নিউইয়র্ক ১০:১৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১১:৫৭:৩০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
  • / ৩০ বার পঠিত

একুশের প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শ্রদ্ধা নিবেদন

বাংলাদেশ ডেস্কঃ অমর একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রথম প্রহরে ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের শহিদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার রাত ১২টা ১ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে এ শ্রদ্ধা জানান তারা। এর আগে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে পৌঁছলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. আখতারুজ্জামান তাদের স্বাগত জানান। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। এরপর স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এসএম শফিউদ্দিন আহমেদ, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নান ও নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ শাহীন ইকবাল, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, কূটনৈতিক মিশনের প্রতিনিধিরা একে একে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

এদিকে দিবসটি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ায় বিশ্বজুড়ে দিবসটি পালিত হচ্ছে। ১৯৫২ সালের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সূতিকাগার। বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে শহিদ সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, সালাউদ্দিনসহ সবাইকে আজ স্মরণ করা হবে। জাতি বিনম্রচিত্তে ভাষাশহিদ সূর্যসন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবে। ১৯৫২ সালের এদিনে ‘বাংলাকে’ রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে বাংলার (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) ছাত্র ও যুবসমাজসহ সর্বস্তরের মানুষ সে সময়ের শাসকগোষ্ঠীর চোখরাঙানি ও প্রশাসনের ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাজপথে নেমে আসে। মায়ের ভাষা রক্ষা আন্দোলনে দুর্বার গতি পাকিস্তানি শাসকদের শঙ্কিত করে তোলে। সেদিন ছাত্র-জনতার মিছিলে পুলিশ গুলি চালালে কয়েকজন শহিদ হন। বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় অমর একুশের চেতনা আজ অনুপ্রেরণার অবিরাম উৎস। নিজ ভাষার উন্নয়ন ও সংরক্ষণের পাশাপাশি বহুভাষিক শিক্ষার মাধ্যমে টেকসই ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন ইতিবাচক অবদান রাখবে।

বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাঙালি জাতির মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসে ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব অপরিসীম। এ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে একটি অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, ভাষা ভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গঠনের ভিত রচিত হয়েছিল। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও স্পিকারের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর একুশের প্রথম প্রহরে শহিদ মিনারে উপস্থিত হন মন্ত্রিসভার সদস্য ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। একে একে শ্রদ্ধা নিবেদন করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ দলটির নেতারা, হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বে ১৪ দলীয় জোট, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের নেতৃত্বে দলের নেতৃবৃন্দ, বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল একেএম নাজমুল হাসান, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, চিফ হুইপের পক্ষে হুইপ ইকবালুর রহিম, আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, র‌্যাবের মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেন, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।

পরে রাত সাড়ে ১২টার দিকে সর্বস্তরের জনগণের জন্য শহিদ মিনার প্রাঙ্গণ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। রাত আড়াইটা পর্যন্ত টানা বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব চলে। এছাড়া ঢাকাসহ চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল ও রংপুরসহ বিভিন্ন বিভাগীয় এবং জেলা উপজেলা শহরে একুশের প্রথম প্রহরে শহিদদের শ্রদ্ধা জানানোর খবর পাওয়া গেছে। কর্মসূচি : একুশে ফেব্রুয়ারি সরকারি ছুটির দিন। এদিন দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান; সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবনে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সঠিক নিয়মে, সঠিক রং ও মাপে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত এবং কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে। দিবসটি পালন উপলক্ষ্যে জাতীয় অনুষ্ঠানের সঙ্গে সংগতি রেখে বর্তমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বিবেচনায় যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনসমূহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

