পলাতক আসামিরা কে কোথায়?
- প্রকাশের সময় : ১০:৫৭:০৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ অগাস্ট ২০২৩
- / ১১১ বার পঠিত
বাংলাদেশ ডেস্ক : বর্বরোচিত ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ১৩ আসামি এখনো পলাতক রয়েছেন। এই মামলার রায়ের সময় পলাতক আসামি ছিলেন ১৮ জন। এর মধ্যে দুই জন পরে আত্মসমর্পণ করেন। এছাড়া গ্রেফতার হয়েছেন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ইকবাল হোসেন ওরফে ইকবাল ওরফে জাহাঙ্গীর ওরফে সেলিম, শফিকুল রহমান ও আব্দুল হাই।
পলাতক আসামিদের মধ্যে প্রথমেই আসে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের নাম। পুলিশের খাতায় পলাতক দেখানো হলেও তারেক রহমান যে লন্ডনে রয়েছেন, সেটা সবার জানা। তবে অন্য পলাতক আসামিদের খুঁজে বের করতে পুলিশ গত ১৮ বছর ধরে তৎপরতা চালালেও তাদের অবস্থানের সুনির্দিষ্ট তথ্য পায়নি।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, আনঅফিসিয়ালি তারেক রহমানের অবস্থানের তথ্য জানা থাকলেও কাগজে কলমে তিনি পলাতক। অন্য পলাতক আসামিরা হচ্ছেন—বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব চৌধুরী আবদুল হারিছ ওরফে হারিছ চৌধুরী (তবে হারিছ চৌধুরী মারা গেছেন বলে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলেও পুলিশ এখনো নিশ্চিত নয়), কুমিল্লার মুরাদনগরের বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য কাজী শাহ মোফাজ্জেল হোসেন কায়কোবাদ, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ারদার, হানিফ পরিবহনের মালিক মোহাম্মদ হানিফ, নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের শীর্ষনেতা মাওলানা মোহাম্মদ তাজউদ্দিন মিয়া, বাবু রাতুল আহমেদ, মাওলানা মহিবুল মুত্তাকিন, আনিসুল মুরসালিন ওরফে মুরসালিন, মোহাম্মদ খলিল, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মাওলানা আবু বকর ওরফে হাফেজ লোকমান হাওলাদার এবং মাওলানা লিটন ওরফে দেলোয়ার হোসেন ওরফে জোবায়ের।
পলাতকরা কে কোথায় : পলাতক আসামিদের মধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান রয়েছেন লন্ডনে। তাকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মাওলানা তাজউদ্দিন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পরপরই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। ভুয়া পাসপোর্টে তাকে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তার অবস্থান শনাক্তের জন্য ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারি করা হয়। তার সম্ভাব্য অবস্থান পাকিস্তান বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। তবে কেউ কেউ বলছেন তিনি বর্তমানে দক্ষিণ আফ্রিকায় অবস্থান করছেন।
হানিফ পরিবহনের মো. হানিফ এ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। তাকে খুঁজে বের করতেও ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারি করা হয়। তার সম্ভাব্য অবস্থান থাইল্যান্ড অথবা মালয়েশিয়া বলে জানায় পুলিশ। যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোফাজ্জেল হোসেন কায়কোবাদ সংযুক্ত আরব আমিরাত কিংবা মালয়েশিয়ায় রয়েছেন বলে ধারণা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বশীলদের। তাকে ফেরাতেও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। কিন্তু তাকেও ফেরানো যাচ্ছে না। তার নামও ইন্টারপোলের তালিকায় ছিল। কিন্তু বিষয়টি রাজনৈতিক ইস্যু হিসেবে নিশ্চিত করে তার নাম ইন্টারপোলের রেড নোটিশের তালিকা থেকে বাদ দিতে সক্ষম হয়েছেন তিনি।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রাতুল আহমেদ বাবুর নামও রয়েছে ইন্টারপোলের রেড নোটিশের তালিকায়। তার সম্ভাব্য অবস্থান ইতালি বা দক্ষিণ আফ্রিকায় বলে জানতে পেরেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। হরকাতুল জিহাদের অন্যতম শীর্ষ জঙ্গি মাওলানা মহিবুল মুত্তাকিন, আনিসুল মুরসালিন সহোদর ভাই। তারা বর্তমানে ভারতের তিহার কারাগারে সেখানকার জঙ্গি কর্মকাণ্ডের ঘটনায় আটক রয়েছেন।
অন্য পলাতক আসামিদের মধ্যে লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ারদার কানাডায়, জঙ্গিনেতা মাওলানা আবু বকর, মো. ইকবাল, খলিলুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে বদর, মাওলানা লিটন ওরফে জোবায়ের ওরফে দেলোয়ার পাকিস্তানে অবস্থান করছেন বলে ধারণা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্মকর্তাদের। তবে কারোরই অবস্থান বিষয়ক সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই পুলিশের কাছে।
তবে পলাতক আসামিদের অবস্থান সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কিছু জানতে পারলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি)। পলাতকদের খুঁজে বের করতে ইন্টারপোল সদর দপ্তরের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। পলাতকদের ফিরিয়ে আনতে ও খুঁজে বের করতে পুলিশের পক্ষ থেকে তৎপরতার কোনো ঘাটতি নেই।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, বিভিন্ন মেয়াদে ১১ জন সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে সাবেক আইজিপি আশরাফুল হুদা, সাবেক আইজিপি শহুদুল হক, সাবেক আইজিপি খোদা বক্স চৌধুরী, জোট সরকারের সময়ের তদন্ত কর্মকর্তা সাবেক এএসপি আবদুর রশিদ, সাবেক এএসপি মুন্সী আতিকুর রহমান ও সাবেক পুলিশ সুপার রুহুল আমীন জামিনে রয়েছেন। অপরদিকে সাজা শেষে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন সাবেক ডিআইজি খান সাঈদ হাসান ও ডিএমপির সাবেক ডিসি (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান খান। সূত্র : দৈনিক ইত্তেফাক
সুমি/হককথা