইত্যাদি। এগুলি নিয়েই মানুষ । আমি কাউকে বলতে পারি না, তোমার গায়ের কালো রঙ রেখে তুমি অনুষ্ঠানে ঢুকবে । ধর্মীয় বিশ্বাস এরকমই একটা বৈশিষ্ট্য । আয়োজকদের যেখানে উচিত সব ধর্মের মানুষের অনুভূতি নিয়েই একটা প্লাটফর্ম তৈরি করা , যাতে কারো ধর্মবিশ্বাসে আঘাত না লাগে । সেখানে উলটো কাজ করা হচ্ছে । ঈমানদার মুসলমান স্বস্তিকা চিহ্ন নিয়ে মিছিল করতে ইতস্তত করবেই । যখন প্রাণীর কাছে মঙ্গল চাওয়া হবে , তখন ধর্মপ্রাণ মুসলমান বলবে আমি প্রাণির কাছে আমার সুখ প্রার্থনা করতে পারি না । আমি পেঁচাকে, বাঘকে, রাজা-বাদশাহের ছবিকে মঙ্গলের প্রতীক বানাতে পারি না । আমরা সবাই জানি, নববর্ষের আনন্দ শোভাযাত্রাকে পরবর্তীকালে ‘মঙ্গল’ নামের সাথে জুড়ে দেয়া হয়েছে । এর পেছনে একটা দুরভিসন্ধি অনুমান করা যায় ।
১২ মাসের নাম না জেনে জীবজন্তুর ছবি নিয়ে মিছিল করে বাংলা-সন প্রেমিক হওয়ার চেষ্টার চেয়ে জাতীয় জীবনে, স্কুলের পাঠ্যসূচিতে, অফিস-আদালতে বাংলা সনকে আরও কিভাবে অন্তর্ভুক্ত করা যায় তা ভাবা জরুরি । সেভাবে নৃতাত্ত্বিক জাতি এবং রাষ্ট্রীয় জাতিসত্তাকে গুলিয়ে ফেলা ঠিক না । রাষ্ট্রীয় জাতিসত্তা ইংরেজিতে ন্যাশানালিটি । নৃতাত্বিকভাবে বা সাংস্কৃতিকভাবে একটি জনগোষ্টীও জাতি । দুই জাতি কোথাও রাষ্ট্রীয় কাঠামোর সমান-সমান, কোথাও ছোট-বড় । জনগোষ্ঠী বিবেচনায় বাঙালি জাতি রাষ্ট্রীয় জাতীয়তার চেয়ে বড় , কারণ ভারতীয় বহু মানুষ বাঙালি। আবার স্কটিশ জাতি, ইংরেজ জাতি ব্রিটিশ জাতির অংশ । স্কটিশরা তাদের পাসপোর্টে জাতীয়তা লেখে ব্রিটিশ । আমরা সেখানে লিখি বাংলাদেশি । যখন জনগোষ্ঠিগত জাতিসত্তার প্রশ্ন ওঠে, তখন তা সংস্কৃতির অংশ হয়। সংস্কৃতি জোর করে চাপানোর বিষয় নয় । কিন্তু লক্ষ্য করা যায় যে, আইনি কাঠামো থেকে উৎসারিত বাংলাদেশি নাগিরকত্বের মত বাঙালিত্বকে সংবিধান ও আইনের ভয় দেখিয়ে বলবৎ করার চেষ্টা হয় ।

আবার অনেকসময় বলা হয়, আমি আগে বাঙালি, না কি আগে মুসলমান? এ প্রশ্ন অবান্তর । আমি একসাথে মুসলমান এবং বাঙালি । আমি ব্যবচ্ছেদ-অনুপযোগী দুই গূণাবলির অধিকারী – যেমন আমার গায়ের রঙ শ্যামলা এবং আমি পুরুষ । কেউ আবার ফর্সা এবং স্ত্রীলোক । তেমনি জনগোষ্ঠীগত জাতিতে একজন বাঙালি, এবং ধর্মে মুসলমান । দুই মিলিয়ে বাংলাদেশি নাগরিক । এদের মধ্যে কোনো সংঘাত নেই । তাই দায়িত্বশীল লোকেরা এই সংঘাত চায় না । যারা বিভাজন সৃষ্টি করে সুবিধা নিতে চান, তারাই বিতর্কিত বিষয় আমদানি করেন ।