আজিমপুর কবরস্থানে ফাতেহা পাঠ ও কুরআনখানির আয়োজনসহ দেশের সব উপাসনালয়ে ভাষাশহিদদের রুহের মাগফিরাত কামনায় প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে। দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন উপলক্ষ্যে গণযোগাযোগ অধিদপ্তর ঢাকা মহানগরীতে ট্রাকের মাধ্যমে রাজপথে ভ্রাম্যমাণ সংগীতানুষ্ঠান এবং নৌযানের সাহায্যে ঢাকা শহরসংলগ্ন নৌপথে সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজনসহ জেলা-উপজেলায় ভ্রাম্যমাণ চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর ব্যবস্থা নিয়েছে। দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন উপলক্ষ্যে ঢাকা শহরের বিভিন্ন সড়কদ্বীপ ও অন্যসব গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বাংলাসহ অন্যসব ভাষার বর্ণমালা সংবলিত ফেস্টুন দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছে। সংবাদপত্রগুলোয় ক্রোড়পত্র প্রকাশের ক্ষেত্রে ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর অবদানের বিষয়টি বিশেষভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলো একুশের বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে। বাংলাদেশ মিশনগুলো শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ, রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ, বঙ্গবন্ধু ও ভাষা আন্দোলনবিষয়ক আলোচনাসভা, পুস্তক ও চিত্রপ্রদর্শনীসহ বিভিন্ন আয়োজন করেছে। যেখানে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক এবং বাঙালি অভিবাসীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

আরোও পড়ুনক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীদের ভাষা কী আধিপত্যের শিকার?

মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে আওয়ামী লীগ দুদিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবনসহ সারা দেশে সংগঠনের সব কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন, কালো ব্যাজ ধারণ এবং প্রভাতফেরি। এছাড়া ২২ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৩টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করবেন। মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে বিএনপি দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ এবং কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে। আজিমপুর কবরস্থানে ভাষাশহিদদের কবর জিয়ারত শেষে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করা হবে। এছাড়া দেশব্যাপী বিএনপির বিভিন্ন ইউনিট স্থানীয় ব্যবস্থানুযায়ী ভাষাশহিদদের স্মরণে আলোচনাসভা করবে। এ উপলক্ষ্যে সোমবার রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়।

মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে এক বাণীতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, স্বজাত্যবোধ ও অধিকারবোধের চেতনা পরিপূর্ণতাদান করেছিল মহান একুশে ফেব্রুয়ারি। সেই চেতনা নস্যাৎ করে একদলীয় শাসনের জগদ্দল পাথর আজ জনগণের কাঁধের ওপর চাপানো হয়েছে। আজ বেলা ১১টায় বনানী কার্যালয়ে আলোচনাসভার আয়োজন করেছে জাতীয় পার্টি। এতে সভাপতিত্ব করবেন দলটির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের এমপি। সূত্রঃ যুগান্তর

হককথা/সুমি

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

প্রকাশের সময় : ১১:৫৭:৩০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

বাংলাদেশ ডেস্কঃ অমর একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রথম প্রহরে ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের শহিদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার রাত ১২টা ১ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে এ শ্রদ্ধা জানান তারা। এর আগে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে পৌঁছলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. আখতারুজ্জামান তাদের স্বাগত জানান। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। এরপর স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এসএম শফিউদ্দিন আহমেদ, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নান ও নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ শাহীন ইকবাল, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, কূটনৈতিক মিশনের প্রতিনিধিরা একে একে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

এদিকে দিবসটি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ায় বিশ্বজুড়ে দিবসটি পালিত হচ্ছে। ১৯৫২ সালের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সূতিকাগার। বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে শহিদ সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, সালাউদ্দিনসহ সবাইকে আজ স্মরণ করা হবে। জাতি বিনম্রচিত্তে ভাষাশহিদ সূর্যসন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবে। ১৯৫২ সালের এদিনে ‘বাংলাকে’ রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে বাংলার (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) ছাত্র ও যুবসমাজসহ সর্বস্তরের মানুষ সে সময়ের শাসকগোষ্ঠীর চোখরাঙানি ও প্রশাসনের ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাজপথে নেমে আসে। মায়ের ভাষা রক্ষা আন্দোলনে দুর্বার গতি পাকিস্তানি শাসকদের শঙ্কিত করে তোলে। সেদিন ছাত্র-জনতার মিছিলে পুলিশ গুলি চালালে কয়েকজন শহিদ হন। বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় অমর একুশের চেতনা আজ অনুপ্রেরণার অবিরাম উৎস। নিজ ভাষার উন্নয়ন ও সংরক্ষণের পাশাপাশি বহুভাষিক শিক্ষার মাধ্যমে টেকসই ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন ইতিবাচক অবদান রাখবে।

বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাঙালি জাতির মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসে ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব অপরিসীম। এ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে একটি অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, ভাষা ভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গঠনের ভিত রচিত হয়েছিল। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও স্পিকারের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর একুশের প্রথম প্রহরে শহিদ মিনারে উপস্থিত হন মন্ত্রিসভার সদস্য ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। একে একে শ্রদ্ধা নিবেদন করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ দলটির নেতারা, হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বে ১৪ দলীয় জোট, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের নেতৃত্বে দলের নেতৃবৃন্দ, বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল একেএম নাজমুল হাসান, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, চিফ হুইপের পক্ষে হুইপ ইকবালুর রহিম, আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, র‌্যাবের মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেন, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।

পরে রাত সাড়ে ১২টার দিকে সর্বস্তরের জনগণের জন্য শহিদ মিনার প্রাঙ্গণ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। রাত আড়াইটা পর্যন্ত টানা বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব চলে। এছাড়া ঢাকাসহ চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল ও রংপুরসহ বিভিন্ন বিভাগীয় এবং জেলা উপজেলা শহরে একুশের প্রথম প্রহরে শহিদদের শ্রদ্ধা জানানোর খবর পাওয়া গেছে। কর্মসূচি : একুশে ফেব্রুয়ারি সরকারি ছুটির দিন। এদিন দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান; সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবনে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সঠিক নিয়মে, সঠিক রং ও মাপে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত এবং কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে। দিবসটি পালন উপলক্ষ্যে জাতীয় অনুষ্ঠানের সঙ্গে সংগতি রেখে বর্তমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বিবেচনায় যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনসমূহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

আজিমপুর কবরস্থানে ফাতেহা পাঠ ও কুরআনখানির আয়োজনসহ দেশের সব উপাসনালয়ে ভাষাশহিদদের রুহের মাগফিরাত কামনায় প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে। দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন উপলক্ষ্যে গণযোগাযোগ অধিদপ্তর ঢাকা মহানগরীতে ট্রাকের মাধ্যমে রাজপথে ভ্রাম্যমাণ সংগীতানুষ্ঠান এবং নৌযানের সাহায্যে ঢাকা শহরসংলগ্ন নৌপথে সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজনসহ জেলা-উপজেলায় ভ্রাম্যমাণ চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর ব্যবস্থা নিয়েছে। দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন উপলক্ষ্যে ঢাকা শহরের বিভিন্ন সড়কদ্বীপ ও অন্যসব গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বাংলাসহ অন্যসব ভাষার বর্ণমালা সংবলিত ফেস্টুন দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছে। সংবাদপত্রগুলোয় ক্রোড়পত্র প্রকাশের ক্ষেত্রে ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর অবদানের বিষয়টি বিশেষভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলো একুশের বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে। বাংলাদেশ মিশনগুলো শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ, রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ, বঙ্গবন্ধু ও ভাষা আন্দোলনবিষয়ক আলোচনাসভা, পুস্তক ও চিত্রপ্রদর্শনীসহ বিভিন্ন আয়োজন করেছে। যেখানে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক এবং বাঙালি অভিবাসীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

আরোও পড়ুনক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীদের ভাষা কী আধিপত্যের শিকার?

মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে আওয়ামী লীগ দুদিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবনসহ সারা দেশে সংগঠনের সব কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন, কালো ব্যাজ ধারণ এবং প্রভাতফেরি। এছাড়া ২২ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৩টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করবেন। মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে বিএনপি দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ এবং কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে। আজিমপুর কবরস্থানে ভাষাশহিদদের কবর জিয়ারত শেষে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করা হবে। এছাড়া দেশব্যাপী বিএনপির বিভিন্ন ইউনিট স্থানীয় ব্যবস্থানুযায়ী ভাষাশহিদদের স্মরণে আলোচনাসভা করবে। এ উপলক্ষ্যে সোমবার রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়।

মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে এক বাণীতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, স্বজাত্যবোধ ও অধিকারবোধের চেতনা পরিপূর্ণতাদান করেছিল মহান একুশে ফেব্রুয়ারি। সেই চেতনা নস্যাৎ করে একদলীয় শাসনের জগদ্দল পাথর আজ জনগণের কাঁধের ওপর চাপানো হয়েছে। আজ বেলা ১১টায় বনানী কার্যালয়ে আলোচনাসভার আয়োজন করেছে জাতীয় পার্টি। এতে সভাপতিত্ব করবেন দলটির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের এমপি। সূত্রঃ যুগান্তর

হককথা/সুমি