নতুন অ্যাটর্নি জেনারেল আমিন উদ্দিন : পদত্যাগ করলেন দুই অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল

- প্রকাশের সময় : ০১:৪০:২৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ অক্টোবর ২০২০
- / ৪৫ বার পঠিত
ঢাকা ডেস্ক: বাংলাদেশের ১৪তম অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন জানিয়েছেন, অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে রাষ্ট্রীয় সব দায়িত্ব নিজের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে যথাযথভাবে পালন করার চেষ্টা করবেন। রোববার (১১ অক্টোবর) দুপুরে অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালনের প্রথম কর্মদিবসে তিনি সাংবাদিকদের কাছে এমন কথা বলেন।
এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, দক্ষতা ও সততায় মাহবুবে আলম এ অফিসটাকে, পদটাকে যে উচ্চতায় নিয়ে গেছেন, আমি চেষ্টা করবো সেটা বজায় রাখার। আমি চেষ্টা করবো তিনি যে উচ্চতা সৃষ্টি করে গেছেন, সেটা ধরে রাখার।
অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধে গণমাধ্যমের সহযোগিতা চেয়ে তিনি বলেন, আপনাদের সহযোগিতা চাই। আমি আপনাদের অনুরোধ করছি, আপনারা যদি আমাদের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেন তাহলে দুর্নীতি বন্ধ করা অনেক সহজ হবে। আমি অ্যাটর্নি জেনারেল এবং সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি হিসেবে যেকোনো ধরনের দুর্নীতিকে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করবো।
অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে প্রথম কর্মদিবসে দু’জন অতিরিক্তি অ্যাটর্নি জেনারেলের পদত্যাগের বিষয়ে তিনি বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসে সবসময় আসা-যাওয়া থাকেই। ওনারা হয়তো অনেক দিন কাজ করেছেন, ব্যক্তিগত কোনো সমস্যার কারণে তারা হয়ত আর থাকছেন না। আমার সঙ্গে ওনাদের কথা হয়নি। এখন যদি তাদের পদত্যাপত্র গ্রহণ করা হয় তাহলে অবশ্যই আরো দুজন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগ দেবে সরকার।
নারী শিশু নির্যাতনের বিষয়ে তিনি বলেন, নারী শিশু নির্যাতনের কথা যদি বলেন, সরকার কিন্তু আগামীকালই বিষয়টা কেবিনেট মিটিংয়ে তুলবেন। শাস্তি মৃত্যুদন্ড করে দেয়া হচ্ছে। মৃত্যুদন্ড করার পরে আমার মনে হয় যারা এ ধরনের অপরাধ করে তারা সাবধান হবে। এ অপরাধ করতে অনেকবার ভাববে। আমার মনে হয় সরকারের এ উদ্যোগটা যখন আইনে পরিণত হবে তখন কিন্তু এ ধরনের ঘটনা অনেকখানি কমে যাবে।
মামলার জটকে বড় চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মামলা জট কমানো। আমাদের দেশে অনেক মামলা রয়ে গেছে, অনেক মামলা জট হয়ে আছে। এ জট কমানো হচ্ছে বিচার বিভাগে আমার প্রধান চ্যালেঞ্জ।
অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন
নতুন অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আপিল বিভাগের ভার্চুয়াল কোর্ট প্রায় চার হাজার মামলা নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন। আপিল বিভাগ কিন্তু পুরনো মামলাগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুনছেন। অ্যাটর্নি জেনারেল এবং আইনজীবী সমিতির সভাপতি হিসেবে আমি প্রধান বিচারপতিকে অনুরোধ করবো, হাইকোর্টেও যেসব পুরনো মামলা রয়েছে, সেগুলো নিষ্পত্তি করার জন্য বেঞ্চগুলোকে যেন বিশেষ নির্দেশনা দেন। তাছাড়া আমি চেষ্টা করবো, বিভিন্ন জেলায় যারা পাবলিক প্রসিকিউটর রয়েছেন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিচারাধীন যেসব মামলা স্থগিত হয়ে আছে, সেগুলোর দ্রæত শুনানির উদ্যোগ নিতে।
ষোড়শ সংশোধনীর মামলা রিভিউ নিষ্পত্তির বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, রিভিউ যেহেতু আপিল বিভাগে পেন্ডিং রয়েছে, তারা যে দিন তারিখ ধার্য করবেন, শুনানির জন্য এলে আমি চেষ্টা করবো দ্রæত শেষ করার জন্য।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের অদক্ষতার কারণে কোনো মামলায় যদি রাষ্ট্র হেরে যায়, আর তাতে যদি রাষ্ট্রের ক্ষতি হয় সেক্ষেত্রে বিষয়টি আমি সরকারের দৃষ্টিতে নিয়ে আসবো। সরকার তখন সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল ও সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন আপনি- এখন দুটি দায়িত্ব কিভাবে পালন করবেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, বারের যে কোনো সদস্য বারের সভাপতি হতে পারেন, সে হিসেবে দুটি দায়িত্ব পালনে কোনো সমস্যা নাই।
পদত্যাগ করলেন দুই অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল
এদিকে দুই অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা ও মো. মমতাজ উদ্দিন ফকির পদত্যাগ করেছেন। রোববার সকালে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল পদ থেকে পদত্যাগ করার কথা জানান মুরাদ রেজা। তিনি বলেছেন, আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি বরাবর তিনি পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন। তবে কি কারণে পদত্যাগ করেছেন সে সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেননি তিনি।
একই সময়ে আইন মন্ত্রণালয়ের সলিসিটর উইং এর মাধ্যমে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মমতাজ উদ্দিন ফকির। এ বিষয়ে তিনি জানান, একান্ত ব্যক্তিগত কারণে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। এর বাইরে কিছু নেই বলেও জানান তিনি। যদিও গত বৃহস্পতিবার নতুন অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগের পর থেকে ওই দুজনের পদত্যাগের খবর শোনা যাচ্ছিল। এর আগে গত ৮ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিনকে দেশের ১৬তম অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।
এর আগে অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করা মাহবুবে আলম ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।