নির্বাচনে ভারতের হস্তক্ষেপ

- প্রকাশের সময় : ০৩:০৭:৫৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৪
- / ৪৯ বার পঠিত
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভারত সরকারের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ এবং সংবিধানের ৭(ক) (১)(খ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক আদালতে যাবেন রিটকারী ব্যারিস্টার মুহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে পরাজিত স্বতন্ত্রপ্রার্থীর (ট্রাক প্রতীক) রিট খারিজ করে দেয়ার পর সোমবার এ কথা জানিয়েছেন তার আইনজীবী সৈয়দ মামুন মাহবুব।
বিচারপতি আবু তাহের মো: সাইফুর রহমান এবং বিচারপতি মো: বশিরউল্লাহর ডিভিশন বেঞ্চে দীর্ঘ সময় ধরে রিটের শুনানি হয়। রিটে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে সংবিধানের ৭ (ক) (১) (খ) অনুযায়ী তাদের মামলা গ্রহণের নির্দেশ কেন দেয়া হবে না-এই মর্মে রুল চাওয়া হয়েছিলো। রিটে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন,বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবসহ ১২ জনকে বিবাদী করা হয়েছে।আদেশের পর অ্যাডভোকেট সৈয়দ মামুন মাহবুব বলেন, রিটকারী ব্যারিস্টার মুহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম দ্বাদশ নির্বাচনে টাঙ্গাইল-৬ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী (ট্রাক প্রতীক) হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
পিটিশনে বলা হয়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট গণনার সময়, পোলিং এজেন্ট ও প্রিজাইডিং অফিসার এবং তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বের করে দিয়ে, নৌকা প্রতীককে জেতানোর উদ্দেশ্যে মনগড়া ফলাফল তৈরি করা হয়েছে। প্রথমে আমি গাইবান্ধা জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কাছে অভিযোগ করি। এত কোনো প্রতিকার পাইনি। পরে ১০ জানুয়ারি প্রধান নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ দাখিল করি। তাতেও প্রতিকার মেলেনি। প্রেক্ষিতে আমি রিট করতে বাধ্য হই। তিনি বলেন, সংবিধানের ৭ (ক) সংবিধানের ১১ এসব ধারা লঙ্ঘন করেছে নির্বাচন কমিশন। তাই তাদের বিরুদ্ধে এসব ধারায় শাস্তি প্রার্থনা করেছি।
তিনি বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল-৬ (১৩৫-দেলদুয়ার-নাগরপুর) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ট্রাক প্রতীকে নির্বাচন করি। ওই নির্বাচনে আমাকে ‘পরাজিত’ দেখানো হয়েছে। অনেকে নির্বাচন বর্জন করলেও আমি নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করি। এ কারণে নির্বাচন প্রক্রিয়ার প্রথম থেকেই কমিশনের সাথে সম্পৃক্ত সব কর্মকর্তাদের ব্যবহার ও আচার-আচরণ নিয়ে ধারণা অর্জন করতে পেরেছি। আমি দেখলাম, দেলদুয়ার উপজেলার এসিল্যান্ড প্রশান্ত বৈদ্য নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর কর্মীদের সাথে নিয়ে প্রায় সময়ই আমার নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা দেন। আমার গাড়ি আটক করেন। আমি ২১ ডিসেম্বর নাগরপুর থানার ওসি জসিম উদ্দিন এবং ২৮ ডিসেম্বর দেলদুয়ারের এসিল্যান্ড প্রশান্ত বৈদ্যর প্রত্যাহারের আবেদন জমা দেই। কিন্তু নির্বাচন কমিশন প্রতিকারমূলক কোনো ব্যবস্থাই নেননি।
