নিউইয়র্ক ০৭:১৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫, ২২ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

ফ্রান্সকে দেখে অবশ্যই শিখবে ব্রাজিল

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৬:১১:১১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২ ডিসেম্বর ২০২২
  • / ২৪ বার পঠিত

ফুটবল সত্যিই সুন্দর। আর্জেন্টিনার খেলা দেখে আমার এটা আরও বেশি মনে হয়েছে। পোল্যান্ডের বিপক্ষে পুরো ৯০ মিনিটেই আধিপত্য বিস্তার করে খেলেছে আর্জেন্টিনা। সংখ্যার দিক দিয়ে গোল হয়েছে দুটি। তবে আরও বেশি হলেও অবাক হতাম না। ওয়ান টু ওয়ানসহ বেশ কয়েকটি সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেনি। বল পজিশনে পুরোটাই ছিল আর্জেন্টিনার দখলে। কোচ লিওনেল স্কালোনির পরিকল্পনাগুলো মাঠে সঠিকভাবে প্রমাণ করেছেন লিওনেল মেসিরা।

আর্জেন্টিনা এতটাই আক্রমণাত্মক ছিল যে পোল্যান্ডের খেলোয়াড়দের মনোযোগ দিতে হয়েছে রক্ষণ সামলানোর দিকে। একসঙ্গে আক্রমণে ওঠা, আবার একসঙ্গে নিচে নেমে আসা; অনেক দিন পর গোছানো ফুটবল দেখলাম আর্জেন্টিনার কাছ থেকে। পোল্যান্ডকে তো আক্রমণে ওঠার সুযোগই দেননি মেসিরা। বুধবার আমার আরও যে জিনিসটা ভালো লেগেছে আর্জেন্টিনার, সেটা হলো ঠান্ডা মাথায় চাপ সামলানো। সৌদি আরবের বিপক্ষে আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়দের মধ্যে তাড়াহুড়ো করতে দেখেছি। মিস পাসসহ আরও কিছু ভুল ছিল। কিন্তু পোল্যান্ডের বিপক্ষে সেগুলো খুবই কম ছিল। আমার কাছে মনে হয়েছে, পোল্যান্ড ১ পয়েন্টের জন্যই খেলছিল। দুই গোল হজম করার পর যেন আর গোল না খায়, সে জন্য শেষ দিকে সবাই নিচে নেমে আসে। কারণ তারা তো জানে, দুই গোলে হারলেও গোল পার্থক্য এবং আরও কিছু নিয়মের কারণে পোল্যান্ড নকআউট পর্বে উঠে যাবে। শেষ পর্যন্ত তাই হয়েছে। তবে এটাও ঠিক, আর্জেন্টিনার আক্রমণে দিশেহারা হয়েই রক্ষণাত্মক ভূমিকা নিয়েছিলেন পোলিশ ফুটবলাররা। তাঁরা ডিফেন্সে জটলা পাকালেও আর্জেন্টিনা সব ভেদ করেই দুই গোল আদায় করেছে। এখানেও দুই ফুটবলার অ্যালেক্সিজ ম্যাক অ্যালিস্টার ও হুলিয়ান আলভারেজ যে গোল করেছেন, তা এককথায় অসাধারণ।

ম্যাচের আগে যেভাবে আলোচনা হচ্ছিল- লড়াইটা মেসির সঙ্গে লেভানডস্কির; ম্যাচে পোলিশ অধিনায়ককে খুব একটা চোখে পড়েনি। অবশ্য চোখে না পড়ার কারণও আছে, তারা তো পুরোপুরি ডিফেন্সিভ খেলেছে। আগের দুই ম্যাচের চেয়ে পোল্যান্ডের বিপক্ষে আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়দের অনেক আত্মবিশ্বাসী মনে হয়েছে। বল রিসিভ করা, পাস দেওয়া- সবকিছুতেই ছিল আত্মবিশ্বাসের ছাপ। মাস্ট উইন ম্যাচে অনেক সময় চাপে থাকায় স্বাভাবিক খেলা কঠিন হয় যায়। আর্জেন্টিনার ক্ষেত্রে সেটা দেখা যায়নি।