পয়লা বৈশাখের মিছিলে পেঁচা, বাঘ, রাজা-বাদশাহের মুখ, স্বস্তিকা চিহ্নসহ কুলো- এসব না থেকে কৃষকের ধান কাটা, জেলেদের মাছ ধরা , তাঁতীর কাপড় বোনা, ময়রার মিষ্টি বানানো, গার্মেন্টস কর্মীর কারখানার কাজ– এ জাতীয় ছবি বা আলোকচিত্র দিয়ে যদি পোস্টার বানানো হয় এবং আনন্দ মিছিল করা হয়, তাহলে মনে হয় বাংলা সনের সূচনা দিবসের অনুষ্ঠান আরও বেশি অংশগ্রহণমূলক হতে পারে। আর শোভাযাত্রার নাম আনন্দ শোভাযাত্রা হলে ভালো হয় । ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নাম থাকলেই, কার কাছে মঙ্গল চাইছে- এই প্রশ্ন এসে পড়ে। মুসলমানেরা বলে, আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে মঙ্গল চাওয়া যায় না । বিষয়সমূহ গভীরভাবে ভেবেচিন্তে একটা গ্রহণযোগ্য সুপারিশ দেয়ার জন্য বাংলা একাডেমি উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ বলে মনে করি । সূত্র : মানবজমিন।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

বর্ষবরণের শোভাযাত্রাকে সর্বজনীন ভাবনায় বিধৌত করা হোক

প্রকাশের সময় : ০২:০৮:৪৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪

বাংলা বর্ষবরণ বাংলাদেশের আপামর মানুষের উৎসব। শুধু তাদের জন্য উৎসব নয়, যারা পাশ্চাত্যের সাথে একীভূত হয়ে এই ভূখণ্ডের ভাষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও স্বকীয়তা ভুলতে চান। আবার আরেক শ্রেণির মানুষ আছেন, যারা জীবনাচরণে শুধু বৈশ্বিক ইসলামিক ট্রাডিশন রেখে বাকিটুকু বর্জন করতে চান । তাদের কাছে পয়লা বৈশাখ কোনো গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয় । এ দেশ মুসলিম-হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানসহ নানা ধর্মীয় সম্প্রদায় ও নৃগোষ্ঠীগত জাতি সকলের । বৈশাখের উৎসব বাঙালির এবং সুনির্দিষ্টভাবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সীমার মধ্যে বসবাসকারী সকল বাংলাদেশি নাগরিকের । অতীতে দেখা যায়, নববর্ষের অনুষ্ঠানকে সামান্য গুটিকয়েক মানুষ মনেপ্রাণে গ্রহণ করতে না পারলেও ব্যাপক জনগোষ্ঠী নববর্ষ উদযাপনের স্পিরিটের সাথে একমত । কিন্তু নববর্ষ পালনের উদ্যোক্তা যারা, তারা একে কুক্ষিগত করে ধর্মপ্রাণ মুসলমানকে বাইরে রাখার ফর্মুলা বের করেছেন । ওদের ভয়, সবাই আসলে উদ্যোক্তাগণ মাইনরিটিতে পরিণত হবে । সকলের বিশ্বাস এবং মতকে গুরুত্ব দিয়ে সর্বজনীন অনুষ্ঠান করার পরিবর্তে বলা হচ্ছে , এটা আমাদের অনুষ্ঠানের আঙ্গিক , এটাই চলবে, মানলে আসো, না মানলে যাও ! ফলে জাতীয় একটা অনুষ্ঠানকে খণ্ডিত রূপ দেয়ার অপচেষ্টা লক্ষ্য করা যায় ।