নির্বাচনের দিন ৭ জানুয়ারি দুপুর ১টার পর আমার নির্বাচনী এলাকার সব কেন্দ্রে কয়েকটি সন্ত্রাসী গ্রুপের মাধ্যমে ব্যালট পেপারে সিল মেরে ভোট ডাকাতি করে। এরমধ্যে নাগরপুর উপজেলার আফছার উদ্দিন মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের ভোট কেন্দ্রে দুপুর ১টা ১৫ মিনিটে আমি হাতেনাতে সিল মারা অবস্থায় ধরিয়ে দিলে আমাকে নৌকার কর্মীরা মারধর করে ভোটকেন্দ্র থেকে তাড়িয়ে দেন। এর ভিডিও ধারণ করতে পারলেও আমার মোবাইল ছিনিয়ে ভিডিও ডিলিট করে দেয়।
তথাপি ফেসবুক লাইভে ১০ সেকেন্ডের ভিডিওটি সংরক্ষিত আছে। তৎক্ষণাৎ প্রিজাইডিং অফিসার নৌকা কর্মীদের হাত থেকে আমাকে রক্ষা করেন । আমাকে তার কক্ষে সরিয়ে নেন। আমি বিষয়টি রিটার্নিং অফিসার অবগত করি এবং তার মোবাইলে ভিডিও ছবিগুলো পাঠিয়ে দিই। প্রিজাইডিং অফিসার বরাবর উক্ত কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বাতিল ও স্থগিত রাখার লিখিত আবেদন জানাই।
ভোট গণনার সময় সব পোলিং এজেন্টদের বের করে দেয়া হয় । প্রায় প্রিজাইডিং অফিসার এবং তার সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নৌকা প্রতীককে জেতানোর উদ্দেশ্যে মনগড়া নির্বাচনী ফলাফল তৈরি করেন। যেখানে কোনো পোলিং এজেন্টের স্বাক্ষর নেই। এভাবে নির্বাচন কমিশনের পৃষ্ঠপোষকতায় সরকারের নির্দেশে নৌকা প্রতীককে নির্বাচিত করেছে। এছাড়া আমার ট্রাক মার্কা ভোটের ওপর। নিচে কয়েকটি নৌকা প্রতীকের ভোট যোগ করে বান্ডিল বানিয়ে নৌকা প্রতীকের প্রাপ্ত ভোট দেখানো হয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সবচেয়ে বড় উদ্দেশ্যে হলো একটি গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র গঠন করা। যেখানে সব নাগরিক তাদের ভোটার অধিকার প্রয়োগ করে একটি অংশীদারিত্বমূলক সরকার গঠন করবে। দেশের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ এই মহান জাতীয় সংসদ দ্বারা নির্ধারিত হবে। যা রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি ১১ অনুচ্ছেদে যথাযথভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
রিট খারিজ হয়ে যাওয়ার পর ব্যারিস্টার মুহাম্ম আশরাফুল ইসলামের কৌঁসুরি অ্যাডভোকেট সৈয়দ মামুন মাহবুব বলেন, টাঙ্গাইল-৬ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার আশরাফুল ইসলাম রিট করেছেন। সংবিধানের ৭ (ক) কে রিলাই করে রিটটি করা হয়। আমাদের জানামতে এই অনুচ্ছেদ নিয়ে রিট পিটিশন এটিই প্রথম। এই অনুচ্ছেদের মূল এসেন্স হচ্ছে, যে কেউ ব্যক্তি কিংবা কোনো ব্যক্তি শক্তি বা যেকোনো ক্ষমতা প্রয়োগের মাধ্যমে সংবিধানের অনুচ্ছেদ রদ/রহিত করলে। অথবা সংবিধানের ওপর নাগরিকের আস্থা/বিশ্বাস প্রত্যয় পরাহত করার চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ আনা যাবে। কোর্টে আমাদের আর্গুমেন্ট ছিলো, ৭ জানুয়ারি নির্বাচন কমিশন যে নির্বাচন করেছে, একটি মেকী, ডামি ডামি খেলার যে নির্বাচন এবং এর মধ্য দিয়ে ব্যারিস্টার আশরাফের যে রকম নাগরিক অধিকার প্রথম থেকেই ক্ষুন্ন হয়েছে এবং অসংখ্য মানুষের নাগরিক অধিকার ক্ষুন্ন হয়েছে। সমস্ত প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক মিডিয়া, ব্যারিস্টার আশরাফের প্রাইমারি এভিডেন্স, তার নিজের ফাস্ট হ্যান্ড এভিডেন্স আমরা সংযুক্ত করেছি রিটে। তার যে