ব্রাজিল প্রথম দুই ম্যাচ জিতে কোয়ালিফাই করে ফেলায় চাপহীন খেলতে পারবে। তারা কখনোই চাইবে না, জয়ের মানসিকতা নষ্ট হোক। এবারের বিশ্বকাপে অনেক অঘটন ঘটেছে। তাই ব্রাজিলও চাইবে না, নকআউটের আগে কোনো অঘটনের শিকার হতে। যেমনটি দেখেছি বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের ম্যাচে। তিউনিসিয়ার বিপক্ষে গুরুত্বহীন ম্যাচে একাদশে ৯টি পরিবর্তন এনেছিলেন কোচ দিদিয়ের দেশম। এরপর গোল হজম করার পর কিলিয়ান এমবাপ্পে, গ্রিজম্যানদের নামিয়েও লাভ হয়নি। আমি মনে করি, এই পরাজয় ফ্রান্সের জন্য একটা ধাক্কা। ব্রাজিলও চাইবে, ফ্রান্সের মতো অবস্থায় পড়তে যেন না হয়। আমি মনে করি, ফ্রান্সের হার থেকে ব্রাজিল শিখেছে। এখানে একটা জিনিস বলতে চাই, ব্রাজিলের দলটি ফ্রান্সের মতো নয়।

ব্রাজিলের যেসব সাব-ফুটবলার আছেন, তাঁরাও অনেক অভিজ্ঞ এবং ইউরোপিয়ান বড় বড় ক্লাবে খেলেন। সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে নেইমার ছিলেন। তাঁর অভাব কিছুটা অনুভব করলেও ক্যাসিমিরোর গোলে ম্যাচটি ব্রাজিল বের করে আনে। এ রকম আরও অনেক ফুটবলার আছেন ব্রাজিল দলে, যাঁদের ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার সামর্থ্য আছে। প্রতিপক্ষ ক্যামেরুনও চ্যালেঞ্জ জানাতে প্রস্তুত। কারণ, জিতলে তাদেরও দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠার সুযোগ থাকছে। এবারের বিশ্বকাপ অঘটনের বলা চলে। ছোট দলগুলো বাজিমাত করে চলেছে। এ জন্য কোচদের ভূমিকাও আমি বড় করে দেখছি। টেকনিক, ট্যাকটিস কেমন হবে- তার সঠিক বাস্তবায়ন করেই বড় দলগুলোকে হারিয়েছে ছোট দলগুলো। সামনে তো আরও চমক আসছে।

Tag :

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

ফ্রান্সকে দেখে অবশ্যই শিখবে ব্রাজিল

প্রকাশের সময় : ০৬:১১:১১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২ ডিসেম্বর ২০২২

ফুটবল সত্যিই সুন্দর। আর্জেন্টিনার খেলা দেখে আমার এটা আরও বেশি মনে হয়েছে। পোল্যান্ডের বিপক্ষে পুরো ৯০ মিনিটেই আধিপত্য বিস্তার করে খেলেছে আর্জেন্টিনা। সংখ্যার দিক দিয়ে গোল হয়েছে দুটি। তবে আরও বেশি হলেও অবাক হতাম না। ওয়ান টু ওয়ানসহ বেশ কয়েকটি সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেনি। বল পজিশনে পুরোটাই ছিল আর্জেন্টিনার দখলে। কোচ লিওনেল স্কালোনির পরিকল্পনাগুলো মাঠে সঠিকভাবে প্রমাণ করেছেন লিওনেল মেসিরা।

আর্জেন্টিনা এতটাই আক্রমণাত্মক ছিল যে পোল্যান্ডের খেলোয়াড়দের মনোযোগ দিতে হয়েছে রক্ষণ সামলানোর দিকে। একসঙ্গে আক্রমণে ওঠা, আবার একসঙ্গে নিচে নেমে আসা; অনেক দিন পর গোছানো ফুটবল দেখলাম আর্জেন্টিনার কাছ থেকে। পোল্যান্ডকে তো আক্রমণে ওঠার সুযোগই দেননি মেসিরা। বুধবার আমার আরও যে জিনিসটা ভালো লেগেছে আর্জেন্টিনার, সেটা হলো ঠান্ডা মাথায় চাপ সামলানো। সৌদি আরবের বিপক্ষে আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়দের মধ্যে তাড়াহুড়ো করতে দেখেছি। মিস পাসসহ আরও কিছু ভুল ছিল। কিন্তু পোল্যান্ডের বিপক্ষে সেগুলো খুবই কম ছিল। আমার কাছে মনে হয়েছে, পোল্যান্ড ১ পয়েন্টের জন্যই খেলছিল। দুই গোল হজম করার পর যেন আর গোল না খায়, সে জন্য শেষ দিকে সবাই নিচে নেমে আসে। কারণ তারা তো জানে, দুই গোলে হারলেও গোল পার্থক্য এবং আরও কিছু নিয়মের কারণে পোল্যান্ড নকআউট পর্বে উঠে যাবে। শেষ পর্যন্ত তাই হয়েছে। তবে এটাও ঠিক, আর্জেন্টিনার আক্রমণে দিশেহারা হয়েই রক্ষণাত্মক ভূমিকা নিয়েছিলেন পোলিশ ফুটবলাররা। তাঁরা ডিফেন্সে জটলা পাকালেও আর্জেন্টিনা সব ভেদ করেই দুই গোল আদায় করেছে। এখানেও দুই ফুটবলার অ্যালেক্সিজ ম্যাক অ্যালিস্টার ও হুলিয়ান আলভারেজ যে গোল করেছেন, তা এককথায় অসাধারণ।

