নারী কেলেঙ্কারির কূটনীতিককে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ক্লিন সার্টিফিকেট
- প্রকাশের সময় : ০৩:০১:২৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৩
- / ৬৬ বার পঠিত
তৌহিদুল ইসলাম নামের একজন কূটনীতিককে অষ্ট্রিয়ার ভিয়েনায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত করে পাঠানোর প্রস্তাব করা হয়েছিল। ইতালিতে নারী কেলেঙ্কারী ও অনৈতিকতার দায়ে অভিযুক্ত থাকায় তৌহিদুল ইসলামকে রাষ্ট্রদূত হিসেবে গ্রহণ করেনি ভিয়েনা। পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন আলোচিত ওই কূটনীতিককে গ্রহণে অনুরোধ করে অস্ট্রিয়ার ফেডারেল মিনিস্টার ফর ইউরোপিয়ান অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স আলেকজান্ডার সলেনবার্গকে চিঠি লেখেন। তারপরও ওই কূটনীতিককে রাষ্ট্রদূত হিসেবে গ্রহণ করেনি ভিয়েনা। এ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে তোলপাড় চলছে। ইউরোপের দেশে নারী কেলেঙ্কারীর মতো ঘটনা নিয়ে নানাজনে বিষ্ময় প্রকাশ করছেন। সাবেক রাষ্ট্রদূতরা মন্তব্য করছেন একজন কূটনীতিককে গ্রহণের জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্যাক্তিগত ভাবে চিঠি লেখাকে নজীরবিহীন মন্তব্য করছেন। এ নিয়ে ফেসবুক, ব্লগ, টুইটারে যখন বিতর্ক চলছে তখন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, আমি যদ্দিন আছি, তৌহিদুল ইসলামকে গুড অফিসার বলবো, আই উইল ডিফেন্ড।
গতকাল শনিবার সিলেটের টুকেরবাজারে চানপুর খেয়াঘাটে সুরমা নদী খনন কাজের উদ্বোধনের সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন আলেচিত রাষ্ট্রদূত তৌহিদুল ইসলামকে গুড অফিসার উল্লেখ করে বলেন, গত জুলাই (২০২২) মাসে ভিয়েনা মিশনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে ক‚টনীতিক মো. তৌহিদুল ইসলামকে নিয়োজিত করতে প্রস্তাব পাঠানো হয়। অস্ট্রিয়া সরকার রাষ্ট্রদূত হিসেবে তৌহিদুল ইসলামকে প্রহণ করতে রাজি হয়নি। সে গুড অফিসার হওয়ায় তার জন্য চিঠি লিখেছিলাম।
ভিনেয়া থেকে তৌহিদুল ইসলাম প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর ২০২২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর অস্ট্রিয়া সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবরে একটি চিঠি লিখেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে মোমেন। তিনি তৌহিদুলকে গ্রহণ করতে অনুরোধ জানান। কিন্তু তারপরও ভিয়েনা থেকে তৌহিদুলকে রাষ্ট্রদূত হিসেবে গ্রহণ করা হয়নি। এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে তৌহিদুল অ্যাম্বাসেডর ইন সিঙ্গাপুর। তাকে আমরা ভিয়েনাতে দিতে চাই। সেখানে যেয়ে মাল্টিন্যাশনাল কাজ আছে আমাদের ধারণা। তৌহিদ যখন অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ পরীক্ষা দেয়, তখন সারা বাংলাদেশের মধ্যে সে প্রথম হয়। তারপরে সে তার ব্যাচের ফার্স্টবয় ছিল। অত্যন্ত ভালো, তুখোড় ছেলে। এখন ওরে টেনে কিভাবে নামানো যায়, তার জন্য তার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের লোকজন, তারই বন্ধুবান্ধবরা কন্টিনিউয়াসলি এসব কাজ করছে। তৌহিদুলের শত্রæ আছে। শত্রæরা ওখানে গিয়ে, সে যখন ইতালির মিলানে কনসাল জেনারেল ছিল, কনসাল জেনারেল থাকা অবস্থায় কোনো একটা মেয়েকে তার পেছনে লাগিয়ে দেয়। লাগিয়ে দিয়ে একটা কেলেংকারির চেষ্টা করে। তখন তাকে উহ্য করা হয়, সাসপেন্ড করা হয়, অনেক ইনভেস্টিগেশন করা হয়, সরকারের অনেক টাকা, আপনাদের টাকা খরচ করা হয়। পরে দেখা যায়, এক্কেরে বানোয়াট অভিযোগ। তারপর তার প্রমোশন হয়, তারপর অ্যাম্বাসেডর হয়। এখন তার বিরুদ্ধে আবার লাগছে একদল, যারা লাগছে তারই বন্ধুবান্ধব হবে। আর না হয় পত্রিকায় এগুলো গেল কিভাবে? হি ইজ অ্যা ভেরি গুড অফিসার।
তৌহিদুল ইসলামকে রাষ্ট্রদূত হিসেবে ভিয়েনার গ্রহণ না করা এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রীর অনুরোধও প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ঘটনাকে নজিরবিহীন, অস্বাভাবিক হিসেবে খবর প্রচার করেছে গণমাধ্যম। বিদেশে নারী কেলেঙ্কারীর দায়ে অভিযুক্ত একজন রাষ্ট্রদূতকে গ্রহণে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন সাফাই চিঠি লিখেছিলেন, কিন্তু তা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। ৬ মাসের চেষ্টা, তদবির করেও ওই কূটনীতিকদের ইউরোপের ছোট্ট দেশ অস্ট্রিয়ায় পরবর্তী রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ করা যায়নি। এতো কিছুর পর পররাষ্ট্র মন্ত্রী নারী কেলেঙ্কারীর দায়ে অভিযুক্ত ওই কূটনীতিককে ক্লিন সার্টিফিকেট দিচ্ছেন।
জানা গেছে, ইতালির মিলানে কনসাল জেনারেল থাকা অবস্থায় তৌহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে অধস্তন এক নারী সহকর্মীর সঙ্গে অসদাচরণের গুরুতর অভিযোগ উঠে। সেই অভিযোগের বিষয়ে জিজ্ঞাসা ছিল অস্ট্রিয়া সরকারের। কিন্তু সদুত্তর পায়নি। তৌহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের বিস্তৃত তদন্ত করে যে তাকে প্রমোশন এবং পোস্টিং দেয়া হয়েছে তার দীর্ঘ বর্ণনা দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন অস্ট্রিয়ার ইউরোপিয়ান এবং আন্তর্জাতিক অ্যাফেয়ার্স বিষয়ক ফেডারেল মন্ত্রীর কাছে চিঠি দেন। তারপরও দূতকে গ্রহণে অস্বীকৃতি জানানো হয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ওই চিঠির সত্ত্বেও রাষ্ট্রদূতকে গ্রহণ না করায় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ার কথা স্বীকার করেছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। তিনি গণমাধ্যমকে বলেছেন, তৌহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ পুঙ্খাখানুপুঙ্খাভাবে তদন্ত হয়েছে, তাতে তার অপরাধ প্রমাণিত হয়নি। বিষয়টি অস্ট্রিয়া সরকারকে জানানো হয়েছে। কিন্তু তারপরও তারা তাকে গ্রহণ করেনি। সূত্র : দৈনিক ইনকিলাব