প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী, যিনি গতবারও এমপি ছিলেন, আহসানুল করিম টিটো। তার লোকজন আশরাফকে একাধিকবার হত্যার চেষ্টা করেছে। কর্মীদের মারধোর করেছে। জনগণকে ভোট দিতে দেয়নি। আশরাফ সাহেব নিজে গিয়ে বিভিন্ন সেন্টারে হাতেনাতে ধরেছেন যে নৌকার পক্ষে সিল মারছেন। জাল ভোট হয়েছে। এই ‘ভাই ভাই’ ভোটের মধ্যেও নির্বাচন কমিশন নির্বাচন সম্পন্ন করতে পারেননি। তার আইনজীবী হিসেবে আশরাফ সাহেবের বিষয়টি কোর্টে তুলে ধরেছি। এটি শুধু ব্যারিস্টার আশরাফের বক্তব্য নয়। এটি এই সরকারের ধারক বাহক হাসানুল হক ইনুর বক্তব্য। এটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারি ড. আব্দুস সোবহান গোলাপের বক্তব্য। যিনি কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদকও বটে। এটি পার্লামেন্টে যিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গান গেয়ে শোনান সেই গানের শিল্পী মমতাজও বলেছেন যে, মৃত ব্যক্তি এসে ভোট দিয়েছেন মমতাজের বিরুদ্ধে। আমরা বলেছি, এটি একটি শেইম ইলেকশন। এটি কোনো ইলেকশন হয়নি। এর মধ্য দিয়ে সংবিধানের ৭ এর (ক), ১ এর (খ) অনুযায়ী জনগণের সংবিধানের ওপর যাতে আস্থা না থাকে তার একটি ব্যর্থ চেষ্টা ইসি চালিয়েছে। সে জন্য আমরা রিট করেছি। কেন নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে সংবিধানের ৭ (ক) (১) (খ) অনুযায়ী মামলা (রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা) গ্রহণ করার জন্য নির্দেশ দেয়া হবে না-এই মর্মে স্বরাষ্ট্র, আইন ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রতি নির্দেশনা চেয়েছি। এই অপরাধের নাম হচ্ছে ‘রাষ্ট্রদ্রোহিতা’। এ অপরাধের সর্বোচ্চ সাজা হচ্ছে মৃত্যুদণ্ড। কারণ যেটুকুই ভঙ্গুর গণতন্ত্র ছিলো কিংবা থাকার প্রয়াস ছিলো সেই নির্বাচন কমিশন, কাজী হাবিবুল আউয়াল নষ্ট করে দিয়েছেণ। জনগণের করের ৩ হাজার কোটি টাকার শ্রাদ্ধ্য করে আইন ও গণতন্ত্রকে ‘মৃত’ করেছেন। কেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে না-এই যৌক্তিক ও আইনি ব্যাখ্যা দিয়ে মাননীয় হাইকোর্টে নির্দেশনা চেয়েছি। আদালত ধৈর্য্যরে সঙ্গে আমাদের সমস্ত বক্তব্য শুনেছেন। ব্যারিস্টার আশরাফের যে বেদনা ১০ ডিসেম্বর থেকে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত, যাকে সিটিং এমপি তার ভাইকে দিয়ে, তার লেলিয়ে দেয়া বাহিনী দিয়ে অত্যাচার,নির্যাতন হত্যা চেষ্টা ও নির্যাতন চালিয়েছেন। তার বক্তব্য শ্রবণ করে আদালত রুল দেয়ার প্রয়োজন মনে করেনি। হাইকোর্ট রিটটি রিজেক্ট করেছেন। আমরা আদালতের আদেশ মাথা পেতে নিয়েছি। আমরা মনে করি বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখন মৃত। খুব শিঘ্রই আমরা এ নিয়ে আপিল বিভাগে যাবো। সেখানেও যদি আমরা বোঝাতে না পারি তাহলে ‘ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস’ এ যাবো। যেভাবে সাউথ আফ্রিকা গিয়েছে ইসরাইলের বিরুদ্ধে। আমরাও যাবো। কারণ প্রতিবেশী দেশ ভারতের জনগণ আমাদের বন্ধু । কিন্তু ভারত সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে নির্বাচন কমিশন দেশের গণতন্ত্র হত্যার মতো জঘন্য কাজ করেছে। জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেয়ার জন্য যেখানে যেখানে যেতে হয় আমরা সেখানে যাবো। সূত্র : ইনকিলাব