ম্যাচের আগে যেভাবে আলোচনা হচ্ছিল- লড়াইটা মেসির সঙ্গে লেভানডস্কির; ম্যাচে পোলিশ অধিনায়ককে খুব একটা চোখে পড়েনি। অবশ্য চোখে না পড়ার কারণও আছে, তারা তো পুরোপুরি ডিফেন্সিভ খেলেছে। আগের দুই ম্যাচের চেয়ে পোল্যান্ডের বিপক্ষে আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়দের অনেক আত্মবিশ্বাসী মনে হয়েছে। বল রিসিভ করা, পাস দেওয়া- সবকিছুতেই ছিল আত্মবিশ্বাসের ছাপ। মাস্ট উইন ম্যাচে অনেক সময় চাপে থাকায় স্বাভাবিক খেলা কঠিন হয় যায়। আর্জেন্টিনার ক্ষেত্রে সেটা দেখা যায়নি।

ব্রাজিল প্রথম দুই ম্যাচ জিতে কোয়ালিফাই করে ফেলায় চাপহীন খেলতে পারবে। তারা কখনোই চাইবে না, জয়ের মানসিকতা নষ্ট হোক। এবারের বিশ্বকাপে অনেক অঘটন ঘটেছে। তাই ব্রাজিলও চাইবে না, নকআউটের আগে কোনো অঘটনের শিকার হতে। যেমনটি দেখেছি বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের ম্যাচে। তিউনিসিয়ার বিপক্ষে গুরুত্বহীন ম্যাচে একাদশে ৯টি পরিবর্তন এনেছিলেন কোচ দিদিয়ের দেশম। এরপর গোল হজম করার পর কিলিয়ান এমবাপ্পে, গ্রিজম্যানদের নামিয়েও লাভ হয়নি। আমি মনে করি, এই পরাজয় ফ্রান্সের জন্য একটা ধাক্কা। ব্রাজিলও চাইবে, ফ্রান্সের মতো অবস্থায় পড়তে যেন না হয়। আমি মনে করি, ফ্রান্সের হার থেকে ব্রাজিল শিখেছে। এখানে একটা জিনিস বলতে চাই, ব্রাজিলের দলটি ফ্রান্সের মতো নয়।

ব্রাজিলের যেসব সাব-ফুটবলার আছেন, তাঁরাও অনেক অভিজ্ঞ এবং ইউরোপিয়ান বড় বড় ক্লাবে খেলেন। সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে নেইমার ছিলেন। তাঁর অভাব কিছুটা অনুভব করলেও ক্যাসিমিরোর গোলে ম্যাচটি ব্রাজিল বের করে আনে। এ রকম আরও অনেক ফুটবলার আছেন ব্রাজিল দলে, যাঁদের ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার সামর্থ্য আছে। প্রতিপক্ষ ক্যামেরুনও চ্যালেঞ্জ জানাতে প্রস্তুত। কারণ, জিতলে তাদেরও দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠার সুযোগ থাকছে। এবারের বিশ্বকাপ অঘটনের বলা চলে। ছোট দলগুলো বাজিমাত করে চলেছে। এ জন্য কোচদের ভূমিকাও আমি বড় করে দেখছি। টেকনিক, ট্যাকটিস কেমন হবে- তার সঠিক বাস্তবায়ন করেই বড় দলগুলোকে হারিয়েছে ছোট দলগুলো। সামনে তো আরও চমক আসছে।