গায়ের রঙ, রক্তের গ্রুপ, চোখের রঙ, চুলের রঙ, ইত্যাদি। এগুলি নিয়েই মানুষ । আমি কাউকে বলতে পারি না, তোমার গায়ের কালো রঙ রেখে তুমি অনুষ্ঠানে ঢুকবে । ধর্মীয় বিশ্বাস এরকমই একটা বৈশিষ্ট্য । আয়োজকদের যেখানে উচিত সব ধর্মের মানুষের অনুভূতি নিয়েই একটা প্লাটফর্ম তৈরি করা , যাতে কারো ধর্মবিশ্বাসে আঘাত না লাগে । সেখানে উলটো কাজ করা হচ্ছে । ঈমানদার মুসলমান স্বস্তিকা চিহ্ন নিয়ে মিছিল করতে ইতস্তত করবেই । যখন প্রাণীর কাছে মঙ্গল চাওয়া হবে , তখন ধর্মপ্রাণ মুসলমান বলবে আমি প্রাণির কাছে আমার সুখ প্রার্থনা করতে পারি না । আমি পেঁচাকে, বাঘকে, রাজা-বাদশাহের ছবিকে মঙ্গলের প্রতীক বানাতে পারি না । আমরা সবাই জানি, নববর্ষের আনন্দ শোভাযাত্রাকে পরবর্তীকালে ‘মঙ্গল’ নামের সাথে জুড়ে দেয়া হয়েছে । এর পেছনে একটা দুরভিসন্ধি অনুমান করা যায় ।
১২ মাসের নাম না জেনে জীবজন্তুর ছবি নিয়ে মিছিল করে বাংলা-সন প্রেমিক হওয়ার চেষ্টার চেয়ে জাতীয় জীবনে, স্কুলের পাঠ্যসূচিতে, অফিস-আদালতে বাংলা সনকে আরও কিভাবে অন্তর্ভুক্ত করা যায় তা ভাবা জরুরি । সেভাবে নৃতাত্ত্বিক জাতি এবং রাষ্ট্রীয় জাতিসত্তাকে গুলিয়ে ফেলা ঠিক না । রাষ্ট্রীয় জাতিসত্তা ইংরেজিতে ন্যাশানালিটি । নৃতাত্বিকভাবে বা সাংস্কৃতিকভাবে একটি জনগোষ্টীও জাতি । দুই জাতি কোথাও রাষ্ট্রীয় কাঠামোর সমান-সমান, কোথাও ছোট-বড় । জনগোষ্ঠী বিবেচনায় বাঙালি জাতি রাষ্ট্রীয় জাতীয়তার চেয়ে বড় , কারণ ভারতীয় বহু মানুষ বাঙালি। আবার স্কটিশ জাতি, ইংরেজ জাতি ব্রিটিশ জাতির অংশ । স্কটিশরা তাদের পাসপোর্টে জাতীয়তা লেখে ব্রিটিশ । আমরা সেখানে লিখি বাংলাদেশি । যখন জনগোষ্ঠিগত জাতিসত্তার প্রশ্ন ওঠে, তখন তা সংস্কৃতির অংশ হয়। সংস্কৃতি জোর করে চাপানোর বিষয় নয় । কিন্তু লক্ষ্য করা যায় যে, আইনি কাঠামো থেকে উৎসারিত বাংলাদেশি নাগিরকত্বের মত বাঙালিত্বকে সংবিধান ও আইনের ভয় দেখিয়ে বলবৎ করার চেষ্টা হয় ।

আবার অনেকসময় বলা হয়, আমি আগে বাঙালি, না কি আগে মুসলমান? এ প্রশ্ন অবান্তর । আমি একসাথে মুসলমান এবং বাঙালি । আমি ব্যবচ্ছেদ-অনুপযোগী দুই গূণাবলির অধিকারী – যেমন আমার গায়ের রঙ শ্যামলা এবং আমি পুরুষ । কেউ আবার ফর্সা এবং স্ত্রীলোক । তেমনি জনগোষ্ঠীগত জাতিতে একজন বাঙালি, এবং ধর্মে মুসলমান । দুই মিলিয়ে বাংলাদেশি নাগরিক । এদের মধ্যে কোনো সংঘাত নেই । তাই দায়িত্বশীল লোকেরা এই সংঘাত চায় না । যারা বিভাজন সৃষ্টি করে সুবিধা নিতে চান, তারাই বিতর্কিত বিষয় আমদানি করেন ।

পয়লা বৈশাখের মিছিলে পেঁচা, বাঘ, রাজা-বাদশাহের মুখ, স্বস্তিকা চিহ্নসহ কুলো- এসব না থেকে কৃষকের ধান কাটা, জেলেদের মাছ ধরা , তাঁতীর কাপড় বোনা, ময়রার মিষ্টি বানানো, গার্মেন্টস কর্মীর কারখানার কাজ– এ জাতীয় ছবি বা আলোকচিত্র দিয়ে যদি পোস্টার বানানো হয় এবং আনন্দ মিছিল করা হয়, তাহলে মনে হয় বাংলা সনের সূচনা দিবসের অনুষ্ঠান আরও বেশি অংশগ্রহণমূলক হতে পারে। আর শোভাযাত্রার নাম আনন্দ শোভাযাত্রা হলে ভালো হয় । ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নাম থাকলেই, কার কাছে মঙ্গল চাইছে- এই প্রশ্ন এসে পড়ে। মুসলমানেরা বলে, আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে মঙ্গল চাওয়া যায় না । বিষয়সমূহ গভীরভাবে ভেবেচিন্তে একটা গ্রহণযোগ্য সুপারিশ দেয়ার জন্য বাংলা একাডেমি উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ বলে মনে করি । সূত্র : মানবজমিন।